নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আধুনিক বাংলাসাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি কায়কোবাদ, মহাকবি কায়কোবাদ বা মুন্সী কায়কোবাদ। কায়কোবাদের সাহিত্যকর্মে পশ্চাত্পদ মুসলিমদের নিজেদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সংরক্ষণে এবং তা অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বাংলা মহাকাব্যের অস্তোন্মুখ এবং গীতিকবিতার স্বর্ণযুগে মহাকবি কায়কোবাদ মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাস থেকে কাহিনী নিয়ে ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য রচনা করে যে দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছেন তা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় আসনে স্থান করে দিয়েছে। মুসলমান কবি রচিত জাতীয় আখ্যান কাব্যগুলোর মধ্যে সুপরিচিত মহাকবি কায়কোবাদ রচিত ‘মহাশ্মশান’ কাব্যটি। কায়কোবাদের মহাকবি নামের খ্যাতি এই মহাশ্মশান কাব্যের জন্যই। কাব্যটি তিন খন্ডে বিভক্ত। প্রথম খন্ডে ঊনত্রিশ সর্গ,দ্বিতীয় খন্ডে চব্বিশ সর্গ, এবং তৃতীয় খন্ডে সাত সর্গ। মোট ষাট সর্গে প্রায় নয়শ' পৃষ্ঠার এই কাব্য বাংলা ১৩৩১, ইংরেজি ১৯০৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়; যদিও গ্রন্থাকারে প্রকাশ হতে আরো ক'বছর দেরী হয়েছিল। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধযজ্ঞকে রূপায়িত করতে গিয়ে কবি বিশাল কাহিনী,ভয়াবহ সংঘর্ষ, গগনস্পর্শী দম্ভ,এবং মর্মভেদী বেদনাকে নানাভাবে চিত্রিত করেছেন। বিশালতার যে মহিমা রয়েছে তাকেই রূপ দিতে চেয়েছিলেন এই কাব্যে। তিনি বাংলার অপর দুই মহাকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেনের ধারায় মহাকাব্য রচনা করেন। তবে নবীনচন্দ্রই ছিলেন তার প্রধান আদর্শ। তিনি কবি হেমচন্দ্র ব্যানার্জী এবং কবি নবীন চন্দ্র সেন এর দ্বারা প্রভাবিত হলেও তাঁদের মত সাম্প্রদায়ীক ভেদবুদ্ধির পরিচয় দেন নি | তাঁর কাছে হিন্দুও বীর, মুসলমানও বীর | মুসলমানদের মধ্যে পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছে তাঁদের হৃত গৌরবের কথা পৌঁছে তাঁদের উন্নতি সাধনে উদ্বুদ্ধ করাই তাঁর প্রধাণ প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে । বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রথম সনেট রচয়িতা মহা কবি কায়কোবাদ ১৯৫১ সালের আজকের দিনে ইন্তেকাল করেন। আজ তার ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। খ্যাতিমান কবি কায়কোবাদের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি
বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালে (জন্ম তারিখ অস্পষ্ট) ঢাকার নবাবগঞ্জের আগলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম কাজেম আলী কোরেশী। ‘কায়কোবাদ’ তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম। তার বাবার নাম শাহমত উল্লাহ আল কোরেশী ওরফে এমদাদ আলী এবং মায়ের নাম জোমরাত উন্নেসা ওরফে জরিফুন্নেসা খাতুন। কবির পিতৃপুরুষগণ বাদশাহ শাহজাহানের রাজত্বকালে বাগদাদের কোন এক অঞ্চল থেকে ভারতে আসেন। তাদের মধ্যে মাহবুব উল্লাহ আল কোরেশী ফরিদপুর জেলার গোড়াইলে বসবাস শুরু করেন। কায়কোবাদ মাহবুব উল্লাহ আল কোরশীর প্রপৌত্র। কবির পিতামহের নাম নেয়ামত উল্লাহ আল কোরেশী। কবির বাবা ঢাকায় ওকালতি করতেন। কবির বয়স যখন এগারো তখন তার মা এবং বারো বছর বয়সে বাবা মারা যান। কবি পড়াশোনায় তেমন একটা এগোতে পারেননি। তিনি ঢাকা পগোজ স্কুলে ও আলিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করেন এবং এন্ট্রাস পরীক্ষার পূর্বেই তার পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে। তাঁর পিতা শাহামতউল্লাহ আল কোরেশী ছিলেন ঢাকার জেলা-জজ আদালতের উকিল। কায়কোবাদ ঢাকার পোগোজ স্কুল এবং সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ঢাকা মাদ্রাসায় এন্ট্রান্স পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন, কিন্তু পরীক্ষার আগেই পোস্ট-মাস্টারের চাকরি নিয়ে তিনি স্বগ্রাম আগলায় চলে যান। সমগ্র চাকরি জীবনে তিনি এ পদেই বহাল ছিলেন এবং এখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন। বাল্যাবস্থা থেকেই তাঁর কবিতার পারদর্শিতা চোখে পড়ে । ১৮৭০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তার প্রথম কাব্য গ্রন্থ 'বিরহ বিলাপ' প্রকাশিত হয় | কায়কোবাদ দীর্ঘ জীবন লাভ করেছিলেন। এই দীর্ঘ জীবনে তিনি বহু সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। জীবদ্দশায় প্রকাশিত তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমুহঃ ১। কুসুমকানন (১৮৭৩), ২। অশ্রুমালা (১৮৯৫), ৩। শিবমন্দির (১৯২২), ৪। মহাশ্মশান (১৯০৪), ৫। অমিয়ধারা (১৯২৩) উল্লেখযোগ্য। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত গ্রন্থ ১। প্রেমের ফুল (১৯৭১), ২। প্রেমের বাণী (১৯৭০), ৩। প্রেম পারিজাত (১৯৭০), ৪। মন্দাকিনী ধারা (১৯৭১) এবং ৫। গাউছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ (১৯৭৯) ইত্যাদি। কায়কোবাদের কাব্যচর্চাকে মোটামুটি ছটি ভাগে ভাগ করা যায়- গীতিকাব্য বা খন্ডকাব্য ও মহাকাব্য বা কাহিনী কাব্য। তবে মহাকাব্য বা কাহিনী কাব্য অপেক্ষা গীতি কবিতা বা খন্ড কবিতা রচনাতেই তিনি ছিলেন অপেক্ষাকৃত সাবলীল, স্বতঃস্ফূর্ত ও অধিকতর সিদ্ধহস্ত। তার শ্রেষ্ঠ গীতিকাব্য ‘অশ্রুমালা'ই তার বড় প্রমাণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও কায়কোবাদের যাবতীয় খ্যাতি এবং পাঠক সমাজের যত সব বিমুগ্ধ বিস্ময় তা তার ‘মহাশ্মশান' কাব্যকে ঘিরে। কাব্যটিকে তিনি মহাকাব্য বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বাস্তব কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কবির দাবি অনুযায়ী কাব্যটি যথার্থ মহাকাব্য না হলেও নানা বৈশিষ্ট্যের কারণে কায়কোবাদের এই মহাকাব্যিক প্রয়াসকে কোন অবস্থাতেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। সে সময়কার প্রেক্ষাপটে এরূপ উদার মানবিক, অসাম্প্রদায়িক, সত্যনিষ্ঠ এবং বিশাল আয়তনের কাব্য প্রয়াস সত্যি আমাদেরকে মুগ্ধ করে।
মহাশ্মশান কায়কোবাদ রচিত বাংলা মহাকাব্য (১৯০৪)। এর উপজীব্য ১৭৬১ সালে সংঘটিত পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ। এ যুদ্ধ ছিল ভারতের উদীয়মান হিন্দুশক্তি মারাঠাদের সঙ্গে মুসলিমশক্তি তথা আহমদ শাহ আবদালীর নেতৃত্বে রোহিলা-অধিপতি নজীবউদ্দৌলার শক্তিপরীক্ষা; যুদ্ধে মুসলমানদের জয় হলেও কবির দৃষ্টিতে তা ছিল উভয়েরই শক্তিক্ষয় ও ধ্বংস; এজন্যই তিনি একে ‘মহাশ্মশান’ বলেছেন। যুদ্ধকাহিনীর মধ্যে অনেকগুলি প্রণয়বৃত্তান্ত স্থান পেয়েছে। মহাশ্মশান কাব্যে মোট তিনটি খন্ড রয়েছে। প্রথম খন্ড ১৯ সর্গ, দ্বিতীয় খন্ড ২৪ সর্গ এবং তৃতীয় খন্ড ৭ সর্গে সমাপ্ত। কাব্যের প্রারম্ভে আছে ‘কবির বীণা ও কল্পনা’ এবং ‘আল্লাহু আকবর’ নামক বন্দনা অংশ। এছাড়াও ‘এব্রাহিম কার্দ্দি ও জোহরা বেগমের বাল্য জীবনের এক অধ্যায়’ শীর্ষক একটি সর্গ আছে। মহাশ্মশান মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও নবীনচন্দ্র সেনের অনুসরণে রচিত হলেও মহাকাব্য হিসেবে তা খুব একটা সফল হয়নি। প্রকরণে ও মেজাজে কাব্যখানি বীররসের পরিবর্তে করুণরসের গীতিময় উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে। উপনিবেশিক শাসনামলে জাতীয়তাবাদী চেতনার আলোকে কবি হিন্দু-মুসলিম দুই জাতির বীরত্ব-গাথা রচনা করতে চেয়েছেন; এখানেই এ গ্রন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিহিত।এটাকে তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাহিত্যে অসমান্য অবদানের জন্য ১৯২৫ সালে তাকে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ থেকে তাঁকে কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ এবং সাহিত্য রত্ন পুরস্কারে ভূষিত করেন | বাংলাদেশ সরকার তার সম্মানে ১৯৯১ সালে ৬ টকা মূল্যমানের ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
কায়কোবাদ দীর্ঘ জীবন লাভ করেছিলেন। ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লবের বছরে সেই ১৮৫৭ সালে তার জন্ম এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের পূর্ব বছরে ১৯৫১ সালে। এত দীর্ঘ জীবন লাভের সৌভাগ্য খুব কম লেখকের জীবনেই ঘটে। কিন্তু তার এই দীর্ঘ জীবন পরিসরে পরিবর্তনশীল জগত ও সাহিত্যোদর্শের অনিবার্য বিবর্তনকে তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি বা করতে চাননি। বিশ শতকের পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করেও তিনি ছিলেন ঊনিশ শতকীয় সাহিত্যাদর্শ ও সাহিত্য রীতির অনুসারী। তাঁর কবি মানসের এই সীমাবদ্ধতা তাঁর মহাশ্মশান কাব্যের মহাকাব্যিক প্রয়াসকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তা সত্ত্বেও সাহিত্য ক্ষেত্রে তাঁর বিপুল অবদান, তার উদার মানসিকতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা, তাঁর সত্যনিষ্ঠা এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যচর্চায় পশ্চাদপদ মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের অভয়দান ও অনুপ্রাণিত করার জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এবং আমাদের স্বকৃতজ্ঞ শ্রদ্ধা দাবি করবেন চিরকাল। মহাকবি কায়কোবাদ ১৮৫৭ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিনি ৯৪ বছর জীবিত ছিলেন। জীবনের সুদীর্ঘ ৮২ বছরই বাংলা সাহিত্য নিয়ে চর্চা করেছেন। ১৯৫১ সালে ২১ জুলাই বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পুরাতন আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন হয়। আজ তার ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। মহাকবি কায়কোবাদের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:২৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ খানসাব
এত রাতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
২| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৩৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন।
২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৪৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আগের মানুষ ভেজাল খেতনা,
নির্মল বাতাস পেতো। হিংসা
বিদ্বেষ ছিলোনা তাই তারা দীর্ঘ
জীবন পেতো। এখনকার মানুষ
ভেজাল খেয়ে বেশী দিন বাঁচেনা।
৩| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:১১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: মহাকবি কায়কোবাদের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
.............................................................................
আমার ও থাকল গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা
২২ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৪২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ শঙ্খচিল
মহাকবি কায়কোবাদের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধা ও
ভালোবাসা জানানোর জন্য।
৪| ২২ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৯:২৬
জগতারন বলেছেন:
প্রিয় ব্লগারঃ
আপনার মহাকবি কায়কোবাদ নিয়া পোষ্টটি দেখিয়াই লগইন করিলাম।
"এব্রাহিম (ইব্রাহিম) কার্দ্দি ও জোহরা" এই চরিত্র দুইটি সমন্ধে প্রথম পরিচিত হই নাট্যকার মুনীর চৌধুরী স্যার-এর
রক্তাক্ত্য প্রান্তর নাটক-এর মাধ্যমে। যাহা পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধের পটভুমি নিয়ে রচিত। যাহা আমাদের সময়ে ১২ ক্লশে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে পাঠ্য ছিল। তখন আমাদের জানানো হইয়াছিল এই দুইটি চরিত্র কাল্পনিক এবং এই নাটকের গতিময়তা
উপাস্থপন করার জন্যই স্যার (মুনীর চৌধুরী) ইহা সংযযোন করিয়াছেন। পানী পথের তৃতীয় যুদ্ধের ইতিহাস পাঠ করিয়াও এই সত্যতা পাওয়া যায়।
আজ আপনার পোষ্টের মাধ্যমেও জানিতে পারিলামঃ
মহা কবি কায়কোবাদও এই দুটি চরিত্র নিয়া একটি অধ্যায় লিখিয়াছেন
এছাড়াও ‘এব্রাহিম কার্দ্দি ও জোহরা বেগমের বাল্য জীবনের এক অধ্যায়’ শীর্ষক একটি সর্গ আছে।
আসল ঘটনাটি কি জানাইলে বাধিত হই।
২২ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৩৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জাগতারন দাদা
পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ১৪ই জানুয়ারি ১৭৬১ সালে দিল্লির ৯৭ কিলোমিটার উত্তরে পানিপথ নামক
স্থানে মারাঠাদের সাথে দোয়াবের আফগান রোহিলা ও আয়ুব এর সম্রাট সুজা-উদ-দৌল্লার যৌথ
সমর্থনে আফগানিস্থানের সম্রাট আহমেদ শাহ আবদালির মধ্যে সংঘটিত হয়।
পানি পথের ৩য় যুদ্ধে মুসলমানদের পক্ষে ছিল আহমদ শাহ আবদালি, নবাব নজিবুদ্দৌলা,
নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মেহেদী বেগ কন্যা জোহরা বেগম। অন্যদিকে মারাঠা বাহিনীর
নেতৃত্ব দিচ্ছেন পেশোয়া, রঘুনাথ রাও, সদাসিব রাও এবং ইব্রাহিম কার্দি (জোহরা বেগমের জামাই)
অর্থাৎ মুসলিম শিবিরে নেতৃত্বদানকারী জোহরা বেগমের স্বামী হচ্ছেন ইব্রাহিম কার্দি।
ইব্রাহিম কার্দির একসময় কর্মসংস্থান ছিল না। তিনি মারাঠা বাহিনীতে যোগদান করেন এবং
স্বীয় যোগ্যতায় তিনি পদাধিকার লাভ করেন। নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ হচ্ছে দেখে জোহরা
বেগম বিপাকে পড়েন এবং গোপনে তার সাথে সাক্ষাৎ অব্যাহত রাখেন। তিনি ইব্রাহিম
কার্দিকে মারাঠা শিবির ত্যাগ করে মুসলিম শিবিরে যোগদান করতে চাপ দিতে থাকেন।
জোহরাকে ইব্রাহিম ভালোবাসলেও আদর্শগত দিক থেকে ইব্রাহিম অনড় ছিলেন। তাই
তিনি মারাঠাদের দুর্দিনে তাদেরকে ছেড়ে আসতে অস্বীকার করেন।
ভয়ংকর এবং বিধ্বংসী যুদ্ধে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও মুসলমানরা জয়লাভ করেন।
ইব্রাহিম কার্দি ধরা পড়ে মুসলমান বন্দিশালায় আসেন। জোহরা বেগম তার মুক্তির জন্য
যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি আহমদ শাহ আবদালির কাছে অনুরোধ করেন। সম্মতিক্রমে মুক্তির
ফরমান নিয়ে জোহরা বেগম কারাগারে গেলে ইব্রাহিম কার্দিকে মৃত দেখতে পান।
মুনীর চৌধুরী রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের বিষয়বস্ত্ত কায়কোবাদের মহাকাব্য মহাশ্মশান থেকে গ্রহণ করেছেন।
রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকটির কাহিনিবিন্যাসে একদিকে যেমন যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির মধ্যে দিয়ে যুদ্ধবিরোধী
চেতনার বিকাশমুখী প্রবাহ প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি প্রধান নারী চরিত্র জোহরা বেগমের জীবনে নেমে
এসেছে নিয়তিনির্ভর পরিহাসে বিয়োগান্ত পরিণতি। আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে ইব্রাহিম কার্দি মারাঠাদের
সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। বিষয়বস্ত্ত, ঘটনা ইতিহাসনির্ভর। কল্পনার প্রাধান্যে প্রত্যুজ্জ্বল। মানবীয়
আবেগ প্রস্ফুটিত। সম্ভবত সেজন্যেই নাট্যকার মুনীর চৌধুরী নিজেকে ইতিহাসের দাস না বলে নাটকের
বশ বলে উল্লেখ করেছেন।
এ হলো পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের সার সংক্ষেপ। এতে সত্যের সাথে কতটা মিথ্যের প্রলেপ দেওয়া তা আমি জানিনা।
৫| ২২ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৫
জগতারন বলেছেন:
ধন্যবাদ প্রিয় নূরু ভাই।
এই বিষয়ে আমার মনের অস্থির অবস্থার কিছুটা হলেও নিবৃত হইয়াছে।
আমার যৌবনের প্রারম্ভে মুনীর চৌধুরী স্যার-এর সেই নাটক শুধু পাঠ করিয়াই এবং ইহার যথাযথ সংলাপের আবহে যে গতিময়তা উপলবদ্ধি করিয়াছিলাম তা এতদিন পর আজও আমি ভুলি নাই। যদিও দেশে থাকিতে "রক্তাক্ত্য প্রান্তর" নাটকটি মঞ্চস্থ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। জানি না এই নাটকটি দেশে আদৌঔ মঞ্চস্থ হইয়াছিল কিনা।
ভারত বর্লবর্ষে শেষের দিকে মারাঠা'রা যে চ্যাতা চেতিয়াছিল তাহা দমন করিতেই সমট্রাট ঔরঙজেবের প্রায় সকল কানা কড়ি শেষ হইয়াছিল। বাংলার নবাবদেরও এই মারাঠা (বর্গী)'রা অপরিসীম ক্ষতি করিয়াছিল। আমার বিশ্বাস ভারত বর্ষে মুসলমানদের প্রসাশন, শক্তি, শান্তি ধ্বংশ করায় মারাঠারাই আরম্ভ করিয়াছিল।
যাই হোক, আগের প্রসংগে আসা যাক;
যোহরা বেগমের কান্নার সেই চোখের পানি দাগ যেন আজও ভিজা মনে হয় যখন সেই ইতিহাস নিয়া আলোচনায় আসিলে।
২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:১৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাবার একটা অপচেষ্টা!!
যা হোক আপনাকে ধন্যবাদ পুনরায় মন্তব্য
করার জন্য।
অ,টিঃ আপনি কোন পোস্ট দিচ্ছেন না কেন?
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:২০
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।