নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রায় অনুমিতভাবেই গতকালকের টি টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছে আফগানিস্তানের সাথে। শতাধিক টেস্ট, সাড়ে তিনশ ওয়ানডে ও আশিটার মত টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা পাত্তা পায়নি বারুদের গন্ধে বেড়ে ওঠা নবীন একটা দলের মানসিক দৃঢ়তার কাছে। মেধা, টেকনিক, অভিজ্ঞতা পাশে রেখেও দিন শেষে ক্রিকেট একটা মনস্তাত্ত্বিক লড়াই-ই।
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশের ঐক্যবদ্ধতার মূল যায়গা এই ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে আশির্বাদের হস্ত উজাড় করে দিচ্ছে পরাক্রমশালী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। গতকাল প্রথম আলোয় সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন মারফত জানা গেল শারজাহকে বাদ দিয়ে ভারত এখন আফগান ক্রিকেটের হোম ভেন্যু। আইপিএল-এ আফগান খেলোয়াড়রা সুযোগ পাচ্ছে বেশি, ভারতে থেকে আফগানারা ম্যাচ প্রাকটিস করতে পারবে আবার ভারত সরকার কান্দাহারে একটা স্টেডিয়াম নির্মাণ করে দিয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো- ভারত সফরকারী প্রত্যেকটি দলের সাথে আফগানিস্তানের একটা প্রস্তুতি ম্যাচ হবে বলে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে!!
আপাতদৃষ্টিতে মহান এই পদক্ষেপ উদার ভারতীয় মানসিকতার প্রতিচ্ছবি নয় মোটেও, বরং উপমহাদেশীয় ভূরাজনৈতিক স্বার্থে ভারতীয় কূটনৈতিক কূটচাল। সম্প্রতি আনন্দবাজারে ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পুবে-দুদিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভাষ্য প্রকাশিত হয়েছে, আফগান ক্রিকেটের প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উদার হস্ত হওয়ার পেছনে সেই একই দর্শন কাজ করেছে। একদা পাকিস্তানের সখ্যতায় থাকা আফগানিস্তানের মন জয় করতে ভারত ওখানে বিভিন্ন ধরণের কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবেই ক্রিকেট কূটনীতিও চালিয়ে যাচ্ছে। উনিশশ একাত্তুরে যেমন পিংপং ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে চিন ও যুক্তরাষ্ট্রর মধ্যকার সম্পর্ক জোড়া লেগেছিল, ভারত-আফগানিস্তানের এই ক্রিকেট ডিপ্লোমেসিও সেই একই সূত্রে গাঁথা। এখন ভারতকে পুব ও পশ্চিমে পাকিস্তানকে নিয়ে ঘর করার টেনশন নিতে হবে না, বরং দুইপাশে দুটি ভারতের ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকতে হবে পাকিস্তানকেই।
আমরা এখানে স্মরণ করতে চাই যে নিকটতম প্রতিবেশি হিসেবে আমাদের ক্রিকেটের উন্নয়নে ভারত ঠিক কতটুকু উদার হতে পেরেছিল। সেক্ষেত্রে শুধু হতাশাই থাকবে আমাদের জন্য। ভারতকে আমাদের হোমগ্রাউন্ড বানানোর প্রয়োজন পড়েনি, আমাদের সুন্দর কিছু স্টেডিয়ামও আছে, আইপিএল-এ আমাদের প্লেয়াররা খেলবে কি খেলবে না, সেটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক হলো, টেস্ট মর্যাদা লাভের দীর্ঘ সতের বছর পর আমরা আমাদের নিকটতম প্রতিবেশি ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলার আমন্ত্রণ পাই!!
আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতাটা এখানেই। ভারত তার নিজের স্বার্থে যেটা প্রয়োজন সেটা করবেই। সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু কথা হলো আমরা কি করছি? ভারত আমাদের এটা দিলো না, সেটা দিলো না বলে নাকি কান্না করে তো লাভ নেই, মূল কথা হলো আমি কি আদায় করতে পারছি।
আমাদের কূটনীতিবীদরা এখানে অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক কলকাতা সফর শেষে ঢাকার সাংবাদিক মিটে যে কথা বলেছেন, কূটনৈতিক মানদণ্ডে সেগুলো নিতান্তই শিশুসুলভ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে। অতীতের গুলি, বোমাবাজি-আমরা কিন্তু তাদের শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা তাদের মনে রাখতে হবে। আমরা কোনো প্রতিদান চাই না। তবে হ্যাঁ, স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে এখানে? কারও কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার একটু কম, দেওয়ার অভ্যাস বেশি।’
এভাবে বলে হাততালি পাওয়া সম্ভব, কিন্তু নিজের দেশের ন্যায্য পাওনা আদায় সম্ভব নয়। দুটি দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক কোন মামা-ভাগ্নের বিষয় নয়। মান অভিমানেরও কোন যায়গা এখানে নেই। এখানে চিরকালীন শত্রু-মিত্র বলেও কোন কথা নেই। আপনার আপাত শত্রু বা আপাত মিত্র, সবাইকেই একই চেহারা দেখাতে হবে যদি মনে অন্য কথা থাকেও।
ডিপ্লোমেসিতে যেটুকু কথা হবে, সেটা হবে পুরোমাত্রায় পেশাদার কথা। কূটনীতিতে আপনার প্রতিপক্ষ হাসতে গিয়ে যদি চারটি দাত বের করে, তবে আপনাকেও জবাবে ওই চারটি দাত বের করেই হাসতে হবে, বত্রিশ পাটি বের করার কোন সুযোগ নেই। কূটনৈতিক সম্পর্কে মোনাকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এলে যেমন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীই তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন, ঠিক তেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলেও তাঁদের কাউন্টার পার্ট হিসেবে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীই অভ্যর্থনা জানাবেন, প্রধানমন্ত্রী নন। একইভাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী উগান্ডা যান আর রাশা যান, তাঁকে যেন তাঁর কাউন্টারপার্টই এসে অভ্যর্থনা জানান, কূটনৈতিক দরকষাকষিতে সেই মর্যাদা অর্জন করে নিতে হবে।
কিন্তু আদৌ কি আমরা তা পারছি? নিশ্চয় না। যথাযোগ্য মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারলে তো আসানসোলের অপ্রস্তুত বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান কেন নামানো হলো হতো সে প্রশ্ন উঠতো, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ঠিক কি প্রটোকল উনি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পেলেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠতো। হ্যাঁ, যদিও এটা সরকারি সফর ছিলো না, তবুও এই প্রশ্নগুলো থেকেই যায়; যেগুলো এমনকি ভারতীয় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। অথচ আমাদের নতজানু গণমাধ্যম এই প্রশ্নগুলো খুব সযতনে এড়িয়ে গেছে বরাবরের মত।
এই যে নিজের দেশের মর্যাদার চেয়ে দলের বা ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে, সেটা আর যাই হোক জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা নিশ্চিত করে না। আর করে না বলেই ভারতের কাছ থেকে আমরা আলাদা করে কোন মনোযোগ আদায় করতে পারি না, যতটুকু পারে আফগানিস্তানের মত যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশও। যতদিন আমরা দেশকে সবার উপরে দেখতে না পারবো, নিজের চাওয়াটুকু কূটনৈতিকভাবে জোরালো কন্ঠে না বলতে পারবো, ততদিন নাকি-কান্নাই করতে পারবো, কোন কিছু আদায় করতে পারবো না বরং তার বিপরীতে সবকিছু উজাড় করে দিয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হওয়ার ভড়ং করতে পারবো।
এই সংক্রান্ত সংবাদসমূহ
আনন্দবাজার
টাইমস অব ইন্ডিয়া
প্রথম আলো
ছবিসূত্র: গুগল
০৪ ঠা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:২৭
পদ্মপুকুর বলেছেন: কি আর করবেন স্যার, জাতি হিসেবেই আমরা ন্যূজ্ব (বানানটা ঠিক হলো কি?), দীর্ঘদিন ধরে শাসিত হতে হতে আমাদের ব্যাকবোনটাই দুর্বল হয়ে গেছে। আমাদের নৈতিকতার মান খুবই নিম্ন। এই আমি এত কথা বলছি, কিন্তু দেখা যাবে নিজের দৈনন্দিন কাজে কতশত বিষয়ে আপোষকামী হয়ে যাচ্ছি নিজের স্বার্থে।
আপনি সাংবাদিকদের কথা এখানে বলেছেন, শিক্ষকদের অবস্থা দেখেন; বঙ্গবন্ধু স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে গিয়েছেন পরামর্শের জন্য। আর এখন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মত ব্যক্তিও ধর্না দেন এমনকি ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতির কাছে। অধপতনের আর কি বাকি আছে?
২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯
অগ্নিবেশ বলেছেন: দেশের কিছুই যখন ঠিক নয়, কিছুই যখন ঠিক হবে না বলে ধরে নিয়েছেন তখন আর দেশে থেকে লাভ কি?
০৪ ঠা জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮
পদ্মপুকুর বলেছেন: সমস্যা হলো, আমাদেরতো যাওয়ারও কোন যায়গা নেই, তেনারা তো সব যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রতে সংসার পেতে বসেছেন...
৩| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯
রাজীব নুর বলেছেন: আমরা হেড়ে গেছি। বরাবরের মতো মনটা খারাপ হয়েছে।
যদি একটু অন্যভাবে বলি তো বলব- 'বর্তমানে দেশের কোথাও লোডশেডিং নাই, এখন যা হচ্ছে, তা হলো বিদ্যুৎ বিভ্রাট ''
০৪ ঠা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: ফটোগ্রাফিতে না গিয়ে ডিপ্লোমেসিতে গেলে ভালো করতেন রাজীব ভাই.... আসলেই এখন বিদ্যুৎবিভ্রাট হয়, লোডশেডিং নয়
ভালো থাকবেন।
৪| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১২
যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: মানকা চিপায়, চেপে যাওয়ায় মনে হয় ভালো।
০৪ ঠা জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: কোন পক্ষে চাপবো?
৫| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ রাত ৯:৪৬
জাহিদ হাসান মিঠু বলেছেন:
দেশ গোল্লায় যাক, ক্ষমতা টিকে থাক।
এ হচেছ আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনদের ধর্ম.....
ধন্যবাদ।
০৫ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৫০
পদ্মপুকুর বলেছেন: হু এই জন্যই তো এই দশা আমাদের। যে যখন পারছে থুথু দিয়ে যাচ্ছে।
৬| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ রাত ৯:৫১
আরিফ রুবেল বলেছেন: চমৎকার যুক্তিসমৃদ্ধ লেখা। তবে আমার কি মনে হয় জানেন ? আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এই ধরণের হালকা বক্তব্যের চাহিদা আছে। স্বীকার করেন বা না করেন ২০১৪ সালের নির্বাচনের মত একটা নির্বাচন করেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে এবং খুব ভালোভাবেই আছে তার অন্যতম প্রধাণ কারণ তার কূটনৈতিক সাফল্য। এখানে সাফল্য শব্দটিতে আপনার আপত্তি থাকতে পারে। থাকাটাই স্বাভাবিক কারণ আপনি হয়ত এটিকে বিশ্লেষণ করবেন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে। কিন্তু আপনি যদি একজন আওয়ামী লীগার হিসেবে বিশ্লেষণ করেন কিংবা শেখ হাসিনার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে চিন্তা করেন তাহলে সেই সাফল্য আপনার গোচরে আসবে।
ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগকে টিকফা সই করতে হয়েছে, কংগ্রেসের মিত্র আওয়ামী লীগ মোদীকে বন্ধু বানিয়েছে, বিএনপির পরীক্ষিত বন্ধু চীনকে আস্থায় নিতে হয়েছে অস্ত্র কিনে, সাবমেরিন কিনে, নানান প্রযেক্টের ইজারা দিয়ে, রাশিয়ার থেকে ঋণ করে অস্ত্র কিনতে হয়েছে, পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন দিতে হয়েছে। এই বাইরে পর্দার অন্তরালে কি হয়েছে তা আমরা জানিই না।
তারপরও আওয়ামী লীগ টানা দশ বছর ক্ষমতায় আছে। এটাকে তার সাফল্য বলবেন না তো কি বলবেন ?
০৫ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭
পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনার বিশ্লেষণ খুবই ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ। আপনি ঠিকই বলেছেন যে কূটনৈতিক বিজয়ের ফলেই আওয়ামী লীগ টিকে রয়েছে। কিন্তু ওই যে বললাম, দেশের মর্যাদা রক্ষার চেয়ে দল ও ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ হওয়া... এখানেই আমাদের কূটনীতি মার খাচ্ছে।
এখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আছে বলে কথাগুলো আওয়ামীলীগের বিপক্ষে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি বা যেই ক্ষমতায় ছিল, কেউই এদেশের সিভিল সার্ভিসে একটা নিরপেক্ষ, শক্তিশালী ও পেশাদার কূটনীতি তৈরী হতে দেয়নি। অথচ এটা হওয়া দরকার ছিল।
সুন্দর মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ সকাল ১১:০৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। ছবিচয়নও সুন্দর হয়েছে।
আমাদের গণ সাংবিদকতা এক সময়ে উচ্চ মানের ছিল। রাজনীতিকরাও ভাল সাংবাদিকদের কাছ থেকে শিখতে বা পরামর্শ নিতে কুন্ঠা বোধ করতেন না। এখন সে মান অতল গহ্বরে নিপতিত। অর্থ আর ক্ষমতার বেদীতে সবাই নতশির।