নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, যিনি জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী নামে অধিক পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ওসমানী সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দেন৷ ঐ ভাষণে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম. এ. জি. ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন৷ উল্লেখ্য যে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারী ও সরকার গঠন করা হয় এবং পরবর্তীকালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার, ওসমানীকে করা হয় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জনাব এম, এ, জি ওসমানীর ১০২তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯১৮ সালের আজকের দিনে তিনি সিলেটের সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধান সেনাপতি এম, এ, জি ওসমানীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী ১৯১৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃপুরুষের বাড়ি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ থানার (বর্তমানে ওসমানীনগর থানা) দয়ামীরে। তাঁর পিতা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান, মাতা জোবেদা খাতুন। খান বাহাদুর মফিজুর রহমান তৎকালীন আসামের সুনামগঞ্জ সদর মহকুমায় সাব-ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন৷ এখানেই জন্ম হয় ওসমানীর। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছেলে ওসমানী। পিতার চাকরির সূত্রে তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই কিছুদিন পর বদলির আদেশ নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে চলে যেতে হয় গোহাটিতে৷ আর সেখানেই ওসমানীর প্রাথমিক শিক্ষার শুরু হয়৷ ১৯২৩ সালে 'কটনস্ স্কুল অব আসাম'-এ ভর্তি হন তিনি ৷ লেখাপড়ায় যে তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন। স্কুলের প্রত্যেক পরীক্ষায় তিনি প্রথম হতেন৷ ১৯৩২ সালে ওসমানী সিলেট গভর্নমেন্ট পাইলট হাই স্কুল এ ভর্তি হন ৷ তৎকালীন সময়ে সিলেটের এই স্কুলটি 'ক্যালকাটা ইউনিভর্সিটির' অধীনে ছিল৷ ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে৷ সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন৷ এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ সরকার এম. এ. জি. ওসমানীকে প্রাইওটোরিয়া পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৩৮ সালে।
বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ওসমানী ত্ৎকালীন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে তাঁর সামরিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এই সময় তাঁর মধ্যে শৃঙ্খলা, নিয়মতান্ত্রিকতা, আনুগত্য, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি গুণগুলো বেড়ে উঠেছিল। ১৯৪০ সালে তাঁর সামরিক শিক্ষা সমাপ্ত হয়। একেবারে পূর্ণাঙ্গ একজন সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠার পর ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে কমিশন পান। ১৯৪২ সালে দেখা যায় ওসমানীই হচ্ছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ মেজর। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মির একজন মেজর হিসেবে ওসমানীকেও ঐ যুদ্ধে লড়তে হয়। বার্মার রণাঙ্গনে তাঁকে এক ব্যাটেলিয়ান সৈন্য পরিচালনা করতে হয়েছিল। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। ভারত ভাগ হতেও আর বেশি বাকি নেই। এই রকম একটা সময়ে ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে লং কোর্স পরীক্ষা দিয়ে উচ্চস্থান লাভ করেন এবং ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের আগেই তিনি লেফটেনেন্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন। ১৯৪৭ সালের আগস্টের মাঝামাঝিতে উপমহাদেশকে পাকিস্তান ও ভারত নামে বিভক্ত করে ব্রিটিশরা বিদায় নেয়। আঞ্চলিক অথবা ধর্ম ভিত্তিক বিভাজনের ফলে এম. এ. জি. ওসমানী পাকিস্তানের নাগরিক হন এবং ১৯৪৭-এর ৭ অক্টোবর লেফটেনেন্ট কর্নেল পদ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫১ সনে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ফাস্ট ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। এর পর তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তত্কালীন পূর্ববাংলার আরও কয়েকটি আঞ্চলিক স্টেশনের দায়িত্বও তিনি সফলতার সাথে পালন করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের জেনারেল স্টাফ এন্ড মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পান। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেন৷ এভাবেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাঁর উপর অরোপিত দায়িত্বগুলো সুষ্ঠুভাবে পালন করে নিজেকে একজন সাহসী, দায়িত্ববান ও বলিষ্ট সৈনিক রূপে গড়ে তোলেন। পাক-ভারত যুদ্ধ যখন শেষ হয় তখন তাঁর বয়স চল্লিশের উপরে৷ ১৯৬৬ সালের মে মাসে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসরকালীন ছুটি নেন এবং পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে '৭০-এর নির্বাচনে ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং তার পরবর্তী সময়ের ইতিহাস কারোরই অজানা নয়। স্বাধীনতা পিপাসু এক পক্ষের আন্দোলন, সংগ্রাম আর অন্য পক্ষের কঠোর ভাবে দমনের ইচ্ছার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয় কয়েকটি মাস। এম. এ. জি. ওসমানী বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ঢাকাতেই ছিলেন এম. এ. জি. ওসমানী। পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বছর চারেক আগে অবসর নেয়া ওসমানীর সামরিক দক্ষতা ও দূরদর্শিতা সম্পর্কে পাকিস্তান সরকার অবগত ছিল। তাই ঐ রাতেই ওসমানীকে হত্যার চেষ্টায় হন্যে হয়ে খোঁজে পাকবাহিনীর একটি কমান্ডো। কিন্তু একেবারেই ভাগ্যগুণে অলৌকিকভাবে প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল ওসমানীর। পরের চার দিন ঢাকাতেই আত্মগোপনে থেকে পঞ্চম দিনে নদীপথে পালিয়ে গিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যুদ্ধরত ব্যাটেলিয়নদের সাথে যোগ দেন। শুরু হয় ওসমানীর জীবনের নতুন এক অধ্যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পাক-ভারত যুদ্ধের পর এবার শুরু হয় নিজের মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার যুদ্ধ। যে যুদ্ধ ছিল নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, বলা যায় প্রায় নির্বাসিত অবস্থায় মুজিব নগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম. এ. জি. ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন।
১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল থেকে এম. এ. জি. ওসমানী মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। রণনীতির কৌশল হিসেবে প্রথমেই তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন এবং বিচক্ষণতার সাথে সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন এবং প্রাক্তন ইপিআর এর বাঙালী সদস্য, আনসার, মোজাহেদ, পুলিশ বাহিনী ও যুবকদের নিয়ে একটি গণবাহিনী বা গেরিলাবাহিনী গঠন করেন। শুরু হয় নতুন উদ্যমে মুক্তিযুদ্ধ। বিজয় পেতেই হবে মুক্তির এই যুদ্ধে; এ রকম মানসিকতা দৃঢ় হচ্ছিল সমগ্র বাঙালির ভেতর। মুক্তির সংগ্রামে এম. এ. জি. ওসমানীর হাতে কোনো নৌবাহিনী ছিল না। তবে নিয়মিত নৌবাহিনীর কিছু অফিসার এম. এ. জি. ওসমানীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন। তাছাড়া ফ্রান্সের জলাভূমিতে থাকা পাকিস্তানের ডুবোজাহাজের কিছু সংখ্যক কর্মীও মুক্তিবাহিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। কিছুদিন পর এম. এ. জি. ওসমানী তাদের এবং কিছু সংখ্যক গেরিলা যুবক নিয়ে একটি নৌকমান্ডো গঠন করেন। আগস্টের মাঝামাঝিতে তাঁরা নদীপথে শত্রুর চলাচল প্রায় রুদ্ধ করে দেয়। নৌবাহিনী গঠনের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষের দিকে দুটি হেলিকপ্টার ও একটি অটার আর তাঁর নিজের চলাচলের জন্য একটি ডাকোটা নিয়ে ছোট্ট একটি বিমানবাহিনীও গঠন করেছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর এম. এ. জি. ওসমানীর গঠিত নিয়মিত ও গেরিলাবাহিনীর সাথে ভারতের সৈন্যরাও যুদ্ধে অংশ নেয়। ভারত তাঁদের সাথে যোগ দিলে তিনি তাদের ট্যাংক ও কামানের সহায়তায় বিজয় ত্বরান্বিত করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এ ভাবেই এম. এ. জি. ওসমানী বিচক্ষণতা আর দূরদর্শিতার মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করার কারণে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়েছিল। ওসমানী তাঁর অকৃত্রিম দেশপ্রেমের স্বীকৃতিও পেয়ছিলেন গণমানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। স্বাধীন দেশে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে কর্নেল থেকে জেনারেলে পদে উন্নীত করে। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদ বিলুপ্ত হয়ে গেলে জেনারেল ওসমানী সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেন। সামরিক জীবন থেকে অবসরের পর পুনরায় ফিরে এলেন রাজনীতিতে। ১৯৭২ সালের ১২ এপ্রিল তিনি কেবিনেটে শপথ নেন। এরপর বাংলাদেশ সরকারের জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তখনও তিনি গণতান্ত্রিক বা নির্বাচিত উপায়ে কেবিনেট সদস্য ছিলেন না। ১৯৭৩ সালে নিজের যোগ্যতা অথবা জনপ্রিয়তা যাচাই করার সুযোগ পান তিনি । ১৯৭৩ সালের মার্চে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ নির্বাচনে ওসমানী তাঁর নিজের এলাকা থেকে অংশ নেন এবং নির্বাচনে ৯৪ শতাংশ ভোটে বিজয়ী হয়ে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেন। ফলে কেবিনেট পদ পুনর্বহাল থেকে যায়। জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সাথে আরও যুক্ত হয় ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক কিছু ঘটে যায়। বলা যায় স্বাধীনতা পরবর্তী এক ধরনের অস্থিরতা। এসব ঘটনায় একেবারেই নীরব দর্শক হয়েছিলেন জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী। ১৯৭৪ সালের মে মাসে মন্ত্রীসভা থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে তিনি সংসদ সদস্যপদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। সেবছর ২৯শে আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান, তবে ৩রা নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার পর পদত্যাগ করেন। দেশের একটা চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী গৃহীত হয়। এই সময় তিনি নিজেকে একেবারেই আড়ালে রাখেন। ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় জনতা পার্টি গঠন করে জনগণকে ঐক্যের ডাক দেন। কিন্তু সে ডাকে তিনি খুব একটা সাড়া পাননি। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্র ততদিনে একটা সংগঠিত সামরিক শক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। ১৯৭৮ সালে জেনারেল ওসমানী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন গণঐক্য জোট-এর প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু ঐ ধরনের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেয়াটা ছিলো ওসমানীর মতো বিচক্ষণ ব্যক্তির পক্ষে ভুল সিদ্ধান্ত। বয়সের ভারে ভারী হতে থাকলে হয়ত মানুষের স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। ১৯৮১ সালে তিনি নাগরিক কমিটির জাতীয় প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৮১ সালের নির্বাচনেও তিনি ব্যর্থ হন।
বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এই বীর সৈনিক যুদ্ধের সময় বহুবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও শেষতক চিরন্তন মৃত্যুকে জয় করতে পারেননি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার্থে লন্ডন একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুদিন পর শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি সেখানেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে বর্ণাঢ্য এক সৈনিকের জীবনের যবনিকা ঘটে। পরে তাঁকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সিলেটে সমাহিত করা হয়। তাঁর স্মরণে ঢাকায় গড়ে উঠেছে ‘ওসমানী উদ্যান’ ও স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিপরীতে ‘ওসমানী মেমোরিয়াল হল’৷ এছাড়া তার সিলেটস্থ বাসভবনকে পরিণত করা হয়েছে জাদুঘরে৷ সরকারি উদ্যোগে সিলেট শহরে তার নামে একটি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ও সর্বাধিনায়ক এম, এ, জি ওসমানীর ১০২তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দেওয়া অকুতভয় বীর সৈনিকএম, এ, জি ওসমানীর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনিতো দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন
আর তিনি ছিলেন প্রধান সেনাপতি। কিছু
পরমর্শ তাকে দিতে পারতেন !! তা হলে আজ
দেশের অবস্থা এমন হতোনা!! কি বলেন!!
২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: অকুতভয় বীর সৈনিকএম, এ, জি ওসমানীর জন্মদিনে
.........................................................................
আমার ফুলেল শুভেচ্ছা।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ স্বপ্নের শঙ্খচিল
অকুতভয় বীর সৈনিকএম, এ, জি ওসমানীর
জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
এবার কিন্তু আমি আপনার উপরে আছি। হে হে---
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ খা্নসাব বীর সৈনিক এম, এ, জি ওসমানীর
জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।
এবার একটু চাঞ্চ দিলাম!!!
৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ২:১১
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি কোথা থেকে লিখেন, দরকারী বিষয়গুলো থাকে না।
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দরকারী বিষয়গুলো আপনার কাছ থেকে
জানার জন্যইতো তা উহ্য রেখেছি !!
৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০৩
রবিন.হুড বলেছেন: ওসমানীকে নিয়ে অনেক তথ্যবহুল লেখার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
স্বাধীনতার সময় বড় দায়িত্ব পালন করেছিলেন; তবে, ভাবনাশক্তিতে সমস্যা ছিলো, নতুন দেশের সামরিক বাহিনী কি রকম হওয়া উচিত, তা বুঝতেন না।