নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের ১৫ জন বিখ্যাত ব্যক্তিদের আত্মহত্যাঃ ৪র্থ পর্ব

২৮ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:০৬


১। রূপালী পর্দার তারকাদের আত্মহননঃ প্রথম পর্ব, ঢালিউড
২। রূপালী পর্দার তারকাদের আত্মহননঃ দ্বিতীয় পর্ব, বলিউড
৩। রূপালী পর্দার তারকাদের আত্মহননঃ তৃতীয় পর্ব, হলিউড
পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত মানুষের জীবনের শেষ হয়েছে আত্মহত্যার মাধ্যমে। "আত্নহত্যা" শব্দটি আমাদের মধ্যে এক ধরনের অস্হিরতা, এক রকমের হাহাকার সৃষ্টি করে। পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্মে আত্নহত্যা ক্ষমাহীন অপরাধ। আত্নহত্যা যেকোন হত্যাকান্ডের চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার। তার পরেও খবরের শিরোনামে দেখা প্রিয় কোনো অভিনেতা, রাজনীতিবিদ বা বিখ্যাত কোনো ব্যক্তির মৃত্যুসংবাদ আমাদের ব্যথিত করে। এদের কারো কারো আত্মহত্যার ধরন ছিল ভিন্নরকমের। বিখ্যাত ব্যক্তিদের এ ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে আমার আজকের পর্বঃ ইতিহাসের বিখাাত ১৫জন ব্যক্তির আত্মহত্যা।

১। রবার্ট বাড ডয়ারঃ
রাজনীতিবিদ রবার্ট বাড ডয়ারের মৃত্যুই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত আত্মহত্যা। তার আত্মহত্যার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল তা ফলাও করে প্রচার করে। এখনো ইন্টারনেটে সেই ভয়াবহ দৃশ্যটি খুঁজে পাওয়া যায়।
আমেরিকার পেনসিলভানিয়া রাজ্যের একসময়ের সিনেটর ডয়ার ১৯৮০ সালে রাজ্যের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে সেখানে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। ট্রেজারির প্রধান থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা সেই অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়। অভিযোগ কোর্টে প্রমাণিত হলে ডয়ারের বেশ ক’বছরের কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ডয়ার তখন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তারা তা মানতে রাজি ছিলেন না। তারা ডয়ারকে প্রস্তাব করেন, তিনি যদি নিজের দোষ স্বীকার করে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং তদন্তে সাহায্য করেন, তাহলে তাকে মাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। তা না হলে তার জন্য অপেক্ষা করছে বিশাল দুর্ভোগ । তারপরও ডয়ার তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি। তিনি নিজের নিষ্কলুষতার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু কোর্টে শেষ পর্যন্ত তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে ৫৫ বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লক্ষ ডলারের জরিমানা করা হয়। তার দণ্ড শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৯৮৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু ডয়ারের মনে ছিল অন্য পরিকল্পনা। দণ্ড শুরুর একদিন পূর্বে তিনি একটি প্রেস কনফারেন্স ডাকেন। সেখানে অনেক সাংবাদিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা। সেই কনফারেন্সে তিনি পুনরায় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন এবং তার মৃত্যুকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপরই একটি হলুদ খামের ভেতর থেকে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে তিনি একটি .৩৫৭ ম্যাগনাম রিভলভার বের করেন। এ সময় উপস্থিত সবাই চিৎকার করে ডয়ারকে এই কাজ থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছিল। তাদের উদ্দেশ্যে ডয়ার বলেন, ‘তোমাদের যদি এই দৃশ্য দেখতে ভালো না লাগে, তাহলে প্লিজ এই রুম থেকে চলে যাও।’ এর পরপরই তিনি ট্রিগার টেনে দেন এবং সাথে সাথেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এই ঘটনার প্রায় দুই দশক পরে প্রমাণিত হয় যে, ডয়ার আসলেই নিরপরাধ ছিলেন, যা তার মৃত্যুকে বিশ্ববাসীর নিকট আরও দুঃখজনক করে তোলে।

২। রবিন উইলিয়ামসঃ
রবিন উইলিয়ামসের আত্মহত্যা শুধুমাত্র ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত আত্মহত্যাই নয়, বরং তা ছিল পৃথিবীবাসীর জন্য এক বিরাট ধাক্কা। ২০১৪ সালে বিখ্যাত এই কমেডিয়ানের মৃত্যু সবাইকে হতবুদ্ধি করে দিয়েছিল। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই জন্মগ্রহণ করা রবিন উইলিয়ামস তার ক্যারিয়ার শুরু করেন একজন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি টেলিভিশনে কাজ করা শুরু করেন। ১৯৭০ সালে প্রচারিত ‘Mork & Mindy’ নামের একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন শো-এর মাধ্যমে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আমেরিকার প্রতিটি ঘরে ঘরে আলোচিত হতে থাকে তার নাম। ক্যারিয়ার জুড়ে বেশ কিছু বিখ্যাত মুভির আইকনিক চরিত্রে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল তার। এসবের মধ্য Mrs. Doubtfire, Good Will Hunting, Dead Poets Society উল্লেখযোগ্য। এত সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ার থাকার পরও তীব্র বিষণ্ণতায় ভুগতেন তিনি। আর ড্রাগ-আসক্তি তো ছিলই।
ড্রাগ-আসক্তি, বিষণ্ণতা এবং ক্রমশ নিম্নমুখী ক্যারিয়ারের সাথে শেষদিকে তার শরীরে ধরা পড়ে পারকিনসন রোগ। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত রবিন উইলিয়ামস ২০১৪ সালের ১১ই আগস্ট সবাইকে কাঁদিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
৩।কারিন বোয়েঃ
বিষণ্ন ও বিয়োগান্ত বিষয়ে কবিতা লিখতেন কারিন বোয়ে। তার বেশির ভাগ কবিতা প্রতীকধর্মী। তিনি পড়াশোনা করেন উপশাল ও স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা সংকলন। একটি সাহিত্য পত্রিকাও ছিল তার। কারিন বোয়ে তার কবিতায় পরাবাস্তবতার জগৎ সম্পর্কেও প্রথম আলোকপাত করেন। কবিতাগ্রন্থ প্রকাশ করার পর তা বিখ্যাত হয়ে যায়। এরপর একটি উপন্যাসও লেখেন কারিন বোয়ে। তিনি বিয়ে করেছিলেন, তবে সমকামী ছিলেন। ফলে তার বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। পরবর্তীতে বান্ধবী মারগেট হ্যানেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয় তার। জীবনের শেষ ১০ বছর তিনি মারগেট হ্যানেলের সঙ্গেই থাকেন। জানা যায়, মানসিক চাপের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেন। ১৯৪১ সালের এপ্রিলে একদিন তিনি গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। কিছুদিন পর তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

৪। কার্ট কোবেইনঃ
কার্ট কোবেইন ছিলেন নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল নির্ভানার ভোকালিস্ট। সাফল্যের চরম শিখরে থেকেও অনিয়ন্ত্রিত জীবন এবং চরম হিরোইন আসক্তির কারণে খুব অল্প বয়সেই তাকে বেছে নিতে হয়েছিল আত্মহত্যার পথ। ১৯৬৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা কোবেইন ও তার ব্যান্ড দল নির্ভানা তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘Nevermind’ এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যায়। ওই অ্যালবামের একটি গান ‘Smell Like Teen Sprit’ রীতিমতো গানের দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়, এবং তাদের গ্রাঞ্জ ঘরানার গান বিশ্বব্যাপী সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়নের সৃষ্টি করে। কোবেইন পরিণত হন একজন আন্তর্জাতিক তারকায়। কিন্তু এই বিপুল খ্যাতি তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়, এবং এর সাথে তীব্র হিরোইন আসক্তি তার জীবনকে বিষিয়ে তোলে। ১৯৯৪ সালের শুরুর দিকে কোবেইনের হিরোইন আসক্তি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, এবং ওই বছরের ৪ এপ্রিল মাত্র ২৭ বছর বয়সে পৃথিবীকে চিরতরে বিদায় জানান তিনি। ২ এপ্রিল থেকেই কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না কোবেইনের। পরবর্তীতে ঐ মাসের ৮ তারিখে একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান কোবেইনের সিয়াটলের বাড়িতে তার নিথর দেহ আবিষ্কার করেন। শটগান দিয়ে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেছিলেন কোবেইন।

৫। জন ব্যারিম্যানঃ
পুলিত্জার জয়ী কবি জন ব্যারিম্যানের বাবার আত্মহত্যার পর মা আবার বিয়ে করেন। বাবার এমন মৃত্যুতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কখনো মেনে নিতে পারেননি বাবার এমন মৃত্যু। তিনি পড়াশোনা করেন কলম্বিয়া কলেজ ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সনেট কাব্য সংকলনের জন্য ১৯৬৪ সালে তিনি পুলিত্জার পুরস্কার পান। ৩৮৫টি কবিতা ছিল বইটিতে। প্রকাশের পর বইটি ওই সময়ের অন্যতম সেরা কাব্যগ্রন্থের স্বীকৃতি পায়। সেই সঙ্গে জন ব্যারিম্যানকে এনে দেয় বিশ্বজোড়া খ্যাতি। এত কিছু পেয়েও কেমন যেন আনমনা থাকতেন জন ব্যারিম্যান। তারপর একদিন বাবার পথেই হাঁটলেন। তিনি ১৯৭২ সালে ওয়াশিংটন এভিনিউ ব্রিজ থেকে প্রায় ৯০ ফুট নিচে মিসিসিপি নদীতে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

৬। মায়াকোভস্কিঃ
গত শতকের শুরুতে রুশ বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃত মায়াকোভস্কিকে বলা হয় রাশিয়ান কবিতার ‘রেগিং বুল’। পুঁজিবাদী সমাজের শোষণ, মানুষে মানুষে অসাম্যের কথা বলেছেন এই কিংবদিন্ত কবি তার লেখনীতে। তার কবিতা অনূদিত হয়েছে নানান ভাষায়। সমাদৃত হয়েছে পৃথিবীর নানান দেশে। এই কবির পুরো নাম ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ মায়াকোভস্কি। ঘটনাক্রমে তার সঙ্গে পরিচয় হয় অভিনেত্রী ভেরোনিকা পোলানস্কায়ার। প্রথম দেখাতেই তিনি ভেরোনিকা পোলানস্কায়ার প্রেমে পড়েন। সম্পর্কের টানাপড়েন তাকে ভীষণ রকম বিমর্ষ, অধৈর্য আর বিপর্যস্ত করে তোলে। ১৯৩০ সালের শুরুর দিকে স্ত্রী ইয়ানশিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেন মায়কোভস্কি। পোলানস্কায়ারকে বিয়ের করার কথা বলেন মায়াকোভস্কি। কিন্তু তাদের মাঝে সম্পর্কের টানাপড়েন নতুন করে শুরু হয়। এভাবে দিন দিন প্রচণ্ড মানসিক চাপে পড়েন এই কবি। ১৯৩০ সালের ১৪ এপ্রিল মায়াকোভস্কির সঙ্গে পোলানস্কায়ারের দেখা হয়। এরপর সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে মায়াকোভস্কি রিভলবারের গুলিতে আত্মহত্যা করেন।

৭। এডগার অ্যালান পোঃ
এডগার অ্যালান পো ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক। অ্যালান পো ১৮০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি আমেরিকার বোস্টন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোর থেকেই লেখালেখি শুরু করেন তিনি। অসাধারণ প্রতিভাবান এই লেখকের সারা জীবন কাটে অভাব, অনটন ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে। তিনি খামখেয়ালি জীবনযাপন করেছেন। মদ্যপান করতেন প্রচুর। আরও ছিল জুয়া খেলার ভয়ানক নেশা। ১৮৮৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান কাউকে কিছু না বলে। পরবর্তী কয়েক দিন তার কোনো খোঁজ কেউ দিতে পারেননি। ঠিক ছয় দিন পর অক্টোবরের ৩ তারিখ বাল্টিমোরের রাস্তায় নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় অ্যালান পোর। কাছের মানুষজন ্এরপর তাকে বাল্টিমোর হাসপাতালে নিয়ে যান। এর চার দিন পর হাসপাতালে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এই লেখককে। ডেথ সার্টিফিকেটে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে মানসিক বিষণ্নতা থেকে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে।

৮। আর্নেস্ট হেমিংওয়েঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত সাম্রাজ্যবাদী ভোগবাদী রাষ্ট্রে বসবাস করার পরও তৎকালীন নোংরা হাওয়া তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। প্রচলিত সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক আচরণ যখন তার কাছে অসহনীয় হয়ে তখন তিনি তা থেকে মুক্তি পাওযার জন্য ১৯৬০ সালে কিউবায় চলে যান। কারণ, কিউবা তখন বাতিস্তা সরকার ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়ায়ের মাধ্যমে জাতীয় বিপ্লব সম্পন্ন করে স্বাধীন জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ নিয়ে দ্রুত বেগে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। ফিদেল এবং বিপ্লবীদের স্পর্শে নিজেকে আরো শুদ্ধ করার চেষ্টায় রত থাকার উদ্দেশ্য নিয়ে হেমিংওয়ের কিউবায় আগমন। কিন্তু বারবার আমেরিকা থেকে কিউবা গমন মার্কিন সরকার তা কোনভাবেই সহ্য করেনি। এমনিতে এর আগে ফেয়ার ওয়েল টু আর্মস লিখে যুদ্ধ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা মার্কিন সরকার পছন্দ করেনি। তাকে সমাজতন্ত্রের বা রাশিয়ার চর হিসেবেও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই প্রচার করে। তার উপর চলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরদারি। বিদ্যমান পরিস্থিতির অসমাঞ্জস্যতার কারণে শেষ বয়সে তিনি ডিপ্রেসনে ভোগেন। ডিপ্রেসন কিংবা দূর্ঘটনাজনিত শারীরিক বৈকল্যের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকদের অন্যতম মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৯৬২ সালের ২ জুলাই আইডাহোর কেচামে মুখে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে ট্রিগার টিপে রোগক্লিষ্ট জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান। কেন তিনি তাঁর জন্মস্থান ইলিনয়ের ওক পার্ক কিংবা পরবর্তী জীবনে বসবাসের জন্য নির্বাচিত মায়ামির কি-ওয়েস্ট, অথবা প্রিয় দেশ কিউবার পরিবর্তে জেম স্টেট হিসেবে খ্যাত আইডাহোকে বেছে নিলেন তা এক রহস্য বটে। তাঁর এমন রহস্যময় মৃত্যুর কারণ হতে পারে দুর্ঘটনাজনিত শারীরিক বৈকল্য। যিনি পশুশিকার, মৎস্য শিকারের মতো অ্যাডভেঞ্চারের মধ্য দিয়ে সময় কাটাতেন, যিনি স্পেনের ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, লিখেছেন ফর হুম দ্য বেল টোল্​স, ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সির মতো জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাস, সেই হেমিংওয়ে নিজের জীবন নিজের হাতেই নির্বাপিত করলেন। কালজয়ী সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে কোনো রোগে ভুগে কিংবা দুর্ঘটনায় মারা যাননি। বিশ্বসাহিত্যের এই অমূল্য কারিগর জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেন। মাথায় শটগান ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। অবসান ঘটে যায় এই পৃথিবীতে সুন্দরভাবে যাপিত নানা ধরনের অন্তর্গত জটিলতায় আক্রান্ত এক মহান লেখকের। আত্মহত্যার পূর্বে হেমিংওয়ে তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, “শুভরাত্রি আমার বিড়ালছানা“। হেমিংওয়ে আসলে কেন আত্মহত্যা করেছিলেন, তাই নিয়ে নানাভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন অর্থের টানাটানি ও অসুখী দাম্পত্যজীবন, কারও মতে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে আত্মহত্যা করেন কালজয়ী এই লেখক। হেমিংওয়েরই দীর্ঘদিনের বন্ধু অ্যারন এডওয়ার্ড হোচনার বলছেন, মূলত দুটি কারণে হেমিংওয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমত, তিনি মনে করেছিলেন যে তাঁর সৃষ্টিশীলতার সোনালি দিন আর নেই। আত্মহত্যার পেছনের দ্বিতীয় কারণটি আরও ভয়াবহ। কি বাড়িতে, কি গাড়িতে, সর্বক্ষণ হেমিংওয়ের পেছনে এফবিআইয়ের ফেউ লেগে থাকত। ফেউ মানে গোয়েন্দারা তাঁকে অনুসরণ করতেন। ফেউতাড়িত হেমিংওয়ের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছিল যে এফবিআই গুপ্তহত্যা করে তাঁকে মেরে ফেলতে পারে। গোয়েন্দাগিরির এ বিষয়টি হেমিংওয়ের জীবনযাপনকে অস্বাভাবিক করে তুলছিল। তিনি মানসিকভাবে ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। মেরি নিজেই এই কথাগুলো হোচনারকে বলেছিলেন।

৯। অ্যানি সেক্সটনঃ
নোবেলজয়ী অ্যানি সেক্সটন আধুনিক ব্যতিক্রমধর্মী কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়ে আছেন। অন্য কবিরা যে বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতেন অ্যানি সেক্সটন সে বিষয়গুলোই তুলে আনতেন কলমে। হস্তমৈথুন, রজঃস্রাব, গর্ভপাত ইত্যাদি বিষয়ও তার লেখায় চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। কিন্তু পুরো জীবনজুড়েই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন এই কবি। মানসিক চাপ কমাতে তিনি মদ্যপানের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তার কবিতা বিখ্যাত সব পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হয়। তিনি ১৯৬৭ সালে পুলিত্জার পুরস্কার লাভ করেন। অতিরিক্ত মদ্যপান করতেন এই কবি। তবে তা কখনো তার সৃষ্টিশীলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনি বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিবারই বিফল হতে থাকেন। তার সর্বশেষ কবিতার পাণ্ডুলিপি একজন রিপোর্টারকে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা যেন প্রকাশিত না হয়।’ ১৯৭৪ সালের ৪ অক্টোবর তিনি গাড়ির মধ্যে কার্বন মনো-অক্সাইড গ্যাস ছেড়ে আত্মহত্যা করেন।

১০। সিলভিয়া প্লাথঃ
সিলভিয়া প্লাথ আমেরিকান কবি ও ঔপন্যাসিক। পড়াশোনা করেছেন স্মিথ কলেজ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরেক কবি টেড হিউজের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৫৬ সালে। এই কবি দম্পতির দুই সন্তান ফ্রিডা ও নিকোলাস। সিলভিয়া প্লাথের অধিকাংশ কবিতা কনফেশনমূলক হওয়ায় তাকে ‘কনফেশনাল কবি’ বলা হয়। হঠাৎ করেই বিষণ্নতায় ভুগতে থাকেন তিনি। এরই মাঝে তার লেখা ‘ড্যাডি’ কবিতাটি বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করে। বলা হয়, এটা তার অন্যতম সেরা কবিতা। উল্লেখ্য, ২০ বছর বয়সে মাত্র কৈশোর পেরোনো সিলভিয়া আত্মহত্যার প্রয়াস চালান। সেবার তিনি ব্যর্থ হন। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতা ঠিকই রয়ে যায় তার। দ্বিতীয়বার তার উদ্দেশ্য সফল হয়। কবি টেড হিউজের সঙ্গে সম্পর্কছেদ হয়ে যায় তার। এ ঘটনায় প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পান সিলভিয়া। একদিন তিনি ধীরে ধীরে মাথা এগিয়ে দেন গ্যাসের চুলার দিকে। গ্যাস প্রবাহের গতি বাড়িয়ে দেন নিজ হাতে। দপ করে আগুন জ্বলে উঠলে মুহূর্তেই সিলভিয়ার মাথায় আগুন ধরে যায়। এভাবেই মারা যান তিনি। সিলভিয়া প্লাথ ১৯৮২ সালে মরণোত্তর পুলিত্জার পুরস্কার পান।

১১। হান্টার এস থম্পসনঃ
এলাকার উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসী থেকে ইতিহাসে ঠাঁই করে নেয়া এক সাংবাদিক হান্টার এস থম্পসন। মার্কিং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিচার্ড নিক্সন আর জর্জ ম্যাকগোভারের নির্বাচনী দ্বৈরথ নিয়ে সংবাদ তৈরি করাই ছিল থম্পসনের সাংবাদিকতা জীবনের শেষ সফল অধ্যায়। এরপর থেকেই তিনি আবারো হারিয়ে যেতে লাগলেন। মাদকদ্রব্যের প্রতি ঘুমন্ত প্রেমটা পুনরায় জেগে ওঠে। ক্রমেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনের দিকে পা বাড়ান তিনি। বড় বড় পত্রিকাগুলোও তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। ১৯৮০ সালে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে তাকে ডিভোর্স দেন তার স্ত্রী। থম্পসন আনিতাকে বিয়ে করেন। তবে এসময় নিজস্ব লেখালেখি ঠিকই চালিয়ে নেন থম্পসন। সিরিজ আকারে প্রকাশিত হয় ‘দ্য গঞ্জো পেপারস’ এবং ‘কিংডম অব ফিয়ার’। নতুন শতাব্দীতে পা রেখেই শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে শুরু করেন থম্পসন। অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার ফল ভুগতে শুরু করে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো। নানারকম রোগব্যাধি বাসা বাঁধে শরীরে। তিনি হয়ে পড়েন মানসিক বিকারগ্রস্ত। ক্রমাগত বাড়তে থাকে অবসাদ আর জীবন নিয়ে অর্থহীন তিক্ততায় ক্লান্ত হয়ে নিজ হাতে জীবনের ইতি টানেন হান্টার এস থম্পসন। ২০০৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়ি আউল’স ক্রিকে নিজের রিভলবার দিয়ে মাথায় গুলি করেন এই খ্যাতিমান সাংবাদিক এবং লেখক।আমেরিকার সর্বকালের সেরা ঔপন্যাসিক হান্টার এস থম্পসন আত্মহত্যা করার আগে সুইসাইড নোট লিখে রেখেছিলেন। শেষ লেখাটি লেখার ৪ দিন পরই নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন এই লেখক। তিনি এই লেখাটির শিরোনাম দেন ফুটবল খেলার মৌসুম শেষ। মূলত তিনি তার স্ত্রী অনিতাকে উদ্দেশ্য করেই এটি লেখেন। থম্পসন নোটে লিখেছিলেন—আর কোনো খেলা অবশিষ্ট নেই। আর কোনো বোমা নেই। চলতে থাকা নেই। কোনো মজা নেই। সাঁতার কাটা নেই। ৬৭, ৫০। এরপরও ১৭টি বছর। আমার চাওয়ার অথবা দরকারের চাইতেও ১৭টি বাড়তি বছর। বিরক্তিকর। আমি সবসময়ই উদ্যম। কারো জন্য কোনো আনন্দ নেই। ৬৭, তুমি লোভী হয়ে যাচ্ছো। বুড়োমি দেখাও। শান্ত হও-এটা ব্যথা দেবে না।

১২। ভার্জিনিয়া উলফঃ
বিংশ শতাব্দীর আধুনিকতাবাদী সাহিত্যিক ভার্জিনিয়া উলফ। ১৮৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি লন্ডনের দক্ষিন কেনসিংটনে ২২ হাইড পার্কের একটি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন লেখক উলফ। তার পুরো নাম ছিল এ্যাডেলাইন ভার্জিনিয়া স্টিফেন। নিজের অন্যতম সেরা লেখা মিসেস ডেলোয়ে, টু দ্য লাইট হাউজ ও অরলান্দোর মাধ্যমে পুরোবিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে আছেন ভার্জিনিয়া উলফ। তবে দুনিয়াজোড়া পরিচিতি পেলেও সবসময় মানসিক সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল এই লেখককে। শৈশবে সৎ ভাইদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন সাহিত্যিক উলফ। তার বিভিন্ন লেখনীতে সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি। মায়ের মৃত্যুর পর প্রথমবারের মত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ভার্জিনিয়া। আর সেই অসুস্থতা থেকে বের হতে পারেননি। মুড সুইং থেকে শুরু করে মানসিকতা উৎকন্ঠা আর বিষাদ চরম পর্যায়ে পৌঁছায় ১৯০৪ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর। মানসিক অবসাদের কারণে তার সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হলেও লেখালেখির তেমন কোন সমস্যা ঘটায়নি। বরং অসুস্থতার জন্য নিয়মিত বিরতি দিয়ে লেখালেখি চালিয়ে গেছেন তিনি। ১৯১০, ১৯১২, ১৯১৩ সাল পর্যন্ত তাকে ৩ বার স্বল্প সময়ের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। আধুনিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনি বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। মানসিক আঘাতের পাশাপাশি তার অবস্থাটা কিছুটা জেনেটিকও ছিল। তার বাবা লেসলি স্টিফেনও অবসাদে ভুগতেন। তার সৎ বোন লোরাও একই সমস্যায় ভুগতেন এবং অনেকদিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এছাড়া অনেকেই তার সৃজনশীলতাকে তার মানসিক অসুস্থতার কারণ বলে মন্তব্য করে বলেন, অনেকসময় সৃজনশীলতা মানসিক অসুস্থতার জন্ম দেয়। দীর্ঘদিন বিষন্নতায় ভোগার ফলে বেঁচে থাকবার তীব্রতা কমে যায় তার। মনোরোগে আক্রান্ত হতে হতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আর সেই বিরক্তি, ভয় আর হতাশা থেকেই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নিজের হাতে তুলে নেন নিজেকে ধ্বংসের দায়িত্ব। নিজের ওভারকোটটির পকেটে নুড়িপাথর ভরে ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ ৫৯ বছর বয়সে বাড়ির পাশে লন্ডনের ওউজ নদীতে ডুব দেন এই মহান সাহিত্যিক। জীবনে আর ফিরে আসেননি, জলের সঙ্গে একাকার হয়ে যান। ১৮ এপ্রিল তার দেহের কিছু অংশ পাওয়া যায়। লিওনেল সেই দেহাবশেষ সাসেক্সের মংক হাউজের একটি এলম গাছের নিচে সমাহিত করেন।শেষ বিদায়ের আগে প্রিয়তম স্বামীর উদ্দেশে এক মর্মস্পর্শী চিঠি লিখে যান ভার্জিনিয়া। চিঠিটি সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পড়া সুইসাইড নোটগুলোর একটি। অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এই চিঠিটি এখনও সাহিত্যপ্রেমী তথা ভার্জিনিয়া উলফের প্রেমীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। চিঠিতে ভার্জিনিয়া লিখেন- ‘প্রিয়তম, আমি নিশ্চিত, আবার পাগল হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে, দ্বিতীয়বারের মতো আর ভয়াবহ সময় পার করতে পারব না। এবার আর সেরে উঠব না বোধ হয়। সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কাজটিই আমি করতে যাচ্ছি। তুমি আমায় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুখ দিয়েছ। যেকোনো মানুষের পক্ষে যতটা করা সম্ভব তুমি সব দিক থেকে ততটাই করেছ। আমার এই ভয়াবহ অসুখের পূর্ব পর্যন্ত আমরা যেমন সুখী ছিলাম, তেমন সুখী হয়তো আর দুজন মানুষের পক্ষে হওয়া সম্ভব নয়। আমি এই অসুখের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আর পারছি না। আমি জানি, তোমার জীবনটাও আমি শেষ করে দিচ্ছি। জীবনে তোমাকে কখনো অধৈর্য হতে দেখিনি। তোমাকে পেয়েছি অবিশ্বাস্য রকমের সুবোধ স্বামী হিসেবে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, আমি যা বলছি প্রত্যেকেই জানে। আমার এই ভয়াবহ অসুখের আক্রমণ থেকে কেউ বাঁচাতে পারলে সে শুধু তুমিই পারতে। আমার অধিকার থেকে সব কিছুই চলে গেছে- রয়ে গেছে তোমার ভালোবাসা। আবারো বলছি, দুজন মানুষ একসঙ্গে সুখী হতে পারে, তোমাকে না পেলে জানতাম না’।

১৩। ডেভিড ফোস্টার ওয়ালেসঃ
ডেভিড ফোস্টার ওয়ালেস ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্প লেখক এবং ইংরেজির প্রভাষক। ফিকশন এবং নন-ফিকশন উভয় ধরনের লেখাতেই ফোস্টার ওয়ালেস ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তার লেখা ইনফিনিটি জাস্ট বইটি ইংরেজি ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ১০০ বইয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। নব্বই দশকের শুরুতে তিনি মেরি কার নামে এক কবির প্রতি আকৃষ্ট হন। যদিও কবি মেরি কারের কোনোরূপ আগ্রহ ছিল না তার প্রতি। ওয়ালেস কবি মেরির প্রতি এতটাই আসক্ত ছিলেন যে, তিনি নিজের শরীরে ট্যাটু দিয়ে মেরি কারের নামও লিখেছিলেন। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তিনি মদ এবং নেশার দিকে ঝুঁকে পড়েন। হতাশা কাটানোর জন্য এরপর তিনি তার মেয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটানো শুরু করেন। দীর্ঘদিন হতাশায় থাকার পর ৪৬ বছর বয়সে ২০০৮ সালের ১২ মেপ্টেম্বর ফোস্টার ওয়ালেস তার গাড়ির গ্যারেজে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি দুই পাতার একটি নোট লিখে যান।

১৪। এভিলিন ম্যাকহেলঃ
এভিলিন ম্যাকহেল বিখ্যাত কোন ব্যক্তি ছিলেন না। তারপরও তার মৃত্যু ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তার মৃত্যুকে বলা হয়ে থাকে ‘ইতিহাসের সুন্দরতম আত্মহত্যা’। হাই স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পরে এভলিন মহিলা আর্মি কর্পসে যোগ দিয়েছিলেন , এবং মিসৌরির জেফারসন সিটিতে ছিলেন। পরে তিনি নিউইয়র্কের বাল্ডউইনে চলে আসেন। পরে পার্ল স্ট্রিটের একটি বই প্রস্তুতকারক সংস্থায় বুককিপার হিসাবে নিযুক্ত হন। নিউইয়র্কেই এভিলিনের পরিচয় হয় ব্যারি রোডসের সঙ্গে, যাকে পরবর্তীতে বিয়ে করার কথা ছিল তার। কিন্তু তা আর শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। বিয়ের এক মাস পূর্বে আত্মহত্যা করে বসেন এভিলিন। ১৯৪৭ সালের ৩০ এপ্রিল ম্যাকহেল নিউইয়র্ক থেকে পেনসিলভেনিয়ায় রেনাডসের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে ইস্টন যাওয়ার ট্রেনে ওঠেন। পরের দিন অর্থ্যাৎ পয়লা মে, রোডসের বাসভবন ছেড়ে আবার নিউইয়র্ক সিটিতে ফিরে তিনি এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এর ৮৬তম ফ্লোরে পৌঁছান। সেখানে থাকা পর্যবেক্ষককে ডেকে তিনি একটি কাগজ ধরিয়ে দেন তাকে। এরপর পরনের কোট খুলে তা সুন্দরভাবে রেলিংয়ে ঝুলিয়ে দেন। চোখের পলকে ঝাঁপিয়ে পড়েন ৮৬ তলা থেকে! কাগজটি ছিলো ম্যাকহেলের ছোট্ট করে লিখে যাওয়া সুইসাইড নোট। এতে লিখা ছিলো- ‘আমি চাই না আমার পরিবার ব্যতীত আমার লাশ দেখতে কেউ ভীর করুক। আমি আমার পরিবারের কাছে প্রার্থনা করছি- আমার স্মরণে কোনো বার্ষিকী পালন করা না হয়। আমার বাগদত্তা আমাকে আগামী মাসে বিয়ে করতে চেয়েছে। আমি মনে করি, আমি কারও জন্যই ভাল স্ত্রী হতে পরবো। তিনি আমাকে ছাড়া অনেক ভাল থাকবে।’এভিলিনের শেষ ইচ্ছা ছিল, কেউ যেন তার মৃতদেহ না দেখে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার শেষ ইচ্ছাটি পূরণ হয়নি, বরং হয়েছে তার উল্টো। ৮৬ তলা থেকে নিচে জাতিসংঘের একটি লিমুজিনের ওপর পড়ার চার মিনিট পর ফটোগ্রাফির একজন ছাত্র রবার্ট উইলস এভিলিনের মৃতদেহটির একটি ছবি তুলে রাখে। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় সেই ছবি।

ছবিটিতে দেখা যায় লিমুজেনের ওপর শান্তভাবে শুয়ে আছেন এভিলিন। তার স্নিগ্ধ চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল যেন মাত্রই ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি। তার পা দুটো মার্জিতভাবে একটির ওপর আরেকটি ওঠানো ছিল। গ্লাভসপরা একটি হাত আলতো করে রাখা ছিল বুকের ওপর, এবং সে হাতে শক্ত করে তিনি ধরে ছিলেন একটি মুক্তার নেকলেস। এভিলিনের মৃতদেহের এই ছবিটিকে টাইম ম্যাগাজিন ‘ইতিহাসের সুন্দরতম আত্মহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করে। তবে কী কারণে এভিলিন আত্মহত্যা করেছিলেন, তার সঠিক কারণ জানা যায়নি।

১৫। অ্যাডলফ হিটলারঃ
অ্যাডলফ হিটলার, বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে নামটি অতিসুপরিচিত। অ্যাডলফ হিটলার কারো কাছে চিরঞ্জীব বিশ্বনেতা আবার কারো কাছে অত্যন্ত কুখ্যাত এক খুনি! হিটলারকে সবাই জানত একজন সংসারত্যাগী চিরকুমার মানুষ হিসেবে , যিনি তার পুরো জীবন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও রাষ্ট্রের জন্য উৎসর্গ করেছেন। ইভা ব্রাউনের সাথে তার ১৪ বছরের প্রেমের সম্পর্ক বাইরে এবং ভেতরের কেউ জানত না। ব্রাউনের জীবনীলেখক হেইকে গোরটেমা উল্লেখ করেছেন যে, এই জুটি স্বাভাবিক যৌন জীবন উপভোগ করত। হিটলার ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন। শত্রুদের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার আগেই বিয়ের পর ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তিনি ফিউরার বাংকারে সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন। সেখানেই নিজের সুইসাইড নোট লেখেন তিনি। সেটাতে লেখা ছিলঃ আমি নিজে এবং আমার স্ত্রী পদচ্যুত ও আত্মসমর্পণের হীনতা থেকে মুক্তি পেতে মৃত্যুকে বাছাই করলাম। নিজের কাজের জায়গা যেখানটায় ১২ বছর ধরে প্রতিদিন আমার মানুষদের জন্য কাজ করেছি আমি সেখানটায় তাত্ক্ষণিক পুড়ে মরতে চাওয়া পুরোপুরি আমাদের ইচ্ছে। আডলফ হিটলারের যৌনজীবন নিয়ে দীর্ঘদিন ইতিহাসবিদ এবং পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। পুরো জীবনে কিছু সংখ্যক মেয়ের সাথে তার রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল এবং একই সাথে সমকামিতার প্রতি তার বিদ্বেষ দেখা গেছে। তিনি সমকামিতায় আসক্ত ছিলেন, এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তার নাম অনেক মেয়ের সাথেই যুক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজন আত্মহত্যা করেছে। অন্যান্য ঘটনার মধ্যে আছে, একজন আত্মহত্যা চেষ্টার ৮ বছর পর মারা গিয়েছিল এবং আরেকজন একটি ব্যর্থ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল। যদিও এসব বিষয়ে জোরালো প্রমাণ নেই। এলিস কর্তৃক যুদ্ধের সময়ের দুইটি প্রতিবেদনে হিটলারকে মানসিকভাবে বিশ্লেষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ওয়াল্টার সি ল্যাঙ্গার, দি আমেরিকান অফিস অব স্ট্র্যাটিজিক সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলেন, হিটলারের অবদমিত সমকাম প্রবণতা ছিল এবং আরো বলেন, হিটলার পুরুষত্বহীন কর্পোহিল ছিলেন।

মৃত্যু জীব-জগতের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মাঝে মাঝে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম ব্যাঘাত ঘটে আত্মহত্যার মাধ্যমে। তবে আত্মার মৃত্যু নেই; হনন হয় মাত্র। এসব বিজ্ঞানের কথা নয় সাহিত্যের ভাষা। প্রাচীন চীনে সিমা সিয়েন নামে এক সাহিত্যিক বলে গেছেন, মানুষের মৃত্যু অনিবার্য কিন্তু তার তাত্পর্য হবে থাই পাহাড়ের চেয়েও ভারী বা বেলে হাঁসের পালকের চেয়েও হালকা। আত্মহত্যার সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হলো মানসিক চাপ ও বিষাদগ্রস্ততা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় যন্ত্রণার স্থায়ী অনুভূতি এবং আত্মহত্যার মাধ্যমে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার অনড় এক বিশ্বাস। কিছু মানুষ গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই ভিতর থেকে আত্মঘাতীপ্রবণ হয়ে থাকে। এরা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়। নিরাময়যোগ্য হলেও রহস্যজনক এই মানসিক রোগটি সম্পর্কে বিজ্ঞান এখনো ধোঁয়াশাতেই আছে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:


হঠাৎ করে ইহা নিয়ে লেগে গেছেন কেন?

২৮ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

গাজীসাব যেনো এই মহামারীকালে কারো মাথায়
আত্মহত্যার ভূত মাথায় না চাপে! তাই সতর্ক করার
জন্য এই পোস্ট। সচেতন হোন নিরাপদ থাকুন।

২| ২৮ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৮

ঢুকিচেপা বলেছেন: এই মানুষদের মাথায় সত্যি সত্যি ভূত ঢুকেছিল।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমারতো সেইরকমই ধারণা!!
ভূত বড়ই অদ্ভুত !!

৩| ২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: এই রকম পোষ্ট গুলো আমাকে অসুস্থ করে দেয়।

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আমরা চাইনা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক

৪| ২৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: ৪ লাখ টাকা মাসিক ভাড়ার ফ্লাটে থাকা অভিনেতা ছাড়াও মানুষ আত্মহত্যা করে।
৪ হাজার টাকার চাকরি চলে যাওয়ার জন্য।

৫| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৫১

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: হিটলার আত্মহত্যা করেছে বলে আমার আদৌ বিশ্বাস হয় না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.