নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের প্রত্যাশাহীন এই শহরে থেকে যাক কিছু খুচরো কথা...

পদ্মপুকুর

একজন শভেনিস্ট ও স্মৃতিকাতর মানুষ

পদ্মপুকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অগত্যা বনের পশুই কুরবানি হলো দেদারসে..

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩২


২০০১ সালে একুশের গ্রন্থমেলায় র‌্যামন পাবলিশার্স এর স্টলে সেলস পার্সন হিসেবে কাজ করেছিলাম। ওই স্টলে কাজ করার আগে র‌্যামন পাবলিশার্স সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না আমার। এডওয়ার্ড সাইদের ‘অরিয়েন্টালিজম’ এর বাংলা তর্জমা, মেজর কামরুল হাসান ভুইয়ার ‘জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা’ বা ‘নব্বই দশকের নির্বাচিত বাংলা কবিতা’র মত বই প্রকাশ করলেও মূলত শাহ সুফী সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী নামে বাউল ঘরানার এক ভদ্রলোকের লিখিত বই এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত মতাদর্শের পক্ষের বইগুলোই এই সংস্থা থেকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

এই ভদ্রলোকের মতাদর্শকে ইসলাম বলা হলেও ওটা আসলেই ইসলাম নাকি অন্য কিছু, সেটা অন্য আলোচনা। অন্য বিতর্ক। কিন্তু, ওদের কাছ থেকেই আমি প্রথম শুনেছিলাম- বনের পশু নয়, কুরবানি দাও মনের পশুকে। মাওলার অভিষেক দিবস নামে একটা দিবস এরা পালন করে (সম্ভবত সদর উদ্দিন আহমদ চিশতীর জন্মদিন), ওইদিন ঢাকা শহরে তাঁরা ব্যানার ট্যানার টাঙায়, যেগুলোর একটাতে এই কথাটা লেখা ছিল।

সেটা ছিল ২০০১ সাল। ‘বনের পশু-মনের পশু’ নিয়ে ক্যাচাল করার জন্য উপযুক্ত সময় ওটা ছিল না। সুতরাং এই বিষয়টা খুব একটা গতি পায়নি। কিন্তু বর্তমান সময়ে, অনুকুল পরিবেশে এসে গত কয়েক বছর ধরেই ঈদুল আযহার আগে আগে ‘বনের পশু-মনের পশু’ টপিকটা খুব আলোচিত হচ্ছে। কুরবানীর সময় আসলেই পশুক্লেশ নিবারন সমিতির আবরণে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষের লম্ফঝম্ফও বাড়তে থাকে। ভাবখানা এমন, কুরবানী শুধুমাত্র গরু ছাগলের গলায় ছুরি চালানোর একটা উৎসব, এর পেছনে আর কোন ধর্মীয়, সামাজিক বা অর্থনৈতিক তাৎপর্য নেই।

আর আমরা বাংলাদেশিরা যেহেতু প্রদর্শনপ্রিয় এবং অ্যাটেনশন সিকার, তাই ‘বনের পশু-মনের পশু’ ক্যাম্পেইন এর পেছনের গল্পটা বুঝি বা না বুঝি, এর সাথে যুক্ত হয়ে যাই। এর মধ্যেই আবার বিগতযৌবন এক চিত্র তারকা দম্পতি ফেলে আসা দ্যূতি কিছুটা ফেরত পাওয়ার লক্ষ্যে বলে বসলেন- এবার ঈদে তিনি কুরবানী না দিয়ে কুরবানীর টাকাটা বন্যার্তদের জন্য পাঠিয়ে দিবেন। ব্যস, এটাও হিট। একেবারে সময়োপযোগী পাঞ্চলাইন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলে দলে তাঁর অনুসারী বৃদ্ধি পেতে লাগলো। বলা বাহুল্য, এটাও বুঝে বা না বুঝেই।

আমি না বোঝার কথা কেন বলছি, এই যে আমরা হুজুগে বাঙালি কোন একটা ইস্যু পেলেই তার পেছনে ছুটতে ছুটতে গলদঘর্ম হয়ে পড়ি। কিন্তু কিছুদিন যেতেই সেই ইস্যু, ইস্যুর প্রতি কমিটমেন্ট, সব উধাও। বেমালুম ভুলে যাই সবকিছু। এটাই বাঙালির জাতীয় চরিত্র হয়ে দাড়িয়েছে। সর্বক্ষেত্রে।

আসলে ‘বনের পশু-মনের পশু’ বিষয়টা পুরোপুরিই ভুয়া এবং উদ্দেশ্যমূলক। যারা এই সব ক্যাম্পেইন শুরু করেন, তারা কিন্তু পশুক্লেশে ক্লিষ্ট হয়ে কেএফসি’র ফ্রায়েড চিকেন সাবাড় করার ক্ষেত্রে কোন বিরতী দিচ্ছেন না, সুযোগ পেলে সুন্দরবনের হরিনকেও ছাড়ছেন না। আর এমন তো নয় যে শুধুমাত্র মুসলিমরাই পশুর মাংশ খেয়ে থাকে, বরং অন্যান্য ধর্মীয়দের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কমই খেয়ে থাকে। এফএও’র এই আর্টিকেলটা দেখতে পারেন। অন্যদিকে, উম্মুক্ত স্থানে দেবতার পদতলে পশুবলির দৃশ্যের কাছে কুরবানীর নির্মমতাতো নিতান্তই শিশু।

এবার ঈদে ঢাকাতে ছিলাম। ঈদের দিন বের হলাম বাইক নিয়ে। রাজধানীর সড়কে-মহাসড়কে- অলিতে-গলিতে গামলা গামলা গোস্ত খাওয়ার লোভে লোভাতুর লোকজনের হাতে যে পরিমাণ গরু ছাগল কুরবানী হতে দেখলাম, তাতে মনে তো হয় না যে, কেউ মনের পশুকে কুরবানী দিতে পেরেছে। আর ঈমানে কনতো দেহি, ক্যাডা ক্যাডা কুরবানী বাদ দিয়া ওই ট্যাকাডা বানভাসীদের কাছে পাডাইছেন? আছেন কেউ।

ওমর সানীর কাছেও একটা কথা জানতে চাই। কিভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় তিনি টাকাটা কোথায় পাঠালেন?

ছবিসূত্র

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন।
যারা কোরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল :
(এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।
(দুই) রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব।
রাসূলে কারীম স. বলেছেন : হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া।

আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করার অর্থ এমন, যেমন কোন ব্যক্তি প্রতিমার নামে জবেহ করল অথবা কোন নবীর নামে জবেহ করল বা কাবার নামে জবেহ করল। এ ধরনের যত জবেহ হবে সব না-জায়েজ ও তা খাওয়া হারাম। জবেহকারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম।
'তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকর মাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে জবেহকৃত পশু আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু ; তবে যা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে তা খাওয়া জায়েজ বৈধ।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করে সে জাহান্নামে যাবে।

সুতরাং যার উপর কোরবানী ওয়াজিব সে পশু কোরবানী না করে অন্য কোন তরিকায় তা কুরবানী বললে তা কি জায়েজ হবে?

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নূর মোহাম্মদ নুরু ভাইয়ের বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করছি।

৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দেশ বন্যাকবলিত হওয়ায় কেউ কেউ বলেছিলেন কোরবানীর খরচটা কমিয়ে বন্যার্তদের সাহায্য করতে; প্রস্তাবটা হালে পানি পায় নি। হুজুরেরা বলেছিলেন কোন অবস্থাতেই কোরবানীর খরচ কমানো যাবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.