নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাভারতের গপ্পো - ০০৮

০৩ রা আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৪২

পরীক্ষিতের মৃত্যু বিবরণ

একদিন রাজা পরীক্ষিৎ হরিণ শিকার করতে গিয়ে একটি তীরবিদ্ধ হরিণের পিছু ধাওয়া করতে করতে পরিশ্রান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে গহিন বনে শমীক মুনিকে দেখতে পেলেন। রাজা মুনিকে প্রশ্ন করলেন হরিণটি কোনো দিকে গেছে। মুনি কোনো উত্তর দিলেন না। পরীক্ষিৎ ক্রুদ্ধ হয়ে একটা মৃত সাপ ধনুক দিয়ে তুলে মুনির কাধে ঝুলিয়ে দিয়ে নিজের প্রাসাদে ফিরে গেলেন। মুনি কিছুই বললেন না বা মনে করলেন না, কারণ তিনি মৌনব্রত পালন করছিলেন বলেই উত্তর দিতে পারেননি।


অন্যদিকে শমীক মুনির ছেলে শৃঙ্গী তাঁর গুরুর বাড়ি থেকে ফেরবার সময় তাঁর বন্ধু কৃশ রাজা পরীক্ষিৎ ও শমীক মুনির ঘটনাটি তাঁকে জানিয়ে দেয়। শৃঙ্গী রেগে গিয়ে রাজা পরীক্ষিৎকে সাত রাতের মধ্যে মহাবিষধর তক্ষক নাগ দগ্ধ করবে এই অভিশাপ দিলো। এই অভিশাপের কথা শুনে শমীক মুনির মায়া হলো, রাজা প্রশ্নের জবাব না পেয়ে রেগে গিয়েছিলেন। কারণ রাজা জানতেন না মণি মৌনব্রতে ছিলেন।

শমীক মুনি তার শিষ্য গৌরমুখকে রাজা পরীক্ষিতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। গৌরমুখ রাজাকে অভিশাপারে কথা জানালো। শমীক বলে দিয়েছেন রাজা যেন আত্মরক্ষার সকল ব্যবস্থা করেন। পরীক্ষিৎ তখন মন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করে একটি মাত্র খুঁটির উপর সুরক্ষিত ঘর নির্মাণ করালেন। ফলে কেউ তাঁর কাছে আসতে পারত না। বিষের চিকিৎসক ও মন্ত্রসিদ্ধ ব্রাহ্মদেরকে কাছাকাছি রাখলেন। দেখতে দেখতে ছয় দিন কেটে গেলো।



সপ্তম দিনে কশ্যপ নামে এক ব্রাহ্মণ বিষচিকিৎসার জন্য রাজার কাছে যাচ্ছিলেন। তখন তক্ষক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশ ধরে তিনি কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাইলো। কশ্যপ জানালেন আজ তক্ষক নাগ রাজা পরীক্ষিৎকে দংশন করবেন। তিনি সেই বিষ নষ্ট করে রাজাকে বাঁচানোর জন্তেয যাচ্ছেন। তখন তক্ষক নিজের পরিচয় দিয়ে একটি বটগাছে দংশন করল। তক্ষকের দংশনে বটবৃক্ষ জ্বলে গেল। কশ্যপের মন্ত্রশক্তিতে বটগাছের পুরে যাওয়া ছাই থেকে প্রথমে অংকুর, তারপর দুটি পাতা, তারপর বহু পাতা ও ডালে ডালে ভরে গেলো।


এসব দেখে তক্ষক কশ্যপকে জানালো ব্রাহ্মণের অভিশাপে রাজা পরীক্ষিতের আয়ূক্ষয় হয়েছে। কশ্যপের চিকিৎসায় রাজার বাঁচার উপায় নেই। রাজা কশ্যপকে যত ধন দিবে তার চেয়ে বেশী ধন তক্ষক কশ্যপকে দিতে চাইলো। কশ্যপ ধ্যান করে দেখলেন আসলেই ব্রাহ্মণের অভিশাপে রাজা পরীক্ষিতের আয়ূ শেষ হয়ে গেছে। তাই কশ্যপ তক্ষকের কাছ থেকে ধন নিয়েই ফিরে চলে গেলেন।



এবার তক্ষক কয়েকজন নাগকে তপস্বী সেজে ফল-মুল আর জল নিয়ে পরীক্ষিতের কাছে পাঠালেন। রাজা সেই সকল উপহার নিয়ে তপস্বীদের বিদায় দিলেন। তিনি তার মন্ত্রীদের নিয়ে সেই ফল খাওয়ার সময় দেখলেন তাঁর ফলে ক্ষুদ্র একটি পোঁকা দেখা যাচ্ছে। রাজা মন্ত্রীদের বললেন দেথো আজকের শেষ দিনের সূর্য অস্ত যাচ্ছেন, আমার কিছুই হয়নি। শৃঙ্গীর অভিশাপের জোড় থাকলে এই পোঁকাটি তক্ষক হয়ে আমাকে দংশন করুক। এই বলে তিনি হাসতে লাগলেন। ঠিক তখন পোঁকারূপী তক্ষক নিজ আকার ধারণ করে রাজাকে দংশন করলেন। মন্ত্রীরা ভয়ে পালিয়ে গেলেন। বিষের আগুনে রাজার গৃহ আলোকিত হয়ে গেলো।

পরীক্ষিতের মৃত্যুর পর রাজপুরোহিত ও মন্ত্রীরা পরলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাঁর শিশুপুত্র জনমেজয়কে রাজা করলেন। জনমেজয়ে পরে কাশীরাজ সুবর্ণ-বর্মার কন্যা বপুষ্টমাকে বিয়ে করলেন।


====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। এই গ্রন্থে প্রচুর উদ্ভট কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।


====================================================================

সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭

====================================================================

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:০৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

হাস্যকর উদ্ভট কাহিনী !!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৪৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: তাইতেই আনন্দ নিয়ে পড়ছি একটু একটু করে।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৪৯

বারবোসা বলেছেন: গ্রিক মিথোলজিকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি যথেষ্ট সম্মান দেয়। একারণে দেখবেন তারা তাদের প্রযুক্তি এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্রিক মিথোলজিকে সম্পর্কযুক্ত করে তারা তাদের সংস্কৃতি বিস্তার ঘটাচ্ছে।সাম্প্রতিক আলোচিত পেগাসাস নামটিও হেসিয়ড আর হোমারের বই থেকে নেয়া।
কিন্তু হিন্দু পুরাণকে আমাদের শিক্ষিত সমাজ সেভাবে দাম দেয় না।একে শুধু ধর্ম হিসেবেই দেখে।এভাবে চলতে থাকলে আমরাদের প্রাচীন সাহিত্যের এই সমৃদ্ধ অতীত বিলীন হতে সময় নিবে না।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৫২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সুচিন্তিতো চমৎকার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ বারবোসা ভাই।

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


সব দঃর্মের পতন ঘটাবে দঃর্মের রূপকাহিনীগুলো।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:৩৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: দঃর্মে কি জিনিস? ধর্ম?

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:২১

বিটপি বলেছেন: এইসব মানুষ ও দেবতারা কি সামান্য কারণেই একজন আরেকজনকে অভিশাপ দিয়ে বেড়াত? এদের খেয়েদেয়ে আর কাজ ছিলনা?

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:৩৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতেও খুব একটা বেগ পেতে হতো না।

৫| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:২৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মহাভারত সম্ভবত হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থ না। এটা একটা মহাকাব্য। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী 'মহাভারত (সংস্কৃত: महाभारतम्) সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রাচীন ভারতের দুটি প্রধান মহাকাব্যের অন্যতম (অপরটি হল রামায়ণ)। এই মহাকাব্যটি হিন্দুশাস্ত্রের ইতিহাস অংশের অন্তর্গত।' রামায়নও একটি মহাকাব্য।

অনেকটা মুসলমানদের বিষাদ সিন্ধু বা বিশ্ব নবীর মত। ধর্মীয় বিষয়ের উপর লেখা। কিন্তু ধর্মগ্রন্থ নয়।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:৩৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
এর কাহিনী এবং চরিত্রগুলি ওদের ধর্মের অংশ মাত্র।

৬| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: এত এত চরিত্র। নাম গুলোও অদ্ভুত। খেই হারিয়ে ফেলি।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:৪০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: নামগুলি আসলেই অদ্ভূত, চরিত্রও প্রচুর, কাহিনীও অনেক, বইটিও বিশাল।

৭| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:০৪

রানার ব্লগ বলেছেন: সাহিত্য হিসেবে চমকপ্রদ !!!!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:৪১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্য বলাচলে। রূপকথা ছাড়া আরকিছু মনে হয় না।

৮| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:৪১

অগ্নিবেশ বলেছেন: নুরু চাচায় বলেছেন, হাস্যকর উদ্ভট কাহিনী !! আবার ঘুরাইয়া ফিরাইয়া এই সব কাহিনীই তিনি বিশ্বাস করেন। সুভানাল্লহ!

০৫ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:০০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে।
অন্যের বিশ্বস নিয়ে আমাদের কিছু না বলাই ভালো।

৯| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:০২

সাসুম বলেছেন: কমেন্ট সেকশান দেখে উপলব্দি- আমরা মানুষ হতে পারিনাই এখনো- আফিমখোর ধার্মিকই রয়ে গেছি।

০৫ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:০১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: উপলব্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস

১০| ০৫ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:১৭

বিটপি বলেছেন: হ্যাঁ, হিন্দু ধর্মের অবমাননা দেখে ছাগলটার পশ্চাদ্দেশে কৃমির প্রকোপ হয়েছে। নিজে যখন ইসলাম ধর্ম নিয়ে এরকম কমেন্ট করে, তখন মনুষ্যত্ব কই থাকে?

০৫ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:০২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এই ভাবে বলাটা উচিত নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.