নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো যাই উড়ে, মনের আকাশ জুড়ে

পথ হারা কিশোর

চলো যাই উড়ে, মনের আকাশ জুড়ে

পথ হারা কিশোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

"পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স"-এর প্রতি কিছু সুপারিশ

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫০

পুঁজিবাজার সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত "পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স"- এর পক্ষ থেকে ইমেইলের মাধ্যমে সবার কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ-পরামর্শ আহবান করা হয়েছে।

কিছুদিন আগে আমি ফেসবুকে পুঁজিবাজার সংস্কার বিষয়ক কিছু পয়েন্ট নিয়ে লিখেছিলাম। সেই পয়েন্টগুলো কিছুটা মোডিফাই করে নতুন আরও কিছু পয়েন্ট যুক্ত করে টাস্কফোর্সের প্রদত্ত মেইল অ্যাড্রেস ([email protected])-এ আজকে ইমেইল করেছি।

পয়েন্টগুলো হল --

১) ফ্লোর প্রাইস আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হোক। মার্কেটকে ফ্রিলি মুভ করতে দিতে হবে। ফ্লোর প্রাইস দিয়ে ইন্ডেক্স ধরে রাখা BSEC এর কাজ না। একটা শেয়ারের দাম কত হবে সেটা Buyer-seller-ই নির্ধারণ করবে। কমিশন এখানে হস্তক্ষেপ করবে না। অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা যতই কান্না/আন্দোলন করুক। (আমার এই পরামর্শের সাথে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। এটা আমার নিজস্ব মতামত। আমার মনে হয় এটাই হওয়া উচিৎ। Index-কে নিজের মতোই চলতে দেওয়া উচিৎ। এর উপর কোনোধরণের হস্তক্ষেপ করা বা বাধা দেওয়া উচিৎ নয়।)

২) দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে লিস্টেড করা হোক। পুঁজিবাজার থেকে যেকোনো (ছোট/বড়) ভালো কোম্পানি যাতে সহজেই টাকা তুলতে পারে সেইজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি। পুঁজিবাজারে কোম্পানি যত বাড়বে, মার্কেটের liquidity/depth তত বাড়বে।

৩) T+1, T+2, T-3 সিস্টেম তুলে দিয়ে Day trading এর সুযোগ দেওয়া হোক। তাহলে মার্কেট আরও vibrant হবে।

৪) DSE'র ওয়েবসাইটে Equity, Mutual Fund, এবং Debt Securities এর মার্কেট ক্যাপের তথ্যগুলো History আকারে পাওয়া যায় না। সেখানে শুধু প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন দেয়। পরেরদিন আর আগেরদিনেরগুলো পাওয়া যায় না। যেহেতু previous days এর equity মার্কেট ক্যাপের তথ্য history তে থাকে না, সেহেতু যদি ১০ হাজার কোটি টাকা মার্কেট ক্যাপ কমে, আমরা আসলে বুঝতে পারি না যে মার্কেট ক্যাপটা কি equity থেকে কমল, নাকি debt securities থেকে। যেহেতু DSEX Calculation-এ Equity ছাড়া বাকি মার্কেট ক্যাপগুলো হিসাব করা হয় না।
তাই, Total Market Cap এর সাথে Equity, Mutual Fund, এবং Debt Securities এর মার্কেট ক্যাপের তথ্যগুলোও DSE'র archive/history এ যুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। যাতে আমরা বিগত তথ্যগুলোও পরে দেখতে পারি।

৫) Mutual Fund যেন ICB বা BSEC এর চোখ ফাঁকি দিয়ে মিথ্যা সপ্তাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে মানুষের টাকা লুট করে নিতে না পারে সেই জন্য Mutual Fund গুলোর অডিট রিপোর্টগুলো কতটা সঠিক সেই বিষয়টা BSEC/ICB'র পক্ষ থেকে যথাযথ নিরীক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক। একই সাথে পুঁজিবাজারে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর Quarterly report গুলোও কতটা সঠিক তা ভালোভাবে নিরীক্ষণ করা হোক।

৬) Stock Derivatives মার্কেট চালু করা হোক। ডেরিভেটিভস মার্কেটে তথা Futures Market এ ট্রেডিং ফি কম হয় বলে সেখানে বড় ট্রেডার্স/liquidity বেশি থাকে। বড় ট্রেডগুলো সেখানে হলে Spot মার্কেটে প্রাইস ফ্লাকচুয়েশনের প্রভাবটা তুলনামূলক কম পড়বে। একই সাথে মার্কেট down এ পড়তে থাকলে বিনিয়োগকারীরা short selling এর মাধ্যমে নিজের পোর্টফোলিও-কে hedge করার সুযোগ পাবে।

৭) মার্কেট চালুর সময় সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ৩/৪ টা পর্যন্ত করা হোক।

৮) Commodity Derivatives মার্কেট চালু করা হোক। আমদানী নির্ভর পণ্যগুলোর বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে এবং উৎপাদনের পর বাজারজাতকৃত পণ্যের দাম সারাবছর একটা ভারসাম্যের মধ্যে রাখতে ডেরিভেটিভস মার্কেটের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্যগুলোর কাঁচামালের উপর Futures Contract চালু করার সুযোগ করে দেওয়া হোক। যেমন: কোনো একটা খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির মূল কাঁচামাল যদি পেঁয়াজ হয়, বছরের যে সময়ে পেঁয়াজ সস্তা থাকে, সেই সময়ে পেঁয়াজের উপর সেই কোম্পানি যদি একটা Futures contract (Long) চালু করে রাখে, তাহলে বছরের কোনো সময়ে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে গেলেও সেই কোম্পানির প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়াতে হবে না। কারণ সেই কোম্পানি সস্তা থাকতেই নির্দিষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ Futures Contract এর মাধ্যমে buy (Long) করে রেখেছিল। বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামালের দামের অস্বাভাবিক উঠানামার বিপরীতে Commodity Derivatives মার্কেট প্রডাকশনের সাথে জড়িত বৃহৎ কোম্পানিগুলোর hedge হিসেবে কাজ করে। আমাদের দেশেও মূল্যস্ফীতি রোধে এবং বাজার সিন্ডিকেট দূর করতে এটা চালু হওয়া খুবই দরকার।

৯) CSE তে নেওয়া ফরেক্স ট্রেডিং চালুর উদ্যোগ দ্রুত সম্পন্ন করা হোক। অর্থাৎ ফরেক্স ট্রেডিং চালু করা হোক। একই সাথে DSE তেও এর উদ্যোগ নেওয়া হোক। তাহলে ডলারের বিপরীতে টাকার যে অস্বাভাবিক উঠানামা সেটার ক্ষতিকর দিক থেকে একদিকে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিকারকেরা রক্ষা পাবে। অন্যদিকে সরকারও ফরেক্স ট্রেডিং এর ফি থেকে রাজস্ব পাবে। (দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির ৯০% কাঁচামাল বিদেশ থেকে ডলার দিয়ে আমদানি করতে হয়। টাকার মানের অত্যাধিক উঠানামা বা devaluation এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এরা বা এইধরণের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো)।

১০) Stop-limit, OCO অর্ডারের ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক ট্রেডিং অ্যাপ তৈরি করা হোক।

১১) সাধারণ বিনিয়োগকারী পর্যায়ে Algorithmic Trading করার সুবিধা প্রদানের লক্ষে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে প্রয়োজনীয় Access, Stock Data, Technical Data, API, বা অন্যান্য সহযোগিতা প্রধান করে দেশের পুঁজিবাজারকে বিশ্বমানের Automated Trading Platform এ রূপান্তর করার জন্য যথাযত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

১২) বিশ্বের জনপ্রিয় চার্ট অ্যানালাইসিস কোম্পানি TradingView-কে DSE এবং CSE'র সকল প্রয়োজনীয় তথ্য, access প্রদান করা হোক। যাতে TradingView তে আমরা বিনিয়োগকারীরা Chart analysis করতে পারি। দেশের যে চার্ট সেবা প্রদানকারী কোম্পানি/app আছে (Stocknow, Ecosoft ইত্যাদি), তারা ফ্রি চার্টিং সার্ভিস দেয় না। মাসিক/বাৎসরিক চার্জ নেয়। কিন্তু এই চার্ট সেবা পাওয়াটা তো আমাদের অধিকার। চার্ট সেবাই যদি আমরা বিনামূল্যে না পাই, আমরা ট্রেড করব কীভাবে?

যদিও এখনও ট্রেডিংভিউতে DSE'র স্টকের চার্ট দেখা যায়। কিন্তু সেখানে অন্যান্য ডাটা (volume, fundamental data, accurate data বা real time data) পাওয়া যায় না। তাই, TradingView কে (বা অন্যান্য chart analysis কোম্পানিকে) data এবং access দিয়ে সহযোগিতা করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

১৩) পুঁজিবাজার সম্পর্কিত শিক্ষা দানের জন্য BSEC এর পক্ষ থেকে Youtube চ্যানেল খুলে ভিডিও টিউটোরিয়াল আকারে বিনামূল্যে Fundamental এবং Technical অ্যানালাইসিস শিক্ষা দানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

---
Tareq I Imon,
Chittagong.

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৭

রবিন.হুড বলেছেন: চমৎকার পরামর্শ

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩

কুয়ানিন বলেছেন: ঋণ করে শেয়ার কেনা নিষিদ্ধ করতে হবে ।
Stock Derivatives কোনও ভাবেই চালু করা যাবেনা।
এমনিতেই মানুষ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ না করে জুয়া খেলতে আসে, তার উপর কল-পুট-শর্টসেলিং করার অপশন দিলে আর দ্রুত নিজের সর্বনাশ করবে।
ডে ট্রেডিং চালু করা কোনমতেই ঠিক হবে না।
মানুষের মেধা ও শ্রম কে উৎপাদনশীল খাতে কাজে লাগাতে হবে।

অ্যাল্গো ট্রেড যারা করার চেষ্টা করে তাদের কে ধরে বড় অংকের জরিমানা করার সহজ নিয়ম রাখতে হবে।

Commodity Derivatives এ শুধু উৎপাদনকারী ও ভোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারবে।
তাদের পরিচয় খুব নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করার পর সেই মার্কেটে বিনিয়োগ করার অনুমতি পাবে, যেন মধ্যস্বত্তভোগীরা এই সুযোগ পেয়ে অহেতুক দাম বাড়াতে না পারে।

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:৫৭

পথ হারা কিশোর বলেছেন: @কুয়ানিন,
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেউ যদি গরুর খামারে ইনভেস্ট করে লস করে তাহলে আমি কি ব্যাংককে গরুর খামার করার জন্য ঋণ দিতে নিষেধ করব, নাকি যে ঋণ নিয়েছে তাকে আগে ভালোভাবে গরুর খামার কীভাবে করে তা শিখতে বলব? ব্যাংককে যথাযত মর্টগেজ দিলে সে ঋণ দিবেই। ঋণটা কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে তা ব্যাংককের দেখার বিষয় নয়। ঠিক একইভাবে ডেরিভেটিভস মার্কেটে মার্জিন লোন বা লেভারেজ কে কত নিবে তা DSE বা BSEC এর দেখার বিষয় নয়। যে দক্ষ বিনয়োগকারী/ট্রেডার, সে মার্জিন লোনকে যথাযতভাবে ব্যবহার করে টাকা বের করে আনবে। আর যে অদক্ষ সে টাকা লস করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তাই আমি "মার্জিন লোন দিবেন না" বা "Stock/Commodity Derivatives/Forex চালু করবেন না"-- সেই পরামর্শ দিতে পারি না। আমি যদি Derivatives মার্কেটকে কাজে লাগিয়ে, high risk নিয়ে high return জেনারেট করতে পারি, তাহলে সেই সুযোগটা আমি কেন কাজে লাগাব না? বরং আমাদের যে বিষয়টার উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ সেটা হল-- দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন। কীভাবে দক্ষতার সাথে মার্জিন লোনকে ব্যবহার করা যায় সেই জ্ঞানার্জন। "লোন-ই দিবেন না"- এটা আমরা বলতে পারি না। উন্নত বিশ্বের প্রতিটা স্টক মার্কেটে Stock এবং Commodity Derivatives মার্কেট রয়েছে। একটা ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটকে ম্যাচিউরড বলতে হলে সেখানে এইসব ইন্সট্রুমেন্ট অবশ্যই থাকতে হবে। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতেও Derivatives trading খুবই জনপ্রিয়। কথা হচ্ছে এখানে জেনে শুনে, ঝুঁকি কী-- সেটা বুঝে আসতে হবে।

Algo Trading সম্পর্কে আপনি আরও ভালোভাবে জানাশোনা করবেন। অ্যাল্গো ট্রেডিং হল-- আপনি যে ট্রেডটা এখন manually করছেন, সেটা কম্পিটারকে দিয়ে করানো। আপনি এখন যে সারাদিন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন প্রাইস কখন কোন জায়গায় যাচ্ছে সেটা দেখার জন্য, অ্যাল্গো ট্রেডিং এর সাহায্যে এই কাজটা আপনি কম্পিউটার দিয়েই করতে পারবেন। আপনি কম্পিউটারকে শিখিয়ে দিবেন "প্রাইস এই জায়গায় আসলে buy করবে, ঐ জায়গায় গেলে sell করবে"। কম্পিউটার আপনার শিখিয়ে দেওয়া কাজটাই করবে। আপনি ভুল শিখিয়ে দিলে সে ভুলটাই প্রয়োগ করবে। তাই আপনার Strategy টা ঠিক হতে হবে। আপনি ভুল স্ট্র‍্যাটেজি দিয়ে algo trading করলে আপনার লাভের বদলে লসই হবে। আমাদের মাথায় যেটা সেট হয়ে আছে সেটা হল, অ্যাল্গো ট্রেডিং মানেই স্টক মার্কেটে অন্যের টাকা মেরে তা নিজের পকেটে নিয়ে আসা। বিষয়টা আসলে এমন নয়। অ্যাল্গো ট্রেডিং মানে ম্যানুয়েল ট্রেডকে অটোমেটেড করা। দ্রুততার সাথে করা। Manually বা হাতে করতে গিয়ে আমরা অনিচ্ছাকৃত যে ভুলগুলো করি তা অ্যাল্গো ট্রেডিং এর সাহায্যে এড়িয়ে চলা যায়। ইমোশনলেস এবং ডিসিপ্লিন্ড ট্রেড করা যায়। সময় বাঁচানো যায়। ভারতের স্টক মার্কেটের মোট ট্রেডের ৬০%+ এবং আমেরিকান স্টক মার্কেটের মোট ট্রেডের ৭০%+ হয় Algo Trading এর মাধ্যমে।

আর Day trading করে পুঁজিবাজার থেকে টাকা আয় করতে যে মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সেটা বোধহয় আপনার জানা নেই।

৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৬

সোনাগাজী বলেছেন:



পথ হারা কিশোর কি পথ হারিয়ে ষ্টক মার্কেটে চলে এসেছেন?
ষ্টক-মার্কেট করার মুল উদ্দেশ্য কি?

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৪:০৯

কুয়ানিন বলেছেন: @Tareq Imon পথ হারা কিশোর

মৌলিক অনেকগুলো বিষয়ে আমাদের আলাদা মত আছে।

শুধু লাভ লোকসানের হিসাবে সব চালালে সমাজে সবাই লাভবান হতে পারে না।

শেয়ার কেনা বেচা কোনো ব্যবসা না, আপনি এখানে কিছু উৎপাদন করছেন না।
টাকা শুধু হাত বদল হচ্ছে। একজন লাভবান হচ্ছেন, আরেকজনের হয়তো ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
এটাকে Zero-sum game বলে।
সমাজের, দেশের নীতি নির্ধারকদের কাজ হচ্ছে, দৈনন্দিন জীবনে Zero-sum game এর Scope কমিয়ে আনা।
আপনি যে উদাহরণ দিলেন সেটা এখানে প্রযোজ্য না।
ব্যবসায় লাভ ক্ষতি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তবে এখানে অনেক মানুষ বিভিন্ন খাতে জড়িত থাকে, শেষে কিছু মানুষের ক্ষতি হলেও বেশির ভাগ মানুষ লাভবান হয় ।
কারণ নতুন কিছু উৎপাদন হয়।
ঋণ যেন শুধু উৎপাদনশীল খাতে বিতরণ করা হয়, সেটা হওয়া উচিৎ অর্থ মন্ত্রনালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল লক্ষ্য।

Stock Derivatives এর মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বে অর্থনৈতিক বৈষম্যের গতি ত্বরাণ্বিত হয়েছে।
সমাজে বৈষম্য বাড়ানোর এই যন্ত্র চালু করার বিপক্ষে আমি।
এই বিষয়ে যে জ্ঞান অর্জন করবেন , সেটাতে হাতে গোনা কিছু মানুষের শুধু উপকার হবে। বেশির ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
এমন জ্ঞান চর্চা, সবার সময়-সম্পদ অপচয় করে।

Algo Trading নিয়ে মন্তব্য করার সময়, আমার মনে Jim Simmons এর হেজ ফান্ডের কথা মাথায় ছিল।
কত মেধা, কত সময়, শুধু অন্যের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কাজে ব্যায় হচ্ছে, সেটার কথা ভাবছিলাম।
শেয়ার কেনা বেচাকে আমি ব্যবসা হিসেবে দেখিনা, তাই এই খাতে যে কোনও ধরনের মেধা-পরিশ্রমের বিনিয়োগের বিপক্ষে অবস্থান নিই।

আশা করি আমার মনের ভাব বুঝাতে পেরেছি।

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:০০

পথ হারা কিশোর বলেছেন: Spot মার্কেটে শেয়ার বেচাকেনাকে Zero-Sum Game বলা হয় না। কারণ এখানে উভয় পক্ষই লাভবান হতে পারে। আপনি যে কোম্পানির শেয়ার বেচার উদ্দেশ্যে হোল্ড করছেন, সেই কোম্পানি তার শেয়ারের ভ্যালু ক্রিয়েট করার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। একটা জমির দাম যেমন দিন দিন চাহিদা বাড়ার সাথে, জমির যে লোকেশন তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে, কিংবা দেশের মূল্যস্ফীতির স্বাভাবিক বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে বৃদ্ধি হয় (জমি কিন্তু জমি-ই থাকে; ১০ বছর আগের যে জমি, ১০ বছর পরেও সেই একই জমিই। উৎপাদনশীলতাও প্রায়ই একই। শুধু মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি, এবং অন্যান্য অবস্থার পরিবর্তনের কারণেই তার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে)। একইভাবে শেয়ার বাজারের একটা কোম্পানির দাম মাঠ পর্যায়ে তার বর্তমান পারফর্ম্যান্স কেমন করছে, এবং ভবিষ্যতে কেমন করবে তার উপর ভিত্তি করে বাড়ে-কমে। অর্থাৎ দিন দিন কোম্পানির ভ্যালু ক্রিয়েট হয়।

এখন ধরি, একজন ব্যক্তি (১ম ব্যক্তি) ২০০৪ সালে একটা জমি ২০ লাখ টাকায় কিনে ২০১৪ সালে তা ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। ২০১৪ সালে যে ব্যক্তি (২য় ব্যক্তি) এটা ৬০ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছে সে জমিটা ২০২৪ সালে ১.৫ কোটি টাকায় বিক্রি করেছে (৩য় ব্যক্তির কাছে)। ৩য় ব্যক্তি জমিটা কিনেছে কারণ তার মনে হচ্ছে এটার দাম ১০ বছর পর ৫ কোটি টাকা হবে, বর্তমান দাম ১.৫ কোটি টাকা তার কাছে সস্তা/আকর্ষণীয়-ই মনে হচ্ছে।

এখানে, ১ম ব্যক্তির প্রফিট হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। ২য় ব্যক্তির প্রফিট হয়েছে ৯০ লাখ টাকা। দুইজনেরই win-win situation। আর, ৩য় ব্যক্তি এখনও লাভ করতে না পারলেও সে কিনতে পেরে সন্তুষ্ট। ধরতে গেলে একপ্রকার কেউ লসে নেই।

ঠিক একই বিষয়টা হয় শেয়ার মার্কেটের একটা কোম্পানির শেয়ারের সাথে। এখানেও সময়ের সাথে কোম্পানির ভ্যালু বাড়ে/কমে। যেমন: Square Pharma'র দাম --
২০০৭ সালে ছিল ১৫ টাকা।
২০১৭ সালে ছিল ১৯৩ টাকা।
২০২৪ সালে হয়েছে ২২০ টাকা।

তাই, শেয়ার ব্যবসা মানেই Zero-sum game নয়। বা শেয়ার ব্যবসা মানেই "শুধু টাকা হাতবদল হওয়া", কিংবা "একজন লাভবান হচ্ছে মানে আরেকজনের লোকশান হচ্ছে"-- বিষয়টা এমন নয়। এখানে সবার জেতার সুযোগ আছে।

Derivatives Trading কে Zero-Sum Game বলা যায়। কিন্তু Spot trading ট্রেডিং কে জিরো-সাম গেম বলা যায় না। যদিও Spot মার্কেটে ইন্সটিটিউশনাল বাইয়ার-সেলারদের large quantity'র বেচাকেনার ফলে সৃষ্ট প্রাইস ফ্লাকচুয়েশন কমতে, এবং প্রাইস fall এর সময় নিজের পোর্টফোলিওকে রক্ষা করতে বা hedging-এর জন্য Stock Derivatives মার্কেটের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি।

আর, আমদানী নির্ভর পণ্যের দামের বৈশ্বিক উঠানামার ফলে আমাদের দেশে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি কমাতে (বা cost-push inflation কমাতে) Commodity Derivatives মার্কেটেরও দরকার বলে আমি মনে করি। এই ডেরিভেটিভস মার্কেট হলে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স না দিয়ে মাঝপথে ক্রয়-বিক্রয় করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া অনিবন্ধিত মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মও বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, সয়াবিন তেল, গম, এলাচ-এর দাম কত সেটা সবাই derivatives মার্কেটের index-এই দেখতে পাবে। মধ্যস্বত্বভোগীরা সেই index এ দেখানো প্রাইসের বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না। কেউ ঐ দামের বেশিতে কিনবে না।

আর, Renaissance Technologies এর প্রতিষ্টাতা Jim Simons একজন বিখ্যাত এবং সফল ফান্ড ম্যানেজার হিসেবেই জানি, ৩০ বছর ধরে যার CAGR ছিল ৬৬%। তিনি তার স্ট্র‍্যাটেজি অ্যাল্গোরিদমিক ট্রেডিং এর মাধ্যমেই প্রয়োগ করতেন। কিন্তু, তার মেধা, সময়, শ্রম যে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন, এমনটা আমার জানা নেই।

৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:১৯

কুয়ানিন বলেছেন: @ পথ হারা কিশোর

আমরা কথা বলছি , ডে-ট্রেডিং এর ব্যাপারে,
ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনার ব্যাপারে,
এবং stock Derivatives এর ব্যাপারে।

Commodity Derivatives মার্কেট গঠনের পক্ষে আমি।
তবে কঠোর ভাবে নিয়ম নীতি মেনে যেন সেখানে লেন-দেন হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

ঋণ না নিয়ে, শেয়ার কিনে রেখে দিন দীর্ঘ সময়, তাতে আমার কোনো সমস্যা নাই।

এবার ডে-ট্রেডিং , ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনা, এবং stock Derivatives নিয়ে আপনার যুক্তি গুলো খন্ডন করার চেষ্টা করছি।


উদাহরণ দিতে যেয়ে, Asset Class এর ক্যাটেগরি নিয়ে ভুল করেছেন।
জমি, আবাসস্থল যদি কেউ ঋণ করেও কেনে, কেনার পর সে সম্পদের মালিক। সে চেষ্টা করে সেটা ব্যাবহার করার, উন্নতি করার।
আবাসস্থলের ক্ষেত্রে, বাড়ি ভাড়া দেয়ার বদলে মাসে মাসে ঋণের কিস্তি শোধ করে মূলধন বাড়িয়ে তোলে ।
জমির ক্ষেত্রে, বাড়ি বানিয়ে, বা পশু-মাছ-মুরগী ইত্যাদি খামার করে, বা ফসল করে যে আয় হয়, সেখান থেকে ঋণ পরিশোধ করে, মূলধন বাড়ানো যায়।
১০ বছর পরে যদি জমি বিক্রি করে বেশি লাভ হয়, তো ভাল।
তবে মনে হয় না, জমির দাম বাড়লে বিক্রি করে লাভ হবে, সে আশায় মানুষ ঋণ নিয়ে জমি কিনে, জমিটা ফেলে রাখে।
জমি কেনা-বেচায় যে পরিমান ট্যাক্স দিতে হয়, এটা অনেককেই নিরুৎসাহী করে অল্প সময়ের ব্যাবধানে নিয়মিত এ কাজ করতে।

Spot marketএ ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনে ১০ বছর হোল্ড করতে পারবেন ? সুদের হার কত এখন, ১২%?
ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়ে লোন+সুদ শোধ করার পর যে লাভ হবে, সেটাতে খুশি হতে পারবেন?
ঋণ নিয়ে যারা শেয়ার কেনে , তারা লটারী খেলতে আসে শেয়ার বাজারে।
এ পরিমান শেয়ার কিনে তো পরিচালক হতে পারবেন না। কোম্পানীর কার্যকলাপের সাথে জড়িত হতে পারবেন না।
এমন প্যাসিভ ইনভেস্ট করে, সমাজের উন্নয়নে তো কোনও অবদান নায় , এই ধরনের কাজ করে।


ডে-ট্রেডিং এর কন্টেক্সটে, শেয়ার কেউ কিনছে, কেউ বিক্রি করছে, এটা কখন সম্ভব হচ্ছে?
যখন ক্রেতা এবং বিক্রেতার মাঝে Information Asymmetry থাকে।
এই Asymmetry যে ঠিক ভাবে exploit করতে পারবে, সে লাভবান হবে, অন্যজনের ক্ষতি হবে।
High Frequency Trading, Algo Trading করে Jim Simons এর মতো লোকেরা এটার অপব্যাবহার করে এত দ্রুত এত সম্পদ অর্জন করতে পেরেছে।

আমরা এমন এক সমাজে বসবাস করছি , যেখানে আমরা মেধাবীদের লাইসেন্স দিচ্ছি, যারা দুর্বল, তাদের কাছ থেকে মূলধন কেড়ে নিতে।

আপনার পুঁজি আছে, নিজে একটা ব্যাবসা শুরু করুন।
পুঁজির পরিমাণ কম হলে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের নিয়ে মূলধন সংগ্রহ করে, সবাইকে নিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান।
প্রতিষ্টান টি একসময় অনেক বড় হলে, ব্যাংক ঋণ কমানো জন্য শেয়ার বাজারে IPO ছাড়তে পারেন ।

মোট কথা, প্যারাসাইটিক বিজনেস মডেল গুলোতে বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়া টা খুব কঠিন করে দেয়া উচিৎ, যেন সমাজের সবাই উপকৃত হয়।

information_asymmetry

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৫

পথ হারা কিশোর বলেছেন: আমি আসলে Spot মার্কেটে শেয়ার বেচাকেনা বলতে বুঝাতে চেয়েছি ঋণহীন স্পট মার্কেট। আপনি যে বলেছিলেন-- "শেয়ার বেচাকেনা কোনো ব্যবসা না, আপনি এখানে কিছু উৎপাদন করছেন না"-- এই কথার প্রেক্ষিতেই আমি উদাহরণটা দিয়েছি। আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, শেয়ার ব্যবসাও একটা ব্যবসা এবং এখানেও সময়ের সাথে সম্পদের ভ্যালু ক্রিয়েট হয়। যেমনটা হয় জমির।

মার্জিন লোন নিয়ে বছরের পর বছর বসে থাকার প্রশ্নই আসে না। মার্জিন লোনটা day trading বা swing trading করার উদ্দেশ্যে শর্টটার্মের জন্য নেওয়া যায়। তা-ও এটা তার জন্য, যে দক্ষতার সাথে এটা ম্যানেজ করতে পারবে।

ডে ট্রেডিং/মার্জিন/ডেরিভেটিভস এইসব মার্কেটে থাকা উচিৎ কি উচিৎ নয়, তার পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি আছে। যার যার নিজস্ব মতামত আছে। আমার অবস্থানটা আমি লেখায় তুলে ধরেছি। আপনি এইসব বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। আপনার বা সবার মতামতকে শ্রদ্ধা জানাই। বিএসইসি দিনশেষে কী কী সংস্কার আনে সেটার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.