নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের প্রত্যাশাহীন এই শহরে থেকে যাক কিছু খুচরো কথা...

পদ্মপুকুর

একজন শভেনিস্ট ও স্মৃতিকাতর মানুষ

পদ্মপুকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে যেন ভুলে না যাই...

১৯ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮


বাসা থেকে অফিসে যাওয়া আসার জন্য আমাকে বিটিভি ভবনের সামনের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়, সম্ভবত তার পরদিন দুপুরের দিকে বিক্ষিপ্তভাবে জানতে পারলাম বিটিভি ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে।

এক সহকর্মীসহ অফিস থেকে আগেভাগেই বের হয়ে গেলাম। পুলিশ প্লাজা পার হয়ে হাতিরঝিল ধরে রামপুরার দিকে কিছুদুর যাওয়ার পর হঠাৎ দেখি মানুষজন উল্টো দিকে দৌঁড়াচ্ছে, বাম পাশের লেনে সারিবদ্ধ তিন চারটা পুলিশ-বিজিবির গাড়িও ব্যাক গিয়ারে দ্রুতগতিতে পেছনে ছুটছে, সাথে গণমাধ্যম, সাধারণ মানুষের গাড়ি, বাইকতো রয়েছেই! একটা আতংকময় অবস্থা!

প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় নিজেও উল্টোদিকে দৌঁড়ানোর প্রবল ইচ্ছেকে গলার কাছে আটকে দিয়ে একপাশে সরে দাঁড়ালাম। দেখি কি হয়। টিভিভবন থেকে উড়তে থাকা ঘন কালো ধোয়ার মধ্য দিয়ে একটা হেলিকপ্টারের চক্কর এবং ঠাঁ ঠাঁ গুলি আর দ্রিম-দ্রুম সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ ছাড়া আমরা বিশেষ কিছু শুনতে বা দেখতে পারছিলাম না ওখান থেকে। এভাবে কয়েক দফা সামনে পেছনে করে একসময় রামপুরা ব্রিজ বরাবর হাতিরঝিলে পৌঁছে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখলাম। হাজার হাজার অসম সাহসী তারুণ্য কেবল লাঠি আর ইটের টুকরা হাতে নিয়েই পুলিশের সাঁজোয়া যানগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে... । এই তরুণদের অধিকাংশই পাশের ইস্টওয়েস্ট আর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির!

বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসের সাথে যেভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জড়িয়ে থাকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সেভাবে আসে না। সেটা তাদের পাঠ্যক্রম, সমাজের যে শ্রেণির প্রতিনিধিরা এখানে সাধারণত পড়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানগত কারণেও হতে পারে, সে বিতর্কে আমি যাচ্ছি না। মোটাদাগে জাতীয় স্বার্থে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে পাওয়া যায়নি সাম্প্রতিক সময়ে। ভ্যাট বিরোধী যে আন্দোলন করেছিল বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, সেটাও একান্তই নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ছিল।

কিন্তু এবারের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সে ধারণাকে কবর দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়ার পর এ আন্দোলনকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার বড় কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের। কেবল আন্দোলনে নয়, আত্মত্যাগের উদাহরণ তৈরিতেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে। ঢাকার প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো না কোনো শিক্ষার্থীই এবারের আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন।

স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমি আশাবাদী মানুষ, নতুন বাংলাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাতে হাত রেখে উজ্জল আগামী গড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।

ক’দিন আগে এটিএন নিউজে সমন্বয়ক সারজিস আলমের একটা সাক্ষাৎকার দেখলাম। সারজিস বলছেন, যেদিন আমরা হল ছেড়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল, আমাদের মনে হচ্ছিল এটা কি এখানেই শেষ হয়ে যাবে কি না? কিন্তু আমাদের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভাইবোনেরা যখন রুখে দাঁড়ালো তাঁদের যায়গা থেকে, আন্দোলনে নতুন একটি মাত্রা পেলো।’

এটা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে যে কৃতিত্ব কুক্ষিগত করার যে সংস্কৃতি আমাদের প্রবীণদের মজ্জাগত অধিকার বলে এতদিন জেনেছি, সেটা থেকে বেরিয়ে সারজিস উদারভাবে সবার অংশগ্রহণের স্বীকৃতি দিচ্ছে। এই সামান্য উদারতাটুকুও আমাদের প্রজন্মের মধ্যে না থাকার কুফলতো আজ আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি ভালোভাবেই।

অবশ্য কেবল পাবলিক-প্রাইভেট এর শিক্ষার্থীরাই নয়, বরং এই আন্দোলনে আপামর জনসাধারণের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ এবং আত্মত্যাগের ফলেই বিজয় অর্জিত হয়েছে। যে মা বাসা থেকে খাবার তৈরি করে এনে ভীষণ মমতায় আন্দোলনরত মানুষকে ডেকে ডেকে দিচ্ছিলেন, সেই ছোট্ট শিশু, যে ৫ লিটারের দুটো ক্যান ভর্তি করে পানি এনে এনে সবাইকে গ্লাসে ঢেলে দিচ্ছিল, নির্মাণাধীন ভবনের চারতলা থেকে প্রখর রোদ্রে আন্দোলনরতদের মাথায় যে শ্রমিক ভাই পাইপে করে পানি ঢালছিলেন, অথবা স্যালুটরত যে রিকশাচালক ভাইয়ের গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে তাঁরা সবাই বীর, এ আন্দোলনে বিজয়ের অংশীদার। তবুও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা আলাদা করে বলছি, কারণ আমি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আন্দোলনে না আসার যে অচলায়তন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভেঙে দিয়েছেন, আমি তাকে স্যালুট জানাই।

প্রায়শই আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাবলিক-প্রাইভেট সমর বেধে যায়, যেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিধায় অভিহিত করা হয়, সে যুদ্ধে পাবলিক পক্ষের হয়েও আমি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভুমিকায় আভিভূত, শিহরিত। ভবিষ্যতের বাংলাদেশে আমরা যেন তাঁদের অসামান্য অবদান, অসংখ্য প্রাণের বলিদানকে ভুলে না যাই।

ছবি কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৮

করুণাধারা বলেছেন: ওয়েলকাম ব্যাক!

আপনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা পড়তে ভালো লাগলো। আমি অবশ্য চোখে দেখি নি, কিন্তু খবরে পড়েছি বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কিভাবে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। আমার ধারণা ছিল না তারা এভাবে আন্দোলনে নেমে আসবে। কারণ এই ছাত্ররা সমাজের যে শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে, আমার ধারনা ছিল তারা দেশের ব্যাপারে কমই মাথা গলায়। কিন্তু ধারণাটা ভুল প্রমাণ হয়েছে এবার।

আপনার কথাতেই বলি, ভবিষ্যতের বাংলাদেশে আমরা যেন তাঁদের অসামান্য অবদান, অসংখ্য প্রাণের বলিদানকে ভুলে না যাই।

২০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনিইতো আমার আগের একটা পোস্টে লেখার জন্য বলে আসলেন। ;)
আসলে লেখার জন্য প্রচুর পড়তে হয়, জীবন সে সময়টা অ্যালাউ করতে চাচ্ছে না। অফিসের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে প্রচুর, সাথে আগে বাইক চালাতাম, ডাক্তারবাবু সেটাও বন্ধ করে দিয়েছেন, ফলে যাতায়াতেও সময় যাচ্ছে অনেক। সব মিলিয়ে লগইন থাকলেও লেখা আর হয়ে উঠছিলো না। এই লেখাটাতেও প্রচুর জড়তা রয়ে গেছে।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

সোনাগাজী বলেছেন:



ওদের কিভাবে ভুলবো; সার্টিফিকেট বিক্রেতাদের ভুলবে কিভাবে বাংগালীরা?

২০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১:৫২

পদ্মপুকুর বলেছেন: সার্টিফিকেটের ক্রেতারা এবার নিজেদের নাম বাংলাদেশের সার্টিফিকেটে তুলে দিয়েছে, বয়সের ভারাক্রান্ত কেউ চাইলেও সেটা আর মুছতে পারবে না।

৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৪৪

মেঠোপথ২৩ বলেছেন: একমত আপনার সাথে। তবে প্রাইভেট ইউনির ছাত্রদের সাথে তাদের শিক্ষকদেরো অনেক অবদান রয়েছে। ব্র্যক ইউনির একজন বিদেশী শিক্ষক, আসিফ মাহতাব সহ আরো বেশ কিছু শিক্ষকও ছাত্রদের সাথে ছিলেন। আমার এক ভাগ্নে ব্র্যক ইউনির ছাত্র। তার পিতামাতা কোন অবস্থাতেই বাইরে যেতে দিতে নারাজ। ঐ পরিস্থিতিতে এটাই খুব স্বাভাবিক ছিল। কিন্ত শিক্ষকেরা সাথে থাকবে শুনে , ছেলেকে ছেরে দেন।

২০ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪

পদ্মপুকুর বলেছেন: আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চেয়ে একটা ফেসবুক পোস্ট চোখে পড়েছিল- সেখানে যোগ্যতা হিসেবে লেখা ছিল সিজিপিএ কম হলেও চলবে, কিন্তু মেরুদন্ড থাকতে হবে। মেরুদন্ড সোজা রেখে যে সব সম্মানিত শিক্ষক এ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের সবার প্রতি অভিবাদন।

প্রসঙ্গত, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার যেন পদত্যাগ না করেন, সে জন্যে শিক্ষার্থীরা অনুরোধ জানাচ্ছে....। একজন শিক্ষকের জন্য এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে!

৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:৩৫

অস্বাধীন মানুষ বলেছেন: চমৎকার একটা দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন। ভালো লাগলো ।

২০ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১২:০৬

পদ্মপুকুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
বাই দ্য ওয়ে, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম কিন্তু কয়েকদিন আগে বলেছেন যে তাঁর ছবি কম ব্যবহার করতে B-), জানেন নিশ্চয়?

৫| ২০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

ধুলো মেঘ বলেছেন: এই আন্দোলনে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রেখেছে, তাদের যদি র‍্যাঙ্কিং করি, তাহলে তা হবেঃ
১। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
২। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
৩। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
৪। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৫। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৬। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
৭। এমআইএসটি
৮। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৯। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
১০। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

২০ শে আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১২:০৮

পদ্মপুকুর বলেছেন: চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই সম্ভবত প্রথম রেল অবোরোধ করে, যেটা কমপ্লিট শাটডাউন বাস্তবায়নের পথ দেখায়...

৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩০

Salina Alam বলেছেন: লেখাটা ভালো লাগলো। আমরা বনশ্রী ও আফতাবনগর বাসীরা এর ঘটনাার প্রত্যক্ষদর্শী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.