নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বড় ধরনের কোনো খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। চলে আলোচনা-পুলিশ-আসামি-ফাঁসি। এরপর শুধুই স্মৃতি। ধূসর-বির্বণ। অতঃপর বিস্মৃতি। ঘটনা আর মনেও থাকে না। চায়ের কাপের সেই ঝড় থামে, তবে দু'একটি চোখ তখনো জেগে থাকে সেই খুনিকে গ্রেফতার করার জন্য। ২৮ বছর আগেকার এ ঘটনাটি এখনো মানুষের মনে গভীর দাগ কেটে আছে। ছয় খুনের ঘটনা মনে করলে এখনো আঁতকে ওঠেন সেখানকার মানুষ। ঘটনাটি এতটাই আলোচিত হয়েছিল যে, এ নিয়ে পরবর্তীতে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়। নাম ছিল ‘কাঁদে নিদারাবাদ’। সেই নৃশংস খুনির নাম তাজুল ইসলাম। দেশবাসী যাকে কসাই তাজুল বলেই চেনে। ১৯৮৯ সালের অক্টোবরে গ্রেফতারের আগে ভয়ঙ্কর এই খুনিকে নিয়ে দেশজুড়ে ছিল আতঙ্ক। সরকারের ভিতর-বাইরে তোলপাড়। কোনোভাবেই পুলিশ তার নাগাল পাচ্ছিল না। পুলিশের ঘুম রীতিমতো হারাম। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলেছে। খুনিকে যে কোনো উপায়েই হোক গ্রেফতার করতেই হবে। ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার (বর্তমান বিজয়নগর উপজেলা) নিদারাবাদ গ্রামে নৃশংসভাবে খুন হন একই পরিবারের ছয় সদস্য। গ্রামের নিরীহ শশাঙ্ক দেবনাথের স্ত্রী বিরজাবালা ও পাঁচ অবুঝ সন্তানকে টুকরা টুকরা করে কেটে হত্যার পর ড্রামে ভরে বিলের পানিতে ডুবিয়ে রাখে। সামান্য কিছু জমির জন্য ইতিহাসের নৃশংসতম জঘন্য ঘটনাটি ঘটান ওই গ্রামের তাজুল ইসলাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার (বর্তমান বিজয়নগর উপজেলা) নিদারাবাদ গ্রাম। গ্রামের প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে ধুপাজুড়ি বিল। নৌকায় করে সেই বিল দিয়ে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা ছিল ওই গ্রামের শিক্ষক আবুল মোবারকের। একদিন বিকালে স্কুল থেকে ফেরার পথে বিলের পানিতে দুর্গন্ধযুক্ত তেল ভাসতে দেখেন। তিনি নৌকার গতিপথটা একটু ঘুরিয়ে নেন। হঠাৎ নৌকার তলদেশে কী একটা আটকে যাওয়ায় ঢুলে ওঠে তার নৌকা! এবার মাঝির বৈঠায় খটখট শব্দ! সন্দেহ হয় শিক্ষক আবুল মোবারকের। তার নির্দেশমতো মাঝি বৈঠা দিয়ে পানির নিচে খোঁচাখুঁচি করতেই ভেসে ওঠে ড্রাম! তিনি ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দিলেন। ড্রাম খুলতেই স্তব্ধ সবাই। তিন তিনটি লাশ! সন্ধান চলে আরও। মিলেও যায়। আরেকটি ড্রামে টুকরো টুকরো করে রাখা আরও তিনজনের লাশ! লাশ ছয়টি শনাক্ত হলো। এরা আর কেউ নন, একই গ্রামের নিরীহ শশাঙ্ক দেবনাথের স্ত্রী ও পাঁচ অবুঝ সন্তানের লাশ এগুলো। শশাঙ্কের স্ত্রী বিরজাবালা (৪৫), মেয়ে নিয়তি বালা (১৭), প্রণতি বালা (১০), ছেলে সুভাস দেবনাথ (১৪), সুপ্রসন্ন দেবনাথ সুমন (৫) ও দুই বছরের সুজন দেবনাথ। এই ঘটনাটি ১৯৮৯ সালের। এ ছয় লাশ উদ্ধারের দুবছর আগে অপহৃত হন শশাঙ্ক। তার আর খোঁজ মিলেনি। শশাঙ্কের এক মেয়ে সুনিতী শ্বশুরবাড়ি থাকায় তিনি বেঁচে যান প্রাণে। জানা গেছে, শশাঙ্কের সম্পত্তির ওপর লোভ ছিল পাশের গ্রামের কসাই তাজুল ইসলামের। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ছয় খুনের পরিকল্পনাটা দীর্ঘদিনের। পার্শ্ববর্তী পাঁচগাঁও গ্রামের তাজুল ইসলাম সম্পত্তি গ্রাস করতেই সম্পর্ক গড়ে তোলে শশাঙ্ক পরিবারের সঙ্গে। একপর্যায়ে শশাঙ্কের স্ত্রী বিরজাবালা তাজুল ইসলামকে ধর্মবাবা বলে ডাকতে শুরু করেন। এভাবে সম্পত্তির অনেক খুঁটিনাটি জেনে যায় তাজুল ইসলাম। ভুয়া দলিল তৈরি করে তাজুল সম্পত্তি আয়ত্তে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরিকল্পনা-মাফিক অপহরণের পর হত্যা করে শশাঙ্ককে। দুই বছর পর তার স্ত্রী-সন্তানসহ ছয়জনকে হত্যা করে ড্রামে চুন মিশিয়ে তাতে লাশ ভরে বিলে ফেলে দেওয়া হয়। সে সময় দুই বছরের শিশুকেও হত্যা করতে হাত কাঁপেনি খুনিদের। এক পর্যায়ে পুরো পরিবারটিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। হত্যাকাণ্ডের ১১ দিন পর লাশ উদ্ধারের ঘটনা জানতে পেরেই লাপাত্তা তাজুল তার দলবল নিয়ে।
অতঃপর খুনি ধরা পড়ে। রাজধানী ঢাকার কাকরাইল মসজিদ। সিআইডি পুলিশের কয়জন সদস্য মসজিদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এদের মধ্যে একজন হাবিলদার এক মুসল্লিকে দেখে দাঁড়িয়ে যান। লম্বা দাড়ি। চুল পেছনে ঘাড়ের নিচ পর্যন্ত নেমে গেছে। মাথায় সাদা গোল টুপি। তাবলিগ জামাতের একদল মুসল্লির মাঝে লোকটি দাঁড়ানো। এরা মসজিদ থেকে নেমে কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সিআইডির ওই হাবিলদার পকেট থেকে ভাঁজ করা পত্রিকার ছেঁড়া একটি কাগজ বের করলেন। একবার কাগজের দিকে, আরেকবার ওই লোকটির দিকে তাকাচ্ছেন। বার বার। তিনি বুঝতে পারছেন না, পত্রিকার ছবির মানুষটি তার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি একই কিনা। ছবিতে দাড়ি-গোঁফ নেই। চুল ছোট। কিন্তু বাস্তবের সন্দেহভাজন লোকটির চেহারায় সবই আছে। হাবিলদার এবার ভালো করে লোকটিকে দেখতে থাকেন। ঠিক সে সময়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার চোখাচোখি হয়ে যায়। চোখাচোখি হতেই হাবিলদার শতভাগ নিশ্চিত। এই ব্যক্তির ছবি নিয়েই তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গেই তার সঙ্গীদের নিয়ে জাপটে ধরে ফেলেন আলখেল্লা পরা লোকটিকে। লোকটি চিৎকার করে মুসল্লিদের কাছে সাহায্য চাইতে থাকেন। মুসল্লিরাও এগিয়ে আসেন। পুলিশের দলটি তাদের পরিচয়পত্র দেখায়। লোকটির ছবি দেখিয়ে মুসল্লিদের বলেন, এই ব্যক্তি হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খুনি। এর নাম তাজুল। যাকে কসাই তাজুল বলেই চেনে। এ কথা শুনে মুসল্লিরা পুলিশকে সাহায্য করেন। পুলিশের দল তাজুলকে মালিবাগ সিআইডি দফতরে নিয়ে যায়। সিআইডিতে নিয়ে সেই হাবিলদার তাজুলকে বলে, দাড়ি-গোঁফে নিজেকে পাল্টিয়ে ফেলেছিস। কিন্তু তোর চোখ তো পাল্টাতে পারিসনি। তোর দৃষ্টি! চোখের ওপরে কাটা দাগ! ওটা তো আগের মতোই রয়েছে। উল্লেখ্য, এই হাবিলদার নিদারাবাদে একসময় চাকরি করেছিলেন। এক-আধবার দেখেছিলেন এই তাজুলকে। ১৯৮৯ সালের অক্টোবরে গ্রেফতারের আগে ভয়ঙ্কর এই খুনিকে নিয়ে দেশজুড়ে ছিল আতঙ্ক। সরকারের ভিতর-বাইরে তোলপাড়। কোনোভাবেই পুলিশ তার নাগাল পাচ্ছিল না। পুলিশের ঘুম রীতিমতো হারাম। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলেছে। খুনিকে যে কোনো উপায়েই হোক গ্রেফতার করতেই হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতরে দফায় দফায় মিটিং। গ্রেফতারের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হলো। পত্রিকায় ছবি দিয়ে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। পুলিশ, ডিবি, সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সদস্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু খুনি কীভাবে গ্রেফতার হবে? চেহারা ছবি সম্পর্কে তো কারও কোনো ধারণাই নেই। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে এ নিয়েও ভীষণ ক্ষোভ। যে খুনিকে নিয়ে গোটা পুলিশ বাহিনী ব্যতিব্যস্ত তার ছবি পর্যন্ত নেই! তাহলে কীভাবে পাকড়াও হবে খুনি? এমন প্রশ্ন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। অবশেষে ছবি জোগাড় করে পেপারে ছাপানো হয়। যে এলাকার ঘটনা সে নিদারাবাদ গ্রামের সরসপুর তখন স্তব্ধ। সেখানকার পুলিশ তার ছবি খোঁজ করছে। হঠাৎ স্থানীয় এক সাংবাদিক পুলিশকে জানান, তাজুল কৃষি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। সেখানে ছবি থাকতে পারে। এ কথা শুনেই পুলিশ আর দেরি করেনি। সেখানে গিয়ে পেয়েও যায় সেই ছবি। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে সে রাতের ঘটনা। তারা জানান, নৌকার ওপরই তাদের ছয়জনকে কুপিয়ে হত্যার পর টুকরা টুকরা করে। পরে ড্রামে ভরে ফেলে দেয় ধুপাজুড়ি বিলে। ঘটনার ১০ দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর অপহূত ছয়জনের লাশ মেলে। প্রতিটি লাশই ছিল কয়েক টুকরা। লাশে দ্রুত পচন ধরায় ঘাতকরা ড্রামের ভিতর চুন দিয়ে রাখে। বিল থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধারের পর এ খবর ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামে। হাজার হাজার মানুষ মর্মান্তিক সে ঘটনা জানতে ও লাশ দেখতে ঘটনাস্থলে ভিড় জমান। আসে খুনের সঙ্গে জড়িতদের একজনও। সে হত্যাকাণ্ডের হোতা তাজুল ইসলামের বোনজামাই হাবিবুর রহমান। সে একা বড় একটি নৌকা নিয়ে লাশ দেখতে এলে এলাকাবাসী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আসামি করা হয় তাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, এনু মিয়া, ফিরোজ মিয়া, ফিরোজ মিয়া (২), হাবিব মিয়া, আবুল হোসেন, জজ মিয়া, বাদশা মিয়া, মো. কাজল, ফারুক মিয়া, আবুল কাশেমকে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সদস্য (মেম্বার) মো. ধন মিয়া চৌধুরী বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় ৩৮ জনকে দায়ী করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়।
ফিরে দেখাঃ ১৯৮৭ সালের ১৬ অক্টোবরের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে শশাঙ্ক দেবনাথকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান একই গ্রামের পূর্ব পরিচিত তাজুল ইসলাম। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে গুড় নিয়ে ফিরে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন মুড়ির মোয়া বিক্রেতা শশাঙ্ক দেবনাথ। এরপর দিন যায়, মাস যায়, বছর ঘুরে। ফেরেন না শশাঙ্ক। তাজুল ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন বিরজাবালা। তাজুল ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন বিরজাবালা। মামলার রায় ঘোষণার দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে। তাজুল আর তার সহযোগী বাদশাসহ সবার অপরাধই প্রমাণ হতে থাকে আদালতে। নিশ্চিত বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হয় তাজুল। শশাঙ্কের পরিবারের সবাইকে খুনের পরিকল্পনা আঁটে। ১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাত। ঘুমিয়ে নিদারাবাদ গ্রাম। শুধু জেগে আছে কসাই তাজুলের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত। গভীর রাতে ৩০ থেকে ৪০ জনের ওই দুর্বৃত্তের দল হামলা চালায় শশাঙ্কের পরিবারের ওপর। জানালার লোহার রড ভেঙে ঘর ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তারা অপহরণ করে নিয়ে যায় শশাঙ্কের স্ত্রী বিরজাবালাসহ ৫ সন্তানকে। বাঁচার জন্য তারা গগনবিদারী চিৎকার শুরু করেন। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলেও সংঘবদ্ধ দলের সামনে দাঁড়াতে সাহস পায়নি। গ্রামবাসীর সামনে দিয়েই অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। বড় একটি নৌকায় তুলে নেয় তাদের। নৌকার ওপরই তাদের ছয়জনকে কুপিয়ে হত্যার পর টুকরা টুকরা করে। পরে ড্রামে ভরে ফেলে দেয় ধুপজুরি বিলে। অপহরণ ঘটনার ১০ দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর অপহৃত ছয়জনের লাশ মেলে। প্রতিটি লাশই ছিল কয়েক টুকরো। লাশে দ্রুত পচন ধরায় ঘাতকরা ড্রামের ভিতর চুন দিয়ে রাখে। বিল থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধারের পর এই খবর ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামে। হাজার হাজার মানুষ মর্মান্তিক সে ঘটনা জানতে ও লাশ দেখতে ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। আসে খুনের সঙ্গে জড়িতদের একজনও। সে হত্যাকাণ্ডের হোতা তাজুল ইসলামের বোনজামাই হাবিবুর রহমান। সে একা বড় একটি নৌকা নিয়ে লাশ দেখতে এলে এলাকাবাসী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আসামি করা হয় তাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, এনু মিয়া, ফিরোজ মিয়া, ফিরোজ মিয়া (২), হাবিব মিয়া, আবুল হোসেন, জজ মিয়া, বাদশা মিয়া, মো. কাজল, ফারুক মিয়া, আবুল কাশেমকে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সদস্য (মেম্বার) মো. ধন মিয়া চৌধুরী বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় ৩৮ জনকে দায়ী করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়। ১৯৯০ সালের জুন মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালত এক রায়ে ৯ জনের ফাঁসি, ২৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুজনকে বেকসুর খালাস দেন। পরে উচ্চ আদালত খুনি তাজুল ইসলাম, বাদশা মিয়ার ফাঁসি ও আটজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে আবুল হোসেন নামে একজন এখনো পলাতক। ১৯৯৩ সালের ১১ আগস্ট রাত ২টা ১ মিনিটে কুমিল্লা কারাগারে তাজুল আর বাদশার ফাঁসি কার্যকর হয়। খুনি কসাই তাজুলের প্রতি মানুষের ঘৃণা-ক্ষোভ এতটাই ছিল যে, তার ফাঁসি কার্যকরের পর ঘরে ঘরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। তার লাশ কারাগার থেকে বের করার সময় ক্ষুব্ধ মানুষ থুথু দিয়েছে। ছুড়ে মেরেছে জুতা। তার পরেও তাদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি আজো। তাজুল খুনির নৃশংসতায় এখনো কাঁদে নিদারাবাদ।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আ্পনাকে ধন্যবাদ আজিজ ভাই
প্রশাসন ইচ্ছা করলে স্বল্পতম সময়ে
যে কোন অপরাধীকে আটক করতে পারে।
তাজুলকে গ্রেফতার তার প্রমাণ।
২| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৩৯
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: খুবই ভংঙ্কর।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ভয়ংকর ও নৃশংস বলেই
আজও তা মানুষকে তাড়িত করে।
৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০২
জগতারন বলেছেন:
তখন এই ঘটনাটি আমি প্রবাসে থাকাকালিন সময়ে পড়ে অনেক দিন অপ্রকৃস্থ হয়ে পরেছিলাম। ঘটনাটি পড়েছিলাম তখনকার সময়ে বহুল প্রচারিত 'সাপ্তাহিক বিচিত্রা' পত্রিকায়। প্রিয় ব্লগার নূরু সাহেবের কল্যানে অনেক দিন পর সেই ঘটনাটি পড়ে মন আবার বেদনায় ভরে গেল। বিধাতার নিকট বিনীত প্রার্থনা সেই ক্ষতিগ্রস্থ পড়িবার আবার যেন শান্তি ফিরে পায়।
প্রিয় 'সাপ্তাহিক বিচিত্রা'র কিংবা ''সাপ্তাহিক রোববার' কিংবা 'সাপ্তাহিক সন্ধানী' আর কোন পত্রিকা কি আর কোনও দিন বাঙলাদেশ থেকে বাহির হবে না?
এমন কোন পত্রিকা কি বর্তম্ন সময়ে দেশে প্রচারিত হয়?
জানাবেন।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ জাগতারন দাদা
সত্যিই অনেকদিন মানসিক চাপে রাখার
মতো ঘটনা নিদারাবাদ!!
বর্তমানে সাপ্তাহিক ২০০০ বিচিত্রা এবং সাপ্তাহিক সন্ধানীর
মতো একই ধারার একটি পত্রিকা্। অপরাধ বিচিত্রা এব অপরাধ কণ্ঠ
পড়ে দেখতে পারেন।
৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৪
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ সম্ভবত জন্মগতভাবেই সন্ত্রাসী প্রকৃতির।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ভাইজান আসসালামু্ আলাইকুম।
কেমন আছেন আপনি ?
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়া কিছু বইলেন না
ওখানকার এমপি হুসিয়ার করে বলেছে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে কিছু বললে মামলা করে দিবে!!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক ব্লগারও মুখিয়ে আছে !!
তাই সাবধানে থাকবেন!!
৫| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: আজকাল আমার পোষ্টে আপনাকে দেখি না ঘটনা কি?
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সুরের ভুবনে আমি আজো পথচারী
ক্ষমা করে দিও. যদি না তোমার মনের মত গান শোনাতে পারি।।
আমি এখন নিজেকে গুটিয়ে নেবার আয়োজনে ব্যস্ত।
৬| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪২
ফারহানা শারমিন বলেছেন: ব্রাক্ষণবাড়িয়া নিয়ে লিখতে যাচ্ছিলাম। উপরের মন্তব্য দেখে সাবধান হয়ে গেছি। বাবার চাকরি সূত্রে অনেক বছর থাকা হয়েছে সেখানে।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৫৮
শাহ আজিজ বলেছেন: ঘটনাটি খুব আলোড়ন তুলেছিল । কাকরাইল তাবলীগ মসজিদ অনেক অপরাধীর আশ্রয়স্থল । তবে এই মর্মান্তিক ঘটনায় সি আই ডি এর তৎপরতা বেশি থাকায় তাজুল আটক হয় এবং দ্রুত সময়ে তার ফাঁসি হয় ।