নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বারো মাসে তের পার্বণের মতো এমন অনেক দিবস আছে যার নামও হয়তো আমরা জানি না। তেমনই স্বল্প জানা একটি দিবস হচ্ছে বিশ্ব মশা দিবস। একটা ছোট্ট মশার কামড়ও ভয়ংকর হতে পারে। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানিজ এনকেফেলাইটিস, ফাইলেরিয়া, জিকা ভাইরাস ও হলুদ জ্বরের মত সব মারাত্মক রোগ হতে পারে। তাই মশা বাহিত রোগ থেকে সাবধান হওয়ার জন্য পালন করা হয় মশা দিবস। মশা দিবসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রোনাল্ড রস নামের একজন চিকিৎসকের নাম। রোনাল্ড রস ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কারের জন্য অমর হয়ে আছেন, আর আবিষ্কারটি করেছিলেন ১৮৯৭ সালের এই ২০ আগস্ট। তাই প্রতিবছরের ২০ আগস্ট দিনটি পালিত হয়। তিনি সে সময় প্রমাণ করেন, অ্যানোফিলিস প্রজাতির মশার পাকস্থলীর প্রাচীরের জলকোষে এক ধরনের দানাদার কালচে রঞ্জক পদার্থ রয়েছে। কয়েক মাস পর রস খাঁচায় বন্দী পাখির মাধ্যমে জীবাণুর জীবনচক্র বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, রোগাক্রান্ত পাখির দেহ থেকে ম্যালেরিয়া সুস্থ পাখির দেহে সংক্রমিত হতে পারে। এই আবিষ্কারের জন্য পরবর্তী সময়ে তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এই ব্রিটিশ চিকিৎসককে সম্মান জানাতেই যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন দিবসটি পালনের সূচনা করেছিল। ১৯৩০ সালের দিকে শুরু হওয়া বিশ্ব মশা দিবস পালনের আনুষ্ঠানিকতা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন ভয়াবহ অসুখের মধ্যে মশা বাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু উল্লেখযোগ্য। তাই ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্য এই দিন সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়। মশা বাহিত রোগ থেকে সাবধান হওয়ার জন্য, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এই দিনে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বেশ কিছু সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়। পৃথিবীতে প্রাণঘাতী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম হল মশা। মশাদের রোগ বহন করার ক্ষমতা এবং মানব শরীরে সেই রোগের জীবাণু ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনহানি হয়। নানা রকমের মশা আছে যারা ভিন্ন ভিন্ন প্রকার রোগ বহন করে। বর্ষাকাল মশার ডিম পাড়া ও বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত সময় এবং এই সময় এরা বহুবিধ রোগ ছড়ায়। বিশ্ব জুড়ে হাজারেরও বেশী প্রজাতির মশা রয়েছে, এদের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষতিকারক। একমাত্র স্ত্রী মশা মানুষের রক্ত পান করে পুষ্টিক্রিয়া সাধন করে (পুরুষ মশা করে না)। স্ত্রী মশা রক্ত পান করার সময় মানুষের দেহে মারাত্মক জীবানু ছড়িয়ে দেয়। নিম্নলিখিত রোগগুলির জন্য এডিস, অ্যানোফিলিস, কিউলেক্স মশা ভেক্টর হিসাবে কাজ করে (জীবিত জীব যা মানুষের মধ্যে বা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামক রোগ সংক্রমিত করতে পারে) যেমনঃ
১। এডিস মশাঃ চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গি জ্বর, লিম্ফ্যাটিক ফাইলারিয়াসিস, রিফ্ট ভ্যালি ফিভার, পীত জ্বর, জিকা
২। অ্যানোফিলিস মশাঃ ম্যালেরিয়া, লিম্ফ্যাটিক ফাইলারিয়াসিস (আফ্রিকা)
৩। কিউলেক্স মশাঃ জাপানিজ এনসেফালাইটিস, লিম্ফ্যাটিক ফাইলারিয়াসিস, ওয়েস্ট নীল ফিভার
(ব্রিটিশ চিকিৎসক রোনাল্ড রস)
বিশ্বখ্যাত চিকিৎসক রোলান্ড রসের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের আলমোড়া নামের একটি পার্বত্য এলাকায়। তাঁর বাবা স্যার ক্যাম্পবেল ক্লে গ্র্যান্ট রস ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল। মা মাতিলদা সারলোট ছিলেন লন্ডনের আইন ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড মেরিক এল্ডারটনের বড় মেয়ে। মাত্র আট বছর বয়সে রোনাল্ড রসকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। রস প্রাণিবিদ্যায় আগ্রহী ছিলেন। এ ছাড়া ছন্দ, সংগীত ও কাব্য নিয়েও তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তিনি শিল্পী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবার ইচ্ছায় চিকিৎসক হিসেবে লন্ডনের সেন্ট বার্থলোম্যুর হাসপাতালে যোগ দেন। রস ১৮৮১ সালে এলএসএ (লিসেনসিয়েট অব দ্য সোসাইটি অব অ্যাপোথেক্যারি) ডিগ্রি অর্জন করে ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৮৮১ থেকে ১৮৯৭ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন শহরে তিনি চাকরি করেন। যখন তিনি সেকেন্দারাবাদে চাকরি করতেন সেখানে অনেক মানুষ মারা যায় কলেরায় ও ম্যালেরিয়ায়। ওই বছর তিনি বিশটি ব্রাউন মশা ধরে গবেষণাগারে ব্রিড করান এবং হুসেন খান নামক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে আট আনা দিয়ে ভাড়া করেন এবং তাকে প্রতি কামড়ের জন্য এক আনা করে দিতেন। এভাবে তিনি মশাকে ম্যালেরিয়া জীবাণু দ্বারা ইনফেকটেড করতে সমর্থ হন। এটি ১৮৯৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশের পর পরই সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারেন শুধু স্ত্রী এনোফিলিস মশাই ম্যালেরিয়া রোগের জন্য দায়ী। তিনি ১৯২৬ সালে তার নামে প্রতিষ্ঠিত রস ইনস্টিটিউট এ- হসপিটালের ডক্টরস্ ইন চিফ নির্বাচিত হন ও সেখানে কাজ করেন। তারপর থেকে দি লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এবং ট্রপিক্যাল মেডিসিন প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করে থাকে গুরুত্ব সহকারে বিশ্বজুড়ে।
মশা সারা পৃথিবীর সমস্যা, এখন পর্যন্ত যে সকল মশা নিধনের পদ্ধতি আছে তা আর্থসামাজিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। কোন কোন দেশে বিমানে/হেলিকপ্টারে করে ওষুধ ছিটানো হয় আবার কোন দেশে ফগিং করা হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী (OX513A) নামক একটি জেনেটিক্যালি মডিফাইড পুরুষ মশার স্ট্রেইন আবিষ্কার করেছেন যারা কিনা প্রকৃতির বন্য স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হলে তার দেহে একটি ক্ষতিকর জিন ঢুকে পড়ে ফলে ওই স্ত্রী মশাটি বন্ধ্যাত্ব বরণ করে এবং ডিম দেবার ক্ষমতা হারায়। ফলে একটি বয়স্ক মশা যে চার-পাঁচবার কয়েকশত ডিম দিত তা আর পারে না বিধায় মশার বংশধারা কমে যায়। এই উন্নত প্রযুক্তি আমাদের জানা থাকলেও ল্যাবরেটরির অভাবে এ জাতীয় গবেষণা করা সম্ভবপর হয় না। রসের আবিষ্কারের পরও মশাবাহিত নতুন নতুন ভাইরাসের নাম এসেছে। এই খুদে পতঙ্গ আজও বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ। ছয়-পায়ের এই ভ্যাম্পায়ারটাকে থামানো বেশ মুশকিলের কাজ। বহুকাল আগে কে না কে যেন বলেছিলেন ‘মশা মারতে কামান দাগানো’ নিয়ে কথা। বহুল প্রচলিত এই উক্তিটির কিন্তু যথার্থ ব্যবহার হচ্ছে না। গবেষকেরা বলছেন, প্রতিবছর মশাবাহিত রোগ পৃথিবীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ। আর এরসঙ্গে যোগ হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, জিকা, চিকুনগুনিয়াসহ ১৩ ধরনের রোগ ছড়িয়ে বেড়ায় এই ঘাতক মশা। গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে মানুষের মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতি মশা দিবসটি হতে পারে জনসাধারণকে সচেতনতার দিন। তাই মশা মারতে কামান নয়, বরং সঠিক পন্থায় মশক নিমূল করুন।স্থানীয়ভাবে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে মশা নিধনই মশাবাহিত মহামারী থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:০৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গাজীসাব এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য
এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা
হয়েছে আপনাকে সেই কমিটির প্রধান করা
হলো। ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিলে সবাই
জানতে পারবে ঘটনার আদ্যোপান্ত। আশা করি
ভূায়া রিপোট জমা দিবেন না!!!
২| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: দুনিয়াতে কত দিবস যে আছে।
এইসব দিবস ফিবস পালন করে উপকার কি?
২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:১২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কথাতো তাই !! এত দিবস আছে যা
পালন করতে গেলে আর কিছু করতে হবেনা।
তবে উপকার না হলেও অপকার হয় না।
যদি মানুষ সচেতন হয় !
৩| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:১৯
অজ্ঞ বালক বলেছেন: মৃত্যুর কারণ হিসাবে মশা মনে হয় এক নাম্বারে আছে, ভুইলা গেসি। সুন্দর পোস্ট।
২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ অজ্ঞ বালক।
ভুল শুদ্ধ নিয়েই মানুষ। তা না হলে
সে ফেরেশতা হতে পারতো।
ভুলকরা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি'
এ কারণেই আমি মাঝে মাঝে
বিশেষ দিনগুলোর কথা স্মরণ
করিয়ে দেই।
৪| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: করোনায় মানুষ সচেতন হচ্ছে না। কাজেই কোনো দিবস দিয়েও সচেতন হবে না।
২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বিড়ি সিগারেট পান করা বারণ
আপনি কি তা মানছেন ??
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:০২
চাঁদগাজী বলেছেন:
হুসেন কি ম্যালেরিয়া থেকে সুস্হ হয়েছিলেন, নাকি রসের ভলনটিয়ার হয়ে প্রাণ হারায়েছিলেন?