নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের প্রত্যাশাহীন এই শহরে থেকে যাক কিছু খুচরো কথা...

পদ্মপুকুর

একজন শভেনিস্ট ও স্মৃতিকাতর মানুষ

পদ্মপুকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

যশোর রোডের বুড়ো গাছগুলোর সাথে আমার ভালোবাসার গল্প

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬


ইয়ার এন্ডিংয়ে ব্যাংকের হুলুস্থুল ব্যস্ততার পাশাপাশি পারিবারিক কিছু ঝুটঝামেলায় বেশ কিছুদিন ব্লগাড্ডায় আসতে পারিনি। ফলাফলও নগদে পাচ্ছি; আমার মত দুর্বল, পার্টটাইম লেখকদের যা হয় আর কি! কোন লেখা আর আসতে চাচ্ছে না। তুমুল সাধ্য সাধনার পরও লেখার কোন বিষয় খুঁজে পাচ্ছি না, বিষয় পেলেও কার্তিকের এই মরা রোদ্দুরে এমন অলসতা ভর করে যে নিজেকে বিএনপির কর্মী মনে হয়- আন্দোলনে বড় আলস্য।

যাই হোক, টিভি নিউজে দেখলাম যশোর রোডের প্রাচীন বৃক্ষগুলো কেটে ফেলা হবে। নিউজটা দেখার পর থেকেই ভাবছি কিছু একটা লিখব। কিন্তু সে আশাও বিফলে যাওয়ার উপক্রম! ব্লগের ফ্রান্ট পেইজে এই গাছগুলো নিয়ে এত বেশি পোস্ট, এত কবিতা আর আবেদন, ঘাবড়েই গেলাম, আমি আর কি লিখব?

তবুও মনে হচ্ছে কি যেন হারিয়ে ফেলছি। এই গাছগুলোর সাথে আমার কত স্মৃতি, কত ভালোবাসা... এই সবুজের মায়াতেই তো আমি বেড়ে উঠেছি। স্কুলে যাওয়া আসার পথে এই গাছগুলোই নিরন্তর ছাঁয়া দিয়ে আমাদের শৈশব, কৈশোর পার করিয়েছে। কত বর্ষায় এই গাছগুলোর তলে আশ্রয় নিয়ে না ভিজেই পার করে দিয়েছি খেকশিয়ালের বিয়ের বৃষ্টি। ঝাঁ চকচকে মহাসড়কের অভিভাবকই ছিল এই গাছগুলো।

এক চৈত্রের বিষন্ন মধ্যাহ্নে রসায়নের খটোমটো ক্লাস পাশ কাটিয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম দু’জন লোক ঝিকরগাছার বি এম স্কুলের সাথের রাস্তার একটা গাছে চড়ে কিভাবে ওই গাছেরই বড় একটা ডাল কাটছে। বিশাল এক করাতের একতালে টান আর একঘেয়ে শব্দ সেদিন যতটা মনোযোগ কেড়েছিল, তার ভগ্নাংশও বুঝতে পারিনি গাছ কেটে ফেলার কি ভয়াবহতা। আজকের দিনে রাজধানীর কংক্রিটজঙ্গলে যখন নিঃশ্বাস আটকে আসতে চায়, তখন হিমুর সেই ময়ুরাক্ষী নদীর মত এই যশোর রোডের শতবর্ষী গাছগুলোও আমার কল্পনায় এসে ছায়া দিতে শুরু করে। আমি প্রশান্ত হয়ে যাই।

আজ প্রিয় সবুজের এই গাছগুলোই কেটে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র আর স্থানীয় হায়েনারা। অথচ কবির সুমন সেই কবেই গেয়ে গেছেন "আমি চাই গাছ কাটা হলে শোকসভা হবে বিধানসভায়-আমি চাই প্রতিবাদ হবে রক্তপলাশে, রক্তজবায়"

যশোর রোডের এই গাছগুলো শুধু দেশের ভেতরে না, দেশের গন্ডী পেরিয়ে ভারতেও এই সড়ক আর গাছগুলো কি সুন্দরভাবেই না দুই দেশের সংস্কৃতিকে একই সূত্রে গেঁথে রেখেছে। কবির সুমনের সুরে সুর মিলিয়ে ওরা সেই গাছগুলো সযতনে রেখে দিলেও আমরা লোভের কাছে আত্মসমর্পন করে ফেললাম।

জানি এই গাছ থাকবে না। শকুনোর নজরে পড়া আরো অনেক অনেক গাছের মত এই গাছগুলোও খেয়ে ফেলবে এই হায়েনার দল, যেমনভাবে খেয়েছে রাজধানীর সকল গাছ, সকল সবুজ। শেরাটন মোড়ের ঝাকড়াঁ নাগলিঙ্গম গাছটা আমি কোনভাবেই আমার স্মৃতি থেকে তাড়াতে পারি না। যে দেশে সুন্দরবনের মত উপকারী আত্মীয়েরই কোন মূল্য থাকেনা, সেই দেশে গাছ কাটা হবে দেদারছে, পথে ঘাটে প্রান্তরে, এটাই তো স্বাভাবিক। আমাদের দেশেই তো টিভি কমার্শিয়ালে শোনা যায় ‘কাটো গাছ-খাও মাছ।’

হয়ত এর পরেরবার যখন ঝিকরগাছা যাবো, সেই সবুজ আর পাবো না, পুলেরহাট পার হওয়ার পরপরই যে মাদল জাগানো ছাঁয়া আমাকে ভীষণ মমতায় আঁকড়ে ধরতো, সে ভালোবাসাও আর পাবো না। বৃথায় এখানে লেখা আর আকুতি জানানো।

তবুও, আমার প্রিয় এক শিক্ষকের কথা- ‘নিজের জন্মস্থানের মানুষ-মাটি-হাওয়া-বৃক্ষ-সবকিছুর কাছেই মানুষ আজীবন ঋণী থাকে, এরাই তাকে বড় করে।’ সেই ঋণ থেকেই ইচ্ছে হচ্ছে, যশোর চলে যাই, কর্তা-অধীকারীদের কাছে করজোড়ে মিনতি করি, মারবেন না এদের, এরাই আমাকে বড় করেছে, আমাকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়েছে।

তার প্রতিদান এভাবে হতেই পারে না।


ছবিসূত্র:

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাংলাদেশ সরকারে চাকুরী নেয়ার পর, ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েটারা ক্রমেই ইডিয়টে পরিণত হয়; গাছ কাটার কথা যারা বলছে, তারা কোথায়ও না কোথায় পড়েছে!

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১২

পদ্মপুকুর বলেছেন: আমি বুঝি না গাছ কাটার জন্য আমাদের কর্তাব্যক্তিদের এত উৎসাহ কেন। সাউথ কোরিয়ায় দেখেছি, একটা কন্সট্রাকশন সাইটে বড় একটা গাছ অপসারণের প্রয়োজন পড়লে ওরা কি বিপুল আয়োজনে, বিশাল সব যন্ত্র এনে, ওই গাছটা মাটি-শিকড়-মূলসহ তুলে নিয়ে নিরাপদ যায়গায় লাগিয়ে দিল! আমি পুরো হতভম্ভ! একটা গাছ বাঁচাতে ওরা কি করলো আর আমরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ সব কারণে কেবলই গাছ কেটে ফেলি।

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৭

শায়মা বলেছেন: এই রোড যে কত্ত সুন্দর!!!!


এ পথে আমি যে গেছি বার বার .....:(

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১৩

পদ্মপুকুর বলেছেন: আসলেই সুন্দর। যে এই পথে যায়নি, সে বুঝতেই পারবে না।

আপনি কি যশোরের দিক্কার নাকি?

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০

শাহিন বিন রফিক বলেছেন: ভাল লাগলে পোস্ট, গাছ প্রয়োজনে একটি কাটলে দশটি লাগানোর নিয়ম করা উচিত।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১৪

পদ্মপুকুর বলেছেন: ভাই, দেখেন হয়তো নিয়মটা অলরেডি আছে। কিন্তু কথা হলো মানবে কে, বা মানাবে কে?

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



স্হানীয়রা কি গাছ কাটায় বাধা দেবে ?

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:০৮

পদ্মপুকুর বলেছেন: প্রশ্নই আসে না। কে বেঘোরে জান দিতে চায় বলুন; সুবোধতো পালিয়ে গেছে সেই কবে!

স্বার্থপরতার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া বিবেক আর প্রতিবাদহীনতার এই সংস্কৃতি নিয়ে আজ উচ্ছাসে উদ্বেল শাসকগোষ্ঠী। এই প্রতিবাদহীনতাকে নিজেদের বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করছে। অথচ অবুঝের দল বুঝতে পারছে না, অন্যায়ের প্রতিবাদহীনতা আখেরে তাদের নিজেদের জন্যও কোন শুভ বয়ে আনবে না।

৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৩৯

মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: আমরা অক্ষম। ক্রোধে ফুঁসা ছাড়া কি আর করব! যারা গাছ কাটার আয়োজন করছে তাদের জীবন থেকে যাতে শান্তি হারিয়ে যায় চিরতরের জন্য।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৪

পদ্মপুকুর বলেছেন: :D

৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪০

শায়মা বলেছেন: আমি খাঁটি যশোরিয়ান ভাইয়া। :)


১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৫

পদ্মপুকুর বলেছেন: ভালো। ভবিষ্যতে কোন একসময় যশোর সিমিতির সামহোয়্যার ইন কমিটি করবো। আমি প্রেসিডেন্ট, আপনি সেক্রেটারি... B-)

৭| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৮

শায়মা বলেছেন: হা হা হা ওকে ভাইয়া!

আমি রাজী!

আগে থেকে বলো বোরখা কিনতে হবে তো !

৮| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: যশোরে গাছ কেটে রাস্তা বানানোর বিরুদ্ধে যারা তারা একটা সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিয়ে দেশের সব মহাসড়কের দুই পাশে বা আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে বৃক্ষরোপন করে দেন। ঝামেলা শেষ। পাশাপাশি আরেকটা ঘোষণা দেন- ‘এই জীবনে আমরা কাঠের আসবাবপত্র আর ব্যবহার করব না’।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০০

পদ্মপুকুর বলেছেন: রাজীব ভাই এইটা কি বললেন! এই প্রায় দেড় শতাধিক বছর বয়সের গাছগুলো কি নতুন গাছ লাগালেই রিপ্লেস করা সম্ভব? এই গাছগুলোর সাথে আমাদের কত আবেগ, কত ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

আর 'কাঠের ফার্নিচার ব্যবহার করব না' এইটাও কি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট হবে?

৯| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন লেখনি !
সেস্ন অব হিউমারে মুগ্ধ !
কার্তিকের মরা রোদ্দুর, অলসতা, বিএনপি কর্মী ;) হা হা হা

পোষ্টে ভাললাগা এবং সহমত।

+++

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১৯

পদ্মপুকুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে
আপনি দীর্ঘদিন থেকে নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন, এটাও কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়

১০| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৫৬

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: গাছ গুলো কেটে ফেলা হবে ভাবলেই খারাপ লাগছে।আশা করি সরকারের বোধদয় হবে।
ছোটবেলায় যখন রাস্তার দুপাশে এই গাছ গুলো দেখতাম খুব অবাক হতাম।এত মোটা আর বড় গাছ গুলো দেখতে অনেক ভাল লাগত।
ভাইয়া আপনি বিএম হাই স্কুলে পড়তেন?
আমার বাড়ি কিন্তু ঝিকরগাছা থানায়।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:০৮

পদ্মপুকুর বলেছেন: এই গাছগুলোর সাথে আসলেই আমাদের সত্তা জড়িয়ে আছে। ছোটবেলায় তো ভাবতাম- রাস্তা মানেই এই রকম, দুইধারে বড় বড় গাছ.....

নিজের এলাকার একজন লেখককে দেখে ভালো লাগলো। তবে আমি ভাই বি এম স্কুলের না, পাশের মাদ্রাসা থেকে এসএসসি/দাখিল করে ঢাকা চলে এসেছি।

ভালো থাকবেন, শুভ ব্লগিং।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.