নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তারাঝরা
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : অ্যারোমেটিক জুঁই, এরোমেটিক জুঁই
Common Name : Fragrant virgin's bower, fragrant clematis, sweet-scented virgin's bower, Indian Traveller's Joy
Scientific Name : Clematis flammula / Clematis gouriana
বিদেশী গাছ বলে এদের বাংলা কোনো নাম ছিলো না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “সম্ভাষণ” কবিতায় এই ফুলের নাম দিয়ে ছিলেন “তারাঝরা”। কিন্তু আমাদের দেশের নার্সারী লোকেরা তারাঝরা নামের হদিস না জানার কারণে নিজেদের মতো করে এর নাম দিয়েছে “অ্যারোমেটিক জুঁই”। অ্যারোমেটিক জুঁই নামের সাথে জুঁই শব্দটি থাকলেও বাস্তবে আসল জুঁই এর সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তারাঝরা ঝরে গিয়ে এখন অ্যারোমেটিক জুঁই নামটাই সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছিলো। তবে ইদানিং তারাঝরা নামটার প্রসার ঘটছে।
সম্ভাষণ
রোজই ডাকি তোমার নাম ধরে,
বলি "চারু'।
হঠাৎ ইচ্ছা হল আর-কিছু বলি,
যাকে বলে সম্ভাষণ,
যেমন বলত সত্যযুগের ভালোবাসায়।
সব চেয়ে সহজ ডাক-- প্রিয়তমে।
সেটা আবৃত্তি করেছি মনে মনে,
তার উত্তরে মনে-মনেই শুনেছি তোমার উচ্চহাসি।
বুঝেছি, মন্দমধুর হাসি এ যুগের নয়;
এ যে নয় অবন্তী, নয় উজ্জয়িনী।
আটপহুরে নামটাতে দোষ কী হল
এই তোমার প্রশ্ন।
বলি তবে।
কাজ ছিল না বেশি,
সকাল সকাল ফিরেছি বাসায়।
হাতে বিকেলের খবরের কাগজ,
বসেছি বারান্দায়, রেলিঙে পা দুটো তোলা।
হঠাৎ চোখে পড়ল পাশের ঘরে
তোমার বৈকালিকী সাজের ধারা।
বাঁধছিলে চুল আয়নার সামনে
বেণী পাকিয়ে পাকিয়ে, কাঁটা বিঁধে বিঁধে।
এমন মন দিয়ে দেখি নি তোমাকে অনেক দিন;
দেখি নি এমন বাঁকা করে মাথা-হেলানো
চুল-বাঁধার কারিগরিতে,
এমন দুই হাতের মিতালি
চুড়িবালার ঠুনঠুনির তালে।
শেষে ওই ধানিরঙের আঁচলখানিতে
কোথাও কিছু ঢিল দিলে,
আঁট করলে কোথাও বা,
কোথাও একটু টেনে দিলে নীচের দিকে,
কবিরা যেমন ছন্দ বদল করে
একটু আধটু বাঁকিয়ে চুরিয়ে।
আজ প্রথম আমার মনে হল
অল্প মজুরির দিন-চালানো
একটা মানুষের জন্যে
নিজেকে তো সাজিয়ে তুলছে
আমাদের ঘরের পুরোনো বউ
দিনে দিনে নতুন-দাম দেওয়া রূপে।
এ তো নয় আমার আটপহুরে চারু।
ঠিক এমনি করেই দেখা দিত অন্যযুগের অবন্তিকা
ভালোলাগার অপরূপবেশে
ভালোবাসার চকিত চোখে।
অমরুশতকের চৌপদীতে
--শিখরিণীতে হোক, স্রগ্ধরায় হোক--
ওকে তো ঠিক মানাতো।
সাজের ঘর থেকে বসবার ঘরে
ওই যে আসছে অভিসারিকা,
ও যেন কাছের কালে আসছে
দূরের কালের বাণী।
বাগানে গেলেম নেমে।
ঠিক করেছি আমিও আমার সোহাগকে দেব মর্যাদা
শিল্পে-সাজিয়ে-তোলা মানপত্রে।
যখন ডাকব তোমাকে ঘরে
সে হবে যেন আবাহনী।
সামনেই লতা ভরেছে সাদা ফুলে--
বিলিতি নাম, মনে থাকে না--
নাম দিয়েছি তারাঝরা;
রাতের বেলায় গন্ধ তার
ফুলবাগানের প্রলাপের মতো।
এবার সে ফুটেছে অকালে,
সবুর সয় নি শীত ফুরোবার।
এনেছি তার একটি গুচ্ছ,
তারও একটি সই থাকবে আমার নিবেদনে।
আজ গোধূলিলগ্নে তুমি ক্লাসিক যুগের চারুপ্রভা,
আমি ক্লাসিকযুগের অজিতকুমার।
দুটি কথা আজ বলব আমি,
সাজানো কথা--
হাসতে হয় হেসো।
সে কথা মনে মনে গড়ে তুলেছি
যেমন করে তুমি জড়িয়ে তুলেছ তোমার খোঁপা।
বলব, "প্রিয়ে, এই পরদেশী ফুলের মঞ্জরী
আকাশে চেয়ে খুঁজছিল বসন্তের রাত্রি,
এনেছি আমি তাকে দয়া করে
তোমার ওই কালো চুলে।"
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
তারাঝরার আদিনিবাস ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল ও আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল। গুচ্ছবদ্ধ ছোট মিষ্টি সাদা ফুল ও তার ঘ্রাণের জন্য এটি বিখ্যাত। এর এক নিকট আত্মীয় আছে আমাদের দেশের বন-জঙ্গলে, নামতার “ছাগলবটি”, Scientific Name : Clematis zeylanica.
তারাঝরা লতান আরোহী গাছ। প্রচুর শাখা-প্রশাখা যুক্ত গাছটি অবলম্বন পেলে বেয়ে বেড়ে উঠে। আমাদের দেশে এপ্রিল মাস থেকে গাছ ভরে গুচ্ছবদ্ধ সাদা সাদা সুগন্ধি ফুল ফোঁটে। মজার বিষয় হলো এই ফুলের কোনো পাপড়ি নেই, পাপড়ির মতো দেখতে অংশগুলো ফুলের বৃতি। প্রতিটি ফুল ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি প্রশস্ত হয়। ফুলের মাঝখান হালকা সবুজ আভাযুক্ত এবং এখান থেকে বের হয় অসংখ্য সাদা রঙের পুংকেশর।
ছবি তোলার স্থান : ছোটো বোনের ছাদ বাগান, বাড্ডা, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ০৯/০৫/২০১৯ ইং
=================================================================
আজি যত কুসুম কলি ফুটিলো কাননে
ফুলেদের কথা
অশোক, অর্কিড, অলকানন্দা (বেগুনী), অলকানন্দা (হলুদ), অলকানন্দা, আকন্দ, আমরুল,
কলাবতী, কচুরিপানা ফুল, কসমস, কালো পঙ্গপাল, কর্ণফ্লাওয়ার
গাঁদা, গামারি, গোলাপ, গোলাপি আমরুল, গ্লুকাস ক্যাসিয়া,
ঘোড়া চক্কর
জ্যাকারান্ডা,
ঝুমকোলতা
ডালিয়া
তমাল, তারাঝরা
দাঁতরাঙ্গা, দাদমর্দন, দেবকাঞ্চন, দোলনচাঁপা
ধুতুরা
নাগেশ্বর, নাগলিঙ্গম, নীল হুড়হুড়ে, নীল জ্যাকারান্ডা,
পপী, পুন্নাগ
ফাল্গুনমঞ্জরী, ফুরুস (সাদা)
বরুণ, বড়নখা, বিড়াল নখা, বাদুড় ফুল, বাগানবিলাস, বেগুনী অলকানন্দা, বোতল ব্রাশ, ব্লিডিং হার্ট
ভাট ফুল
মাধবীলতা, মধুমঞ্জরি
রঙ্গন, রুদ্রপলাশ, রাজ অশোক, রাধাচূড়া, রাণীচূড়া
লতা পারুল
শাপলা (সাদা), শিউলি, শিবজটা, সুলতান চাঁপা
জবা - ১, জবা - ২, সাদা জবা, ঝুমকো জবা, লঙ্কা জবা, পঞ্চমুখী জবা, বহুদল জবা, রক্ত জবা, হলুদ জবা, গোলাপী জবা
=================================================================
ফুলেদের ছবি
ফুলের রাণী গোলাপ - ০১, ফুলের রাণী গোলাপ - ০২, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৩, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৪
ফুলের রাণী গোলাপ - ০৫, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৬, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৭, ফুলের রাণী গোলাপ - ০৮
ফুলের রাণী গোলাপ - ০৯, ফুলের রাণী গোলাপ - ১০, ফুলের রাণী গোলাপ - ১১, ফুলের রাণী গোলাপ - ১২
ফুলের রাণী গোলাপ - ১৩, রাতের গোলাপ - ০১, রাতের গোলাপ - ০২, রাতের গোলাপ - ০৩
অর্কিড-২, অর্কিড-৩, অর্কিড-৪, অলকানন্দা (বেগুনী)-২, অলকানন্দা (বেগুনী)-৩,
কসমস-২, কসমস-৩, কসমস-৪, কসমস-৫, কসমস-৬, কর্ণফ্লাওয়ার-২,
গাঁদা-২, গ্লুকাস ক্যাসিয়া-২,
ডালিয়া-২, ডালিয়া-৩, ডালিয়া-৪,
তারাঝরা- ২, দাদমর্দন-২, নাগলিঙ্গম-২,
পপী-২, পপী-৩, পপী-৪,
বাগানবিলাস-২, বোতল ব্রাশ-২, বোতল ব্রাশ-৩,
রাধাচূড়া-২, রাধাচূড়া-৩, লতা পারুল-২
গামারির হলুদ বন্যা, আরো কিছু গামারি, ঝুমকোলতা, শিমুল গাছে আগুন, কদম ফুলের ১০টি ছবি, অশোক ফুলের ছবি, নাগেশ্বর ও ভোমড়, পলাশ ফুটেছে......, ডালিয়া, ধুতরা ফুল
মিষ্টি জলপাইয়ের ফুল, ডালের ফুল
=================================================================
গাছেদের কথা
বাংলাদেশের সংরক্ষিত উদ্ভিদের সচিত্র তালিকা, অশোক সমগ্র, কৃষ্ণচূড়া, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ও কনকচূড়া বিতর্ক, চাঁপা নিয়ে চাপাবাজি, বিলম্ব, মাছি ফাঁদ উদ্ভিদ, জল জমানি পাতা, শিউলি
=================================================================
বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল
বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০১, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০২, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৩
বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৪, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৫, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৬
বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৭, বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুল - ০৮
=================================================================
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০১, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০২, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৩
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৪, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৫, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৬
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৭, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৮, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ০৯
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১০, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১১, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১২
বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১৩, বিভিন্ন প্রজাতীর গোলাপ ফুল : পর্ব ১৪
=================================================================
১০টি ফুলের ছবি
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ০১ , - , পর্ব - ০২ , - , পর্ব - ০২ , - , পর্ব - ০৪ , - , পর্ব - ০৫
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ০৬ , - , পর্ব - ০৭ , - , পর্ব - ০৮ , - , পর্ব - ০৯ , - , পর্ব - ১০
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ১১ , - , পর্ব - ১২ , - , পর্ব - ১৩ , - , পর্ব - ১৪ , - , পর্ব - ১৫
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ১৬ , - , পর্ব - ১৭ , - , পর্ব - ১৮ , - , পর্ব - ১৯ , - , পর্ব - ২০
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ২১ , - , পর্ব - ২২ , - , পর্ব - ২৩ , - , পর্ব - ২৪ , - , পর্ব - ২৫
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ২৬ , - , পর্ব - ২৭ , - , পর্ব - ২৮ , - , পর্ব - ২৯ , - , পর্ব - ৩০
১০টি ফুলের ছবি : পর্ব - ৩১
=================================================================
গাছ-গাছালি; লতা-পাতা
গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০১, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০২, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০৩, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০৪, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০৫, গাছ-গাছালি; লতা-পাতা - ০৬
=================================================================
২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:০৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
ক্যামেলিয়াটা আবার পড়েন, ভালো লাগবে।
নাম তার কমলা,
দেখেছি তার খাতার উপরে লেখা।
সে চলেছিল ট্রামে, তার ভাইকে নিয়ে কলেজের রাস্তায় ।
আমি ছিলেম পিছনের বেঞ্চিতে।
মুখের এক পাশের নিটোল রেখাটি দেখা যায়,
আর ঘাড়ের উপর কোমল চুলগুলি খোঁপার নীচে।
কোলে তার ছিল বই আর খাতা।
যেখানে আমার নামবার সেখানে নামা হল না।
এখন থেকে সময়ের হিসাব করে বেরোই --
সে হিসাব আমার কাজের সঙ্গে ঠিকটি মেলে না,
প্রায় ঠিক মেলে ওদের বেরোবার সময়ের সঙ্গে,
প্রায়ই হয় দেখা।
মনে মনে ভাবি, আর-কোনো সম্বন্ধ না থাক্,
ও তো আমার সহযাত্রিণী।
নির্মল বুদ্ধির চেহারা
ঝক্ঝক্ করছে যেন।
সুকুমার কপাল থেকে চুল উপরে তোলা,
উজ্জ্বল চোখের দৃষ্টি নিঃসংকোচ।
মনে ভাবি একটা কোনো সংকট দেখা দেয় না কেন,
উদ্ধার করে জন্ম সার্থক করি --
রাস্তার মধ্যে একটা কোনো উৎপাত,
কোনো-একজন গুণ্ডার স্পর্ধা।
এমন তো আজকাল ঘটেই থাকে।
কিন্তু আমার ভাগ্যটা যেন ঘোলা জলের ডোবা,
বড়ো রকম ইতিহাস ধরে না তার মধ্যে,
নিরীহ দিনগুলো ব্যাঙের মতো একঘেয়ে ডাকে --
না সেখানে হাঙর-কুমিরের নিমন্ত্রণ, না রাজহাঁসের।
একদিন ছিল ঠেলাঠেলি ভিড়।
কমলার পাশে বসেছে একজন আধা-ইংরেজ।
ইচ্ছে করছিল, অকারণে টুপিটা উড়িয়ে দিই তার মাথা থেকে,
ঘাড়ে ধরে তাকে রাস্তায় দিই নামিয়ে।
কোনো ছুতো পাই নে, হাত নিশ্পিশ্ করে।
এমন সময়ে সে এক মোটা চুরোট ধরিয়ে
টানতে করলে শুরু।
কাছে এসে বললুম, ‘ ফেলো চুরোট। ‘
যেন পেলেই না শুনতে,
ধোঁওয়া ওড়াতে লাগল বেশ ঘোরালো করে।
মুখ থেকে টেনে ফেলে দিলেম চুরোট রাস্তায়।
হাতে মুঠো পাকিয়ে একবার তাকালো কট্মট্ ক’রে --
আর কিছু বললে না, এক লাফে নেমে গেল।
বোধ হয় আমাকে চেনে।
আমার নাম আছে ফুটবল খেলায়,
বেশ একটু চওড়া গোছের নাম।
লাল হয়ে উঠল মেয়েটির মুখ,
বই খুলে মাথা নিচু করে ভান করলে পড়বার।
হাত কাঁপতে লাগল,
কটাক্ষেও তাকালে না বীরপুরুষের দিকে।
আপিসের বাবুরা বললে, ‘বেশ করেছেন মশায়। ‘
একটু পরেই মেয়েটি নেমে পড়ল অজায়গায়,
একটা ট্যাক্সি নিয়ে গেল চলে।
পরদিন তাকে দেখলুম না,
তার পরদিনও না,
তৃতীয় দিনে দেখি
একটা ঠেলাগাড়িতে চলেছে কলেজে।
বুঝলুম, ভুল করেছি গোঁয়ারের মতো।
ও মেয়ে নিজের দায় নিজেই পারে নিতে,
আমাকে কোনো দরকারই ছিল না।
আবার বললুম মনে মনে,
ভাগ্যটা ঘোলা জলের ডোবা --
বীরত্বের স্মৃতি মনের মধ্যে কেবলই আজ আওয়াজ করছে
কোলাব্যাঙের ঠাট্টার মতো।
ঠিক করলুম ভুল শোধরাতে হবে।
খবর পেয়েছি গরমের ছুটিতে ওরা যায় দার্জিলিঙে।
সেবার আমারও হাওয়া বদলাবার জরুরি দরকার।
ওদের ছোট্ট বাসা, নাম দিয়েছে মতিয়া --
রাস্তা থেকে একটু নেমে এক কোণে
গাছের আড়ালে,
সামনে বরফের পাহাড়।
শোনা গেল আসবে না এবার।
ফিরব মনে করছি এমন সময়ে আমার এক ভক্তের সঙ্গে দেখা,
মোহনলাল --
রোগা মানুষটি, লম্বা, চোখে চশম,
দুর্বল পাকযন্ত্র দার্জিলিঙের হাওয়ায় একটু উৎসাহ পায়।
সে বললে, ‘তনুকা আমার বোন,
কিছুতে ছাড়বে না তোমার সঙ্গে দেখা না করে। ‘
মেয়েটি ছায়ার মতো,
দেহ যতটুকু না হলে নয় ততটুকু --
যতটা পড়াশোনায় ঝোঁক, আহারে ততটা নয়।
ফুটবলের সর্দারের ‘পরে তাই এত অদ্ভুত ভক্তি --
মনে করলে আলাপ করতে এসেছি সে আমার দুর্লভ দয়া।
হায় রে ভাগ্যের খেলা!
যেদিন নেমে আসব তার দু দিন আগে তনুকা বললে,
‘একটি জিনিস দেব আপনাকে, যাতে মনে থাকবে আমাদের কথা --
একটি ফুলের গাছ। ‘
এ এক উৎপাত। চুপ করে রইলেম।
তনুকা বললে, ‘দামি দুর্লভ গাছ,
এ দেশের মাটিতে অনেক যত্নে বাঁচে। ‘
জিগেস করলেম, ‘নামটা কী?’
সে বললে ‘ক্যামেলিয়া’।
চমক লাগল --
আর-একটা নাম ঝলক দিয়ে উঠল মনের অন্ধকারে।
হেসে বললেম, ‘ ক্যামেলিয়া,
সহজে বুঝি এর মন মেলে না। ‘
তনুকা কী বুঝলে জানি নে, হঠাৎ লজ্জা পেলে,
খুশিও হল।
চললেম টবসুদ্ধ গাছ নিয়ে।
দেখা গেল পার্শ্ববর্তিনী হিসাবে সহযাত্রিণীটি সহজ নয়।
একটা দো-কামরা গাড়িতে
টবটাকে লুকোলেম নাবার ঘরে।
থাক্ এই ভ্রমণবৃত্তান্ত,
বাদ দেওয়া যাক আরো মাস কয়েকের তুচ্ছতা।
পুজোর ছুটিতে প্রহসনের যবনিকা উঠল
সাঁওতাল পরগনায়।
জায়গাটা ছোটো। নাম বলতে চাই নে --
বায়ুবদলের বায়ু-গ্রস্তদল এ জায়গার খবর জানে না।
কমলার মামা ছিলেন রেলের এঞ্জিনিয়র।
এইখানে বাসা বেঁধেছেন
শালবনে ছায়ায়, কাঠবিড়ালিদের পাড়ায়।
সেখানে নীল পাহাড় দেখা যায় দিগন্তে,
অদূরে জলধারা চলেছে বালির মধ্যে দিয়ে,
পলাশবনে তসরের গুটি ধরেছে,
মহিষ চরছে হর্তকি গাছের তলায় --
উলঙ্গ সাঁওতালের ছেলে পিঠের উপরে।
বাসাবাড়ি কোথাও নেই,
তাই তাঁবু পাতলেম নদীর ধারে।
সঙ্গী ছিল না কেউ,
কেবল ছিল টবে সেই ক্যামেলিয়া।
কমলা এসেছে মাকে নিয়ে।
রোদ ওঠবার আগে
হিমে-ছোঁওয়া স্নিগ্ধ হাওয়ায়
শাল-বাগানের ভিতর দিয়ে বেড়াতে যায় ছাতি হাতে।
মেঠো ফুলগুলো পায়ে এসে মাথা কোটে,
কিন্তু সে কি চেয়ে দেখে।
অল্পজল নদী পায়ে হেঁটে
পেরিয়ে যায় ও পারে,
সেখানে সিসুগাছের তলায় বই পড়ে।
আর আমাকে সে যে চিনেছে
তা জানলেম আমাকে লক্ষ্য করে না বলেই।
একদিন দেখি নদীর ধারে বালির উপর চড়িভাতি করছে এরা।
ইচ্ছে হল গিয়ে বলি, আমাকে দরকার কি নেই কিছুতেই।
আমি পারি জল তুলে আনতে নদী থেকে --
পারি বন থেকে কাঠ আনতে কেটে,
আর, তা ছাড়া কাছাকাছি জঙ্গলের মধ্যে
একটা ভদ্রগোছের ভালুকও কি মেলে না।
দেখলেম দলের মধ্যে একজন যুবক --
শর্ট্-পরা, গায়ে রেশমের বিলিতি জামা,
কমলার পাশে পা ছড়িয়ে
হাভানা চুরোট খাচ্ছে।
আর, কমলা অন্যমনে টুকরো টুকরো করছে
একটা শ্বেতজবার পাপড়ি,
পাশে পড়ে আছে
বিলিতি মাসিক পত্র।
মুহূর্তে বুঝলেম এই সাঁওতাল পরগনার নির্জন কোণে
আমি অসহ্য অতিরিক্ত, ধরবে না কোথাও।
তখনি চলে যেতেম, কিন্তু বাকি আছে একটি কাজ।
আর দিন-কয়েকেই ক্যামেলিয়া ফুটবে,
পাঠিয়ে দিয়ে তবে ছুটি।
সমস্ত দিন বন্দুক ঘাড়ে শিকারে ফিরি বনে জঙ্গলে,
সন্ধ্যার আগে ফিরে এসে টবে দিই জল
আর দেখি কুঁড়ি এগোল কত দূর।
সময় হয়েছে আজ।
যে আনে আমার রান্নার কাঠ
ডেকেছি সেই সাঁওতাল মেয়েটিকে।
তার হাত দিয়ে পাঠাব
শালপাতার পাত্রে।
তাঁবুর মধ্যে বসে তখন পড়ছি ডিটেকটিভ গল্প।
বাইরে থেকে মিষ্টিসুরে আওয়াজ এল, ‘বাবু, ডেকেছিস কেনে। ‘
বেরিয়ে এসে দেখি ক্যামেলিয়া
সাঁওতাল মেয়ের কানে,
কালো গালের উপর আলো করেছে।
সে আবার জিগেস করলে, ‘ডেকেছিস কেনে। ‘
আমি বললেম, ‘ এইজন্যেই। ‘
তার পরে ফিরে এলেম কলকাতায়।
২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:১৬
নজসু বলেছেন:
ছবি আর লেখা দুটোই অপূর্ব।
প্রথম ছবিটা দেখেই মনে হচ্ছে আকাশের বুকে যেন তারা ফুটে আছে।
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই। লাইক।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৪২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৫৫
মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন: দারুণ সুন্দর ফুল, তার উপর এতো সুন্দর নাম " তারাঝরা"।
মনোমুগ্ধকর লেখনি হে সুপ্রিয় ।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৪৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৩৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন: সবই চমৎকার ফুল ও বর্ণনা
২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৪৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১৪
মা.হাসান বলেছেন: নাম জানা ছিল কি? ভুলে গেছি। তবে চমৎকার ঘ্রাণ, ঘ্রাণটা ভুলি নি।
নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৪৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: স্বাগতম আপনাকে।
ঘ্রাণের বিষয়টা সঠিক বলেছেন।
সন্ধ্যার পরে আরো বেশি তীব্র হয়।
৬| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ৩:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
০৫ ই মে, ২০২১ সকাল ১১:৫০
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আপনাকে স্বাগতম
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: ফুলটার কি অদ্ভুত সুন্দর নাম!!! তারাঝরা
রবীন্দ্রনাথের কবিতাটা অসাধারণ লাগলো।