নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রখ্যাত বাঙালি রম্যলেখক, হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:৩০


বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস নিয়ে কাজ করেছেন এমন লেখকদের অন্যতম শিবরাম চক্রবর্তী। এপার বাংলা আর ওপার বাংলা মিলিয়ে আজ অব্দি যত হাস্যরস সমৃদ্ধ সাহিত্য রচিত হয়েছে, তার মধ্যে শিবরাম চক্রবর্তীর লেখাগুলো এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কবিতা-রচনা দিয়ে তার সাহিত্য-জীবনের শুরু। প্রথম কবিতা বেরোয় ভারতী পত্রিকায়। প্রথম প্রকাশিত বই দুটিও -- 'মানুস' ও 'চুম্বন' -- কবিতার। ছোটবেলা থেকেই বন্ধনহীন মুক্ত পরিবেশে বড় হয়েছিলেন শিবরাম। সুযোগ পেলেই উদ্দেশ্যহীন, গন্তব্যহীন হয়ে ঘরছাড়ার স্বভাবটা তখন থেকেই গড়ে উঠেছিলো। শিবরামের এই স্বভাবের প্রতিফলন আমরা দেখি তার কিশোর উপন্যাস 'বাড়ি থেকে পালিয়ে'। চিরকুমার শিবরাম চক্রবর্তীর জীবন ছিল বৈচিত্রে ভরা। রাজনীতি করেছেন, জেল খেটেছেন, রাস্তায় কাগজ ফেরি করেছেন, ফুটপাথে রাত্রিবাস করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, আজীবন মেস-জীবন যাপন করেছেন তিনি । বিদ্যালয়ে পড়তে পড়তেই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সংস্পর্শে আসেন। এর জন্য তাকে কারাবাসও করতে হয়। এই সময় তিনি বিজলী ও ফরওয়ার্ড পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। ছিলেন যুগান্তর পত্রিকার প্রকাশক। তার জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই কেটেছে উত্তর কলকাতার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটের একটি মেসবাড়িতে। তিনি অনাড়ম্বর জীবন কাটাতেন। শিবরামের লেখালেখি সম্পর্কে খুব একটা প্রচার প্রসার হয়নি। এর পেছনে লেখকের খামখেয়ালিপনাই অধিকাংশে দায়ী। লেখালেখি সংরক্ষণ বা ছাপার খুব একটা আগ্রহ তার ছিলো না। শিবরামের লেখালেখি বা সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে যতটা জানা যায় তার চেয়েও কম জানা যায় ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে। শেষ জীবনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার জন্য মাসোহারার ব্যবস্থা করেছিলেন। আজ রম্যলেখক, হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮০ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। প্রখ্যাত বাঙালি রম্যলেখক, হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শিবরাম চক্রবর্তী ১৯০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী ছিলেন কিছুটা সন্ন্যাসী প্রকৃতির। প্রায়ই ভবঘুরের মতো নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন। তার মা শিবরাণী দেবী মালদহের চাঁচলের জমিদার পরিবারের মেয়ে।মায়ের মাঝেও ছিলো আধ্যাত্মিকতার প্রচ্ছন্ন ছায়া। পার্থিব জীবনের প্রতি আকর্ষণ শিবরামের মা-বাবা কারোরই তেমন ছিলো না। শিবরামও তার বাবার ভবঘুরে স্বভাবের খানিকটা উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জন করেছিলেন। তাই ছোটবেলা থেকেই বন্ধনহীন মুক্ত পরিবেশে বড় হয়েছিলেন শিবরাম। শিবরাম ছিলেন খাপছাড়া আর আজন্ম বৈরাগ্যের সাধনাকারী এক মানুষ। অনেকটাই নিজের খেয়াল-খুশিতে চলতেন। ১৯১৯ সালে মালদহের সিদ্ধেশ্বরী ইনস্টিটিউট থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। কারণ ওই সময়ে তার দেখা হয় বিপ্লবী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে। চিত্তরঞ্জন দাশ তখন স্ত্রী বাসন্তী দেবীর সাথে চাঁচলে এসেছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের সভা করতে। শিবরাম এতটাই আগ্রহী হলেন যে চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে ফিরতি ট্রেনে চেপে বসলেন। স্বপ্ন কলকাতা যাবেন, স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দেবেন। কলকাতায় আসার পর বিপ্লবী বিপিনবিহারী বাবুর পরামর্শে শিবরাম কলকাতার ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন এর অধীনস্থ গৌড়ীয় সর্ববিদ্যায়তনে ভর্তি হন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সে সময় সেই বিদ্যায়তনের প্রিন্সিপাল ছিলেন। দেশবন্ধুর সহযোগিতায় শিবরামের ফরবেস ম্যানসনে বিনে পয়সায় থাকা-খাওয়ার এবং নিয়মিত কিছু মাসোহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। প্রথম বেশ কিছুদিন ভালো কাটলেও শিবরামের বাউণ্ডুলে স্বভাবের কারণে এই অবস্থা আর বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই পড়াশোনা আর মেসের পাট চুকিয়ে তাকে আবারও রাস্তায় নামতে হয়। যদিও পরে দেশবন্ধুর প্রচেষ্টায় এই বিদ্যায়তন থেকেই এন্ট্রান্স পাশ করেন তিনি। শিবরামের প্রথমদিকের রচনাগুলোতে প্যারডির প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। তারপরে ধীরে ধীরে স্বকীয়তা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। ভাবতে অবাক লাগে, 'ঘোড়ার সঙ্গে ঘোরাঘুরি', 'হাতির সঙ্গে হাতাহাতি', 'চটির সঙ্গে চটাচটি'র মতো কথা কিংবা হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধনের মতো চরিত্র যিনি জন্ম দিয়েছেন, তিনিই 'আজ এবং আগামীকাল' (১৯২৯), 'চাকার নীচে' (১৯৩০), 'মস্কো বনাম পণ্ডিচেরী' (১৯৪৩), 'যখন তারা কথা বলবে' (১৯৪৯) এর মতো সমাজ ও সময়কে ধারণ করে এমন লেখার জন্ম দিয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত অনাড়ম্বর এই মানুষটি লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকতে বেশি ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন সাদাসিধে জীবনযাপন। খুব বেশি জামাকাপড় তার ছিলো না। শোনা যায়, এমনও নাকি বহুবার হয়েছে যে, শুধুমাত্র দু'খানা কাপড় ছিলো তার। একটিকে ধোপাবাড়ি দেওয়া হয়েছে বিধায় তাকে কোনো কারণে কাপড় বদল করতে হলে ধোপা বাড়িতে গিয়েই কাপড় বদলে আসতে হয়েছে। শিবরাম ভালোবাসতেন তিনটি জিনিস। ভোজন, নিদ্রা আর সিনেমা। হাতে তার টাকা থাকতো না কখনোই। শোনা যায়, তিনি নাকি একই ঠিকানায় কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ৬০টি বছর। শিবরামের নিজের ভাষায়, "মুক্তারামের মেসে, শুক্তারাম খেয়ে, তক্তারামে শুয়ে"। অনেকে বলেন, মুক্তারাম স্ট্রীটের এই বাড়িটিতে তিনি নাকি পাহাড়াদার হিসেবে এসেছিলেন, তারপর আমৃত্যু এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। তার ঘরটিও ছিলো দেখবার মতন। আসবাবপত্রের কোনো বালাই না থাকলেও অভাব ছিলোনা পুরনো কাগজ, অগোছালো জঞ্জাল আর আজেবাজে জিনিসের। ভোজন আর নিদ্রা ছাড়া শিবরাম আর যে কাজটি ভালোবাসতেন তা হলো সিনেমা দেখা। পকেটে শেষ টাকাটি থাকা অব্দি নাইট শোতে একটি সিনেমা তার দেখতেই হতো। শিবরামের ভোজনরসিকতা নিয়ে খুব মজার কিছু ঘটনা জানা যায়। স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে সবসময়ই ছিলেন পুলিশের নজরদারিতে। একবার এক পুলিশের দায়িত্ব পড়লো তাকে অনুসরণ করার। পুলিশের অভিযোগ, শিবরামকে ধাওয়া করতে গিয়ে তিনি মুটিয়ে গেছেন। তা কেমন করে হলো এসব? শিবরাম নাকি এখান থেকে ওখানে যান, আর হোটেল বা খাবার দোকান দেখলেই থেমে শিঙাড়া, রসগোল্লা, চপ-কাটলেট মুখরোচক যা পান খেতে বসে যান। এখন শিবরামকে ধাওয়া করতে গিয়ে তার পিছু পিছু হোটেলে গিয়ে তো খালি মুখে বসে থাকা যায় না। কিছু না কিছু অর্ডার করতে হয়। সেই করে খেতে খেতে পুলিশ অফিসার গেলেন মুটিয়ে। পুলিশ অফিসারের আফসোস, শিবরামের মতো লোকের পেছনে লাগার শিক্ষা তাকে পেতে হয়েছে গা ভর্তি মেদের পাহাড় জমিয়ে।তার অমর সৃষ্টি হর্ষবর্ধন গোবর্ধনের গল্প যা আজো পাঠকমহলে সমানভাবে সমাদৃত। তার সর্বাধিক আলোচিত উপন্যাস বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতার হালচাল, বর্মার মামা,, মনের মত বৌ, মস্কো বনাম পন্ডিচেরী সহ আরও বেশ কিছু বই। প্রবন্ধ, গল্পের পাশাপাশি তিনি কিছু রম্য গোয়েন্দাকাহিনিও লিখেছিলেন। তার গোয়েন্দার নাম কল্কেকাশি।

নিজের সৃষ্টি দিয়ে মানুষের মন জয় করলেও শিবরামের অহংকার ছিলো না এতটুকুও। প্রচুর লেখা থাকা স্বত্ত্বেও অভাব কখনোই তার পিছু ছাড়েনি। তার সরলতার সুযোগ নিয়ে লোকে তাকে বহুবার ঠকিয়েছে। নিজের প্রচার কখনোই পছন্দ করতেন না। সাহিত্যে অবদানের জন্য বেশ কিছু সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হলেও সেগুলোর প্রতি তার বিশেষ কোনো আগ্রহ ছিলো না। বরং ভালোবাসতেন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে। অবশেষে সেই লোকচক্ষুর আড়ালেই ১৯৮০ সালের ২৮ আগস্ট কলকাতার এস এস কে এম হাসপাতালের এক বেডে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হাসির এই রাজা। মৃত্যুহীন প্রাণ শিবরাম অমর হয়ে থাকবেন তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। আজ রম্যলেখক, হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রখ্যাত বাঙালি রম্যলেখক, হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের মিনিষ্টারদের রাষ্ট্রীয় হেরেমখানা থাকা উচিত, এতে ভালো নতুন মিনিষ্টারের জন্ম হবে।

২৮ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

যা বলেছেন !!!
তবে চোর ডাকাতও হতে পারে।
করণ চোর ডাকাতে ভরে গেছে দেশ!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.