নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাকুরি প্রস্তুতিপর্বে ক্যাম্পাসে একটা আওয়াজ শুনতাম চাকরিতে হয় র্যাংক, না হয় ব্যাংক। সম্ভবত একদিকে সমাজে জলপাই রঙের ব্যাপক প্রভাব প্রতিপত্তি, অন্যদিকে নির্বিবাদি জীবনে অসদুপায় অবলম্বন না করেই নিপাট ভদ্রলোক সেজে মাসকাবারি ভালো মাইনে আর বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর বেকার সমাজই এই প্রবাদ চালু করেছিল।
র্যাংকওয়ালাদের ভেতরের অবস্থা কি, আমি বলতে পারবো না। তবে ব্যাংকের ব্যাপারে ওই প্রবাদের মত স্বপ্ন দেখতে থাকলে সে আশার গুড়ে বালি, শুধু বালি কেন; বরং কক্সবাজারের কয়েকটি পাহাড়সহ ১২০ কিলোমিটারের লংগেস্ট আনব্রোকেন স্যান্ডি বিচের পুরোটাই ওই গুড়ের ভেতর এখন ডুব সাতার দিচ্ছে। বাস্তবতা হলো, দুই হাত-দুই পা ওয়ালা যে প্রাণীটা পৃথিবীতে চড়ে বেড়ায়, তা যেন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে, এক ভাগ হলো মানুষ আর অন্যভাগ হলো ব্যাংকার। অর্থ্যাৎ হয় তুমি মানুষ হও, না হয় ব্যাংকার!
দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ইমিগ্রেশন, চিকিৎসা, যোগাযোগ, সাংবাদিক সমাজসহ প্রশাসনের কিছু বিভাগ এবং আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের জব ন্যাচারটাই এমন যে, উৎসব আনন্দের দিনও দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না। যারা এ সব জবে জয়েন করে, তারা এই ক্রাইটেরিয়াগুলো জেনে বুঝেই জবগুলোতে জয়েন করেন।
কিন্তু, কবে, কখন, কিভাবে কোন খিড়কি দরজা দিয়ে ব্যাংকিং পেশাটা এই তালিকায় প্রবেশ করলো, সে বিষয়ে মহামতি হেরোডটাস বা অগাস্ট কোৎ এর অনুসারীরা কিছুই বলেননি অদ্যাবধি। যেহেতু তারা কিছু বলেননি, আমিও জানি না। আমি শুধু এটুকুই জানি যে এখন আমাকেও প্রতি ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অফিস করতে হয়, এমনকি ঈদের দুদিন পর আজ এই শুক্রবারেও অফিস করতে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে ফোন অপারেটরদের হিডেন চার্জের মত কিছু হিডেন ক্রাইটেরিয়া ব্যাংকিং জবেও আছে। সামনের দিনে হয়ত দেখা যাবে রিক্রুটমেন্ট অ্যাডের নিচের দিকে কোণায় তারকা চিহ্ন দিয়ে লেখা থাকছে “হিডেন জব ক্রাইটেরিয়া অ্যাপ্লিকেবল!!”
প্রেসিডেন্ট এরশাদের অনেক কল্যাণকর কাজের মধ্যে একটা ছিল প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেয়া। সরকারি ব্যাংকের অত্যাচার থেকে মুক্ত করে জনগণের কাছে ব্যাংকিংসুবিধা পৌঁছে দিতে এটা ছিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ১৯৮৩ সালে এই প্রজন্মের প্রথম ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আরব বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময়ের অন্যতম আরেকটি ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক। এই পর্বে ১২টির মত ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময়ে শিক্ষিতদেরকে ডেকে ডেকে এনে বেসরকারি ব্যাংকগুলো চাকুরি দিয়েছে। তারাই এখন বাংলাদেশের ব্যাংকিংখাত পরিচালনা করছেন।
এরপর খালেদা জিয়ার প্রথম পর্বে দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংক আসে বাংলাদেশে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত এ সময়ে আটটির মত ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, যার অর্ধেকের বেশি ছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়। শেখ হাসিনার প্রথম টার্মে এসে আবারো রাজনৈতিক বিবেচনায় তেরটির মত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আমাদের দেশের ছোট্ট অর্থনীতির জন্য এ পর্যন্তই যথেষ্ঠ ছিল। বিএনপি দ্বিতীয় আমলের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান তাই প্রবল দলীয় চাপ উপেক্ষা করে নতুন ব্যাংক দেয়া থেকে বিরত থাকেন।
কিন্তু দেশের ব্যাংকিংখাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয় বর্তমান সরকারের সময়ে যখন সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে আরো ১১টা ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়। এতগুলো ব্যাংকের কারণে কর্মসংস্থান বাড়লেও কর্মপরিবেশের বারোটা বেজে গেছে রীতিমত হাইড্রোলিক হুইসেল বাজিয়ে। এখন ব্যাংক তো আর সেই নিপাট ভদ্রলোকের অফিস না, ব্যাংক এখন মুদি দোকান। এখন পাড়ায় পাড়ায় ব্যাংক। গলির এ মাথায় একটা ব্যাংক, ও মাথায় আরেকটা ব্যাংক। ব্যাংক না থাকলে সেবাঘর, ফাস্ট ট্রাক-সেকেন্ড ট্রাক, কত্ত কি। অনেক সময় ট্রাকের উপর চলন্ত ব্যাংকও দেখি।
ফলাফলও হাতে নাতে পাচ্ছি। ক্ষুদ্র অর্থনীতির এই দেশে প্রয়োজন-অতিরিক্ত ব্যাংকের মুনাফা ক্ষুধা মিটাতে গিয়ে ব্যাংকারদের অবস্থা শোচনীয়। ব্যাংকাররা এখন আর ব্যাংকার নয়, তারা আজব এক চিড়িয়া-
ঈদের আগের দিন পর্যন্ত গরুর হাটে ফেইক নোট চেক করবে কে? কেন ব্যাংকার;
আপন জুয়েলার্সের মত দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স জমা নেয়ার জন্য ছুটির দিনে অফিস করবে কে? কেন ব্যাংকার;
কোন উৎসব, দুর্যোগে, প্রয়োজনে অফিসে থাকতে হবে কাকে? কেন ব্যাংকারকে;
অতিরিক্ত আমানত সংগ্রহে সন্ধ্যার পর স্থানীয় ব্যবসায়ীর দাওয়ায় গিয়ে ম্লানবদনে সিরিয়াল দিয়ে বসে থাকবে কে? কেন ব্যাংকার;
ক্লায়েন্টের অন্যায্য কুৎসিৎ গালি খেয়েও হাসি হাসি মুখে সেবা দিতে হবে কাকে? নিশ্চিতভাবেই ব্যাংকারকে;
আন্ডারওয়্যারের ভেতর থেকে বের করে দেওয়া নোংরা ঘামে ভেজা টাকাটা প্রতিক্রিয়াহীনভাবে গ্রহণ করে দুহাতে গুণবে কে? সেও তো ব্যাংকারই;
অপরিসীম চাপ সামলে স্বল্পতম সময়ে শতভাগ নির্ভূল সেবা দিলেও কোন একটা ভূলের সাথে সাথেই শাস্তির আশংকায় কে থাকবে? অবশ্যই সে একজন ব্যাংকার;
তারপরও সময় মত প্রমোশন পেতে কর্তৃপক্ষের দিকে করুণভাবে চেয়ে থাকতে হবে সেই ব্যাংকারকেই!!!
তবুও হতাশ হবেন না। আমরা বৃটিশ কলোনিয়াল ডগ; চাকুরি আমাদের করতেই হবে। সে যে চাকুরিই হোক। জানেন তো; জীবন মানেই জি-বাংলা আর চাকুরি মানেই চাকর। সে ব্যাংকেই হোক আর র্যাংকেই হোক।
ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত
ব্যাংকিং জেনারেশন এর সূত্র
০২ রা জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:১৯
পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনার কি কোন দ্বিমত আছে মিন্টু ভাই?
২| ৩০ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৫
লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: ক্ষুদ্র অর্থনীতির এই দেশে প্রয়োজন-অতিরিক্ত ব্যাংকের মুনাফা ক্ষুধা মিটাতে গিয়ে ব্যাংকারদের অবস্থা শোচনীয়।
সরকারি ব্যাংকেও উত্তাপটা টের পাচ্ছি। পারফর্ম কর নয়তো ঢাকা ছাড়ো।
আজকে লাঞ্চ ও জুমার জন্য ত্রিশ মিনিটের বিরতি পেয়েছিলাম।
দারুন না!
৩০ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭
পদ্মপুকুর বলেছেন: কি আর করবেন বলেন
আমরা তো মানুষ নই, ব্যাংকার।
মানুষগুলো অন্যরকম, হাটতে পারে, বসতে পারে
এ ঘর থেকে ও ঘর যায়
মানুষগুলো অন্যরকম...
ভাই এইমাত্র পাওয়া খবরে জানা গেল, আগামীকাল শনিবারও পূর্ণ দিবস ব্যাংক খোলা...
৩| ৩০ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:০৫
নতুন বলেছেন: জানেন তো; জীবন মানেই জি-বাংলা আর চাকুরি মানেই চাকর। সে ব্যাংকেই হোক আর র্যাংকেই হোক।
বানিজ্য শুরু করতে হবে... এটার বিকল্প নাই। নতুবা সারা জীবন কামলাই খাটতে হবে।
৩০ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:২০
পদ্মপুকুর বলেছেন: বাণিজ্য শুরু করতে গেলেই সেই কলোনিয়াল ডগ সাইকোলজি এসে খামছে ধরে
৪| ০২ রা জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯
এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন:
চাকুরি মানেই চাকর
১০০% সহমত।
৫| ০২ রা জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৬
ভিটামিন সি বলেছেন: দাদা ভাই, আপনি কোন ব্যাংকে জানিনা। তবে আপনার জন্য মায়া হচ্ছে খুব। ভালো থাকবেন। মজা পাইলাম এখানে, "আন্ডারওয়্যারের ভেতর থেকে বের করে দেওয়া নোংরা ঘামে ভেজা টাকাটা প্রতিক্রিয়াহীনভাবে গ্রহণ করে দুহাতে গুণবে কে? সেও তো ব্যাংকারই।"
আমিও একটা ছোট-খাট প্রাইভেট ব্যাংকে জব করি, কিন্তু এতো পেইন নাই দাদা। আমার জন্য দোয়া করবেন।
০৩ রা জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৩৮
পদ্মপুকুর বলেছেন: এখানে ব্যক্তি আমি নই, ব্যাংকিং জনতার কথা বলতে চেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার যায়গায় আমি ভালই আছি।
শুভ ব্লগিং
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭
এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন: জীবন মানেই জি-বাংলা আর চাকুরি মানেই চাকর