নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
থাইল্যান্ডে কিশোর ফুটবলারদের গুহায় আটকে পড়া এবং পরবর্তীতে উদ্ধার হওয়ার ঘটনাটা সারা বিশ্বেই নাড়া দিয়ে গেছে। সর্বশেষ ব্যক্তিটি বের হয়ে আসার পর আর সবার মত আমারও মনে হলো যেন ঘাড়ের উপর থেকে কি একটা বোঝা নেমে গেল। বাচ্চাগুলোর আত্মীয়দের মত এই বাংলাদেশেও অনেকেই ক্ষণে ক্ষণে চোখের পানি মুছেছে উদ্ধার অভিযানের সংবাদ পড়তে পড়তে।
এখন আসুন, দেখি, যদি এই ঘটনাটা বাংলাদেশে ঘটতো, তবে কি হতো? আমার বিশ্বাস যে কেউই জীবিত বের হতে পারতো না। তারা যে ওখানে আছে সেটাই জানা যেত না। যদিও বা জানা যেত তারপর:
প্রথমত, ‘কি করতে হবে’ এই সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই দুই দিন পার হয়ে যেত। তারপর প্রফেশনালদের ডাকা হতো। কিন্তু প্রফেশনাল লোকজন আসার আগেই বিপুল উৎসাহী কিছু মানুষ গুহায় ঢুকে নিজেরাই ভেতরে হারিয়ে গিয়ে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করতো।
দ্বিতীয়ত, প্রফেশনালরা আসলেও উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জামাদির অভাবে কাজের গতি ধীর হয়ে যেত। তদ্দিনে ভেতরে থাকারা খাবার, পানীয় বা অক্সিজেনের অভাবে অথবা সংক্রামক ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পগারপার!
তৃতীয়ত, আমাদের ঘাড়ত্যাড়া সরকার হ্যাডম দেখাতে গিয়ে বহিবিশ্ব থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব পুণঃ পুণঃ নাকচ করে উদ্ধারের সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ করে ফেলতো।
চতুর্থত, টিআরপি’র কাঙাল আমাদের গো-মূর্খ সাংবাদিকবৃন্দ গুহার ভেতরে মিডিয়া সেল বা ট্রান্সমিশন সেন্টার বসিয়ে উদ্ধার কাজ ব্যহত করতো।
পঞ্চমত, লোকাল নেতা, পাতিনেতা, সরকারি-অসরকারি-আধা সরকারি কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে অহেতুক ফটোসেশনের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযানে বাধা তৈরী করতো।
ষষ্ট এবং সবচেয়ে বড় যেটা, আমাদের সরকারী ও বিরোধী দলের গলাবাজ নেতৃবৃন্দ অপ্রয়োজনীয় এবং আওতা বহির্ভূত বক্তব্য দিয়ে পুরো বিষয়টিকেই ভণ্ডুল করে ছাড়তো।
এ রকম আরো আরো অনেক কিছুই ঘটতো এবং বাচ্চাদেরকে উদ্ধার করতে না পারলেও কোন একটা নাটক বানিয়ে উদ্ধার অভিযান সফল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে অভিযান সমাপ্ত করা হতো। এদিকে আবার কিশোর ও তাদের প্রশিক্ষকের জন্য একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হতো.....
একটু রাগ মিশে থাকলেও উপরের ঘটনাগুলোর সাথে দ্বিমত করার মানুষ খুব কমই আছে এ দেশে। নিকট অতিতে বিভিন্ন দুর্ঘটনাগুলোই আমাদেরকে এরকম ধারণাই দিয়েছে। আরো অনেকের মত আমিও থাইল্যান্ডের কিশোরদের উদ্ধার প্রক্রিয়া অনুসরণ করছিলাম প্রথম দিন থেকেই। এই দুর্ঘটনা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরই প্রতিবেশি এক দেশের নেওয়া পদক্ষেপগুলোতে প্রফেশনালিজম এবং অ্যাকিউরেসি এতটাই বেশি ছিল যে আল্লাহর ইচ্ছায় সবাই সুস্থভাবে উদ্ধার লাভ করে।
আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম যে উদ্ধার অভিযানের ধারে কাছে সাধারণ মানুষ তো দুরেই থাক, প্রয়োজন ছাড়া কোন অসাধারণ মানুষদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওদের সরকারও বেকুবের মতো বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতার হাত ঠেলে সরিয়ে দিল না। কোন রাজনৈতিক নেতা-পাতি নেতাকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে দাত কেলিয়ে হাসতে দেখা গেল না। এমনকি মিডিয়াকেও কোন অ্যাকসেস দেওয়া হলো না। সম্পূর্ণ উদ্ধারকাজ সমাপ্ত হওয়ার পরই মাত্র প্রথম ভিডিওটা রিলিজ করা হয়।
মাটির উপাদানের সাথে মানুষের মানসিক গঠনের কিছু যোগসূত্র থাকবে নিশ্চিত; মানুষতো মাটি থেকেই সৃষ্ট। থাইল্যান্ডের কিশোর ফুটবলারদের উদ্ধারকাণ্ডের পর থেকে আমার এই কথাটাই মনে হচ্ছে। থাইল্যান্ডের ওই এলাকা শক্ত পাহাড়ি এলাকা, ওদের মনও নিশ্চয় একইরকম শক্তপোক্ত। না হলে বারো থেকে ষোলো বছরের এই বাচ্চাগুলো সনাক্ত হওয়ার আগে নয়দিন পর্যন্ত ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতরে সময়ের হিসাবহীন, খাদ্য ও পানীয়বিহীন, আদৌ কোনদিন কেউ তাদের খোঁজ পাবে কি না জানিনা- এ রকম অনিশ্চিত অবস্থায় টিকে থাকলো কি করে?
আমাদের দেশের মাটি যেমন থাইল্যান্ডের মাটির মত নয়, তেমনি আমাদের মানসিক গঠনও থাইদের মত শক্ত নয়, পলি মাটির মত নরম কিন্তু উর্বর। পলিতে যেমন দ্রুত ফসল ফলে, আমাদেরও উচিৎ দ্রুত সব কিছু শিখে নেওয়া। জনসংখ্যার ঘনত্বে ন্যূজ্জ এই দেশ বিভিন্ন ধরণের দূর্ঘটনার শিকার হয় প্রায়শই। থাইল্যান্ডের এই উদাহরণ থেকে তাই বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় রয়েছে অনেক কিছুই।
তাই প্রশ্নটা এসেই যায়- তোমার যা শেখার ছিল, শিখেছো কি বাংলাদেশ?
১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: ওদের উন্নত টেকনোলজি আছে। ওগুলো পাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ আর্থিক সক্ষমতা আমাদের হয়তো নেই। কিন্তু উদ্ধারকাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে শৃংখলা ওরা দেখিয়েছে, বা সংশ্লিষ্ট সরকার, গণমাধ্যম ও জনগণ যে সচেতনতা ও সহযোগিতা দিয়েছে তা অসাধারণ। এই গুলো আয়ত্ব করতে কোন পয়সা লাগে না। কিন্তু আমরা সেটাই করতে পারি না।
২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫
কলকন্ঠ বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষণ ।
১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪৬
পদ্মপুকুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
৩| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: একদল দক্ষ ডুবুরীর জন্য সম্ভব হয়েছে।
১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮
পদ্মপুকুর বলেছেন: রাজীব ভাই, ডুবুরির কাজ যেমন ডুবুরিরা দক্ষতার সাথে করেছে, তেমনি অন্যান্য সকলেই নিজের নিজের দায়িত্বটুুকু নিষ্ঠার সাথে করেছে। অতি আগ্রহ দেখানো বা অতি নাটুকেপনা করতে যায়নি কেউই।
৪| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:১০
ক্স বলেছেন: থাই কিশোরদের জীবনের দাম আছে - তাই তাদের সাহায্যে সুইডেন, চীন এবং অস্ট্রেলিয়ার এক্সপার্টরা ছুটে এসেছে। আমরা যদি বিশ্বের দরবারে আমাদেরকে দামী হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি, আমাদের বিপদেও সবাই ছুটে আসবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ সারা বিশ্বের কাছে করুণার পাত্র হিসেবে আছে। এদেরকে বাঁচানোর দায় কারো নেই।
১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৫০
পদ্মপুকুর বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। তবে আমাদের বিপদের সময়েও (রানা প্লাজা) বহির্বিশ্ব থেকে এক্সপার্ট সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত আমাদের সে সময়কার সরকার অবিবেচকের মত সেই প্রস্তাবগুলো নাকচ করে দিয়েছেল। বাঙালির আর কিছু থাকুক বা না থাকুক, পাব্লিকের সাথে ভাব দেখানোর গুণটা ভালো মতই আছে।
৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:০১
রক বেনন বলেছেন: দারুণ লিখেছেন। ঠিক এই রকম ই ঘটতো!
১৪ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৫২
পদ্মপুকুর বলেছেন: আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত লোকেরা যদি থাইল্যান্ডের এই ঘটনা থেকে কিছু শিখতে পারে তো ভালো।
৬| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৫২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: স্মরণ করুনঃ রানা প্লাজা , রানা প্লাজা।
জাতি হিসাবে আমাদের মান খুব বেশী উন্নত নয়।
আফসোস!
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪
পদ্মপুকুর বলেছেন: রানা প্লাজা আর এই গুহা থেকে শিশু উদ্ধারের তুলনা করলেই তো আফসোসেস চুড়ান্ত সীমায় পৌচ্ছে যাচ্ছি।
৭| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৫৭
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমাদের সমস্যা হলো আমরা অতি উৎসাহী, কম জায়গায় বেশী জনসংখ্যা, আর বিকৃত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এগুলোর উন্নতি না ঘটালে আমরা আরও নীচে নামব। অথচ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর আমাদের সমসাময়িক দেশ...
১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: পুরোপুরি একমত আপনার সাথে্
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫২
সিগন্যাস বলেছেন: সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন । বাংলাদেশে এই ধরনের উদ্ধারকাজ প্রায় অসম্ভব । থাইল্যান্ডের উদ্ধারকাজে যে টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে তা বাঙালিদের আয়ত্ব করতে আরো কয়েক দশক লাগবে ।