নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরীর ৭৮তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:১৯


পঞ্চাশ উত্তর বাংলা কবিতায় আধুনিক মনন ও জীবনবোধ সৃষ্টিতে যে কজন কবি উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্য অন্যতম শহীদ কাদরী। শহীদ কাদরী লিখেছেন দীর্ঘদিন কিন্তু লিখেছেন খুবই অল্প। অবশ্য একজন কবির সৃষ্টি-সংখ্যা দিয়ে তাঁর কৃতিত্ব বিচার্য নয়, তাঁর সৃষ্টিটাই আসল। পৃথিবীবিখ্যাত অনেক কবি-সাহিত্যিক আছেন, যাঁদের গ্রন্থসংখ্যা খুবই অল্প। যেমন জগদ্বিখ্যাত ফরাসি কবি বোদলেয়ারের বইয়ের সংখ্যা একটাই (লে ফ্লর দ্যু মাল)। তার কবিতার সংখ্যা ১৮০টি। আর একজন বিখ্যাত কবি জঁ আর্তুর র্যাঁবো। তাঁর বই মাত্র দুটি। এই বিরলপ্রজ কবিদের ধারায় এক সংযোজন শহীদ কাদরী। তাঁর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা চার। ‘উত্তরাধিকার’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ ও ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’। এই চারটি গ্রন্থে কবিতা রয়েছে ১৫০টির মতো। এই অল্পকটি কবিতায় কবি আমাদের যা দিয়েছেন, তা অসামান্য আর অতুলনীয়। শহর এবং তার সভ্যতার বিকারকে তিনি ব্যবহার করেছেন তার কাব্যে। দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ববোধ এবং প্রকৃতি ও নগর জীবনের অভিব্যক্তি তার কবিতার ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যেকে বৈশিষ্ট্যায়িত করেছে। তার কবিতায় অনুভূতির গভীরতা, চিন্তার সুক্ষ্ণতা ও রূপগত পরিচর্যার পরিচয় সুস্পষ্ট। নাগরিক-জীবন-সম্পর্কিত শব্দ চয়নের মাধ্যমে বাংলা কবিতায় নাগরিকতা ও আধুনিকতাবোধের সূচনা করেছিলেন শহীদ কাদরী। তিনি আধুনিক নাগরিক জীবনের প্রাত্যহিক অভিব্যক্তির অভিজ্ঞতাকে কবিতায় রূপ দিয়েছেন। ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যের তীক্ষ্ণ শাণিত রূপ তাঁর কবিতাকে বৈশিষ্ট্য দান করেছে। শহর এবং তার সভ্যতার বিকারকে শহীদ কাদরী ব্যবহার করেছেন তাঁর কাব্যে। তাঁর কবিতায় অনূভূতির গভীরতা, চিন্তার সুক্ষ্ণতা ও রূপগত পরিচর্যার পরিচয় সুস্পষ্ট। ছড়াকে কীভাবে কবিতা করতে হয় সে বিষয়ে দক্ষ ছিলেন শহীদ কাদরী। কবিতাকে কী করে আধুনিক পাঠকের কাছে উপস্থিত করতে হয় এ কৌশল শহীদ কাদরীর কাছে ছিল সহজাত ও মামুলি ব্যাপার। কবিতায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলা তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন এবং ২০১১ সালে ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন। আজ কবির ৭৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪২ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি কবি শহীদ কাদরীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে ভারত) রাজধানী কলিকাতা শহরের পার্ক সার্কাসে জন্ম নেন এবং কলিকাতা শহরে তার শৈশব কাটান। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের দিকে দশ বছর বয়সে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। এরপর প্রায় তিন দশক তিনি ঢাকা শহরে অবস্থান করেন এবং ১৯৭৮ সাল থেকে প্রবাসজীবন শুরু করেন। তিনি বার্লিন, লন্ডন, বোস্টন হয়ে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিউইয়র্কে বসবাস করেছেন। এগারো বছর বয়সে ১৯৫৩ সালে তিনি ‘পরিক্রমা’ শিরোনােম তার প্রথম কবিতা রচনা করেন যা মহিউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘স্পন্দন’ কাগজে ছাপা হয়েছিল। এরপর ‘জলকন্যার জন্য' শিরোনামে কবিতা লিখেন, এবং একই কাগজে ছাপতে দেন। এভাবে নিয়মিত অনিয়মিতভাবে তার কবিতা লেখা চলতে থাকে। পঁচিশ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে ছাপা হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উত্তরাধিকার। এরপর ১৯৭৪ সালে তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই এবং প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে রচিত কবিতা নিয়ে ২০০৯ সালে কাব্যগ্রন্থ আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও প্রকাশিত হয়। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত ঝলসে উঠে কবি যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ঠিক তখনি লেখালেখির জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ইউরোপ পাড়ি জমালেন। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে কবি তাঁর ঠিকানাটি বেছে নিলেও দেশ থেকে বয়ে নিয়ে আসা স্মৃতিগুলো সবসময় তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, এক ধরনের নস্টালজিক আবেগ তাড়িত করে বেড়ায় ।

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ আগষ্ট নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন কবি শহীদ কাদরী। মৃত্যুকালে কবির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন শহীদ কাদরী। হুইল চেয়ারে ছিল তার চলাফেরা। উচ্চ রক্তচাপ ও জ্বর নিয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সাত দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ২১ অগাস্ট অচেতন অবস্থায় শহীদ কাদরীকে হাসপাতালে ভর্তি করার চারদিন পর বুধবার তার জ্ঞান ফেরে। সে সময় স্ত্রী ও অন্যদের সঙ্গে কথা বললেও তা ছিল অসংলগ্ন। শুরু থেকে আইসিইউতে ছিলেন শহীদ কাদরী। অবশেষে ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ৭৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুশোকে নিউ ইয়র্কের হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন নীরা কাদরী। কবির প্রথম স্ত্রী নাজমুন্নেসা পিয়ারি থাকেন জার্মানিতে। দ্বিতীয় স্ত্রী ডানা ইসলাম মারা গেছেন। তৃতীয় স্ত্রী নীরা কাদরী ছিলেন কবির নিত্য সঙ্গী। মৃত্যুর সময়েও তিনি তার পাশেই ছিলেন। শহীদ কাদরীর ইচ্ছায়ই তার মরদেহ বাংলাদেশে আনা হয়। মৃত্যুর “আগের দিন তিনি বলেছিলেন, আমি বাংলাদেশে যেতে চাই,” তাঁর প্রথম স্ত্রী নাজমুন্নেসা পিয়ারি থাকেন জার্মানিতে। দ্বিতীয় স্ত্রী আমেরিকান, নাম দ্রামা কাদরী (মৃত)। তৃতীয় স্ত্রী নীরা কাদরী ছিলেন কবির নিত্য সঙ্গী। তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তান আদনান কাদরী। আজ কবির ৭৮তম জন্মবার্ষিকী। কিংবদন্তি কবি শহীদ কাদরীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:



উনাকে নিউইয়র্যকে কয়েকবার দেখেছিলাম

১৪ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

কালের স্বাক্ষী গাজীসাব !!

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:১০

রাজীব নুর বলেছেন: কবিকে শ্রদ্ধা জানাই।

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ২:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

গুরু আছে যেখানে
শিষ্য আছে সেখানে!!
ধন্যবাদ খানসাব!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.