নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আটানব্বুইয়ের রোজার মধ্যে একবার ‘খ্যাপে’ ক্রিকেট খেলতে গেলাম নরসিংদীর বেলাবো বা রায়পুরাতে। শীতকাল ছিল সে সময়। দশ বারোজনের এক টিম নিয়ে মাইক্রোবাসে করে সকাল সকাল ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করলাম এবং ম্যাচ হেরে আমরা আবার বিকেলের দিকে ঢাকার পথে রওনা হলাম। মাঝামাঝি রাস্তায় আসার পর এক বিরান এলাকায় আমাদের মাইক্রোবাসের চাকা পাংচার হয়ে গেল। বিপদের উপর বিপদ, মাইক্রোতে স্পেয়ার চাকাও ছিলনা। এমন এক যায়গা, আশে পাশে কোন বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছে না। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, মাগরিবের আজান দিয়ে ফেলেছে।
আমরা পুরো দিশেহারা হয়ে পড়লাম। একেতো রোজা, তার উপর ম্যাচ হেরে বিধ্বস্ত। একটু যে কোথাও থেকে পানি খাবো, সে সুযোগও নেই। বেশ দুরে একটা বাড়ি মত দেখা যাচ্ছে। দল বেঁধে আমরা সেদিকেই হাটছি।
আমরা এতগুলো মানুষ। এইভাবে হঠাৎ করে অপরিচিত বাড়িতে ঢুকতে খুবই সংকোচ হচ্ছে, আবার এদিকে পানি তৃঞ্চায় কাতর হয়ে আছি। অগত্যা সবাই মিলে ঢুকে পড়লাম। হতদরিদ্র না হলেও নিতান্তই দরিদ্র পরিবার। তারাও হয়ত মাত্র ইফতার নিয়ে বসেছেন। আমরা আমাদের অবস্থা জানিয়ে খুব সংকোচ নিয়ে বললাম- আমরা জাস্ট একটু পানি খাব।
ওই ভদ্রলোক আমাদেরকে জোর করে বসিয়ে রাখলেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সবার জন্য পানির সাথে সেমাই আর মুড়ির ব্যবস্থা করলেন। ভদ্র মহিলা বেড়ার আড়াল থেকে খুব জোরাজুরি করতে লাগলেন যেন আমরা রাতে খেয়ে যাই...
খুবই সামান্য উপকরণ, খুবই সামান্য ব্যবস্থা। কিন্তু এই দরিদ্র পরিবারটি আমাদের এই বিরাট বাহিনীকে আপ্যায়নের সাহস দেখিয়ে মানবিকতার যে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, সেটার পরিধি অতি বিশাল। অপরিসীম।
আমি জানি, এ রকম ঘটনা আমাদের সবার জীবনেই আছে। হয়ত আরো বেশি হৃদয়স্পর্শী। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবিক বিপর্যয় এবং প্রতিবেশি দেশের সহযোগিতার ইতিহাসতো আমরা জানিই। কিন্তু তার বিপরীতে আজ মানবতার করুণ পরিস্থিতিতে আমরা কি প্রতিদান দিচ্ছি?
আজকে পাশ্ববর্তী দেশে যখন এক জঘন্যতম গণহত্যা চলছে, নিরপরাধ নারী, শিশুরা নিরুপায় হয়ে নিতান্তই বাঁচার তাগিদে এ দেশে আশ্রয় নিতে চাচ্ছে, তখন দেশের সুবিধাবাদি একটা ক্ষুদ্রাংশের সাথে কিছু ব্লগারও স্বার্থপরতার চুড়ান্ত রুপ দেখিয়ে দিচ্ছেন। এর স্বপক্ষে বিভিন্ন যুক্তিও তুলে ধরছেন। আমরা ভুলেই গেছি যে একাত্তরে আমরা ঠিক এভাবেই প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর তখনও ভারতীয় জনতার একটা স্বার্থপর অংশ এভাবেই বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বিতর্ক করেছে। বাংলাদেশিদের গ্রহণ না করার ব্যাপারে জনমত সৃষ্টি করেছে।
আজকে যারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মত দিচ্ছেন, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, হয়ত এই শ্রেণীর বড় একটা অংশের পূর্বপুরুষগণ ভারতে শরণার্থী হিসেবে ছিলেন, হয়ত তারা নিজেরা এখন বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে দেশে বিদেশে বৈধ বা অবৈধভাবে আশ্রয় নিয়ে নিরাপদে থেকে দেশ উদ্ধার করছেন। সেই হীনমন্যতা থেকেই হয়ত এমনটা করছেন। অথচ রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার যারা প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী, সেই পার্বত্য এলাকার মানুষের ভেতরে কোন নেতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে না।
আসলে রোহিঙ্গা সমস্যাটি আমাদের কাছে এক ধরণের ‘ছাঁকুনি’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশে বিদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের যে সকল সুশীল/সমাজকর্মী/মানবাধিকারকর্মী/নারী অধিকারকর্মীদেরকে সর্বদায় অতিমাত্রায় উচ্চকিত থাকতে দেখেছি, আজ দেখা যাচ্ছে, তাদের মুখে কোন রা নেই। নিরপেক্ষতার যে মুখোশ তারা পরে থাকতেন, এই রোহিঙ্গা ছাঁকুনিতে পড়ে তা ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। ব্যক্তিস্বার্থ, দেশীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতি আর বস্তুবাদের পাল্লায় পড়ে তারা গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমানে তারা রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে বিষোদগার করে যাচ্ছেন। অন্যায় করছেন। খুবই দুঃখজনক যে, এরকম পরিস্থিতিতে যখন বিদেশ থেকে সহযোগিতা আসছে, তখন তারও সমালোচনা এরা করছেন।
শুধু রোহিঙ্গা ইস্যু নয়, খেয়াল করলে দেখবেন, তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়েও নিজস্বার্থে কেউ এখন আর বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজী নয়। রাস্তায় একটা মানুষ বিপদে পড়লে কেউ এগিয়ে আসে না, উল্টো এই বিপদ থেকে কিভাবে স্বার্থ উদ্ধার করা য়ায়, সে উপায় খুঁজতে থাকে।
আচ্ছা, আমরা কি দিনে দিনে মানবিকতা হারিয়ে, মনুষ্যত্বহীন হয়ে অমানুষ হয়ে পড়ছি? আমাদের সুকুমার বৃত্তিগুলোকি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে? না হলে কিভাবে আমরা মানুষের বিপদের সুযোগ নিতে পারি? আমরা ভুলেই গেছি যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই অসহায়দের কথা বলে গিয়েছেন কত সুন্দর করে-
সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।
ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা
যা-কিছু পায় হারায়ে যায়, না মানে সান্তনা।।
সুখ-আশে দিশে দিশে বেড়ায় কাতরে
মরীচিকা ধরিতে চায় এ মরু প্রান্তরে।
ফুরায় বেলা, ফুরায় খেলা, সন্ধ্যা হয়ে আসে
কাঁদে তখন আকুল-মন, কাঁপে তরাসে।
কী হবে গতি, বিশ্বপতি, শান্তি কোথা আছে
তোমারে দাও, আশা পূরাও, তুমি এসো কাছে।।
এ অবস্থায় আমরা যদি কাউকে সাহায্য না-ই করতে পারি, অন্ততপক্ষে বিরুদ্ধাচারণ না করে নিশ্চুপ থাকলেও তো পারি। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের সে বোধটুকুও লোপ পেয়েছে। তবে আশার কথা হলো, ব্যক্তিস্বার্থের এই অমানিশা শহরাঞ্চলকে গ্রাস করলেও সারা দেশকে গ্রাস করতে পারেনি এখনো।
ছবিসূত্র
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৮
পদ্মপুকুর বলেছেন:
ক্যচ মিস তো ম্যাচ মিস....
বাট এই লেখার মূখ্য কি আপনার এটাই মনে হলো? আহা, কি দুর্বল আামার লেখা...
২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৮
প্রামানিক বলেছেন: ভালো বলেছেন। ধন্যবাদ
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২১
পদ্মপুকুর বলেছেন: ভালো আর বলতে পারলাম কই, রাজীব ভাই তো ম্যাচ হারার দুঃখেই বেশি দুঃখিত বলে মনে হচ্ছে।
৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০২
ওমেরা বলেছেন: আমার মনের কথাগুলোই বলেছেন ভাইয়া।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩
পদ্মপুকুর বলেছেন: কারো মনের কথা বলতে পারলাম দেখে ভালো লাগছে। আপনাকেও ধন্যবাদ
৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৩
সুমন কর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪০
করুণাধারা বলেছেন: পোস্ট খুব ভাল লাগল।
যখন এই অসহায় মানুষগুলোর ছবি দেখি তখন অপরাধবোধ হয়। মানুষ হিসাবে দুঃস্থদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো আমাদের কর্তব্য।
এ অবস্থায় আমরা যদি কাউকে সাহায্য না-ই করতে পারি, অন্ততপক্ষে বিরুদ্ধাচারণ না করে নিশ্চুপ থাকলেও তো পারি। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের সে বোধটুকুও লোপ পেয়েছে। সহমত।
৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৬
রাতু০১ বলেছেন: আমরা মানবতার পক্ষে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদ করবো। জয় হোক মানবতার। আপন পৃথিবীতে নিরাশ্রয় হতে পারে না মানুষ।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৬
পদ্মপুকুর বলেছেন: আমরা সমন্বিতভাবে ব্যক্তিক সাহায্য পাঠাচ্ছি। আপনারাও করতে পারেন। আপাতত এটাই হয়ত করার আছে ব্যক্তিগতভাবে।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য ও অনুভূতির জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: ওই ম্যাচে কর তানে হারলেন? ভুল গুলো কি কি ছিল।