নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের অনেক অপ্রকাশ্য অনুভুতি প্রকাশ করা দরকার *\nহে পৃথিবী! সত্য বলার সাহস দাও --- পবন সরকার

পবন সরকার

পবন সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুঙ্গিপাড়া ভ্রমণ

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৪



বঙ্গবন্ধুর গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ার অনেক গল্প শুনেছি কিন্তু স্বচক্ষে দেখা হয় নি। টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে ছিলাম। অবশেষে সেই সুযোগ পেয়ে গেলাম। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পরের ঘটনা। ডিসেম্বর মাস। সকালের দিকে শীতের কাপড় আর ছোট্ট একটি ব্যাগ নিয়ে রওনা হলাম। গুলিস্থান থেকে বাসে চড়ে সোজা মাওয়া ঘাট। মাওয়া ঘাট থেকে লঞ্চ পার হয়ে ওপারে গিয়ে গোপাল গঞ্জের বাসে চড়ে বসলাম। যথাসময়ে বাস ছেড়ে দিল।

বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যখন পৌছলাম তখন বিকেল হয়েছে। সুর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়েছে। ভ্যান থেকে নেমে সোজা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনের উঠানে গিয়ে দাঁড়ালাম। উঠানের পূর্ব পাশে বঙ্গবন্ধুর কবর। কবরটি পাকা করা তবে তেমন শান শওকত নেই। কবর খানায় ঢুকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভাবতে লাগলাম। যে লোকটির একটি বক্তৃতায় সারা বংলার মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছিল সেই মহান নেতা এখানে চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন। এতবড় মহান নেতার কবরে তেমন কোন জৌলুস নেই। সাদামাটা ভাবে পাকা করা। অনেকক্ষণ কবরের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ জলে ভরে উঠল। ভেজা ভেজা চোখ নিয়ে বেরিয়ে এলাম।

বেলা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়েছে। আমি বঙ্গবন্ধুর বাড়ির চারদিকে ঘোরাঘুরি করছি। বঙ্গবন্ধুর গ্রামের বাড়ি প্রাণ ভরে দেখছি। বঙ্গবন্ধু যে বাড়িতে বড় হয়েছেন এবং যে বাড়িতে তাঁর শৈশব, কৈশর কেটেছে সেই বাড়ির আঙ্গিনা ঘুরে ঘুরে দেখছি। সন্ধা হলেও আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আমার ইচ্ছা আমি রাতে এখানে থাকবো, সকাল বেলা পুরো এলাকা ঘুরবো। আমার ধারনা ছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নিশ্চয় মেহমান থাকার ব্যবস্থা আছে। সেই ভরসা করে বঙ্গ বন্ধুর বাড়ির দোতালার নিচতলায় বসে থাকা আনছারদের কাছে গিয়ে থাকার কথা বললাম। তারা বলল, আমাদের এখানে বাইরের অপরিচিত লোক থাকতে দেয়া হয় না। তাছাড়া আমাদের এখানে অস্ত্র শস্ত্র আছে, যে কারণে বাইরের অপরিচিত লোক রাখা নিষেধ।
তাদের কথা শুনে বললাম, ভাই, আমি তো ঢাকা থেকে এসেছি, এখানে আমার কোন আত্মীয়-স্বজন নেই, যদি এখানে না থাকা যায় তাহলে আমার একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে?
আমার কথা শুনে একজন আনসার বলল, এখানে থাকার আর কোন ব্যবস্থা নাই, আপনি তাড়াতাড়ি পাটগাতি চলে যান এবং বাস ধরে গোপাল গঞ্জ চলে যান, নইলে কিন্তু আপনি বিপদে পড়ে যাবেন।
মনে মনে বললাম, আমি আর বিপদে পড়বো কখন, বিপদে তো পড়েই আছি।
(এখানে পাঠকদের বলে রাখা ভালো-- বর্তমানে টঙ্গিপাড়ায় থাকা খাওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলেও আমি যে সময় গিয়েছিলাম সেই সময় ছিল না।)
আনসারদের কথামত রাস্তায় এসে পাটগাতি যাওয়ার জন্য রিক্সা ভ্যান খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু গ্রাম এলাকা হওয়ায় অনেক খোঁজাখুজি করেও রিক্সা ভ্যান পেলাম না। রাত হয়ে যাচ্ছে দেখে রিক্সার আশা না করে পায়ে হাঁটতে লাগলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর ভাগ্যক্রমে একটি খালি রিক্সা পেলাম। ছয়টাকা ভাড়া দিয়ে রিক্সায় উঠে পাটগাতি গেলাম। সন্ধ্যা হওয়ায় পাটগাতিতে লোকজনের সংখ্যা খুবই কম। তবে একটি বাস দাঁড়ানো আছে। বাসে কোন যাত্রী নেই। ড্রাইভার সিটে বসে আছেন। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম বাস যাবে কিনা? ড্রাইভার বলল, যদি যাত্রী হয় তাহলে যাবো নইলে যাবো না।
ড্রাইভারের এমন কথায় আবার দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ে গেলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, আজ মনে হয় গাছ তলে বসেই রাত কাটাতে হবে। যেখানে বাস দাঁড়ানো ছিল তার পাশেই রাস্তার পশ্চিম পাশে টিনের ছাপড়া দেয়া একটি খাবার হোটেল। ভাবলাম কোথাও যদি জায়গা না পাই এই হোটেলের টেবিল জোড়া দিয়ে শুয়ে রাত কাটিয়ে দিব।
যাওয়া ও থাকার অনিশ্চয়তার কারণে আমি খুব অসহায়বোধ করছি। এমন অজানা অচেনা জায়গায় এখন কি করবো? কোথায় যাবো কোথায় থাকবো? ড্রাইভার হেলপারের কাছেই দাঁড়ানো ছিলাম। কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার হোটেলে ঢুকে ভাত খেতে লাগল। ড্রাইভারের ভাত খাওয়া দেখে আমিও হোটেলে ঢুকে একটি চেয়ারে বসলাম। আমারও খুব খিদে পেয়েছিল। হোটেল বয়কে ভাত দিতে বললাম। হোটেল বয় টিনের প্লেটে করে ভাত দিল। তরকারীর কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল, মুরগী আর মাছ।
বয়কে মাংস দিতে বললে রোষ্টের মত রান্না করা মাংস এনে দিল। পাতে ঝোল নিয়ে চেখে দেখি রান্না খারাপ নয় তবে তেমন সুস্বাদুও নয়। ক্ষুধার সময় খেতে মন্দ নয় ভালই লাগল।
ভাত খাওয়া শেষ করে বসে আছি। এমন সময় কোথা থেকে কয়েক জন লেবার চলে এলো। এরা সংখ্যায় তের জন। তাদের পেয়ে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিল। রাস্তায় আর কোন যাত্রী পেল না, কাজেই দ্রুত তাদের সহ আমকে নিয়ে বাস গোপাল গঞ্জ চলে এলো।

(ছবি ইন্টারনেট)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩০

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮

পবন সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৭

মেহেদী রবিন বলেছেন: অতীত রোমন্থন

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৯

পবন সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ মেহেদী রবিন ভাই পোষ্টটি পড়ার জন্য খুশি হলাম।

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২৩

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: তার পরের ঘটনা জানার অপেক্ষায় থাকলাম

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৩

পবন সরকার বলেছেন: পরের ঘটনা, দেরি হবে, লিখি নাই।

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২৪

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: ওখানে তো ছবি তোলা নিষেধ, কিভাবে ছবি তুললেন?

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৩

পবন সরকার বলেছেন: ছবি আমি তুলি নাই, গোগুল মামু দিয়েছে।

৫| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪১

খায়রুল আহসান বলেছেন: বেশ কষ্ট করেছেন, বোঝা গেল। তবুও তো নিজ চোখে পরিদর্শন করতে পেরেছেন, সেটাই তো বড় কথা।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫

পবন সরকার বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। গিয়ে অনেক কষ্টেই পড়েছিলাম। লেখাটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.