নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী আব্দুল জব্বার। কণ্ঠশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়ে গেছেন। তাঁর গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ এবং ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ -গান তিনটি ২০০৬ সালের মার্চ মাস জুড়ে বিবিসি বাংলার আয়োজনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংলা ২০ গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। এছাড়া ‘পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি’ ‘সুচরিতা যেওনাকো’, ‘আর কিছুক্ষণ থাকো’, ‘ও রে নীল দরিয়া’, ‘এ মালিক ঈ জাহান’, ‘বিদায় দাও গো বন্ধু তোমরা’, ‘তারা ভরা রাতে তোমার কথা’, ‘ঐ দূর দূর দূরান্তে’, ‘সাথী আমার হলো না’- সহ অসংখ্য গানের গায়ক তিনি। শিল্পীর সংগীত জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অবদান হচ্ছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগদান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যুগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সালাম সালাম হাজার সালাম ও জয় বাংলা বাংলার জয়সহ অংসখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
দেশাত্ববোধক গান ছাড়াও তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, সে চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে- মেঘের পর মেঘ, অধিকার, মাস্তান, জীবন তৃষ্ণা, আলোর মিছিল, জয় পরাজয়, মা, বেঈমান, ঝড়ের পাখি, আপন পর, দাতা হাতেম তাই, বিনিময়, এতোটুকু আশা, কত যে মিনতি, মানুষের মন, অবুঝ মন, ঢেউয়ের পর ঢেউ, অনুরাগ, দ্বীপ নেভে নাই, পীচ ঢালা পথ, ঘর জামাই, সারেং বউ, ঈমান, যে আগুনে পুড়ি, সাধু শয়তান, আগুনের আলো, স্লোগান ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠে দেশাত্নকবোধক গান গেয়ে জাগিয়ে তুলেছিলেন তরুণ সমাজকে। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া যুুদ্ধের সময়কালে তিনি প্রখ্যাত ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন। তৎকালীন সময়ে কলকাতাতে অবস্থিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধাদের ক্যাম্প ঘুরে হারমোনি বাজিয়ে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেছেন যা মুক্তিযুদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে সেসময় বিভিন্ন সময় গণসঙ্গীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লাখ রুপি দান করেছিলেনসঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘বঙ্গবন্ধু পদক (১৯৭৩)’, ‘একুশে পদক (১৯৮০)’, ‘স্বাধীনতা পদক (১৯৯৬)’, ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার’, ‘বাচসাস আজীবন সন্মাননা’, ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই সংগীত পুরস্কার’সহ জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন্ পদক ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। ২০১৭ সালের আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। আজ তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল জব্বারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন ওস্তাদ ওসমান গনি এবং ওস্তাদ লুৎফুল হকের নিকট। ১৯৫৮ সালে প্রথম রেডিওতে এবং ১৯৬৪ সালে টিভিতে প্রথম কন্ঠশিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন ও স্থায়ী শিল্পী হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন। ১৯৬৮ সালে এতটুকু আশা ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া "তুমি কি দেখেছ কভু" গানটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একই বছর ঢেউয়ের পর ঢেউ ছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে "সুচরিতা যেওনাকো আর কিছুক্ষণ থাকো" গানে কণ্ঠ দেন। রবীন ঘোষের সুরে তিনি পীচ ঢালা পথ (১৯৭০) ছবিতে "পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি" এবং নাচের পুতুল (১৯৭১) ছবির শিরোনাম গান "নাচের পুতুল"-এ কণ্ঠ দেন। ১৯৭৮ সালে সারেং বৌ চলচ্চিত্রে আলম খানের সুরে "ও..রে নীল দরিয়া" গানটি দর্শকপ্রিয়তা পায়। ২০১৭ সালে এই সঙ্গীত শিল্পীর প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম কোথায় আমার নীল দরিয়া মুক্তি পায়। অ্যালবামটির গীতিকার মোঃ আমিরুল ইসলাম, সুরকার গোলাম সারোয়ার। একই বছরে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গানের অ্যালবামের কাজ শুরু করেন। গীতিকার আমিরুল ইসলাম রচিত " বঙ্গবন্ধু দেখেছি তোমায় দেখেছি মুক্তিযুদ্ধ " শিরোনামের গানটিতে কণ্ঠ দেয়ার আগেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যালবামের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দেশের মানুষের ভালবাসার এ শিল্পী সঙ্গীতের নানা ঘরানার কয়েক হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এর মধ্যে দুই শতাধিক চলচ্চিত্রের গানও রয়েছে। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ‘তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়’, ‘এ ভুবনে কে আপন’, ‘এ মালিকে জাহান’, ‘আমার সে প্রেম’, ‘আমি বসন্ত হয়ে এসেছি’, ‘আমি এক নীড় হারা পাখি’, ‘আমি নিরবে জ্বলতে চাই’, ‘আমি প্রদীপের মতো আলো দিয়ে যাব’, ‘আমি তো বন্ধু মাতাল নই’, ‘ভালবাসা যদি’, ‘বিদায় দাও গো বন্ধু তোমরা’, ‘দু’জাহানের মালিক তুমি’, ‘এ আঁধার কখনও যাবে না মুছে’, ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে, জানি কবিতার চেয়ে তুমি’, ‘কে যেন আজ ডেকে নিয়ে যায়’, ‘খেলাঘর বারে বারে’, ‘কি গান শোনাব ওগো বন্ধু’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘মুখ দেখে ভুল করো না’, ‘মুজিব বাইয়া যাও রে’, ‘হাজার বছর পরে আবার এসেছি ফিরে’ প্রভৃতি গান।
আব্দুল জব্বারের গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়..’, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে..’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়.., এ গান তিনটি ২০০৬ সালে মার্চ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
(শিল্পী আব্দুল জব্বার ও তার তৃতীয় স্ত্রী হালিমা জব্বার)
ব্যক্তিগত জীবনে আব্দুল জব্বার তিনবার বিযের পিড়িতে বসেন। তার প্রথম স্ত্রী শাহীন জব্বার, দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া জব্বার মিতা এবং তৃতীয় স্ত্রী হালিমা জব্বার। যিনি গতবছর ৩০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। গীতিকার শাহীন জব্বার ছিলেন তার প্রথম স্ত্রী। যার গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আব্দুল জব্বার, সুবীর নন্দী, ফাতেমা তুজ জোহরার মত জনপ্রিয় বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পীরা। তাদের সন্তান মিথুন জব্বারও একজন সঙ্গীতশিল্পী। জব্বারের তৃতীয় স্ত্রী হালিমা জব্বার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গীতিকার কথা সাহিত্যিক, বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত ১ম শ্রেণীর গীতিকার ওমুক্তিযােদ্ধা। জব্বারের দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া জব্বার মিতা। মিতার সাথে জব্বারের পরিচয় হয় একটি মাজারে এবং সেই পরিচয়ের সুবাদের তাদের সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়। মিতা ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ পারিবারিক ঝগড়ার জের ধরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দগ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ-এ ভর্তি করা হয়। ভর্তির চারদিন পর ৩০ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছে ৭৮ বছর। ২য় স্ত্রী মিতার মৃত্যুর চার বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বার। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, হৃৎপিন্ড, প্রস্টেটসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগেছেন আবদুল জব্বার। এ কারণে গত ২০১৭ সালের ৩১ মে থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সংকটাপন্ন অবস্থা ছিল তার। রক্তচাপ দ্রুত নেমে যাওয়ায় মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো যোদ্ধা মানসিকতার এই মানুষটিকে। স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে থাকলে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে শিল্পীর সকল প্রকার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। গঠন করা হয়েছিল চিকিৎসা সহায়তা কমিটি। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে সবার চেষ্টা। মৃত্যুকালে তিনি প্রথম স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। জীবন যেমন সত্য, মৃত্যু তেমন শাশ্বত। জীবন-মৃত্যুর সংগ্রামে পরাজিত হয়ে আব্দুল জব্বার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন ঠিকই। বাংলা গানের আকাশে তিনি মহাতারকার মত জ্বলবেন অনন্তকাল ধরে, যার দ্যুতি কোনদিন নিভভে না। আজ সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল জব্বারের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল জব্বারের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:১৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ গাজীসাব একজন
মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান জানানোর জন্য।
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:২০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গুরু শিষ্যকে ধন্যবাদ
একসাথে থাকার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
উনার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা রলো