নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হোজ্জার হাটুতে ইদানিং ব্যথা হচ্ছে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে হোজ্জা বললেন- ডাক্তার সাহেব, আমার ডান পায়ের হাটুতে খুব ব্যথা। ডাক্তার হোজ্জাকে ভালো মতো দেখে বললেন 'বয়স হলে এ রকম একটু আধটু ব্যথা হয়, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।' ডাক্তারের এই বয়ান শুনে হোজ্জা ভীষণ বিরক্ত, বললেন- তাহলে আমার বাম পায়ের বয়স কি কম? ওটাতে কোনো ব্যথা নেই কেনো......
এখন হোজ্জার বাম পায়ের বয়স কম বা সমান যাই হোক না কেনো এ কথা সত্যি যে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরী হতে থাকে। হাড়ে ক্যালসিয়াম কমে যাওয়ায় ব্যথা হতে পারে। কিন্তু সচারচর যে বয়সে এ ধরণের উপসর্গ দেখা যাওয়ার কথা, ইদানিং আমরা নিজেদের দৈনন্দিন অভ্যাস, বলা চলে কুঅভ্যাসের কারণে সে বয়সটাকে এগিয়ে আনছি। দ্রুতই বুড়িয়ে যাচ্ছি।
এই কুঅভ্যাসগুলো ভয়ংকরভাবে আমাদের ক্ষতি করে চললেও আমরা একদমই আমলে নিই না। পাত্তাও দিই না। যেমন ধরুণ দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকা। সাম্প্রতিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় দীর্ঘক্ষণ একনাগাড়ে চেয়ারে বসে থাকার পরিণতিকে এতটাই ভয়াবহ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে যে বলা হচ্ছে ‘সিটিং ইজ দ্য নিউ স্মোকিং।
বর্তমান সময়ে আমরা প্রযুক্তি ও আধুনিকতার নামে এতটায় মশগুল হয়ে গেছি যে আমাদের পূর্বপুরুষদের চিরায়ত সংস্কৃতির মধ্যে যে বৈজ্ঞানিক যৌক্তিকতা ছিলো, যে শাশ্বত সত্যি ছিলো, সেগুলো আজ আমাদের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে গেছে। খনার বচনে বলা হয়েছে- ‘সকালে খাবে রাজার মত, তার মানে মানসম্মত ও পরিমাণে বেশি। দুপুরে খাবে প্রজার মত, অর্থ্যাৎ মোটামুটি পরিমাণে এবং মোটামুটি মানের আর রাতে খাবে ফকিরের মত, খুবই সামান্য। আমাদের কৃষকদের জীবনধারণকে অনুসরণ করে দেখুন, খুব সকালে উঠে ভরপেট খেয়ে দুপুর পর্যন্ত হাল চাঁষ করে দুপুরের খাবার খেয়ে রাতে সামান্য খেয়ে দ্রুতই ঘুমিয়ে গেছেন। আমাদের গ্রামের মানুষদের স্বাস্থ্য তাই সবসময়ই ভালো ছিলো। রোগবালাই মুক্ত। শিল্পী সুলতানের আঁকা ছবিগুলোই তার প্রমাণ।
কিন্তু এখন আমরা কি করছি? সকালে এক কাপ চা আর একটা বিস্কিট, দুপুরে কোনোরকম খাওয়া আর রাতে এগারোটার পরে ধুমছে পেট ফাটিয়ে খেয়ে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়া। তার সাথে কোনো ধরণের শারীরিক পরিশ্রম না করার প্রবণতা বা সুযোগহীনতা। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। গাবদা গাবদা সাইজের বাচ্চা আর পেট মোটা পৌঢ়, এই তো আমাদের বর্তমান সমাজ।
তাও এক ধরণের ছিলো। কিন্তু এখন দেশের মেগা কর্পোরেট আর প্রযুক্তির দৌলতে আমাদের এখন আর চেয়ার থেকে ওঠারই প্রয়োজন পড়ে না। ভালো ভালো খেতে চাইলে বা বাজার করার মত দৈনন্দিন কাজেও এখন আর বাইরে যেতে হয় না, ফোন করলেই সব হাজির!
এই বসে বসে থাকার কুফল নিয়ে এখন খুব চর্চা হচ্ছে, যদিও বাঙালের তাতে বয়েই গেলো। আমরা এখন ‘সায়েব’ হয়েছি। সারাদিন চেয়ারে বসে কেবলি হুকুম করে যাবো আর আলাদিনের দৈত্য সব কিছু সামনে উপস্থিত করে জ্বী হুজুর, জ্বী হুজুর করতে থাকবে।
সাধারণত কর্মক্ষেত্রে আমরা দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসে থাকি, যেখানে আমাদের সামনে কম্পিউটার থাকে। বসে থাকার সাথে সাথে কম্পিউটারের মনিটরেও তাই চোখ রাখতে হয়, ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। এই অভ্যাসগুলোর কুপ্রভাব সম্পর্কে চিকিৎসা-গবেষণায় উঠে আসা কিছু ডাটা আমি এখানে দিতে পারি।
দিনে ৬ ঘন্টা বসে থাকা এক প্যাকেটেরও বেশি সিগ্রেট শেষ করার সমপরিমাণ ক্ষতি করে। এই অভ্যাস কোলেস্টোরল ও ফ্যাট বাড়িয়ে হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। এমনকি ক্যান্সার হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
হাতের একই ধরনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নড়াচড়ার কারণে হাতের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা হতে পারে। মাউস ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যা বেশি হয়। এটা এক ধরণের রিপিটেটিভ স্ট্রেইন ইনজুরি।
অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকলে জলীয় সংকোচনে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে চোখ ব্যথা করে। অপর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মনিটরের আলোকচ্ছটার কারণে এটা হয়।
বলা হচ্ছে বেশিরভাগ মাথাব্যথাই ঘাড়ের কাছাকাছি থাকা মাংশপেশির ব্যথার কারণে হয়ে থাকে। আর দীর্ঘসময় ধরে ঘাড় ঝুঁকিয়ে থাকার ফলে এই ব্যথা সৃষ্টি হয়।
খাবার পরপরই চেয়ারে বসে পড়লে তলপেট সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। একই সাথে পেট ফুলে যাওয়া, বুক জ্বলা, পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পরিপাকক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
দীর্ঘক্ষণ একইভাবে চেয়ারে বসে থাকার ফলে পা ও পিঠের হাড়ে ক্রমাগতভাবে একই স্থানে চাপ লাগতে থাকে। সাধারণত মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলো মানুষের নড়াচড়ার সাথে সাথে প্রয়োজন অনুসারে সংকুচিত ও প্রসারিত হয় এবং এর মাধ্যমে রক্ত ও পুষ্টি সংগ্রহ করে। পক্ষান্তরে একইভাবে বসে থাকলে এই ডিস্কগুলো তার সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে। ফলে মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়। গবেষণা বলে, মেরুদণ্ড ব্যথার রুগীর মধ্যে ৪০ শতাংশই কম্পিউটারে বেশি সময় দেয়ার ফলে আক্রান্ত হয়েছে।
একটা গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ সপ্তাহে ২৩ ঘন্টারও বেশি সময় টেলিভিশন দেখে তারা ৬৪ শতাংশ বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুকিতে থাকে। একইভাবে যারা দীর্ঘসময় নিস্ক্রিয়ভাবে বসে থাকে তাদের মধ্যে ১৪৭ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে সাধারণ মানুষের তুলনায় অধিকক্ষণ বসে থাকা মানুষের মধ্যে অ্যাংজাইটি এবং ডিপ্রেশন বেশি হারে দেখা যায়।
কিভাবে প্রতিকার হতে পারে:
প্রতি ৩০/৪০ মিনিট পরপর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান, একটু হাটাহাটি করা, সুযোগ পেলেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ানো, চেয়ারে বসেই হালকা ব্যায়াম করা, লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা বা দৈনন্দিন চলাফেরায় হাটার অভ্যাস করার মত খুব স্বাভাবিক কিছু অভ্যস্ততা আমাদেরকে এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
যেহেতু আমি ডাক্তার নই, এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলা আমার জন্য ঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে ভুলভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাছাড়া আমরা সবাই হয়তো এই বিষয়গুলো কম বেশি জানি। আরো বেশি জানতে চাইলে 'sitting is the new smoking' লিখে ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই সব কিছু পেয়ে যাবেন।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৯
পদ্মপুকুর বলেছেন: আরে না, ব্লগিং যেন আরো বেশিদিন চালিয়ে যেতে পারেন, তারই পথ বাতলাচ্ছি। এখন বেশি সময় দিয়ে অসুস্থ হয়ে গেলে পরে তো আর ব্লগিং করতে পারবেন না স্যার!!
ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো থাকবেন।
২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৫
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন:
প্রতিরোধ নিরাময়ের চেয়ে ভাল ।
শুরু করা যাক, ব্যথাকে প্রতিরোধ এই সকল অনুশীলন দ্বারা
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৪০
পদ্মপুকুর বলেছেন: অভ্যাস করে ফেলতে পারলে খুবই ভালো। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।
ভালো থাকবেন।
৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০৮
নীল আকাশ বলেছেন: খুব ভালো একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। অফিসে আজকাল চেয়ারে একবার বসলে সেখান থেকে উঠাই হয়না। যেসব আরামের চেয়ার এখন বানায়! তাছাড়া কাজের ধরনের উপর কেউ কেউ চেয়ার থেকে উঠার সময়ও পায় না। হাঁটুর ব্যথার সমস্যা আমারও কিছুদিন হয়েছিল। ডাক্তার বললো ইউরিক এসিডের সমস্যা, অষুধ খান কন্ট্রোলে থাকবে। কতদিন ধরে অষুধ খেয়ে যাব? পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে দিলাম। আল্লাহর কি অশেষ রহমত। পায়ের ব্যথাই আর দুই বছর ধরে নেই।
এছারা আমাদের জীবন যাত্রাও এইজন্য অনেক দায়ী। ছোটবেলায় দেখতাম আব্বা কতদুর হেটে যেয়ে বাজার করে আনতেন। আমিও সাথে যেতাম। আর এখন দেখি প্রায় অনেকেই একটু হাটলেই কষ্ট লাগে, রিকসা ছাড়া চলতে পারে না। কি যে বাজে অভ্যাস!
দেহে শুধু ইনপুট হয় কিন্তু আউটপুট সেই মতো হয় না। মানুষের দেহ এজন্য বাল্কি হয়ে যাচ্ছে।
চমতকার একটা লেখা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৬
পদ্মপুকুর বলেছেন: আমাদের এখন হাটতে হয় না, শারীরিক কোনো পরিশ্রম করতে হয় না। কেবলি খাওয়া আর শুয়ে থাকা! একদিকে ইনপুটের পরিমাণ বাড়ছে অন্যদিকে আউটপুটের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। আর অকালে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি।
আগে গ্রামে গেলে প্রচুর মানুষকে দেখতাম বয়সের ভারে ন্যূজ্জ্ব হয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে হাটতেন। এখন আর ওরকম মানুষ দেখিনা। তার মানে তো এই না যে আমাদের গড় স্বাস্থ্য ভালো হয়ে গেছে, ঘটনা হলো এখন আর আমরা ওই বয়স পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারি না। অবশ্য শিশু ও প্রসূতী মৃত্যুহার কমিয়ে আমরা এখন দাবী করছি যে আমাদের গড় আয়ু বেড়ে গেছে, আসলে তো কমেছে।
ভালো থাকবেন।
৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: তাহলে চেয়ার বাদ দিয়ে ফ্লোরে বসে কাজ করবো??
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২৬
পদ্মপুকুর বলেছেন: তা হতে যাবে কেনো? কাজ করবেন চেয়ারে বসেই। কিন্তু মাঝে মাঝে বিরতি দিতে হবে।
৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৯
মা.হাসান বলেছেন: আমি আসলে বুঝাইতে চাইছিলাম-- ব্লগিঙের জন্য একটান অনেকক্ষণ বসে থাকা লাগে। দু একজন আছেন ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকেন। সব সময়ে বসে না থেকে মাঝে মাঝে দাড়ায়ে-হেঁটে টিকটক ভিডিও বানালে মন্দ হয় না।
পুনরায় লেখায় ভালো লাগা প্রকাশ করছি।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩২
পদ্মপুকুর বলেছেন:
৬| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২০
জাহিদ হাসান বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০০
মা.হাসান বলেছেন: ব্লগিং তো দেখি বাদ দেওয়াবেন ।
এ বয়সে এসে সিগারেটের অপবাদ!
আমাদের রাতে ভরপেট খাবার অভ্যেস ভালো না, ডায়াবেটিস ঝুকি বাড়ে। এজন্য আমি তিন বেলাই পেট ভরে খেতাম, তবে এখন সরকারি ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে যাতে মানুষ বেশি না খায়।
লেখা ভালো লেগেছে।