নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা কাকাবাবু সিরিজের ২য় বই এই “সবুজ দ্বীপের রাজা”। এই বইতে আন্দামান দ্বীপ পুঞ্জের ছবি ফুটে উঠেছে, যেমন প্রথম বই “ভয়ংকর সুন্দর” এ ফুটে উঠেছিলো কাশ্মীরের ছবি। যাইহোক বইটির বিশাল বড় এক কাহিনী সংক্ষেপ হাজির করছি আমি, আর বলে রাখছি এটি স্পয়লার দোষে দুষ্ট একটি লেখা।
সবুজ দ্বীপের রাজা
সন্তুর অষ্টম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হতেই কাকাবাবু সন্তুকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন বললেন। সন্তুর জন্য তিনি একটা পাসপোর্ট তৈরা করালেন, কিন্তু পাসপোর্ট নিয়ে পাসপোর্ট অফিস থেকে বের হতেই একজন বিদেশী লোক সন্তুকে ধাক্কা দিয়ে তার হাত থেকে পাসপোর্টটা ফেলে দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলো। এদিকে একটি টোকাই মত ছেলে পরে যাওয়া পাসপোর্ট তুলে নিয়ে পালাতে গেলে কাকাবাবু তার হাতে ক্র্যাচ দিয়ে বাড়ি দিয়ে পাসপোর্টটি ফেলে দিলেন।
কদিন পরা কাকাবাবু আর সন্তু প্লেনে করে রওনা হলেন আন্দামানে, কিন্তু প্লেনেই সন্তু সেই বিদেশী লোক টিকে দেখল আরো একজন বিদেশীর সাথে। আন্দামানে নেমেই কাকাবাবু তাদের গাইড দাশগুপ্তকে বলে সেই বিদেশী দুজনের উপর নজর রাখার ব্যবস্থা করলো। কিন্তু পরদিন ওদের চোখের সামনে দিয়েই বিদেশী দুজন একটি বোট নিয়ে চলে গেলো অন্য একটি দ্বীপের আড়ালে কাকাবাবুরা কিছুই করতে পারলেন না।
দাশগুপ্ত আর সন্তুকে কাকাবাবু জানালেন যে সেই ১৯২৫ সালে একজন রাশিয়ান বিজ্ঞানী এখানে এসে নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে আর অনেক কজন বিজ্ঞানী এখানে এসে নিখোঁজ হয়ে গেছেন। একই যায়গায় একের পর এক এত জন বিজ্ঞানী নিখোঁজ হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক, তাই কাকাবাবু এসেছেন সেই রহস্যের সমাধান করতে।
দাশগুপ্ত বললো আন্দামানের দ্বীপগুলিতে ৫টি আদিবাসী বাস করত, তার মধ্যে ৩টি আদিবাসী শান্ত প্রকৃতির হলেও সেন্টিনেলিজ আর জারোয়ারা এখনও খুবই সহিংস রয়েগেছে। সেন্টিনেলিজরা দূরের দ্বীপে থাকলেও জারোয়ারা কাছেরই একটি দ্বীপে গহীন জঙ্গলে বাস করে। তারা সভ্য মানুষ দেখলেই বিষাক্ত তির ছুড়ে মেরে ফেলে। বিজ্ঞানীরা হয়তো সেভাবেই মারা গেছে।
দাশগুপ্ত একটা মটর বোট যোগার করে রেখেছে। সেটায় চরে ওরা সাগরের মাঝে ছড়িয়ে থাকা দ্বীপগুলি দেখতে বের হল। অনেক দূরের জারোয়া ল্যান্ড পর্যন্ত গেলো, কিন্তু সেখানে নামতে পারলো না। জারোয়া ল্যান্ডের উল্টো দিকের সৈকতে নামতে হলে পুলিশের এস পির অনুমতি লাগে। ওরা দুপুরের খাবার খেতে রঙ্গতে এসে পৌঁছল। সেখানে রাতটা কাটিয়ে পর দিন আবার পোর্ট ব্লেয়ারে ফেরার পথে কাকাবাবু জোড় করে জারোয়া ল্যান্ডে নেমে যান, কাকাবাবুর সাথে সাথে সন্তুও নেমে যায় দ্বীপে। দাশগুপ্ত আর বোটের পাইলট ভয়ে দ্রুত সেখান থেকে সরে পরে। তারা পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরে এসে এস পি সাহেবকে সব জানান।
এদিকে কাকাবাবু ও সন্তু বনের ভিতরের দিকে এগিয়ে যায়, কিছু দূর গিয়ে ওরা এক জারোয়া যুবকের মৃত দেহ দেখতে পায়, ঘাড়ে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। দেখতে দেখতে রাত নেমে এলো, সন্তুরা একটা ঝর্ণা খোঁজে পেল। সেখানে পানি পান করার সময় বুঝতে পারলো কাছাকাছি বিদেশী লোকগুলি রয়েছে। শব্দ শুনে সন্তুরা একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। সেই মূহুর্তে জারোয়ারা বিদেশী লোকগুলিকে আক্রমণ করলো। কিন্তু তাদের তীরের বিষে ৫/৬ জন বিদেশী লোকগুলি কিছু হচ্ছিলো না, তির লাগার সাথে সাথেই তার বিষের এন্টিডোট ইনজেকশন নিয়ে নিচ্ছিল। অন্য দিকে জারোয়ারা গুলি খেয়ে একের পর এক মারা পড়ছিল। তাই জারোয়ারা ভয় পেয়ে চলে গেল।
কাকাবাবু সন্তুকে জোড় করে ওরা দ্বীপের যেখানে নেমে ছিল সেদিকে পাঠিয়ে দিলেন যাতে সকালে দাশগুপ্ত পুলিশ নিয়ে ফিরে এলে সন্তুকে দেখতে পারে। সন্তু ঝর্নার ধার ধরে হাঁটা শুরু করে বেশ কিছু দূর যাওয়ার পরেই হটাত করে এক ধরনের উলু ধ্বনি শুনতে পেলো যা জারোয়ারদের যুদ্ধ ধনি। তার পরে শুরু হল গুলির শব্দ, কিছুক্ষণ পরে গুলির শব্দ থেমে গেলো আর উলু ধ্বনি ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। সন্তু কাকাবাবুর কথা চিন্তা করে আবার কাকাবাবুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু এসে দেখে সেখানে কাকাবাবু নেই। তাই সন্তু শব্দ যেদিক থেকে এসেছে সেদিকে হাঁটা ধরল। এক সময় জঙ্গলের মাঝে নীলচে আলো দেখে সন্তু লুকিয়ে পরে এবং দেখে সেই আলোর মাঝে বিদেশী লোকগুলোকে বেধে ফেলে রেখেছে, কিন্তু কাকাবাবু সেখানে নেই।
জঙ্গলের মাঝে ফাকা যায়গায় একটি গোল নীল আগুন জ্বলছে, সেখানে বেশকটি জারোয়াদের ঘর রয়েছে। একটি ঘর থেকে ৯০ বছরের এক বুড় বেরিয়ে এলো, যদিও জারোয়ারা কোন কাপড় পরে না কিন্তু এই বুড়র পরনে লাল ধুতি আর চাদর আছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই লোক জারোয়া নয়। বুড়র নির্দেশে জারোয়ারা একজন বিদেশীকে নীল আগুনে ফেলে দিল, লোকটি চিৎকার করে আগুনে মিলিয়ে গেলো, একটু ধোয়াও উঠলো না। দ্বিতীয় লোক টিকে আগুনে ফেলার সময় একটি গুলি এসে একজন জারোয়ার হাতে লাগলো। সন্তু অবাক হয়ে দেখল রিভালবার হাতে এক ক্র্যাচ নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে কাকাবাবু সামনে এগিয়ে গেলো।
জারোয়ারাদের বুড় রাজা বাংলা কথা বলে উঠলেন কাকাবাবুর সামনে গিয়ে। তিনি জানতে চাইলেন কেন তারা জারোয়ারদের পবিত্র আগুন চুরি করতে এসেছেন। রাজা কাকাবাবুর হাত থেকে রিভালবার ছুড়ে ফেলে দিল। এমন সময় সন্তু দৌড়ে বেরিয়ে এলো সামনে। রাজার ধারনা ছিল ওরা বিদেশীদের সাথে এসেছে আগুন চুরি করতে, কিন্তু সন্তু বললো তারা বিদেশীদের সাথে আসেনি। একথা শুনে রাজা তাদেরকে নিজের কুটিরে নিয়ে গেলো। তার কুটিরে একটি গীতা আর একটি কয়েদিদের শিকল দেখে কাকাবাবু বুঝতে পারলে এই বুড় আসলে ব্রিটিশ আমলের বিপ্লবী কয়েদী গুণ্ডা তালুকদার। তিনি জানেন না যে ভারত স্বাধীন হয়ে গেছে। তিনি জেল থেকে পালিয়ে এখানে এসেছেন আর বাইরের দুনিয়ার কোন খরর রাখেননি। এসমস্ত কথার মাঝে হটাত করে আবার বাইরে গুলির শব্দ শোনা গেল। ওরা বাইরে বেরিয়ে দেখে বিদেশীরা তাদের বাধন খলে অস্ত্র নিয়ে গুলি করছে। তারা বুড় রাজা আর কাকা বাবুকে আটকে রাখল।
বিদেশীরা ঝর্না থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলো যাতে তারা পাথরটা নিয়ে যেতে পারে কিন্তু তারা আগুন নেভাতে পারল না। পরে বড় একটি গাছ নিয়ে এসে চারজনে ধরে পাথরটা আগুন থেকে বার করার চেষ্টা করলো সেটাও পারলো না বরং তাদের একজন আবার আগুনে পরে মারা গেল।
এদিকে দাশগুপ্ত অনেক চেষ্টা করেও কোন সাহায্যের যোগার করতে পারলো না, এস পি রাজি হলেন না। সেই সময় হটাত করেই হোম সেক্রেটারি পোর্ট ব্লেয়ারে এলেন। দাশগুপ্তের কাছে কাকাবাবুর কথা শুনে তিনি তখনই হেলিকপ্টার নিয়ে যেতে চাইলেন, কিন্তু নেভির হেলিকপ্টার দুটির একটি গেছে নিকবর আর একটি নষ্ট হয়ে পরে আছে বলে কিছুই করতে পারলেন না। পরে ভোরের দিকে তারা হেলিকপ্টার নিয়ে জারোয়াদের দ্বীপে আসল।
বিদেশীরা যখন আগুন নিভাতে ব্যর্থ হল তখন প্রতিশোধ নিতে তারা বুড় রাজা আর কাকাবাবুকে আগুনে ফেলে মেরে ফেলতে চাইল, কিন্তু ঠিক সেই সময় আকাশে দেখা গেলো হেলিকপ্টার। বিদেশীদের একজন মেশিনগান দিয়ে গুলি করে হেলিকপ্টারটিকে নামাতে গেলে সন্তু কাকাবাবুর পরে থাকা রিভালবারটি কুরিয়ে নিয়ে লোকটিকে দুটি গুলি করে দেয়। এই সুযোগে কাকাবাবু লোকটির পরে যাওয়া মেশিনগানটি কুড়িয়ে নেন।
হেলিকপ্টারে করে হোমস সেক্রেটারি নিজে, দাশগুপ্ত আর ৩জন সশস্ত্র লোক আসে। স্বাধীন ভারত দেখানোর জন্য তারা বুড় রাজাকে আমন্ত্রণ জানান, অনেক অনুরোধের পরে তিনি কয়েক দিনের জন্য যেতে রাজি হন। কিন্তু কলকাতায় এসেই সবুজ দ্বীপের বুড় রাজা অসুস্থ হয়ে পরেন। কলকাতার বাতাসে তিনি নিশ্বাস নিতে পারেন না। গাড়িতে করে যাওয়ার সময় সবুজ দ্বীপের রাজা মারা যান।
সমাপ্ত
পর্যবেক্ষণ :
কাকাবাবু আর সন্তু যাবেন আন্দামান, কিন্তু আন্দামানে যাওয়ার জন্য এত তোড়জোড় করে কাকাবাবু সন্তুর জন্য পাসপোর্ট তৈরি করালেন কেন? আন্দামানে যেতে তো ভারতীয়দের ভিসা বা পাসপোর্ট এর দরকার পরার কথা না। আমি ঠিক জানি জানি না, আপনারা কেউ জানেন?
এই একটা এপিগ্রামই চোখে পরে ছিল আমার বইটি পড়ার সময়।
১। হটাত টাকা পয়সা পেয়ে বড়লোক হয়ে যাবার লোভ করতে নেই। টাকা পয়সা রোজগার করতে হয় পরিশ্রম করে বা নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে।
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:২৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সামাজিক ভাবে!!!
২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: গুড রিভিউ। +
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫০
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৫
আরজু পনি বলেছেন:
কাকাবাবু সিরিজ আমার পড়া হয়নি...মা মেয়ে দু'জনে মিলেই পড়তে পারবো ।
শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ মরুভূমির জলদস্যু ওরফে পাগলা জগাই ।
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: শুভকামনা রইলো আপনাদের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৮
বাংলার ফেসবুক বলেছেন: ভাল লাগলো অসলে খুবই সামাজিক ভাবে ইতিহাসটা তুলে ধরলেন সুন্দর।