নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে থেকে শিল্পচর্চা শুরু, তবে থেকেই শিল্প-সাহিত্যে চুরিদারিও শুরু বলেই ধারণা করা যায়। সাধে কি আর পিকাসোর মত মহান চিত্রশিল্পী বলেছেন ‘গুড আর্টিস্টস কপি, গ্রেট আর্টিস্টস স্টিল’।
চুরিদারির ধারাবাহিকতায় চৌর্যবৃত্তি নিজেই এখন এক শিল্প হিসেবে দাড়িয়ে গেছে। এই আমাদের সামু ব্লগ থেকে যেমনি লেখা চুরি হয়, তেমনি সাহিত্য, সিনেমা, সংগীত, চিত্রকলা থেকে শুরু করে শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রেই চুরি হয়েছে। এ দেশের বহু প্রথিতযশা লেখকের বিরুদ্ধে যেমন চুরির অভিযোগ আছে, তেমনি এ দেশের বহু শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি থেকেও চুরি হয়েছে অনেক কিছুই। ঘটনা হলো কেউ শতভাগ চুরি করে, কেউ করে মাত্র এক ভাগ, ওই যে কাটাপ্পা থেকে কেকাপ্পা হওয়া, ওটাও এক ধরণের চুরিই। বর্তমান হাতের মুঠোয় যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই চুরিদারি খুব দ্রুতই ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এই শিল্প থেমে থাকেনি।
পিকাসো’র ওই বাণীকে আত্মস্থ করে ডিজাইন জগতে বলা হয়, ‘গুড ডিজাইনার্স কপি, গ্রেট ডিজাইনার্স স্টিল’। গ্রাফিক ডিজাইনাররা এই বাণীকে তো প্রায় বাইবেল হিসেবে ধার্য করে নিয়েছে। কেউ ধরা খায়, কেউ উৎরে যায়। আমার অ্যাড ফার্মকালীন জীবনে একটা জিনিস খুব ভালোভাবে শিখানো হয়েছিল যে, ডিজাইনের ৪০ শতাংশ হলো ডিজাইন আর ৬০ শতাংশ মোটিভেশন। সোজা বাংলায় চাঁপাবাজি।
বাস্তবে ঘটনাও সেটাই। শতকরা ৯০ ভাগ ক্লায়েন্টেরই একটা প্রি-এডাপ্টেড বিশ্বাস থাকে যে অ্যাড ফার্মের ক্রিয়েটিভ লোকটি (?) ডিজাইন সম্পর্কে ভালো এবং বিস্তারিত জানবে এবং তাকে ব্যাখ্যা দিবে। সে ক্ষেত্রে অনুকুল একটা পরিবেশ তৈরীই থাকে। তাই আকাশ-বাতাস একটা কিছু চাপাবাজি করলেই ডিজাইন উৎরে যায়। যেমন ধরুন, কোন একটা ডিজাইনে আকাশের ইমেজ আছে। এ ক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন, আমি আপনার কোম্পানির ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বুঝাতে চাইছি, আবার বলতে পারেন, আমি আকাশ দিয়ে আপনার কোম্পানিতে চাকুরির ক্ষেত্রে ইচ্ছার স্বাধীনতার কথা বলতে চাইছি ব্লা ব্লা ব্লা... সুতরাং চুরিদারির পর সুন্দর ব্যাখ্যা দিতে পারলেও হবে, সমস্যা নেই।
আমার মনে হয়, ইউসিবি’র ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি হয়েছে। ডিজাইনিং ফার্ম করমর্দনের একটা থিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়েছে। নিচের ছবিতে দেখুন।
ইউরোপের অতি প্রাচীন এক মাল্টিপল ব্যবসায় কোম্পানি থমাস কুক ২০১৩ সালের অক্টোবরে তাদের নতুন লোগো উম্মোচন করে। এর প্রায় দু’বছর পর আসে বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নতুন লোগো। কালার এবং ওরিয়েন্টেশন বদলে দিলেও দুটো লোগোর ভেতরের সামঞ্জস্যতা কাকতালীয় হিসেবে ধরে নেয়াটা বোকামী। তাছাড়া আমরা তো জানিই ‘গুড ডিজাইনারস কপি.. .. ..’
শুধুমাত্র কালার এবং ওরিয়েন্টেশন বদলে দিলেই মৌলিক লোগো হয় না বলে আমার বিশ্বাস। এক্ষেত্রে যেহেতু ইউসিবি পরে এসেছে, সেহেতু ইউসিবির লোগোর থিমটি থমাস কুক থেকে কপি করা। ইউসিবির এই লোগো কোন ফার্ম করেছে আমি জানিনা, প্রথম আলোর মারফত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যে দুজন হেভিওয়েট শিল্পীর নাম দেখলাম, তাঁরা যদি এই লোগো তৈরীর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন তবে বিষয়টা খুবই আপত্তিকর। আশা করি উনারা এটার সাথে ছিলেন না।
এর পরেও হয়তো অনেকেই সাজূয্যটা বুঝতে পারছেন না, তাদের জন্য নিচের ফর্মেশন।
প্রাতস্মরণীয় হুমায়ুন আহমেদের কোন এক টিভি নাটকে অভিনেতা আফজাল শরীফকে উদ্দেশ্য করে প্রয়াত অভিনেতা আবুল খায়ের এর পুনপৌণিক ডায়ালগ ছিল “চুরিদারি সাবধানে করবা”। এখানেও সেই একই ডায়ালগ প্রযোজ্য। কারণ এটা একুশ শতক। ঘোড়ার ডাক’র সময় না।
২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩০
মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: এটা যদি ইউসিবি কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ে তাহলে তারা একটু হলেও কি লজ্জা পাবে ?
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩৩
পদ্মপুকুর বলেছেন: কর্তৃপক্ষ কেন লজ্জা পাবে? এটা তো তাদের ব্যাপার না। ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে, সেটাতো যারা লোগোটা করেছে, সেই ডিজাইন ফার্মের লজ্জা পাওয়ার ব্যাপার। তবে ওই যে, পিকাসো বলেছেন.. গুড আর্টিস্টস কপি.. .. .. সুতরাং কিসের লজ্জা!
৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৩
মলাসইলমুইনা বলেছেন: প্লেজারিজম সম্পর্কে জানি | গ্রাফিক আর্টস-এ এই ব্যাপারটা কেমন জানিনা | ইউসিবি -র এই লোগো কি নকলের পর্যায়ে পরবে ? হুবুহুতো নয় এটা ?
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩০
পদ্মপুকুর বলেছেন: এটাও এক ধরণের প্লেজারিজম। গ্রাফিক আর্টের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো সোজা। যেমনটা আপনি বললেন যে, ‘হুবহু এক তো নয়’! হুবহু এক হলেতো চুরিই হয়ে গেল। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে ইউসিবি এই লোগোরই কপি করেছে। হতে পারে তৃতীয় কোন লোগো থেকে নিয়েছে, হতে পারে এটা আদতেই মৌলিক। তবে এত বেশি সামঞ্জস্যতা, যে মৌলিকত্বের চিন্তাটাই অবান্তর মনে হয়।
৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৯
মলাসইলমুইনা বলেছেন: ও ইয়াহ | মৌলিকত্বের ব্যাপারে আপনার মন্তব্যের সাথে একদমই একমত | আইনগত ব্যাপারটা কেমন হতে পারে তাই জানতে চাচ্ছিলাম | আঁকার ক্ষেত্রে এ'ব্যাপারগুলো কেমন স্পর্শকাতর সেটা জানিনা, সেটাই জানার আগ্রহ ছিল | যাহোক অনেক ধন্যবাদ |
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০০
পদ্মপুকুর বলেছেন: আইনগতভাবে খুব একটা কিছু করার থাকে না, যতক্ষণ না আপনি আপনার কোন ক্রিয়েটিভ প্রোপার্টিকে ট্রেডমার্ক রেজিস্টার্ড করান। কোন কোন লোগোর কোণায় টিএম বা আর লেখা থাকে দেখেছেন নিশ্চয়। ওগুলোই বিভিন্ন পর্যায়ের রেজিস্ট্রেশন। রেজিস্ট্রেশনের পর্যায়গুলোতেই লেখা থাকে কতটুকু নকল করা যাবে বা আদৌও যাবে কিনা।
বাই দ্য ওয়ে, আপনি কি এই ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ?
৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৪
মলাসইলমুইনা বলেছেন: কতটুকু সাদৃশ্যপূর্ণ হলে নকল বলা যায় সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিলাম আপনার লেখা পড়ে | যেমন আপনার উদাহরণ দুটোর মধ্যে মিল অনেক সেটা সত্যি কিন্তু ইউসিবি-র লোগোটাতে এঙ্গেলটা চেঞ্জ করতেই সেটা তখন খুবই অন্যরকম হয়ে গেলো | এই উলোট পালটটা আপনাদের গ্রাফিক আর্টে প্লেজারিজম কিনা সেটাই ছিল আমার প্রশ্ন | আমি এই ফিল্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ কিনা ? আপনার প্রশ্ন পুরোনো স্মৃতি উস্কে দিলো অনেক | হাই স্কুলে পড়া আমার বন্ধু মুকুল আঁকতো দুর্ধর্ষ | স্কুলের দেওয়াল পত্রিকার মূল আঁকিয়ে থাকতো ও-ই | যেহেতু ঘনিষ্ঠ বন্ধু, একই সেকশনে পড়তাম, দুজনের বাসায়ই দুজনের যাতায়াত ওর আঁকা একসময় খুবই প্রভাবিত করলো | আঁকিয়ে হবার ইচ্ছে সেই প্রথম | খাতার দুই বাই দুই ইঞ্চির একটা ফ্রেমে সবুজ লাল দিয়ে গ্রামের একটা ছবিও একদিন আঁকা হয়ে গেলো | সেটা হঠাৎ একদিন মুকুল দেখে বললো এটাতো ভীষণ সুন্দর ! ভীষণ উৎসাহী হয়ে আমিও চালাচ্ছিলাম আঁকা আঁকি | কিন্তু দুই বাই দুই ফ্রেমের বাইরে গেলেই দেখি আঁকা গাছগুলো হ্যারিকেনের আঘাতে নুয়ে পড়া গাছের মতো বেঁকে যাচ্ছে, নদীগুলোতেও ফারাক্কার প্রভাব প্রকাশ্যে চলে আসছে | কত আর আঁকা যায় মরা নদী, ঝরে উল্টে পড়া/বেঁকে যাওয়া গাছ পালা | সেখানেই ইতি আমার আঁকা আঁকির আর গ্রাফিক ডিজাইনার হওয়া স্বপ্নটাও তাই শুরুতেই শেষ |
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: নাইমুল ইসলাম ভাই,
ধন্যবাদ আপনাকে। জ্ঞানের ভাণ্ডারে যদি কিছু যোগ নাই হলো, তবে আর ফালতু ব্লগিং করে লাভ কি! আপনি সত্যিই জানতে চাচ্ছেন দেখে ভালো লাগছে। আসলে কোন মাত্রা পর্যন্ত নকল হলে প্লেজারিজম বলা যাবে, সে সম্পর্কে কোন সীমারেখা আছে কি না আমার জানা নেই। তবে যেহেতু আমি নিজে এই খাতে দীর্ঘদিন ছিলাম, আমি জানি যে তৃতীয় উদাহরণে যে বিবর্তনক্রম আমি দেখিয়েছি (এইটা আমার নিজেরই করা), সেরকম এক্সপেরিমেন্ট ডিজাইন ফার্মগুলোতে অহরহ চলে । এরপর যেটা দাঁড়ালো, সেটাকে আমরা এক অর্থে মৌলিক তো বলতেই পারি। যেমনটা এখানে অ্যাঙ্গেলের সাথে সাথে কালার বদলে দিয়ে একদম নতুন একটা লোগো তৈরী হয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো, থমাস কুক লোগোর মধ্যবর্তী যায়গা থেকে যে উদীয়মান সূর্য রয়েছে, ইউসিবি লোগোতেও রেড পোর্শনের মাথার দিকে ওরকমই একটা চিন্তার ছোঁয়া রয়ে গেছে, নিশ্চয় লক্ষ করেছেন। একই ক্ষেত্রে কাজ করার ফলে ষষ্ঠ ঈন্দ্রীয় দিয়ে বুঝতে পারছি ব্যাপারটা। তবে সবাই তো আর ডিজাইন নিয়ে আগ্রহী নয়, অভিজ্ঞও নয়, তাই এই প্লেজারিজম চলে আসছে, ভবিষ্যতেও চলবে।
ওহো, মন্তব্য পড়ে বুঝলাম, আপনার লেখার হাত ভালো। আঁকিয়ে হওয়া হয়নি বলে আপনার ভেতরের সুকুমার বৃত্তি বিলুপ্ত হয়নি বলেই বিশ্বাস। লিখে যান মনের আনন্দে।
আরেকটা কথা, আমি এখন আর ডিজাইন করিন। করাই। একটা ব্যাংকের ব্র্যান্ডিং ডিভিশনে কাজ করি।
ভালো থাকবেন, শুভ ব্লগিং।
৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৩
মলাসইলমুইনা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার প্রতি উত্তরের জন্য | আর একটা কথা, আপনি আমাকে সার্জিক্যালি দুই ভাগ করে ফেলেছেন | তাহলেতো মেরেও ফেলতে ফেলতে পারেন | আমার নিক আমি যেটা লিখি সেটাই ঠিক |ওটাকে উল্টাবেন না প্লিজ |
৭| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৪৫
সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনার পোস্টটা পড়লাম। যে বেচারা ঐ লোগো কপি করেছে, তার নিজের চৌর্যবৃত্তির স্বভাব তাকে শিল্পী হিসেবে এগুতে দেবে না বেশীদূর। তার অ্যাডফার্মের মালিকেরও যে দূরদৃষ্টির অভাব আছে, তাও বোঝা গেল। তার ফার্মে তার নাকের ডগায় এই রকম কপিপেস্ট কাজ হবে - আর ফার্মের মালিকের চোখে যদি তা না পড়ে - ইউসিবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যাপারটা ধরতে পারা প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি। তবুও, আমি কামনা করিএই কপিপেস্ট করা লোগো ডিজাইনার বেঁচে থাকুক, ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করুক। বাংলাদেশে কর্পোরেট জগতে সবচে নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠী হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইনাররা। অফিসে সময় দিতে হয় অনেক, ক্লায়েন্ট খাটিয়ে মারে, কাজ শেষ হলে টাকা দেয় না সময় মত, আর প্রতিষ্ঠানের কিছু হলেই সবার আগে ধুপধাপ গ্রাফিক ডিজাইনাররাই ছাটাই হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৬
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কিন্তু ভাই চোরা না শুনে ধর্মের কথা।