নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুক্তিবাক্য

১০ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৬

শুক্তিবাক্য হল এমন একটি বাক্য যেখানে বর্ণমালার সবগুলো বর্ণ অন্তত একবার করে আছে। যেমন ইংরেজি "The quick brown fox jumps over the lazy dog" বাক্যটিতে ইংরেজি বর্ণমালার ২৬ টি বর্ণই কমপক্ষে একবার করে আছে।



ইংরেজির তুলনায় বাংলা শুক্তিবাক্য তৈরি করা খুবই কঠিন কাজ। অনেকেই এই কঠিন কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছেন।


যতদূর জানা যায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'প্রসঙ্গ বাংলাভাষা' বইয়ে ভারতীয় ভাষাবিদ মনোজকুমার মিত্রের লেখা “বাংলা ইঞ্জিনিয়ারিং বর্ণমালা” প্রবন্ধে প্রথম বাংলা ভাষায় প্যানগ্রাম বা শুক্তিবাক্য তৈরি করেন। সেটি ছিলো নিম্নরূপ -

বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের নিখুঁত গল্পটির অর্ধেক বলতেই ঋতু ভুঁইঞা আর ঐন্দ্রিলা দারুণ হৈ-হৈ করে উঠল—ওঃ, ব্যাস্ এবার থামো বুঝেছি বড্ডো পুরানো ঢঙের কেমন এক গল্প যার নীতি বাক্য হল--"মূঢ় আড়ম্বর ও আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ ক্ষতি"—তাই না, এ্যাঁ?


ব্লগার জিকো তৈরি করেন নিচের বাংলা প্যানগ্রামটি।
বর্ষামুখর দিন শেষে, ঊর্দ্ধপানে চেয়ে যখন আষাঢ়ে গল্প শোনাতে বসে ওসমান ভুঁইঞা, ঈষান কোণে তখন অন্ধকার মেঘের আড়ম্বর, সবুজে ঋদ্ধ বনভূমির নির্জনতা চিরে থেকে থেকে ঐরাবতের ডাক, মাটির উপর শুকনো পাতা ঝরে পড়ে ঔদাসীন্যে, এবং তারই ফাঁকে জমে থাকা ঢের পুরোনো গভীর দুঃখ হঠাৎ যেন বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে ধূসর জীবনে রঙধনু এনে দেয়।


সাধুভাষায় রচিত আরেকটি বাংলা প্যানগ্রামের চেষ্টা রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক সংগৃহীত ও কিছুটা সংস্কারকৃত।
মহারাজ ঊষাকালে বৃহৎ ঐরাবতে রাজপথের অর্ধেক প্রদক্ষিণ করতঃ হঠাত উক্তি করিলেন, “এই ঢোল‌ পাখোয়াজ, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঝংকার ও সৌরভ মন্দ্রিত আড়ম্বরপূর্ন রঙিন জীবনের ছত্রতলে যে বিষণ্ণ দারিদ্র তাহা কি ঈষৎ ঔদাসীন্য, অপ্রচলিত বৈদেশিক নীতি নাকি বারভুঁইঞার সহিত পুরাণো এবং আত্মঘাতী ডামাডোলের ফসল?

‘শুবাচ লিটল ম্যাগ’-এর প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত শাহিদুল হকের লেখা আরো একটি বাংলা শুক্তি বাক্য রয়েছে-
ঊনিশে কার্তিক রাত্র সাড়ে আট ঘটিকায় ভৈরবনিবাসী ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণগ্রস্ত অভাবী দুঃস্থ পৌঢ় কৃষক এজাজ মিঞা হাতের কাছে ঔষধ থাকিতেও ঐ ঋণের ডরেই চোখে ঝাপসা দেখিয়া বুকের যন্ত্রণায় ঈষৎ কাঁপিয়া উঠিয়া উঠানে বিছানো ধূসর রঙের ফরাশের উপর ঢলিয়া পড়িলেন।


পথিক পরাণ নামে আরো একজন লিখেছেন-
"অদ্য আষাঢ়ে ঊষায় ঈশাণ কোণে মেঘের ফাঁকে বিদ্যুৎচ্ছটার ঝলক ঠাওড়ে ঋষভ মিঞা ঔপল আখড়ায় ঐকতান ভাংগিয়া ডমরু ও এসরাজ সহযোগে দুঃখ উথলাইয়া ঢাকে ইমন ধুয়া ব্যঙ্গময় করিলেন"


আরো কিছু বাংলা শুক্তি বাক্য পাওয়অ যায়, যেমন –
'আষাঢ়ের এক সকালে ঈষান কোণে মেঘের আড়ম্বর এবং সবুজে ঋদ্ধ এই বনভূমির নির্জনতা চিরে ঐরাবতের ডাকে মনে হল ঔদাসীন্যে ঝরে পড়া মাটির উপর শুকনো পাতার ফাঁকে জমে থাকা ঢের পুরনো যত গভীর দুঃখ হঠাৎ বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে অন্ধকার, ঊষর ও নঞর্থক জীবনে রঙধনু এনে দেবে।'


আর বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে ছোট শুক্তিবাক্যের লিখেছেন ফরিদ উদ্দিন।
ঈশ,
ঢিড ঔৎসুকী, অঋণী গূঢ় ঐ আচ্ছা যোদ্ধা জঁ মিঞা ; এই বাংলার নথি, ঠাট, ঝড়, ঘ্রাত, ভূত ও হউ ঊষা ফিঙে পাখি।

টিকাঃ
ঈশ - ঈশ্বর।
ঢিড - ভীষণ।
গূঢ় - লুকায়িত।
ঠাট - সেনাদল।
হউ - হয়।
জঁ মিঞা - মুক্তিযোদ্ধা জঁ ক্যা একজন ফরাসি নাগরিক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পাকিস্তানের একটি বিমান ছিনতাই করতে চেষ্টা করেছিল।

ভাবার্থঃ হে ঈশ্বর, অঋণী ভিষণ আগ্রহী মুক্তিযোদ্ধা জঁ ক্যা বা আচ্ছা যোদ্ধা জঁ মিয়া এই বাংলার লুকায়িত নথীতে ঝড়ো যোদ্ধা, একটি সেনাদল, ভুয়সী প্রশংসাকারী ফুলের ঘ্রাণ। তাই সে আমাদের মাঝে বেঁচে আছে চঞ্চল ফিঙে পাখির মতো।



শুক্তি কবিতা
শ্যামল চন্দ্র দাসের লেখা একটি শুক্তি কবিতা ছিলো। মূল কবিতাটিতে ঔ বর্ণটি অনুপস্থিত ছিলো বলে পরবর্তীতে সাকিব নূর আশরাফ সেখানে ঔ বর্ণটি যুক্ত করেন।

হৃদয়ের চঞ্চলতা বন্ধে ব্রতী হলে
জীবন পরিপূর্ণ হবে নানা রঙের ফুলে।
কুঞ্ঝটিকা প্রভঞ্জন শঙ্কার কারণ
লণ্ডভণ্ড করে যায় ধরার অঙ্গন।
ক্ষিপ্ত হলে সাঙ্গ হবে বিজ্ঞজনে বলে
শান্ত হলে এ ব্রহ্মাণ্ডে বাঞ্ছিতফল মেলে।
আষাঢ়ে ঈশান কোনে হঠাৎ ঝড় উঠে
গগন মেঘেতে ঢাকে বৃষ্টি নামে মাঠে
ঊষার আকাশে নামে সন্ধ্যার ছায়া
ঐ দেখো থেমে গেছে পারাপারে খেয়া।
শরৎ ঋতুতে চাঁদ আলোয় অংশুমান
সুখ দুঃখ পাশা পাশি সহ অবস্থান।
যে জলেতে ঈশ্বর তৃষ্ণা মেটায়
সেই জলেতে জীবকুলে বিনাশ ঘটায়।
রোগ যদি দেহ ছেড়ে মনে গিয়ে ধরে
ঔষধের সাধ্য কি বা তারে সুস্থ করে?



এছাড়াও শাহিদুল হক সকল বর্ণের সহযোগে ২টি ছড়াও লেখেন-
১। ক্ষুদ্র ঋণ
ঋণের ডরে প্রৌঢ় কৃষক
ঝাপসা দেখে চোখে
জাল ছড়ানো ঋণের ফাঁদে
না বুঝেই সব ঢোকে।
অবশেষে সব হারিয়ে
নিঃস্ব হয়ে ঘোরে
উপায়হীনের নেই যে কেহ
বাঁচবে তাকে ধরে।
ঔষধপথ্য জোটে না আর
পুলিশ এসে বান্ধে
ঈশান কোণে মেঘের ভয়ে
গরীব মিঞা কান্দে।
শেয়াল সংঘের ঐকতানে
ঠগের বাঁশি বাজে
রাঙা ঊষা আর ওঠে না
চাষার জগৎ মাঝে।




ঘূর্ণিঝড়ে ঊষা বক্ষে
ঈগল অনুঃ ছায়া ঐ
প্রৌঢ় ঋভু মঞ্চে উঠে
ঔদার্য খোঁজে ওই।

ডিঙা ঢং তফাৎ আশা
এ ধারটা থেকে হাসা।



বিদ্রোহী ভৃগু লিখেছেন
"আদম ও ঈভ ঐ বেহেশেতে
অনঢ় ঋজু সূখে;
অকস্মাৎ ঝড় ফু......।
গগনে ঢঙ, ডং--ধ্রি..
থৈ পিছলে ঠা.......
এ যে উষ্ণ চর ঘাটা দু'নইয়া
ঔঃঁ ।।


তথ্যসূত্র
https://www.somewhereinblog.net/blog/faridsworld07/29757131
https://shubach.blogspot.com/2014/07/blog-post_41.html
http://iazico.blogspot.com/2007/07/blog-post_22.html
http://bangalabhasha.blogspot.com/2007/06/blog-post_26.html
https://www.facebook.com/permalink.php?id=101907041564221&story_fbid=126424849112440
https://www.wikiwand.com/id/Daftar_pangram
https://bn.wikipedia.org/wiki/শুক্তিবাক্য

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:১০

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলা ব্যাকারনের চেয়ে আরবী সহজ।

১১ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:১৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আরবি সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই। আমার কাছে সব ব্যাকরণই কঠিন।

২| ১১ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৩:৫৩

জগতারন বলেছেন:
প্রিয় তুলে রাখলাম।

১১ ই মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:০১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: পোস্টটি প্রিয়েত রাখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ১১ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:২৯

জুল ভার্ন বলেছেন: বাংলা ব্যকরণে আপনার দক্ষতা প্রসংশনীয়।

১১ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ‌এর একটা শব্দও আমার লেখা না। সবগুলি সংগ্রহ করা বিভিন্ন যায়গা থেকে। সূত্রে তা উল্লেখ আছে।
বাংলা ব্যকরণে সব সময় আমি ভয় পেয়েছি ছাত্রজীবনে। এখনও পাই।

৪| ১১ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আরবি সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই। আমার কাছে সব ব্যাকরণই কঠিন।

সহমত।

১১ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হুম

৫| ১১ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:৪৪

করুণাধারা বলেছেন: অন্যরকমের একটা পোস্ট। পড়ে মুগ্ধ হলাম। ইংরেজি শুক্তি বাক্যটা জানতাম, বাংলায় এমন কিছু আছে আপনার সৌজন্যে জানলাম।

১১ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:০১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অনেক অনেক বছর আগে হঠাত করেই মনোজকুমার মিত্রের শুক্তিবাক্যটা চোখে পড়ে যায়। তখনই সেটি কপি করে রেখে ছিলাম। পরে খোঁজ নিতে গিয়ে আরো অনেক গুলি পেয়ে যাই, সেগুলি নিয়ই এই পোস্ট করা।

৬| ১১ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:২০

আমি সাজিদ বলেছেন: পোস্ট পড়ে মনে হলো, যারা উপরের বাক্যগুলো রচনা করেছেন, তারা ভিনগ্রহের প্রানী =p~

এত জটিল ও সময় সাপেক্ষ কাজ! ধন্যবাদ দারুন কঠিন বিষয়ে জানানোর জন্য।

১১ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:০২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: কঠিক কাজ অবশ্যই, আর উনারা কঠিক কাজ করেই কঠিন আনন্দ পেয়েছেন বলেই আমার বিশ্বাস।

৭| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৪৬

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: চাইলে যোগ করে নিতে পারেন প্রিয়জন।

বাংলা ভাষায় এ নিয়মে প্রথম কোনো লেখা।

(প্যানগ্রাম-০৭)

শুভেচ্ছা
হাফেজ আহমেদ

উঃ!
রূঢ় মিঞা আজ ঔগ্র্য
অপ্রিয় ঘাড়ে ঝুঁটে ফণী-বৌ!
ঐ সূর্যে ঈর্ষা ঊতি
হঠাৎ ডিঙি ও ঢং খেই
এ নৃলোকে ঋদ্ধ শুভেচ্ছা থৈ।

সর্বমোট ৫০টি বর্ণমালা দিয়ে লেখা এ কবিতায় বাংলা ভাষার সবগুলো (৫০ টি) বর্ণমালা শুধুমাত্র একবার করেই ব্যবহৃত হয়েছে এবং একই সাথে াা িি ীী ু ূ ৃ েে োো ৈৈ ৌৌ র্র্ ্য ্র সহ সবগুলো চিহ্নেরও ব্যবহার রয়েছে। একবার করে ৫০ টি বর্ণমালা ও সবগুলো চিহ্ন দিয়ে লেখা বাংলা ভাষায় এটিই প্রথম কোনো প্যানগ্রাম লেখা/কবিতা।

২৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১২:২৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে প্যানগ্রাম-০৭ যোগ করার জন্য।
কবিতার অর্থটি যদি এখানে সরল ভাষায় লিখে দিতেন তাহলে ভালো হতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.