নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কদ্রু-বিনতার পণ
উচ্চৈঃশ্রবাকে দেখার পর কদ্রু ও বিনতার মধ্যে তার রং নিয়ে তর্ক শুরু হলো। বিনতা বললেন ওটি সম্পূর্ণ সাদা; কদ্রু বললেন ওটির লেজ কালো। অবশেষে স্থির হল আগামী কাল তাঁরা আবার ঘোড়াটিকে ভালো করে দেখবেন। যার কথা মিথ্যা হবে তিনি অন্য সতীনের দাসী হবেন।
কদ্রু তাঁর সর্পপুত্রদের ডেকে বললেন- "তোমরা শীঘ্রই গিয়ে ঐ উচ্চৈঃশ্রবার লেজের সাথে মিশে থাকো যাতে ওর লেজ কালো দেখায়। কিছু কিছু সাপেরা এতে রাজি হলো না। কদ্রু তাঁদের শাপ দিলেন যাতে তারা জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে দগ্ধ হয়। কিন্তু অন্য সাপেরা মায়ের আদেশ পালন করলো।
পরদিন সকালে কদ্রু ও বিনতা দেখলেন আসলেই উচ্চৈঃশ্রবার লেজ কালো দেখা যাচ্ছে। ফলে বিনতাকে কদ্রুর দাসী হতে হলো। এভাবে তার প্রথম পুত্রের অভিশাপ কার্যকর হলো।
গড়ুর-গজকচ্ছপ-অমৃতহরণ
বিনতার দ্বিতীয় ডিম ফুটে যে মহাবলশালী গড়ুর জন্ম নিয়ে ছিলো সে তার মা বিনতার কাছে উড়ে এলো।
কদ্রু বিনতাকে বললেন- "সমুদ্রের মধ্যে এক সুরম্য নাগালয় আছে; সেখানে আমাকে নিয়ে চল।
বিনতা কদ্রুকে আর গড়ুর তাঁর সৎ ভাই সাপদের বহন করে নিয়ে চললো। সপেরা গড়ুরের পিঠে চড়ে এক রমনীয় দ্বীপে এল। কিন্তু এখানে এসেই সাপেরা গড়ুরকে বললো "আমাদের অন্য এক দ্বীপে নিয়ে চল যেখানে নির্মল জল আছে।"
গড়ুর তার মাকে বললো- "এদের হুকুম আমাকে মানতে হবে কেন?
বিনতা জানালেন কিভাবে কদ্রু চালাকি করে তাঁকে বাজিতে পরাজিত করে দাসী বানিয়েছে। তখন গড়ুর সপদের জিজ্ঞাসা করলো কি করলে তারা দাসত্ব থেকে মুক্তি দিবে। সাপেরা বললো অমৃত এনে দিতে পারলে মুক্তি পাবে।
গড়ুর অমৃত আনতে রওনা হলো।
গড়ুর তাঁর পিতা মহর্ষি কশ্যপের কাছে গিয়ে জানালো সে ক্ষুধার্ত থাকে, প্রচুর খাবার তার দরকার কিন্তু তা সে পায় না।
কশ্যপ বললেন- "বিভাবসু নামে এক কৃপন মহর্ষি ছিলেন, তাঁর ছোট ভাই সুপ্রতীক তাদের সম্পত্তি ভাগ করে দেয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করলে বড় ভাই শুধু শুধুই ছোট ভাইকে অভিশাপ দেয় তুমি হস্তী হও বলে। আর ছোটভাই বড় ভাইকে অভিশাপ দিলেন, তুমি কচ্ছপ হও বলে। এই সরোবরে দুই ভাই বিশাল পাহাড়ের মতো হাতি আর মহামেঘের সমান কচ্ছপ হয়ে আছে, তুমি এদের খেয়ে ক্ষুধা মিটাও।
এক নখে হাতি আর এক নখে কচ্ছপকে তুলে নিয়ে গড়ুর অলম্ব তীর্থে উড়ে গেলো। সেখানকার গাছেরা ডাল ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে কাঁপতে লাগলো। একটি বিশাল বটবৃক্ষ গড়ুরকে তার ডালে বসতে বলো। গড়ুর বসামাত্র ডাল ভেঙে গেল। বালখিল্য মুনিরা সেই ডাল থেকে অধোমুখে ঝুলছেন দেখে গড়ুর ঠোট দিয়ে ডালটি ধরে ফেলে এবং বহু দেশে ঘুরে অবশেষে গন্ধমার্দন পর্বতে উপস্থিত হয়। কশ্যপ সেখানে তপস্যা করছিলেন। তিনি বালখিল্য মুনিদের বললেন গড়ুরকে ক্ষমা করে দিতে। তখন বালখিল্য মুনিগণ ডাল থেকে নেমে হিমালয়ে তপস্যা করতে গেলেন। গড়ুর তখন জনশূন্য এক পর্বতে ডালটি ফেলে হাতি ও কচ্ছপ ভোজন করলো।
ভোজন শেষ করে গড়ুর মহাবেগে উড়ে চললো অমৃত আনার জন্য।
দেবতা বৃহস্পতি বললেন- "কশ্যপ-বিনতার পুত্র গড়ুর অমৃত হরণ করতে আসছে। দেবতারা প্রস্তুত হও।"
তখন দেবতারা তাদের নানা ধরনের অস্ত্র নিয়ে অমৃত রক্ষার জন্য প্রস্তুত হলেন। গড়ুরকে দেখে দেবতারা ভয় পেয়ে গেলেও যুদ্ধ শুরু করলো।
বিশ্বকর্মা ছিলেন অমৃতের রক্ষক। তিনি গড়ুরের সঙ্গে কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে ক্ষতবিক্ষত হয়ে ভূপাতিত হলেন।
গড়ুরের পাখার আন্দোলনে ধুলি উড়ে দেবলোক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। বায়ু দেবতা সেই ধুলি সরিয়ে দিলো।
গড়ুর দেখলো অমৃতের চতুর্দিকে আগুন জ্বলছে, তার কাছে একটি ক্ষুরধার লোহারচক্র ঘুরছে। গড়ুর তার দেহ সংকুচিত করে চক্রের মাঝের ফুটো দিয়ে প্রবেশ করে দেখলো অমৃত রক্ষার জন্য দুইটি ভয়ঙ্কর সাপ পাহারায় রয়েছে।
গড়ুর ভয়ঙ্কর সাপ দুটিকে হত্যা করে অমৃত নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। সেখানে বিষ্ণু গড়ুরের জন্য অপেক্ষা করছিলো। গড়ুর অমৃত নিজে পান করে নি দেখে বিষ্ণু খুশী হয়ে গড়ুরকে বর দেন, গড়ুর অমৃত পান না করেও অমর থাকবে এবং বিষ্ণুর বাহন হবে।
ঠিক তখন ইন্দ্র গড়ুরকে বজ্রাঘাত করলেন। গড়ুরের তাতে কিছুই হলো না। ইন্দ্রর সম্মানে গড়ুর তাঁর একটি পালক ফেলে দিলো শুধু। গড়ুরের সেই সুন্দর পালক দেখে সকলে আনন্দিত হয়ে তাঁর নাম দিল সুপর্ণ।
ইন্দ্র গড়ুরকে বললেন- "যদি তোমার অমৃতের প্রয়োজন না থাকে তবে আমাকে ফিরিয়ে দাও।"
গড়ুর বললো- "একটি বিশেষ উদ্দেশ্য আমি অমৃত নিয়ে যাচ্ছি; যেখানে আমি অমৃত রাখবো সেখান থেকে তুমি তা চুরি করে নিয়ে এসো।"
ইন্দ্র তুষ্ট হয়ে গড়ুরকে বর দিলেন মহাবল সর্পগণ তাঁর খাদ্য হবে।
গড়ুর তার সাপ ভাইদের কাছে এসে বললেন, আমি অমৃত এনেছি, এই কুশের (অগ্রভাগ তীক্ষ্ণ বা ধারালো এমন তৃণ বা ঘাস) উপর রাখছি; তোমরা স্নান করে এসে খেয়ো। সাপেরা তাদের কথা রেখে গড়ুরের মা বিনতাকে দাসীত্ব থেকে মুক্ত করে দিয়ে স্নান করতে গেলেন।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। এই গ্রন্থে প্রচুর উদ্ভট কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
====================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫
====================================================================
২৮ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অনেকটা সেই রকমই মনে হয়।
২| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৪৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মজার রূপকাহিনী !!
তবে এটাও যে কারো
অমৃত বানী হতে পারে
একবিংশ শতাব্দীতে তা
কল্পনা করা যায়!!
২৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১২:২৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমার মনে হয় ঐ সময়ের লোকেরাও পুরপুরি বিশ্বাস করেনি এই কাহিনী।
৩| ২৯ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: আমি কিন্তু এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের মিল পাই।
২৯ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:৩১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: কিছু কিছু মিলতো থাকতেই পারে ভাইজান।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
তখনকার লোকেরা যা মনে এসেছে তাই বলেছে, এখন সেটা ধর্ম।