নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিকল্পহীন, তুলনারহিত কবি, সাংবাদিক, অনুবাদক, স্বাধীন প্রকাশক সমর সেন। নামেতেই যার পরিচয়। আজীবন লড়াকু, ঠোঁটকাটা একটি মানুষ। বাংলাভাষী স্বাধীনতা-উত্তর কালের ভারতীয় কবি এবং সাংবাদিক। পেশায় সাংবাদিক হলেও কবি হিসেবেই তাঁকে চেনে বাঙালি। এটাই ছিল রবীন্দ্রত্তোর যুগের দ্বিতীয় পর্বের কবি সমর সেনের প্রথম পরিচয়। তিনি কবিতা পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। মধ্যবিত্তের কামনা বাসনাকে তিনি কবিতায় তুলে এনেছিলেন। ‘যে মধ্যবিত্ত গণ্ডিটাকে তিনি সারা জীবন উপলব্ধি করেছিলেন কিন্তু ভাঙতে পারেননি নকশালপন্থিরা খানিকটা জোর করে সে’ গণ্ডিতে নাড়া দিতে পারায় তিনি নকশাল আন্দোলনের পক্ষপাতী হয়েছিলেন। নগর জীবনের ক্লেদ ও ক্লান্তি, মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতি অবজ্ঞা এবং সংগ্রামী গণচেতনাকে তিনি কাব্যে রূপ দিয়েছেন। কয়েকটি কবিতা, গ্রহণ, নানা কথা, খোলা চিঠি, তিন পুরুষ ইত্যাদি তাঁর কাব্যগ্রন্থ। ৭১ বছরের জীবনে তিনি কাব্যসাধনা করেন মাত্র ১২ বছর, ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত। এই কালপর্বেই তাঁর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়- কয়েকটি কবিতা (১৯৩৭), গ্রহণ (১৯৪০), নানা কথা (১৯৪২), খোলা চিঠি (১৯৪৩) এবং তিন পুরুষ (১৯৪৪)। তাঁর কবিতাসংগ্রহ সমর সেনের কবিতা ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি কর্মজীবনে কিছুকাল অধ্যাপনা ছাড়া বাকি জীবন পেশাগতভাবে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সংগে। এছাড়াও দিল্লির অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংবাদ বিভাগে, বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এবং অনুবাদকর্মে নিয়োজিত ছিলেন কিছুকাল। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন "Frontier" নামের প্রগতিশীল পত্রিকার। আজ কবি সমর সেনের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৭ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীনতা-উত্তর কালের ভারতীয় কবি এবং সাংবাদিক সমর সেনের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সমর সেন ১৯১৬ সালের ১০ অক্টোবর পশ্চিম বঙ্গের কলিকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অরুণচন্দ্র সেন ইতিহাসের অধ্যাপক। অরুণ সেন। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের প্রথম যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গবেষক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক, রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ ফেলো প্রখ্যাত দীনেশচন্দ্র সেনের পৌত্র সমর সেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য ছিলেন দীনেশচন্দ্র। পিতৃকুল ঢাকার বৈদ্য পরিবার, সমর ঠাট্টা করে বলতেন, ‘আমরা পদ্মাপারের মানুষ’। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধুত্ব ছিল সেন পরিবারের। সমর সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্কটিশ চার্চ কলেজের স্নাতক ছিলেন। ইংরেজি বিষয়ে এম.এ পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে, প্রথম হন তিনি। কর্মজীবনে তিনি কিছুকাল অধ্যাপনা ছাড়া বাকি জীবন পেশাগতভাবে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সঙ্গে। স্টেটসম্যান পত্রিকার সহ-সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৭ সালে অনুবাদকের কাজ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন যান। বহু রাশিয়ান সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ তার কীর্তি। ১৯৬১ সালে দেশে ফিরে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজে যোগদান করেন। তারপর হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় কাজ করেছেন। মতের অমিল হওয়ায় সেই চাকরি ছেড়ে দেন এবং হুমায়ুন কবিরের ইংরেজি পত্রিকা 'নাও' এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এখানেও মতবিরোধ দেখা দিলে নিজেই ফ্রন্টিয়ার নামক ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকেন। এছাড়াও দিল্লির অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংবাদ বিভাগে কিছুকাল কাজ করেছেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত "Frontier" নামের প্রগতিশীল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু ও অন্যান্যদের সাথে সর্ব বামে সমর সেন)
শ্রমিক কৃষকের মুক্তির জন্য সাংবাদিক হয়েছিলেন সমর সেন। এ যুগে সে কথা শুনে হয়ত কৌতুক মনে হতে পারে। কিন্তু ইন্দিরার জরুরি অবস্থার সময়ে সেন্সরধারী মূর্খ মধ্যবিত্তকে ধাপ্পা দিতে সেটি কাজে লেগেছিল। সমর সেন আলাপের কণ্ঠে আমাদেরকে শুনিয়ে দেন রক্তের আগুনের কথা যা একুশ শতকের রক এন রোল শোনা তরুণদের কাছে মশকরা বৈকি। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী দুই দশকে পশ্চিমবঙ্গের গণআন্দোলনে শহরভিত্তিক রাজনীতির গুরুত্ব। খাদ্য আন্দোলন নানা জেলাতে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও এই সময়ে কলকাতাই বিক্ষোভের মূল কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসে। ইতিহাসবিদরা এখন এ নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাও করছেন। কলকাতা, দিল্লী, মস্কো নিয়ে নানা-দেশীয় জীবন তাঁর। জায়গাগুলি সম্বন্ধে ছোট ছোট আঁচড়ে নিপুণভাবে পেশ করেছেন নানা মন্তব্য। আর এসবের মধ্যেই ফুটে বেরিয়েছে তাঁর সমসাময়িক ইতিহাস পাঠের অতুলনীয় ক্ষমতা। তীক্ষ্ণ, চোখা বাক্যে তুলে ধরেন রাজনৈতিক নেতাদের দ্বিচারিতা, দেশপ্রেমের ভণ্ডামির আড়ালে পরে যাওয়া সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন দুর্দশা বা বামপন্থী রাজনীতির নানা ভাগে ভাগ হয়ে চলা ভাবাদর্শ ও কর্মসূচী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করতেও ছাড়েননি—‘বাংলাদেশের সঙ্কটের সময় আমাদের জাতীয় সংহতি একটা অভূতপূর্ব রূপ নিয়েছিল। বুদ্ধিজীবীরা প্রায় সবাই তদগত, উত্তেজিত; লেখার বন্যা বাঁধ ভেঙ্গে দিল। নানা কারণে সেটা হয়ত স্বাভাবিক ছিল। প্রধান কারণ ছিল পাকিস্তানের প্রতি বিদ্বেষ, যে বিদ্বেষের নানা অঙ্গভঙ্গি, নানা যুক্তি। ১৯৭১ এ ভারত সরকার যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রগতিশীল ভূমিকা নিয়েছে, ঠিক তার আগের দু- তিন বছর সময়কাল এবং পরে ৭২ পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের ওপর (প্রথমে নকশালবাদী বিপ্লবী ও পরে সিপিএম এবং অন্য মূলধারার বামপন্থী) নেমে এসেছিল ভয়াবহ নিপীড়ন, মৃত্যুর মিছিলের সাক্ষী ছিল এই বাংলা। এই উত্তাল সময়ে, সমর সেন তার দিশা স্থির রেখে দেশে ও বিদেশে সব ধরণের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে, মানুষের স্বাধীনতার পক্ষে আপোষহীন আক্রমণ জারি রেখেছেন। ১৯৭৫এ দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়, চালু হয় প্রি-সেন্সরশিপ। কিছুদিন টানা পোড়েনের পর অবশেষে ১৯৭৬ এর মার্চে ‘ব্যান’ করা হয় কাগজ। পরবর্তীকালে সমর সেন সাপ্তাহিক কলাম লিখেছেন ‘উড়ো খই’। কিন্তু পত্রিকা প্রকাশনায় আর ফিরে যান নি। হয়ত কিছুটা ডিসইল্যুশনমেন্ট থেকে। নিজের সম্বন্ধেও তাঁর বিশ্লেষণ ছিল নির্মোহ, ‘জনগণের সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ছিল না, পরিধি ও পরিবেশ ছিল মধ্যবিত্ত। … আমাকে কেউ বিপ্লবী বললে মনে হত – এবং এখনও হয় – যে বিপ্লবকে হেয় করা হচ্ছে। চিন্তায় ও কর্মে সমন্বয় আনতে না পারলে বড়জোর ‘বিপ্লবী’ সাপ্তাহিক চালানো যায়, কিন্তু বিপ্লবী হওয়া যায় না’।
নগর জীবনের ক্লেদ ও ক্লান্তি, মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতি অবজ্ঞা এবং সংগ্রামী গণচেতনাকে কাব্যে রূপ দিয়েছেন সমর সেন। তার কবিতার সংখা তুলনামূলক কম হলেও ব্যতিক্রমী ও নিজস্ব বৈশিষ্টতায় অনন্য। রোমান্টিকতা বর্জিত তীক্ষ্ণ ভাষা প্রয়োগে সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তিনি ৩০ বছরে পৌঁছতে না পৌঁছতেই কবিতা ছেড়েছিলেন, কবিতায় আর ফিরে যাননি। ছাপোষা মধ্যবিত্ত না হলে যিনি গেরিলা হতে পারতেন, তিনি হয়ত কোনো গ্রামে কবিতার কাছে পরাজিত হন, কিন্তু কৃষক তাঁকে মনে রাখে। আমাদের এটিই বড় ট্রাজেডি যে সমর সেন আমাদের স্মৃতিভারাতুর মনে নাড়া দেয় না। আজ কবি সমর সেনের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৭ সালের ২৩ আগস্ট তিনি কলকাতায় সব কিছুর উর্ধে চলে যান, আমাদের জন্য রেখে যান সৎ, স্বাধীন সাংবাদিকতার আদর্শ। আজ কবি সমর সেনের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভারতীয় কবি এবং সাংবাদিক সমর সেনের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে আবুহেনা ভাই
ভারতীয় কবি এবং সাংবাদিক সমর সেনের
মৃত্যুবার্ষিকীগে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য।
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:০০
রাজীব নুর বলেছেন: সমর সেনের জন্য রইলো শ্রদ্ধা।
২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও ধন্যবাদ খানসাব
কবিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ ভোর ৪:৫৮
সিদ্ধাচার্য লুইপা বলেছেন: প্রচন্ড আন্ডাররেটেড একজন কবি। প্রচন্ড। উনার কবিতা পুরো ক্ষুরের মতন ধারালো ছিল। আবারো একটা কবিতা শেয়ারের লোভ সামলাতে পারলাম না।
নিঃশব্দতার ছন্দ
স্তব্ধরাত্রে কেন তুমি বাইরে যাও?
আকাশে চাঁদ নেই, আকাশ অন্ধকার,
বিশাল অন্ধকারে শুধু একটি তারা কাঁপে,
হাওয়ায় কাঁপে শুধু একটি তারা।
কেন তুমি বাইরে যাও স্তব্ধরাত্রে
আমাকে একলা ফেলে?
কেন তুমি চেয়ে থাক ভাষাহীন, নিঃশব্দ পাথরের মতো?
আকাশে চাঁদ নেই, আকাশ অন্ধকার,
বাতাসে গাছের পাতা নড়ে,
আর দেবদারুগাছের পিছনে তারাটি কাঁপে আর কাঁপে;
আমাকে কেন ছেড়ে যাও
মিলনের মুহূর্ত হতে বিরহের স্তব্ধতায়?
মাঝে মাঝে চকিতে যেন অনুভব করি
তোমার নিঃশব্দতার ছন্দ :
সহসা বুঝতে পারি—
দিনের পর কেন রাত আসে
আর তারারা কাঁপে আপন মনে,
কেন অন্ধকারে
মাটির পৃথিবীতে আসে সবুজ প্রাণ;
চপল, তীব্র, নিঃশব্দ প্রাণ—
বুঝতে পারি কেন
স্তব্ধ অর্ধরাত্রে আমাকে কেন তুমি ছেড়ে যাও
মিলনের মুহূর্ত থেকে বিরহের স্তব্ধতায়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৬
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কবি ও সাংবাদিক সমর সেনের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ধন্যবাদ নুর মোহাম্মদ ভাই।