নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিখ্যাত কৌতুক লেখক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ১৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৪৬


বাংলা কথাসাহিত্যে হাস্যরসের প্রথম সার্থক রূপকার, বিখ্যাত বাঙালি কৌতুক লেখক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। উনিশ শতকে তাঁর মতো বিচিত্র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লেখক বিরল | গল্প ও উপন্যাসে হাস্যরসের সঙ্গে রুপকথা ও ভৌতিক গল্পের উদ্ভট রস মিশিয়ে এমন এক নিজস্ব ধরা তৈরী করেছিলেন যা অজ্ঞাতপূর্ব এবং অদ্যাবধি অননুস্মৃত | ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের অবিস্মরণীয় কৃতি চিরস্থায়ী হয়ে আছে কঙ্কাবতী উপন্যাসে, ভূত ও মানুষের বিচিত্র আখ্যানে মুক্তা-মালার সূচনায় এবং ডমরু-চরিত-এর অনবদ্য গল্পমালায়। রূপকথা এদের মধ্যে রূপক হয়ে দেখা দিয়েছে। চরিত্রগুলো এক-একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। কৌতুক রূপ নিয়েছে সমসাময়িক জাতীয় জীবনাচরণের তির্যক সমালোচনার। গল্প-উপন্যাস ছাড়া অনেকগুলি পাঠ্যপুস্তকও লিখেছিলেন | চাকরিসূত্রেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন এবং এ নিয়ে ইংরেজিতে তাঁর একটি সুবৃহৎ ভ্রমণগ্রন্থ আছে | বিখ্যাত কৌতুক লেখক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ১৮৪৭ সালের আজকের দিনে মৃত্যুৃবরণ করেন। আজ এই কথাসাহিত্যিকের ১৭৩তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা কথাসাহিত্যে হাস্যরসের প্রথম সার্থক রূপকার ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ১৮৪৭ সালের ২২ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণার অন্তর্গত শ্যামনগরের কাছে রাহুতা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বিশ্বম্ভর মুখোপাধ্যায়। ত্রৈলোক্যনাথ চুঁচুড়ার ডাফ সাহেবের স্কুলে এবং ভদ্রেশ্বরের কাছে তেলিনীপাড়া বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। কিশোর বয়সে পিতামহী এবং পিতা-মাতাকে হারিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারেননি। জীবিকার সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন জায়গায় | অবশেষে স্কুল শিক্ষকের চাকরি পান দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরোধে তাঁর জমিদারি এলাকা সাহাজাদপুরের স্কুলেও পরিয়েছেন | স্কুলে চাকরি করার সময়েই ফারসি ভাষা লিখেছিলেন | বঙ্গবাসী অফিস থেকে প্রকাশিত জন্মভূমি মাসিক পত্রিকায় ইনি অনেক ভালো ভালো প্রবন্ধ লিখেছিলেন। বিশ্বকোষ নামক অভিধান এঁর চেষ্টাতেই আরম্ভ হয়। বিশ্বকোষ অভিধান রচনায় ভাই রঙ্গলালকে প্রচুর সাহায্য করেছিলেন । এছাড়া জন্মভূমি সাপ্তাহিক পত্রিকাতেও ইনি নিয়মিত লিখতেন। ওয়েলথ্ অফ ইন্ডিয়া নামক মাসিক পত্রিকার সম্পাদনা কাজেও তিনি সাহায্য করতেন। পরে ওড়িশায় বিচারবিভাগে দারোগার চাকরি করতে গিয়ে ওড়িয়া ভাষাও শেখা হয়ে যায় এমনকী, একটি ওড়িয়া পত্রিকা সম্পাদনাও করতে থাকেন | চাকরি ক্ষেত্রে ক্রমশ উন্নতি করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নানা দায়িত্বপূর্ণ পদে কাজ করার পর শেষে ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতা জাদুঘরের সহকারী কিউরেটর হন। ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি পেনসন গ্রহণ করে অবসর নেন।

ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় সাহিত্যিক হিসাবেই বিখ্যাত। তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন রকমের উদ্ভট হাস্যরসের প্রবর্তক ছিলেন। তাঁর রচিত কঙ্কাবতী এবং ডমরু চরিত খুবই বিখ্যাত। কঙ্কাবতী উপন্যাস সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেনঃ “এইরূপ অদ্ভুত রূপকথা ভাল করিয়া লেখা বিশেষ ক্ষমতার কাজ। ...এতদিন পরে বাঙ্গালায় এমন লেখকের অভ্যুদয়...যাঁহার লেখা আমাদের দেশের বালক বালিকাদের এবং তাঁদের পিতামাতার মনোরঞ্জন করিতে পারিবে।“ ত্রৈলোক্যনাথ প্রথম বই কঙ্কাবতী (১৮৯২) দিয়ে তাঁর জাত চিনিয়েছেন আর শেষ বই ডমরু-চরিত (১৯২৩) দিয়ে নিজের শীর্ষ ছুঁয়েছেন। অত্যন্ত জনপ্রিয় সাহিত্যকীর্তি ডমরু-চরিত। লেখকের সকল বৈশিষ্ট্য এ-গল্পমালায় সম্পূর্ণ রঙে-রসে সমুজ্জ্বল হয়ে দেখা দিয়েছে। কাহিনীর অপূর্বতার সঙ্গে অমূল্য রঙ্গকৌতুকের সমাবেশ এবং ভাষার সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্য বইটিকে সব দিক দিয়ে পরম উপভোগ্য করে তুলেছে। অদ্ভুত কল্পনার উদ্দামতার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় চরিত্রের তীক্ষ্ণ ও রসোত্তীর্ণ সমালোচনায় এরা যে-সাহিত্যবস্তু পরিবেশন করেছে, তার আস্বাদন অন্যত্র অলভ্য। তুলনারহিত ডমরু-চরিত বাংলাসাহিত্যে ত্রৈলোক্যনাথের অবিস্মরণীয় অবদান। বলা চলে, ‘ডমরু-চরিত-কথা’ একটা গাঁজাখোরী গল্প বা আজগুবি গল্প’৷ তবে বলার ধরন আকর্ষনীয়৷ তাই আজগুবি জেনেও গল্প ছেড়ে উঠে যায়না। ডমরু-চরিত গল্পাকারে ‘বঙ্গবাসী’ সাহিত্যপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

ত্রৈলোক্যনাথের মৃত্যুর পরে বঙ্গবাসী প্রকাশন ১৯২৩ সালে ডমরু-চরিত-র গ্রন্থরূপ দেয় ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রকাশিত গ্রন্থতালিকাঃ
১। লুল্লু, ২। পাপের পরিণাম, ৩। ডমরু-চরিত, ৪। বাঙ্গাল নিধিরাম, ৫। বীরবালা, ৬। ফোকলা দিগম্বর, ৭। নয়নচাঁদের ব্যবসা, ৮। কঙ্কাবতী, ৯। সোনা করা যাদুগরের গল্প, ১০। ভানুমতী ও রুস্তম, ১১। জাপানের উপকথা, ১২। পূজার ভূত, ১৩। পিঠে-পার্বনে চীনে ভূত, ১৪। বিদ্যাধরীর অরুচী, ১৫। মেঘের কোলে ঝিকিমিকি সতী হাসে ফিকিফিকি, ১৬। এক ঠেঙো-ছকু, ১৭। মুক্তা-মালা, ১৮। এ ডেসক্রিপটিভ ক্যাটালগ অফ প্রোডাক্টস, ১৯। এ হ্যান্ডবুক অফ ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস, ২০। এ লিস্ট অফ ইন্ডিয়ান ইকনমিক প্রোডাক্টস ইত্যাদি। ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দের ১১ মার্চ ৭৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয় ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের। বিস্মৃতপ্রায় এই কৌতুক লেখকের আজ ১৭৩তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা কথাসাহিত্যে হাস্যরসের প্রথম সার্থক রূপকার ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:০১

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
আর আপানকে জানাই শুভ রাত্রি।

২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৩১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাদ খানসাব
শুভ সকাল।

২| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:১৫

এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: I read Damrucharit, a masterpiece.

২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৩২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

Good to be positive

৩| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ রাত ২:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


এঁদের বই টই কি এখনো আছে?

২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

গাজীসাব এঁইসবকল গুণীদের
লেখা বিলীন হয়না।
"ডমরু-চরিত কথা অমৃত সমান,
স্বয়ং ডমরু ভনে শুনে ভাগ্যবান।"

ডমরু চরিত পড়ুন এখান থেকে

৪| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:০৩

জুন বলেছেন: লে লুল্লু, লুল্লু উজিরের স্ত্রী লইয়া প্রস্থান করিল =p~
ওনার লেখাগুলো এক কথায় ইউনিক।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইলো।

৫| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৫

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: ডমরু চরিত আশ্চর্য এক বই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.