নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালাপানিঃ ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসের এক কুখ্যাত বন্দিশিবির

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩৯


ইংরেজ আমলে ভারতে, বিশেষত বাংলার ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীদের আটকে রাখার জন্য যে ক’টি কুখ্যাত বন্দিশিবির তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে কালাপানি অন্যতম। সাম্প্রতিক সময়ে কুখ্যাত ইরাকের আবু গারিব জেলের মতোই নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার প্রতীক হয়ে আছে সেলুলার জেলটি। এই জেলে সেলের সংখ্যা ৬৯৮টি। এ কারণে জেলের নামকরণ করা হয় সেলুলার জেল।১৩ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৬ ফিট প্রস্থ এক একটি কক্ষে বছরের পর বছর নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হয়েছে রাজনৈতিক বন্দিদের। খাদ্যের নামে বন্দিদের যা দেওয়া হতো তা ছিল অত্যন্ত নোংরা। ছিল অমানুষিক পরিশ্রমের কাজ। নির্যাতন ছিল প্রাত্যহিক রুটিনের অন্তর্গত। অসংখ্য রাজনৈতিক বন্দি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। এসব মহান বন্দির মধ্যে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা থেকে নির্বাসিত বন্দির সংখ্যা বিস্ময়কর রকম বেশি। এক হিসেবে দেখা গেছে জেলটিতে ১৯৩৭ সালে মোট বন্দি ছিলেন ৩৮৫ জন। এর মধ্যে বাংলার বন্দির সংখ্যা ছিল ৩৩৯ জন। বাকি বন্দিরা বিহারের ১৯, উত্তর প্রদেশের ১১, আসামের ৫, পাঞ্জাবের ৩, দিল্লির ২ এবং মাদ্রাজের ২ জন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে এমন সম্ভাবনাময় তরুণদের শাস্তি হিসেবে পাঠানো হতো বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত আন্দামান সেলুলার জেলে। কলকাতা ও মাদ্রাজ থেকে যথাক্রমে ১,২৫৫ এবং ১,১৫১ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত এই সেলুলার জেলটি। ‘কালা’ বলতে এখানে মৃত্যুকেই বোঝানো হয়, আর বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত হওয়ায় নামের সাথে যুক্ত হয়েছে ‘পানি’। সাধারণ মানুষের কাছে জেলখানাটি ‘কালাপানি’ নামেই অধিক পরিচিত। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বটুকেশ্বর দত্ত, উল্লাসকর দত্ত, বিনায়ক দামোদর সাভারকরের মতো বিশিষ্ট প্রতিবাদী ও আন্দোলনকারী ব্যক্তিবর্গকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল কালাপানিতে। ১৮৫৭ সালে সংঘটিত সিপাহী বিদ্রোহের সময় থেকেই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জকে বন্দীশিবির হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল ব্রিটিশরা। তবে সে সময় আলাদা করে কোনো কারাগার নির্মাণ করা হয়নি। ১৮৮৯ সালের ১২ জুন ভারতবর্ষের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে এ কয়েদখানাসংবলিত উপনিবেশটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবশেষে ১৮৯৩ সালে সেই উপনিবেশের অংশ হিসেবে সেলুলার জেল নির্মাণের কাজে হাতে দেয়া হয়। মাত্র তিন বছরের মধ্যে, ১৮৯৬ সালে, প্রায় ছয়শ কয়েদির দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় কালাপানির। এ যেন নিজের হাতে নিজের কবর খুঁড়ে বাকিদেরও সেই কবরে শোয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া। ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম এই আন্দোলনে ব্রিটিশদের সাথে খুব একটা কুলিয়ে উঠতে পারেননি বিদ্রোহীরা। বেশিরভাগ বিদ্রোহীকে দমন করা হয় হত্যার মাধ্যমে, বাকিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডস্বরূপ নির্বাসনে পাঠানো হয় আন্দামানে। “সে সময় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে ভারত ভূখণ্ডের অংশ বলেই মনে করা হতো না। ওটা ছিল বিদেশ। রাজবন্দীদের আন্দামানে পাঠিয়ে তাদের মনোবল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়াই ছিল ব্রিটিশদের মূল উদ্দেশ্য।”

কারারক্ষী ডেভিড ব্যারি এবং সামরিক চিকিৎসক মেজর জেমস প্যাটিসন ওয়াকারের তত্ত্বাবধায়নে সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী শতাধিক বিদ্রোহীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় আন্দামানে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে কয়েদীর সংখ্যা, আর এই সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যায় কয়েদীদের মনের ক্ষোভ। জঙ্গল পরিস্কার করা, কাঠ কাটা, পানি আনা- এসব কাজ করতে গিয়ে এখানে-সেখানে তারা দেখতে পায় অসংখ্য মৃতদেহ। এরই মধ্যে কয়েকজন ব্রিটিশ পরিদর্শক এসে জায়গাটিকে মানুষের থাকার অনুপযোগী বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু সেসব কথা কানেই তোলেনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক বন্দীদের গুম করে দেয়ার জন্য এর চেয়ে নিরাপদ জায়গা আর কোথায় থাকতে পারে? কয়েদী পালাতে গিয়ে মারা গেছে- এ কথা বলে দিলেই খালাস কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ১৮৬৮ সালের এপ্রিলে ২৩৮ জন কারাবন্দী জেল থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। তাদের মধ্যে ৮৭ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। বাকিদের অবস্থা আলাদা করে বলার কিছু নেই। একবারে মরার সৌভাগ্য যাদের হয়নি, তিলে তিলে তাদের দুনিয়া ছাড়া বর্বর ব্রিটিশরা। অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কেউ হয়ে যেতেন উন্মাদ, কেউ অকালে হারাতেন প্রাণ। এভাবে দিনকে দিন ঔপনিবেশিক শাসনবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠানো প্রতিবাদী মানুষগুলোকে ধরে এনে বিচারের নামে প্রহসন চালায় তারা। বেশিরভাগ কয়েদীকে গ্রেপ্তার করা হতো বাংলা এবং বার্মার দিক থেকে। আন্দামানের তীব্র স্রোত আর কালো পানিকে খুব ভয় পেতেন কয়েদীরা, সাঁতরে এই পথ পাড়ি দেয়া ছিল এককথায় অসম্ভব। নির্জন এই দ্বীপটি থেকে বের হওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই। কাজেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শায়েস্তা করার জন্য কালাপানি হয়ে ওঠে ব্রিটিশদের একদম মনমতো একটি জায়গা। শিকলে বেঁধে তাদেরকে বাধ্য করা হতো কারাগারসহ দ্বীপটিতে নতুন নতুন বাড়ি বানাতে, যেখানে আরাম-আয়েশ করে দিন কাটাত ব্রিটিশ শোষক কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও উপনিবেশবাদ আরও শক্তপোক্ত করতে আন্দামানে জেটি নির্মাণেও বাধ্য করা হতো কয়েদীদের। উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে, ভারতের স্বাধীনতা যখন অভ্যুত্থানে রূপ নিচ্ছে, সে সময় গ্রেপ্তারকৃত রাজবন্দীদের জন্য উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা সম্বলিত কারাগারের প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে।

ব্রিটিশ রাজের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োজিত স্যার চার্লস জেমস এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের সার্জন এ. এস. ল্যাথব্রিজ পরামর্শ দেন, আন্দামানের সেলুলার জেলে দ্বীপান্তরিত হয়ে আসা কয়েদীদের জন্য একটি ন্যূনতম মেয়াদে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মাঠেঘাটে এভাবে সবাই মরে পড়ে থাকলে তা ভারতবাসীর আরও বেশি চোখে পড়বে। সেই ভাবনা থেকে আন্দামানে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় কালাপানি। সেল বা কোষ সদৃশ এই কাঠামোর জন্যই একে সেলুলার জেল বলা হয়। এতো অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কয়েদীরা অনেক সময় আক্রমণ করে বসেছেন ইংরেজ সেপাইদের। এতে ইংরেজ সৈন্যদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা যায়। আন্দামান সেলুলার জেলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে যেসব বিখ্যাত বিপ্লবী বন্দিজীবন যাপন করেছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। দিওয়ান সিং কালেপানি, ফজলে হক খায়রাবাদী, যোগেন্দ্র শুক্লা, হেমচন্দ্র দাস, সাভারকর ভ্রাতৃদ্বয়, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, লোকনাথ বল, উল্লাসকর দত্ত, মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, বটুকেশ্বর দত্ত, উল্লাসকর দত্ত প্রমুখ তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯০৮ সালের আলীপুর মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বারীন্দ্রকুমার ঘোষের মতো কয়েকজনকে পাঠিয়ে দেয়া হয় আন্দামানে। উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চন্দ্র সিং, বাঘা যতীনের জীবিত সঙ্গী যতীশ চন্দ্র পাল প্রমুখকে পরবর্তীতে বাংলার বহরমপুর কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯২৪ সালে সেখানে যতীশ চন্দ্র পালের রহস্যময় মৃত্যু হয়। সাভারকর ভ্রাতৃদ্বয়, বাবারাও এবং বিনায়ক, দু’বছর ধরে জানতেই পারেননি যে তারা একই কারাগারের আলাদা কক্ষে আছেন। জেলটি প্রথমবারের মতো আপামর জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ত্রিশের দশকের শুরুর দিকে। কয়েদীরা সবাই আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন তখন। ব্রিটিশদের অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মহাবীর সিং প্রথম অনশনের উদ্যোগ নেন। তাকে প্রতিহত করতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জোর করে দুধ খাইয়ে অনশন ভাঙার চেষ্টা করে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুধ সরাসরি তার শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে যায়। সাথে সাথেই মারা যান তিনি। তার মৃতদেহ ছুঁড়ে ফেলা হয় বঙ্গোপসাগরে। ১৯৩৭-৩৮ সালের দিকে মহাত্মা গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যস্থতায় মুক্তিকামী কয়েদীদের স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ নেয় ব্রিটিশ সরকার।

১৯৪২ সালে জাপান সরকার আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করে। সে সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তার ‘আজাদ হিন্দু ফৌজ’ নিয়ে ১৯৪৩ সালের ৭ নভেম্বর এ দ্বীপটিকে দখল করে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। তিনি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নাম দেন শহীদ ও স্বরাজ দ্বীপপুঞ্জ। অবশ্য এ ঘটনার দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯৪৫ সালে বৃটিশ সরকার এ দ্বীপমালা পুনরায় দখল করে নেয়। তবে ততদিনে ভারতে ইংরেজ শাসনের সূর্য অস্তমিত। তাই তারা আন্দামান সেলুলার জেলের সব বন্দিকে মুক্তি দিয়ে উপনিবেশটিও চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ততদিনে ইতিহাসের পাতায় এটি যে কালো অধ্যায় হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে, তা চিরকাল মানুষের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে। সেলুলার জেলের বিল্ডিংটিতে সাতটি উইং ছিল, বাইসাইকেলের চাকার মতো সবগুলো উইং গিয়ে মিলিত হয়েছে একটি বিন্দুতে। তিনতলা উইংগুলোতে মোট সেলের সংখ্যা ছিল ৬৯৩টি। প্রতিটি সেলে মাত্র একজন করে কয়েদী থাকতো, কেউ কারো মুখ দেখবে এমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সারাক্ষণ সেখানে প্রহরায় থাকতো অসংখ্য প্রহরী। জরুরী অবস্থার জন্য ছিল বিশালাকৃতির অ্যালার্ম। সেসব এখন অতীত। বিল্ডিংগুলো বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে, সংযোগ টাওয়ারসহ তিনটি উইং টিকে আছে কোনোমতে। ১৯৬৯ সালে বিল্ডিংটিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আজকের আন্দামান, বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একসারি দ্বীপ। মূলত এরা ছিল এক সারি পাহাড়। সাগরে প্রায় ডুবে গিয়ে সেই পাহাড়ের সারিই এখন প্রায় সমতল এক সারি দ্বীপ হয়ে বেঁচে আছে। ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দ্বীপসারির মোট আয়তন ৮২৪৯ বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপের সংখ্যা ৩২১টি। তার মধ্যে মাত্র ৩৮টিতে আজ পর্যন্ত মানুষ বাস করে। বাকিগুলো এখনও জনমানবহীন। নিকটবর্তী মূল ভূখণ্ডের দিক দিয়ে সবচেয়ে কাছে রয়েছে বার্মা। বার্মার সর্বদক্ষিণের কোকো আইল্যান্ড থেকে আন্দামানের উত্তরাংশে অবস্থিত ল্যান্ডফল আইল্যান্ডের দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। ওদিকে সুমাত্রা থেকে আন্দামানের ইন্দিরা পয়েন্টের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। অথচ ভারতের মুল ভূখন্ডের নিকটতম স্থান বিশাখাপট্টম বন্দরের দূরত্ব আন্দামানের পোর্টব্লেয়ার থেকে ১২২৪ কিলোমিটার। কোলকাতা থেকে পোর্টব্লেয়ার ১৩০২ কিলোমিটার, আর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে পোর্টব্লেয়ার ১১৯৭ কিলোমিটার। বার্মা, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া বা সুমাত্রার কাছে হলেও এই ভূখন্ডের মালিকানা ভারতের। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ বর্তমানেভারত ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন নগরী হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। উপাধি পেয়েছে “পান্না দ্বীপপুঞ্জ” হিসেবে। সুন্দর লোকালয়, সূর্য-চুম্বিত সমুদ্র সৈকত, পিকনিক স্থল এবং বিভিন্ন সৌন্দর্যের জন্য পর্যটন ব্যবস্থায় আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। রয়েছে হ্যাভলক, সিনকিউ, ছাতাম, ভাইপার, রস, ব্যারেন এবং রেড স্কিন, প্রাক্কালীন অন্ধকূপ, জীবন্ত আগ্নেয়গিরি, মধ্যযুগীয় কাঠচেরাই কারখানা (শ্য মিল), বিচিত্র বর্ণের প্রবাল ও আরও অনেক কিছু। এতে রয়েছে- নানা পিকনিক স্থল; যেমন চিড়িয়া তাপু, মাউন্ট হ্যারিয়েট ও কোরবাইন’স কোভ টু্রজিম্ কমপ্লেক্স – যা নিজস্ব বিনোদনের জন্য আনন্দদায়ক স্থলের চাহিদা পূরণ এবং জীবনের মজাদার ও প্রফুল্লময় মুহূর্তগুলির অভিজ্ঞতা প্রদান করে। মিউজিয়ামগুলির মধ্যে রয়েছে- ফরেস্ট মিউজিয়াম, সমুদ্রিকা অফ নাভাল মেরিন্ মিউজিয়াম, ন্যাশনাল মিউজিয়াম ও আ্যনথ্রোপলোজিক্যাল মিউজিয়াম। অন্যদিকে স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে রয়েছে সেলুলার জেল, ভাইপার আইল্যান্ডের ফাঁসিকাঠ – যা বহু পর্যটকদের আকর্ষিত করে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: কালাপানি নিয়ে তথ্যবহুল, হৃদয়স্পর্শী পোস্ট।
নূরু ভাইয়ের কলমের আচড়ে আরো জীবন্ত কালাপানি।

প্রিয়তে নিলাম।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শামছুল ইসলাম ভাই
অনেক দিন পরে ব্লগে আসবার জন্য।
মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


তখন বৃটিশেরা ছিলো নির্দয়, এখন পাক ভারতীয়রা নির্দয়।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

কথা কি মিথ্যা !!

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আমাদের কিশোরগঞ্জের ছেলে মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী বৃটিশদের এই জেলে সবথেকে বেশিদিন ছিলেন।সর্বমোট তিনি তিরিশ বছর জেলে ছিলেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক মহান নেতা।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর জন্য
শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫৪

শেরজা তপন বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট- খুব ভাল লাগল। অনেক কিছু নতুন করে জানলাম

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাদ তপন দাদা
লেখাটি ভালো লাগার জন্য।

৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: কালা পানির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলুন? এখন কি অবস্থা?

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:


সব সর্টকাটে জানতে চান কেন?
শেষ প্যারাটা পড়ুন, জানতে পারবেন।

৬| ০৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০৮

জগতারন বলেছেন:
প্রিয় নূরু ভাইয়ের উছিলায় আজ 'কালা পানি' সমন্ধে অনেক কিছুই জানিতে পারিলাম। খুউব বাল্য বয়সে আমাদের গ্রামে অনেকেই বড় নৌকা ও মাঝি'র ব্যাবসা করিত। সেখান থেকেই কালাপানি; এই শব্দটির সাথে পরিচিত হইয়াছিলাম। আজ বিস্তারিত জানিতে পারিলাম।

নূরু ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এই পোষ্ট'টি দেওয়ার জন্য।

০৫ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৪৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জাগতারণ দাদা আপনাকে ধন্যবাদ
আপনারা আগ্রহ নিয়ে পড়েন বলেই
আমার এই প্রচেষ্টা। যতদিন আগ্রহ
নিয়ে পড়বেন ততদিন আমার এাই
প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে। ঈদের শুভেচ্ছা
আপনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.