নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোহেদ আলত্রাদ বাদাআইঃ জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো

২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২২


সমাজে এক শ্রেণির লোক আছে যারা বংশ আভিজাত্যে নিজেদের সম্ভ্রান্ত মনে করেন। তারা বংশ মর্যাদার অজুহাতে সমাজে বিশেষ মর্যাদা দাবি করেন। কিন্তু তাদের এই প্রয়াস বাস্তবতা বিবর্জিত ও হাস্যকর। সমাজের নিচু তলায় জন্ম নিয়েও মানুষ কর্ম ও অবদানে বড় হতে পারে। মানব সমাজের ইতিহাসে এ রকম উদাহরণ অজস্র। নিজের জন্মের ব্যাপারে মানুষের কোনো ভূমিকা থাকে না। উঁচু-নিচু, ধনি বা দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হওয়াটা তার ইচ্ছা বা কর্মের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু কর্ম জীবনে তার ভূমিকা ও অবদানের দায় তার নিজের ওপর বর্তায়। তাই পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত বিচারে তার জন্ম-পরিচয় তেমন গুরুত্ব বহন করে না। বরং কর্ম-অবদানের মাধ্যমেই মানুষ পায় মর্যাদার আসন, হয় বরণীয় স্মরণীয়। তাই জন্ম নয় কর্মই মানুষের জীবনের আসল পরিচয়। সত্য অনেক সময় বিষের চেয়েও কর্কশ ও তিক্ত হয়। যে বিষ পানে একজন সাধারণ বেদুইন শিশু অসামান্য একজন মানুষ হয়ে ওঠেন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! সবার চোখে ছেলেটি একটি জারজ সন্তান। তবে কালের স্রোতে সব কষ্ট ও অপমানের কালো ছায়া ভেসে যাওয়ার পর তার আজকের আয়ের পরিমান ২০০ কোটি ডলার। মাত্র একজনের আয়ের পরিমাণ, কোনো দেশের বার্ষিক বাজেট নয়। একটি অথবা দুটি প্রতিষ্ঠানের আয় নয়; মোট ১৭০টি প্রতিষ্ঠানের আয় এই ২০০ কোটি ডলার। ১৭০টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে সর্বমোট ১৭ হাজার মানুষ। এই ১৭ হাজার মানুষের পরিবারের ভরণ-পোষণ, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের যাবতীয় খরচ মেটানোর কাজে নিযুক্ত একটি বিশাল গ্রুপের নাম আলত্রাদ গ্রুপ। এই গ্রুপের মালিক মোহেদ আলত্রাদ বাদাআই। ফ্রান্সের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। যিনি নিজের জন্ম তারিখটাও জানেন না। নিজস্ব বর্ণনায় তিনি "ধর্ষণের ফসল"। সামাজিক নগ্ন অভিধায় "জারজ সন্তান"। একদা শূন্য মরুভূমির নীরব তাবুতে মোহেদর মাকে ধর্ষণ করে রেখে যান এক গোত্রপতি। জন্মের দিন মারা যান সেইঅপ্রত্যাখ্যাত মা! নানী বলেছিলেন, বেদুইন ঘরের সন্তান, রাখাল হও; শিক্ষার কী দরকার? প্রচণ্ড অধ্যবসায়, অনুশীলন ও সাধনা এবং তিক্ষ্ণ মেধার কারণে বিষণ্ণ মরুভূমির সেই "ধর্ষণের ফসল"ই আজ বিলিয়নিয়ার। আজ সামুর পাঠকদের যারা বলেন আমি শুধু নায়িকাদের জন্ম মৃত্যুদিনে শুভেচ্ছা জানাই তাদের জন্য তুলে ধরব মোহেদ আলত্রাদের বেদুইন থেকে বিলিয়নিয়ার হওয়ার গল্প। জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো।

বেদুইন সন্তান তাই রাখাল হওয়ারই কথা ছিল মোহেদের কিন্তু নানীর কথাটা মানেন নি তিনি। নানীর ঘুমের মাঝে গোপনে বেরিয়ে যেতেন তাবু থেকে। সিরিয়ার মরুভূমির তপ্ত বালুর উপর খালি পায়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে উপস্থিত হতেন শিক্ষালয়। স্কুলে ভর্তি হওয়ার অর্থ অবশ্য ছিল না তার। তাই দেওয়ালের ফাঁকে উঁকি দিয়ে শুনতেন শিক্ষকদের কথা আর দেখতেন তারা কি লিখছেন বোর্ডে। খুব বেশি যে বুঝতেন তা নয়। তবুও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকা আরকি। একদিন এভাবেই তাকে দেখে ফেলেন এক শিক্ষক। তিনি তাকে সুযোগ দেন ক্লাস করার। বিধাতা দিয়েছেলেন সেই বেদুইন ছেলেটিকে মেধা। সুযোগ পেয়ে ক্লাসে খুব ভালো করতে থাকেন মোহেদ। কিন্তু বেদুঈন সন্তানের এমন নৈপুণ্য! ঈর্ষা হত সতীর্থদের। তাই গভীর মরুভূমিতে গর্ত খুঁড়ে তাকে ফেলে আসে তার সতীর্থরা। মোহেদ অবশ্য হার মানেননি বরং পেয়ে গিয়েছিলেন জীবনের পথচলার বড় অবলম্বন। তার নিজের ভাষায় আমার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল ভাগ্যকে মেনে না নেওয়া। ১৯৬৯ সালে মোহেদ শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে পাড়ি জমান ফ্রান্সে। তখন ফ্রান্সে একদিকে ছাত্র আন্দোলনের উত্তাপ অন্যদিকে আরব-বিরোধী মনোভাব। তখন ফরাসিটাও ঠিকঠাক জানতেন না মোহেদ। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের ক্লাসে শিক্ষকদের কথার এক-দশমাংশ বুঝতেন না। তবে অদম্য আগ্রহের ভাষাটা পুরোপুরি শিখে নেন তিনি। পকেটে মাত্র ২০০ ফ্রাঁ নিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। জীবন চালাতে তাই আঙ্গুরের ক্ষেতেও কাজ করতে হয়েছে তাকে।

১৯৮০ সালে বেদুইন মোহেদ কম্পিউটার সায়েন্সের ওপর পিএইচডি লাভ করেন। পাস করে মোহেদ কাজ নেন কয়েকটি বিখ্যাত ফরাসি কোম্পানিতে। আর নিজ যোগ্যতায় পান ফ্রান্সের সিটিজেনশিপ। সেই বছরেই আবুধাবি ন্যাশনাল ওয়েল কোম্পানিতে আইটি ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না তাতে। মোহেদের মতে, মিডল ইস্টে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছের কারণেই এ কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন। তখন থেকেই শুরু করেছিলেন টাকা জমানো। এভাবেই ৬ লাখ ডলার সঞ্চয় করেন তিনি। পরে ফ্রান্সে ফিরে স্যুটকেসের মতো কম্পিউটার বানানোর একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরে এ প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে আয় করেন প্রচুর অর্থ। পার্টনারশিপ করে ফ্রান্সের একটি স্ক্যাফোল্ডিংয়ের একটি প্রতিষ্ঠান ক্রয় করেন যার ব্যবসা ছিল বাঁশ, কাঠ ও অস্থায়ী অবকাঠামো যেখানে বসে শ্রমিকরা কাজ করেন। কিছু দিন পরেই মোহেদ দেখলেন ব্যবসায় নতুন কিছু না করলে লোকসান হবে তাই শুরু করলেন ছোটখাটো ঠিকাদারি লোহা ও ইস্পাত ক্রয়-বিক্রয় ও ভাড়া দেওয়া, সিমেন্ট মিক্সার মিশ্রন যন্ত্র ইত্যাদি। বুদ্ধি খাটিয়ে মোহেদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্রয়-বিক্রয় করতে লাগলেন আর দেশে-বিদেশে নিজের ব্যবসাকে বিস্তৃত করতে লাগলেন। সেই একই ব্যবসা স্ক্যাফোল্ডিং, ভবন নির্মাণের কাজে যা যা প্রয়োজন সব তার কোম্পানিতে সংযোজন করতে থাকলেন। ক্রমেই ব্যবসা প্রসারিত হতে লাগল আর বৃদ্ধি পেতে থাকল আয় এবং মুনাফা। ৩০ বছর নিরলস পরিশ্রমে গড়ে তুললেন আলত্রাদ গ্রুপ। ফ্রান্সের একটি রাগবি ক্লাবের মালিক এই আরব বেদুঈন। ব্যবসার পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করেন আর প্রকাশিত করেছেন বেশ কয়েকটি উপন্যাস। তার প্রথম বই Badawi স্কুলের পাঠ্য। তাই জন্ম পরিচয়ের উর্ধ্বে আপন কর্ম পরিচয় তুলে ধরাই মানুষের ব্রত হওয়া উচিত। কারণ জন্মহোক যথা তথা কর্মহোক ভালো।তাহলেই সুকর্মের মাধ্যমে মানুষ গৌরব ও মর্যদার আসনে আসীন হতে পারে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৩৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: নিচু তলা ও উপরের তলা মাপার মাপ কাঠিটা কি? সৎ অসৎ নাকি অর্থবিত্ত ।

২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:১৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

কুলিন ব্রাহ্মণ, দাস, জোলা এদের পার্থক্য বােঝেন?
ব্রাহ্মণ হল হিন্দু সমাজের প্রথম এবং উচ্চতম বর্ণ।
জোলা মুসলমান্ সম্প্রদায়ে নিচু তলার মানুষ ভাবে।
যদিও বর্তমানে এ ধারণা কিছুটা পরির্তন হয়েছে।
একটা জারজ সন্তানকে কেউ ভালো চোখেনা এটাই
স্বাভাবিক ! সৎ- অসৎ পরের ব্যাপার।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:১৮

শেরজা তপন বলেছেন: আপনিতো প্রতিদিন বিখ্যাত সব জ্ঞানী গুনী বা কুখ্যাত লোকদের জীবনি বা বিশেষ কোন ঘটনা নিয়ে ব্লগে আলোচনা করে থাকেন, এর মধ্যে দু-চারজন নায়ক নায়িকা থাকতে পারে!
কেউ একজন কি বলল, তাই নিয়ে এত গোস্যা করেন কেন? আপনি রি অ্যাক্ট করেন খুব বেশী- আরেকটু ধৈর্যশীল হোন

২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ইতিহাস সাগরের মতো। সে তার বুকে
ঠাই দেয় যেমন মরা, পঁচা দূর্গন্ধ আবজনা
তেমনি সোনা, হীরা জহরত। ইতিহাসও
তেমনি তার পাতায় লিখে রাখে বিখ্যাত
সব জ্ঞানী গুনী বা কুখ্যাত লোকদের জীবনী।
সেখানে ২/৪ জন নায়িকার গল্প থাকতেই পারে।
তবে গোস্যা নয় অভিমান।

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: মোহেদ আলত্রাদ বাদাআই নিজের ভাষায় বলেছেন তিনি ধর্ষণের ফসল।

২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৪৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

জ্বি তিনি তার নিজের ভাষাতেই বলেছেন ।

৪| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১১

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ নুর ভাই, চালিয়ে যান আমি আছি।

২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমি চালিয়ে নেবার আপ্রাণ চেষ্টা করছি
মাঝে মাঝে ঠেকে যাই !! ভীষণ দূর্গম পথ!!
সত্য পথে কেউ নয় রাজি সবই দেখি তানা নানা
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়
লালন বলে জাত কারে কয়
এই ভ্রমও তো গেল না।



আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.