নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখজনক ঘটনার জন্য সমালোচিত অস্কার বিজয়ী পোলীয় চলচ্চিত্র পরিচালক রোমান পোলান্স্কি। ১৯৬৯ সালে তাঁর অন্তঃসত্বা স্ত্রী অভিনেত্রী শ্যারন টেইটকে চার্লস ম্যানসনের অনুসারীরা হত্যা করে। ১৯৭৮ সালে পোলানস্কি ১৩ বছর বয়স্ক এক কিশোরীর সাথে যৌন সংসর্গের অপরাধ স্বীকার করে ইউরোপে পালিয়ে যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে, এ জন্য তিনি আর ফেরত আসেননি। ইউরোপ থেকেই তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা অব্যাহত রাখেন। তাঁর এই সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ফ্র্যান্টিক (১৯৮৮), এবং অ্যাকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত দ্য পিয়ানিস্ট (২০০২)। ব্যাক্তিগত জীবনে নিন্দিত চলচ্চিত্রে নন্দিত এই পরিচালকের আজ জন্মদিন। ১৯৩৩ সালের আজকের দিনে তিনি পোলান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। অস্কার বিজয়ী নন্দিত পোলীয় চলচ্চিত্র পরিচালক রোমান পোলান্স্কির ৮৭তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।
১৯৩৩ সালের ১৮ আগস্ট পোলান্ডে জন্মগ্রহণ করেন রোমান পোলান্স্কি। এই চলচ্চিত্র নির্মাতার জীবন নানা অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। ১৯৬২ সালে নাইফ ইন দ্যা ওয়াটার নামে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মানের আগে তিনি বেশ কিছু শর্ট ফিল্ম নির্মান করেন। নাইফ ইন দ্যা ওয়াটার সিনেমা তাকে বিশ্ব পরিচিতি এনে দেয়। সিনেমটি বিদেশী ভাষার সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনীত হয়েছিল। এর পর তিনি বেশ কিছু সফল সিনেমা নির্মান করেন যার প্রায় সবকটিই আধিভৌতিক বিষয় নিয়ে। তাঁর প্রথমদিককার পরিচালিত বিখ্যাত ছবির মধ্যে রয়েছে রোজমেরিজ্ বেইবি (১৯৬৮) এবং চায়নাটাউন (১৯৭৪)।
আমেরিকান লেখক আইরা লেভিনের (১৯২৯-২০০৭) ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত সে বছরের বেস্ট সেলিং হরর উপন্যাস “রোজমেরি’স বেবি” অবলম্বনে বিখ্যাত পরিচালক রোমান পোলানস্কি নির্মিত হরর মুভি “রোজমেরি’স বেবি (১৯৬৮)”। এই সিনেমায় তিনি শয়তানের পূজারী একদল লোকের কাহিনী তুলে ধরেন। তরুন উঠতি অভিনেতা গাই উডহাউজ (জন ক্যাসাভেটস) ও গৃহিনী রোজমেরি উডহাউজ (মিয়া ফারাও) নিউ ইয়র্কের ব্র্যামফোর্ডের নতুন ফ্ল্যাটে তাদের স্বপের আবাস গড়ে তোলায় মগ্ন। সত্তর দশকের আর আট/দশটি সাধারণ মার্কিন বিবাহিত যুগলের মত উডহাউজ যুগল স্বপ্ন দেখতো পরিবার-সন্তান নিয়ে সুন্দর আগামীর । কিন্তু দুর্ভাগ্য পিছু-তাড়া করে । উডহাউজ যুগলের ঠিক পাশের ফ্ল্যাটে থাকত পিশাচ সাধক কাস্টাভেট দম্পতি। গাই অভিনয় জীবনের সফলতার জন্য বলি দেয় তার অনাগত সন্তানকে। নিজের অজান্তে গাইয়ের বিশ্বাসঘাতকতায় পিশাচের বলৎকারের শিকার হয় রোজমেরি। পিশাচের সন্তান রোজমেরির গর্ভে একটু একটু করে বেড়ে উঠতে থাকে। “আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট”-এর হরর মুভির তালিকায় ৯ম স্থানে আছে অভিনেত্রী মিয়া ফারাও-এর এই মুভিটি । ১৯৭৬ সালে রোজ মেরি’স বেবি-র একটি সিকুয়্যাল টিভি মুভি হিসেবে মুক্তি পায় । পরিচালনায় ছিলেন স্যাম’ও স্টিন । রোজ মেরির চরিত্রে ছিলেন পেটি ডিউক। সিনেমার নির্মানে তিনি এতটাই সফলতা অর্জন করেছিলেন যে তার পেশাগত খ্যাতি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই সুখ বেশীদিন থাকে নি। তার স্ত্রী শ্যারন টেট যিনি তারই একটি সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়েন এবং পরবর্তীতে পরিণয়ে রূপ দেন, তাকে আরও চারজন অতিথি সহ হত্যা করা হয়। ধারণা করা হয়, এই হত্যাকান্ডের পেছনে শয়তানের পূজারী কোন দলের হাত রয়েছে। হত্যাকান্ডটি ঘটে লস অ্যাঞ্জেলেসেই, পোলানস্কির বাড়িতে। এই ঘটনার পরে পোলানস্কি ইউরোপে চলে যান এবং এর পরবর্তী দুটি সিনেমায় তিনি ব্যাপক ভায়োলেন্স দেখান যা হত্যাকান্ডেরই প্রভাব বলে বিশ্বাস করা হয়।
পাঁচ বছর পরে রোজমেরিস বেবি সিনেমার প্রযোজক রবার্ট ইভান্সের অনুরোধে পোলানস্কি আবার ফিরে আসেন ‘চায়নাটাউন’ পরিচালনা করার জন্য। ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রোমান পোলানস্কির সর্বকালের সেরা মুভিগুলোর অন্যতম চলচ্চিত্র চায়নাটাউন। আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউটের সর্বকালের সেরা মিস্ট্রি সিনেমার তালিকায় এর অবস্থান দ্বিতীয়তে। সিনেমাটা কতটা বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় এর অ্যাওয়ার্ড লিস্ট এবং অনার লিস্ট দেখলে। মোট এগারোটা ক্যাটাগরীতে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের নমিনেশন পেলেও শুধুমাত্র সেরা স্ক্রিনপ্লে-তে অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। চারটে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ছাড়াও রয়েছে আরও অনেকগুলো পুরস্কার, রয়েছে বিভিন্ন তালিকায় প্রথম দিকের অবস্থান। সিনেমার প্রধান চরিত্র জ্যাক নিকলসন এবং নয়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন ফে ডুনাওয়ে।
সিনেমার গল্পটা আর দশটা ডিটেকটিভ গল্পের মতই – সাধারণ ঘটনা থেকে নানা ঘটনার মোড়কে জটিল থেকে জটিলতর পরিস্থিতি এবং সব শেষে খোলস খুলে সত্যিটা বের করে আনা। একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ, তার নাম জেক গিেটস, হলিস মুলরে নামের লস অ্যাঞ্জেলস ওয়াটার – পাওয়ার কোম্পানির চিফ ইঞ্জিনিয়ারের উপর গোয়েন্দাগিরির দায়িত্ব পায়, দায়িত্ব দেন মিসেস মুলরে। দেখা গেল, ইঞ্জিনিয়ার হলিস কোন একজন অল্পবয়সী মেয়ের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন। এমনই একটি কাহিনী পরদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে গেলে এবং উকিলসহ একজন ভদ্রমহিলা যার নাম ইভলিন হাজির হলে বোঝা গেল আগের মহিলাটি আসল ছিলেন না। হলিসের নামে স্ক্যান্ডাল ছড়ানোর জন্যই এই ব্যবস্থা। হলিস তখন শহরে বেশ আলোচনার বস্তু কারণ তিনি চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিেসবে শহরে প্রস্তাবিত বাধের বিরোধিতা করছেন। শহরটি তখন খরায় ভুগছে এবং পানির প্রয়োজন, কিন্তু পুরানো একটি বাধ ভেঙ্গে দুর্ঘটনায় বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানি ঘটায় হলিস নতুন কোন ঝুকি নিতে চাইছিলেন না। চাষীদের অভিযোগ ছিল হলিস পানি চুরি করছেন। গল্পের শুরু এভাবেই। চায়নাটাউন সিনেমায় সংলাপ এবং দৃশ্যায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন মেসেজ দর্শকের কাছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। এ কারণে এই সিনেমার বিভিন্ন সংলাপ এবং দৃশ্য স্মরনীয় হয়ে আছে। সবচে বেশী আলোচিত এর সমাপ্তি দৃশ্যটি। পরবর্তীকালে এই ধরনের সমাপ্তির সাথে পরিচালক রোমান পোলানস্কির জীবনকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছেন। ফলে এই সিনেমাটি আরও কিছু বিখ্যাত সিনেমা যেমন এইট এন্ড হাফ, অ্যানী হল বা দ্য ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ সিনেমার মত আত্মজীবনীমূলক সিনেমার সাথে আলোচনায় চলে আসে।
গল্পের ভিন্ন রকমের সমাপ্তির সাথে তার জীবনের ঘটনাকে মিলিয়ে নেয়া খুব কষ্টকর হয় না। চায়নাটাউন সিনেমা মুক্তির পর তার জীবনে এমন ঘটনা ঘটে যা পরবর্তীতে তাকে আরও ভালো ভাবে এই সিনেমার সাথে জড়িয়ে স্টাডি করার পরিবেশ তৈরী করে দেয়। চায়নাটাউন সিনেমার বিশাল সাফল্যের মাত্র দুই বছর বাদে পোলানস্কির বিরুদ্ধে শিশু যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলা হয়। যে মেয়েটিকে তিনি ধর্ষন করেছিলেন তার বয়স ছিল মাত্র তের বছর, ফলে এই ঘটনার মাধ্যমে তারই সিনেমার নোয়া ক্রস চরিত্রের সাথে মিশে যান। সেই থেকে পোলানস্কি একজন ফেরারী, তিনি ফ্রান্সে থেকে চলচ্চিত্র নির্মান করেন, আমেরিকায় এলেই তিনি গ্রেফতার হবেন। এ কারণেই দ্য পিয়ািনস্ট সিনেমার পুরস্কার তিনি নিজে গ্রহন করতে পারেন নি, করেছিলেন তার পক্ষ থেকে আরেকজন। নানা কারণে নন্দিত ও নিন্দিত এই চিত্র পরিচালকের আজ ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে তার জন্য আমাদের শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
তবে আমার ধারণা মরণের পরে
তারা হবেন হিরো !! দোষ ত্রুটি
চাপা পড়ে থাকবে তাদের
সৃজনশীলতার আলোয়।
২| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ তাকে বেহশত নসীব করুক।
১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনে তাকে আগে ভাগেই স্বর্গে পাঠিয়ে দিলেন !!!
মানুষটা এখনও দিব্যি ঘুরি ফিরে পৃথিবীর রূপ রং
রস চেখে বেড়াচ্ছেন !! আপনি পারেনও, চিত্তগুপ্ত কি
আপনার খুব পরিচিত?
৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৫৬
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: নন্দিত ও নিন্দিত এই চিত্র পরিচালকের ৮৭তম জন্মবার্ষিকীতে
.....................................................................................
জন্মদিনে শুভেচ্ছা।
১৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৩৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও ধন্যবাদ
স্বপ্নের শঙ্খচিল
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩০
ঘরহীন বলেছেন: পেডোফাইলরা পরিত্যাজ্য, যত বিখ্যাত ব্যক্তিত্বই হোক না কেন।