নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী। অল্পবয়সেই তিনি অনুবাদক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। কৈশোরে তিনি রবীন্দ্রনাথ পরিচালিত ও মাতা জ্ঞানদানন্দিনী সম্পাদিত বালক পত্রিকায় রাস্কিনের রচনার বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন। পরে ফরাসি শিখে তিনি রেনে গ্রুসের ভারতবর্ষ, পিয়ের লোতির কমল কুমারিকাশ্রম এবং মাদাম লেভির ভারতভ্রমণ কাহিনী অনুবাদ করেন। রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধসহ জাপানযাত্রীর ডায়রী-র ইংরেজি অনুবাদও তিনি প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে বামাবোধিনী, বঙ্গলক্ষ্মী, সাধনা, পরিচয়, সবুজপত্র প্রভৃতি পত্রিকায় সঙ্গীত ও সাহিত্যবিষয়ে তাঁর অনেক মৌলিক রচনা প্রকাশিত হয়। বঙ্গনারীর শুভাশুভ বিষয়ে তাঁর মতামত ‘নারীর উক্তি’ নামক প্রবন্ধে বিধৃত হয়েছে। ইন্দিরা দেবী রবীন্দ্রসঙ্গীতে এবং পিয়ানো, বেহালা ও সেতারবাদনে পারদর্শিনী ছিলেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপি রচনা তাঁর এক অমর কীর্তি। ‘মায়ার খেলা’, ‘ভানুসিংহের পদাবলী’, ‘কালমৃগয়া’ প্রভৃতিসহ আরও দুশো রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপি রচনা এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের বহু স্বরলিপি গ্রন্থ তিনি সম্পাদনা করেন। সামগ্রিকভাবে বাংলা সাহিত্যে চিঠিপত্রের গুরুত্ব তেমন না হলে কেউ কেউ চিঠির যথাযথ ব্যবহারে এগিয়ে এসেছেন। এক্ষেত্রে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ও প্রমথ চৌধুরীর শৈল্পিক প্রেমপত্রাবলীর কথা এখানে উল্লেখ করতেই হবে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখক প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে ১৮৯৯ সালে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ১৯৪১ সালে প্রমথ চৌধুরীর সাথে শান্তিনিকেতনে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।এখানে এসে সঙ্গীতভবনে নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিক্ষাদান শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুবনমোহিনী পদক লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। আজ ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬০ সালের আজকের দিনে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী। মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ইন্দিরা দেবী ১৮৭৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর পিতার কর্মস্থল ভারতের বোম্বাই প্রদেশের বিজাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন লেখক, সাহিত্যিক ও প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর মাতা জ্ঞানদানন্দিনী দেবীও ছিলেন একজন বিদূষী নারী। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই সন্তান সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী দুজনেই ছিলেন কৃতি ব্যক্তিত্ব। ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী তাঁর পাঁচ বৎসর বয়সে, অর্থাৎ ১৮৭৮ সালে মায়ের সাথে বিলেতে যান। দেশে ফেরার পর ১৮৮১ সালে প্রথমে সিমলার অকল্যান্ড হাউজে এবং পরে কলকাতার লোরেটা হাউজে পড়াশোনা করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি এন্ট্রান্স ও পরে এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৯২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করে তিনি ‘পদ্মাবতী’ স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। তিনি মার্টিনিয়ার স্কুলের একজন শিক্ষয়িত্রীর কাছে ফরাসি ভাষা শিখেন। এই সময় স্লেটার কাছে পিয়ানো ও মনজাটোর কছে বেহালা বাজানো শিখেন। এরপর ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিকের ইন্টারমিডিয়েট থিয়েরি পরীক্ষায় পাস করে ডিপ্লোমা লাভ করেন এবং বাদ্রিদাস মুকুলের নিকট উচ্চাঙ্গসঙ্গীত (কণ্ঠ) শিক্ষা করেন। চিন্তাচেতনা ও আদর্শগত দিক থেকে ইন্দিরা দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভাবশিষ্যা। সর্বসাধারণের নিকট তিনি ‘বিবিদি’নামেও সমধিক সুপরিচিত ছিলেন। ইন্দিরা দেবী অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। সঙ্গীত বিষয়েও তার জ্ঞান ছিল অগাধ। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভাই – ভাইঝিদের গান শোনাতেন। হিন্দি গান শোনাতেন কৌতুককর ভঙ্গিমায়। তাঁর সঙ্গীতের লয় এমনভাবে বেড়ে যেত যে মনে হতো তাঁর ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে উঠছে। যখন তিনি কোন ইংরেজি গান সঠিক উচ্চারণসহ গাইতেন তখন চমৎকার লাগত। যেমন ‘উড ন্যষ্ট ইউটেল মি মর্নিং ডার্লিং’ কিংবা ‘গুড বাই সুইট হার্ট গুড বাই’ ইত্যাদি। ছোট বেলার সেই গান ইন্দিরা দেবী হৃদয়ঙ্গম করতে না পারলেও তিনি যখন নিজ বাড়িতে ফিরে যান তখন লরেটো কনভেন্ট স্কুলে ইংরেজি গানের জন্যে ভর্তি হন। সে সময় থেকেই তিনি সঙ্গীত বুঝতে শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথের বহু কবিতার ও রচনার তিনি ছিলেন দক্ষ অনুবাদক। রবীন্দ্রনাথও তার অনুবাদ পড়ে সবসময় সন্তোষ প্রকাশ করতেন। ইন্দিরাই প্রথম তার ‘জাপানযাত্রী’ গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। ১৯৫৬ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেন। শান্তিনিকেতনে ইন্দিরা দেবী ‘আলাপনী মহিলা সমিতি’ প্রতিষ্ঠা ও তার মুখপত্র ঘরোয়া প্রকাশ করেন। মহিলা কল্যাণে গঠিত ‘বেঙ্গল উইমেন্স এডুকেশন লীগ’, ‘অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স’, ‘হিরণ্ময়ী বিধবা আশ্রম’ ইত্যাদি সংগঠনের সভানেত্রী ছিলেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তার প্রিয় এই ভাইঝির কণ্ঠধৃত সুরে অনেকগুলি গানও রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধসহ জাপানযাত্রীর ডায়রী-র ইংরেজি অনুবাদও তিনি প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে বামাবোধিনী, বঙ্গলক্ষ্মী, সাধনা, পরিচয়, সবুজপত্র প্রভৃতি পত্রিকায় সঙ্গীত ও সাহিত্যবিষয়ে তার অনেক মৌলিক রচনা প্রকাশিত হয়। বঙ্গনারীর শুভাশুভ বিষয়ে তার মতামত নারীর উক্তি নামক প্রবন্ধটি ছাপানো হয়। ইন্দিরা দেবীর কয়েকটি মৌলিক রচনা হলোঃ শ্রুতি স্মৃতি, রবীন্দ্রসঙ্গীতে ত্রিবেণী সঙ্গম (১৯৫৪) ও রবীন্দ্রস্মৃতি (৫ খন্ড, ১৯৫৯)। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেঃ নারীর উক্তি (১৯২০), বাংলার স্ত্রী-আচার (১৯৫৬), স্মৃতিকথা, পুরাতনী (১৯৫৭) ও গীতপঞ্চশতী। ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘ভুবনমোহিনী’ স্বর্ণপদক, ১৯৫৭ সালে বিশ্বভারতী ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি এবং ১৯৫৯ সালে রবীন্দ্রভারতী সমিতি প্রথমবারের মতো ‘রবীন্দ্রপুরস্কার’-এ ভূষিত করে। ব্যক্তিগতজীবনে ইন্দিরা দেবী ১৮৯৯ সালে তিনি তাঁর স্বনির্বাচিত পাত্র প্রখ্যাত সাহিত্যিক ‘সবুজপত্র’সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। স্বামীর সঙ্গে যুক্তভাবে লিখিত হিন্দুসঙ্গীত তাঁর সঙ্গীতচিন্তার পরিচায়ক। ১৯৬০ সালের ১২ আগস্ট ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী। আজ ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী শ্রদ্ধা জানাই।
৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ২:১৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
ফরাসীও জানতেন, ভালো
৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:২৩
ইসিয়াক বলেছেন: শ্রদ্ধা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই
................................................................................................
জানাই আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।