নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো যাই উড়ে, মনের আকাশ জুড়ে

পথ হারা কিশোর

চলো যাই উড়ে, মনের আকাশ জুড়ে

পথ হারা কিশোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি শাটল ও স্বপ্নময় পৃথিবী

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:২৯

"কই তুই? তাড়াতাড়ি আয়। দুটা সিট রাখছিলাম, একটাতে চৈতী বসছে, অন্যটা তোর জন্য। বেশি সময় নাই, শাটল এখনই ছাড়বে।"

ফোনটা রিসিভ করতেই হড়বড় করে কথাগুলো বলল তারেক। তখনও আমি দুই নম্বর গেটে জ্যামে আটকে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে ষোলশহর স্টেশন থেকে দ্বিতীয় শাটল ট্রেনটি ছাড়ে সকাল আটটা বিশে। এখন আটটা দশ। জ্যামটা এই মুহূর্তে ছুটলেও আটটা বিশের শাটলটা পাওয়ার আশা আছে। প্রতিদিন এমন উৎকণ্ঠা নিয়ে হাজারো ছেলেমেয়ে শাটলের উদ্দেশে ছোটে। কেউ শাটল পায় আবার কেউ পায় না। কিন্তু শাটল তার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্ব সচরাচর করে না। শাটল ছাড়ার মিনিট দুই আগে কোনোরকম দরজা টেনে ধরে ঝুলে পড়লাম আমি। তারেক আমার জন্য ট্রেনের ভেতরে সিট রেখেছে। কোথায় সিট? আর কোথায় আমি। সিট আর আমি দুই মেরুর অচেনা পরার্থ হয়ে যে যার স্থানে পড়ে আছি। এটা শুধু একদিনের ঘটনা নয়, প্রতিদিন এমনই করে অনেক ছাত্র ঝোলাঝুলি করে বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছায়। তবে এর জন্য কোনো ছাত্রছাত্রীর মনে কোনো আক্ষেপ নেই। কোনো অভিযোগও নেই। নেই কোনো দুঃখ প্রকাশের অপ্রতিরুদ্ধ কণ্ঠস্বর।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে অনেকটা দূরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বাংলাদেশের একমাত্র এবং পৃথিবীতে দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের গণপরিবহন এই শাটল ট্রেন। সবাই চাইলে এই শাটল ট্রেনে সিট রাখায় অংশগ্রহণ না করে কিংবা দরজার হ্যান্ডেলে ধরে বিপজ্জনকভাবে ঝুলে না থেকে অথবা ছাদে না উঠে, বাস কিংবা অন্য উপায়ে যাতায়াত করতে পারে। শাটল ছাড়া যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানো ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনন্যোপায় তা কিন্তু নয়। তবুও সবাই শাটলে যায়। চাই ভিড় হোক, কিবা প্রচণ্ড গরম পড়ুক কিংবা সিট না পাক, তবুও। আমাদের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মানেই শাটল ট্রেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাটল শুধু একটা ট্রেন নয়, এটা একটা ইতিহাস। একতার ইতিহাস; ভালবাসার ইতিহাস; বন্ধুত্বের ইতিহাস; সুখ ও দুঃখের ইতিহাস; ছোট এবং বড়দের ইতিহাস, সর্বোপরি আজ ও আগামীর ইতিহাস।

এত কষ্টের মাঝেও সবার মুখে অচেনা এক তৃপ্তির হাসি ফুটে থাকে সর্বদা। যখন ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে তখন একসঙ্গে এত সহযোদ্ধাদের দেখলে ভালোলাগায় মনটা ভরে ওঠে। আমার বন্ধু তারেকের মতো অন্য সব বন্ধুরাও তাদের বন্ধু-বান্ধবীদের জন্য শাটলে সিট রাখে। হয়তো যার জন্য এই সিট ধরে রাখা সে সেখানে বসতে পারেনি, আটকে পড়ে আছে শাটলের দরজায়। হয়তো হ্যান্ডেল চেপে ধরে কোনোরকম দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢোকার কোনো জো নেই। তাতেও কিন্তু সিট ধরে রাখা বন্ধুটির মুখে বেদনার নীল ছাপ ফুটে থাকে না। একসঙ্গে সবাই যেতে পারছি এটাতেই আনন্দ।

আমাদের শাটল ট্রেনে গানের আসর জমে। ছেলেমেয়ে ছোট-বড় সবাই একসঙ্গে গলা মেলায়। যেমনটা করে গলা মিলিয়েছিল আমাদের সোলস ব্যান্ডের পার্থদা সহ অনেকেই। আজ তারা সেলিব্রেটি। আমরাও কি কম সেলিব্রেটি? আমাদের জন্য, শুধু আমাদের জন্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের একমাত্র শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা। এ তো আমাদেরই জন্য।

গণপরিবহনগুলো পার্থিব জীবনে হাজারটা সমস্যার ঝুলি নিয়ে রাস্তায় নামে। তবে কিছু কিছু গণপরিবহন শুধু ভোগান্তিই দেয় না, তার পাশাপাশি দেয় একঝাঁক তরুণ-তরুণীর স্বপ্নময় পৃথিবীতে স্বপ্ন দেখার হাতছানি।

- নাঈমুল হাসান
IERT বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

('সাপ্তাহিক' ম্যাগাজিনের ২৯ তম সংখ্যায় প্রকাশিত)।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৩৭

টরপিড বলেছেন: উঠতে কার্ড লাগে নাকি ভাই? চবি'র শাটল ট্রেনের কথা অনেক শুনছি, সুযোগ পাইলে একবার উঠার ইচ্ছা ছিল।

২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২৯

স্বপ্নীল পরান বলেছেন: সত্যিই !!!
শাটল মানেই গান-বাজনা, গরমে ঘেমে যাওয়া, বন্ধুদের জন্য সিট রাখা, দর্জায় ঝুলে থাকা, এবং আরো কত কি !!!
সবচেয়ে চোখ জোড়ানো বিষয় হল- প্রতিটা কম্পার্টমেন্টের ভিন্ন ভিন্ন দুইটা নাম। যেমন- 69, খাইট্টা খা, সাম্পান এবং আরো কত ব্যতিক্রমধর্মী নাম।
কিছু বন্ধু সেখানে আছে বলেই মাঝেমাঝে ঢাবি থেকে ঘুড়ে আসা হয় চবি'তে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.