নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পশুর চামড়ার সাথে আমাদের সাধারণ জনগনের বছরে ২ বার যোগাযোগ হয়।
১ - কোরবানী শেষে আমরা পশুর চামড়া বাড়ির বাইরে ফেলে রাখি। এতিমখানা থেকে এসে নিয়ে যাবে বলে।
২ - দিন দুই পরে এলাকার এতিমখানা থেকে সেই চামড়ার বিক্রয় মূল্যের অর্ধেক টাকা সংগ্রহ করি। দরিদ্রদের বিলিয়ে দিবো বলে।
এলাকার এতিমখানার নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে চামড়া সংগ্রহের আরো কিছু কাজের ফিরিস্তি আমি জানি।
কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় অনেক দিন আগে থেকেই।
# কোরবানীর পশুর চামড়া এতিমখানার জন্য দান হিসেবে চেয়ে লিফলেট-পোস্টার-ব্যানার ছাপাতে হয়, এবং সেগুলি বিতরনের ব্যবস্থা করতে হয়।
# কোরবানীর পুশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য রশিদ বই ছাপাতে হয়।
# জেনারেল মিটিং ডেকে এলাকায় মাইকং করতে হয়। সদস্যদের চিঠি পাঠাতে হয়।
# জেনারেল মিটিং-এ যারা উপস্থিত হন তাদের আপ্পায়নের ব্যবস্থা করতে হয়। (করনার কারণে এখন বন্ধ আছে।)
# এলাকাবাসীর ক্রয়কৃত পশুগুলি কোরবানী করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
# তারজন্য এতিমখানা ও মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষদের অনেকের ছুটি বাতিল করতে হয়।
# কোরবানী শেষে তাদের নিজ-নিজ বাড়িতে (গ্রামে) ফিরে যাওয়ার জন্য ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হয়। সেই ভাড়াও সাধারন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী হয়ে যায়।
# কোরবানী সম্পন্ন করতে তারা যে শ্রম দেয় তার জন্য কিছু হাদিয়া দিতে হয়।
# এলাকার প্রায় ২০টি মসজিদের খতিব-ইমাম-মুয়াজ্জিন সাহেবরাও কোরবানীর কাজে অংশ নেন বলে তাদের জন্যও কিছু সম্মানী পাঠাতে হয়।
# এলাকার প্রতিটি মসজিদের মসজিদ কমিটির সভাপতি বরাবর চিঠি পাঠাতে হয়।
# পুরনো ছুড়ি ধার করাতে হয়।
# পুরনো কিছু ছুড়ি বাতিল হয়। সেগুলির পরিবর্তে নতুন ছুড়ি তৈরি করতে হয়।
# ছুড়ির হিসাব-নিকাশ থানায় ইনফর্ম করতে হয়।
# কোরবানী শেষে বাড়ির বাইরে ফেলে রাখা চামড়া রশিদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করার জন্য অনেকগুলি ভ্যান গাড়ি ও পিকাপ ভাড়া করতে হয়।
# চামড়া সংগ্রহের কাজে ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে আর কিছু শ্রমিক নিয়োগ দিতে হয়।
# কোরবানী পশুর চামরা সংগ্রহ করে যেখানে জমা করা হয় সেখানে ছাউনির ব্যবস্থা করতে হয়। লোকজন বসার জন্য সেখানে টেবিল চেয়ার রাখতে হয়।
তারপর বিকেল থেকে অপেক্ষা করতে হয় চামড়া কেনার পাইকারদের জন্য।
এই সমস্ত কাজ গুছিয়ে আনতে যে পরিমান খরচ হয় তাতে করে দেখা যায় চামড়া প্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকার মতো খরচ পরে যায়। কমিটির সদস্য যে শ্রম আর সময় দেন তার হিসাব বাদ রইলো। কারণ তারা স্বেচ্ছায় এই শ্রম দেন, কোনো রকম সম্মানী বা ভাতা তারা নেন না।
একটা সময় ছিলো যখন আমরা ছোট ছিলাম তখন দেখতাম একটি গরুর চামড়া ২,২০০ থেকে ২,৫০০ টাকা বিক্রি করা হতো। এতিখানা চামড়া বিক্রি করে বিক্রয় মূল্যের অর্ধে এতিমদের জন্য রেখে বাকি অর্ধেক গরুর মালিকদের দিয়ে দিতেন যাতে গরুর মালিকেরা তাদের পরিচিত দরিদ্রদের মাঝে তা বিতরন করতে পারেন। কিন্তু এখন সেই চিত্র পালটে গেছে।
এখন বর্তমানে একটি গরুর চামড়ার বিক্রয় মূল্য পাওয়া যায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। (এবছর কি হবে কে জানে!!)
মহিষের চামড়ার বিক্রয় মূল্য পাওয়া যায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
ছাগলের চামড়ার বিক্রয় মূল্য পাওয়া যায় ২০ থেকে ৩০ টাকা।
কখনো কখনো মহিষ ও ছাগলের চামড়া বিক্রিকরা সম্ভব হয় না, তখন ফ্রী দিয়ে দিতে হয়।
ফলে গত প্রায় ৩ বছর যাবত আমরা ইচ্ছে থাকলেও গরুর মালিককে চামড়ার টাকার অংশ দিতে পারছি না।
গরিবের হকের, এতিমের হকের এই চামড়ার মূল্য নিয়ে যারা কারসাজি করছেন তাদের জন্য উচিত মূল্য নির্ধারিত হয়ে আছে আল্লাহর দরবারে।
২০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৩৭
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: গ্রাম আর শহরের হিসাবটা অনেকটাই আলাদা ভাই।
কয়েক বছর আগেও বাইরের লোক এসে ভুয়া রশিদ কেটে চামড়া নিয়ে চলে যেতো। (এটা ঠেকাতে প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন রং এর রশিদ বই ছাপাতে হয়।)
পাশের এলাকার মাদ্রাসা থেকেও চামড়া নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো।
এখন এইসব কিছুটা কমে গেছে।
আগে চামড়া আমরা ডাকে বিক্রি করতাম। ৮-১০ জন পাইকার আসতো। যে বেশী দাম বলতো সেই পেতো। এখন এখন একজনও পাইকার আসে না। আমরা নিজেরাই তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিক্রির ব্যবস্থা করি।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:০৭
অপু তানভীর বলেছেন: আমাদের গ্রামের মাদ্রাসা অবশ্য এতো ঝামেলা করে না । মাদ্রাসার ছাত্ররা ঈদের দিন বিকেলে কিংবা পরের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া নিয়ে আসে । যাদের দেওয়ার তারা দিয়ে দেয় তাদের । চামড়া বিক্রির কাজটা ওরাই করে । আমরা শুরু থেকে এভাবেই দিয়ে আসছি ।
আগে চামড়ার দাম অনেক ছিল । এখন এতো কমে গেল কেন আজও বুঝলাম না । চামড়াজাত পন্যের দাম কিংবা চাহিদা কোনটাই তো কমে নি !