নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
“নিঃশ্বঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর বড় সম্পদ নেই” এই উক্তিটি যার তিনি কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অমীমাংসিত একটি চরিত্র কর্নেল তাহের। একটি আদর্শকে তাড়া করতে গিয়ে একজন মানুষ যতটুকু দিতে পারেন, দিয়েছেন সবটুকুই। যদিও সে আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কিন্তু তথাকথিত বহু সাফল্যের চেয়ে কোনো কোনো ব্যর্থতাও হয়ে উঠতে পারে উজ্জ্বল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন ১১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। স্বাধীনতা যুদ্ধে দুঃসাহসিক এক অভিযানের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে, যুদ্ধক্ষেত্রের দুর্ধর্ষ এক অপারেশনে হারিয়েছেন একটি পা, ক্রাচে ভর দিয়ে তারপর নেতৃত্ব দিয়েছেন বিরল এক সিপাহি অভ্যুত্থানের এবং সর্বোপরি কিংবদন্তি সেই ক্ষুদিরামের পর শিকার হয়েছেন উপমহাদেশের দ্বিতীয় রাজনৈতিক ফাঁসির। মুক্তিযোদ্ধা এবং বামপন্থী বিপ্লবের নেতা কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে ১৯৭৬ সালের আজকের দিনে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়। আজ তাঁর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। কর্ণেল তাহেরের মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী এই মহান যোদ্ধা ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসাম প্রদেশের বাদারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পরে আসাম থেকে তাঁর পরিবার বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলায় আসেন। তাঁর বাবার নাম মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মায়ের নাম আশরাফুন্নেছা। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করেন চট্টগ্রামের প্রবর্তক স্কুল ও কুমিল্লার ইউসুফ স্কুল থেকে। পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন কর্ণেল তাহের। ১৯৬০ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগদেন। ১৯৭১ সালে তিনি ১১ নাম্বার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ৭১’সালের ১৪ নভেম্বর কামালপুরে সম্মুখ যুদ্ধে এই বীর সেনানী গোলার আঘাতে আহত হয়ে তার বা পা হারান। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিযুক্ত হন। একই বছর সেনাবাহিনী হতে পদত্যাগ করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আকাঙ্খায় জাসদীয় রাজনীতিতে যোগদান করেন।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাসদ, গণবাহিনী ও সৈনিক সংস্থার উদ্যোগে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী জনতার অভ্যূত্থান সংঘঠিত হয়। এ সময় জাসদ নেতৃত্বসহ কর্নেল তাহের গ্রেফতার হয়ে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হন। পরবর্তীতে প্রসহনের এক বিচার শুরু হলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম, সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ও বিচারপতি আব্দুস সাত্তার (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে কর্নেল এমএ তাহেরের সামরিক আদালতে বিচারের প্রক্রিয়া করেন। এরই এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এমএ তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সাজা দেওয়া হয়। এ মামলায় কর্নেল তাহের সহ অভিযুক্ত সর্বমোট ৩৩ জন। মামলার প্রধান বিচারকের নাম কর্নেল ইউসুফ হায়দার। কর্নেল ইউসুফ হায়দার কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন এক পর্যায়ে কর্নেল তাহের প্রধান বিচারকের দিকে তাকিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন," আমি আমার জীবনে অনেক ক্ষুদ্র মানুষ দেখিছি, আপনার মতো ক্ষুদ্র মানুষ দেখিনি।” এরপর ২১ জুলাই ভোররাতে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
জিয়াউর রহমান, আব্দুস সাত্তার ও আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েমই কর্নেল তাহেরের বিচারের পরিকল্পনা করেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম শিশু। এর আগে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ ই-মেইলের মাধ্যমে বলেছিলেন, তাহেরের ফাঁসির আদেশ 'পূর্বনির্ধারিত' ও 'পরিকল্পিত' ছিল। কর্নেল আবু তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেই সামরিক আদালতে তার বিচার সাজিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশের রাজনীতির ওই যুগসন্ধিক্ষণে গোপন আদালতে ওই বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেয়া রায়ের অভিমতে একথা বলা হয়েছে। হাই কোর্ট বলেছে, তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার তাহেরকে বিচারের নামে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিলো। ব্যারিস্টার মওদুদের ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশন ইন বাংলাদেশ’ বইয়ের উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, বইয়ে লেখক অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যক্ত করেছেন যে, এই বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করার জন্য কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার মনস্থির করেছিলেন। আদালত এ প্রসঙ্গে বলেছে, যেহেতু ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জেনারেল জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং তিনি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনেছেন বলে তার বইয়ে দাবি করেছেন সেহেতু তাকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। মামলার শুনানির এক পর্যায়ে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আদালত কক্ষে এলে লেখা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। “তিনি স্বীকার করেন তিনি এই বক্তব্য ও বইয়ের লেখক এবং তিনি সরাসরি জেনারেল জিয়ার মুখ থেকেই এই কথাগুলো শুনেছেন,” বলেছে আদালত।
১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ভোররাতে এই মহান স্বাধীনচেতা অকুতোভয় সৈনিক কর্ণেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
আজ তার ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী কর্ণেল আবু তাহের বীর উত্তমের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:০৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সব মানুষই তার কর্মফল ভোগ করে
অপরের কর্মফল কারো উপর চাপিয়ে
দেওয়া হয়না।
২| ২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১২
ডার্ক ম্যান বলেছেন: তাহের ভাষা সৈনিক ছিলেন এটা আপনার পোস্টের মাধ্যমে প্রথম জানলাম
২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:২৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমরা অনেক কিছু জানিনা বা জানতে চাইনা।
তবে জানলে অনেক বিতর্ক থেকে দূরে থাকা যায়।
আপনাকে ধন্যবাদ তাহের সম্পর্কে আপনার আগ্রহের
জন্য। সত্য জানুন, সত্য বলুন।
৩| ২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মেজর খালেদ মশাররফ আর মেজর তাহের ছাড়া আর কোনও সেক্টর কমান্ডার সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধে আহত হন নাই।
২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:২২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার জানায় অপরিপক্কতা রয়েছে!!
৪| ২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:২৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে খানসাব
ভালো থাকবেন।
৫| ২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০৮
শাহ আজিজ বলেছেন: আচ্ছা ১৪ বছর বয়েসে কিসের ভাষা সৈনিক ? কেমনে হয় ?
এটাও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটধারি সেই কাহিনী মনে হচ্ছে ।
ইদানিং কেউ মারা গেলেই হয় ভাষা সৈনিক আর নাহয় বীর মুক্তিযোদ্ধা টাইটেল লাগায়া থোয় ।
তাহের সেনা আইনের বাইরে বিচরন করেছিলেন । সেনাবাহিনীতে থেকেই তিনি রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠন গড়ে তুলে সেনা আইন ভঙ্গ করেছিলেন । ওই সময় যে তাকে ফায়ারিং স্কোয়াড দেয়া হয়নি কেন বুঝি না । অনেকে বলেন তিনি অবসরে ছিলেন । আমি জানি তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ সেনা ইঞ্জিনিয়ার কোরে ড্রেজার সেকশনের দায়িত্বে ছিলেন । তার ভাই বোন মিলে তাকে মহান বিপ্লবী বানানোর যার পর নাই চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারা সফল হননি ।
২১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:০৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আজিজ ভাই ধন্যবাদ আপনাকে
মুক্তি যোদ্ধা হতে কিন্তু বয়স প্রমাণের আবশ্যকতা ছিঁলোনা।
সে যা হোক! ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ জেনারেল
জিয়াউর রহমানকে বন্দী করে নিজে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক
হিসেবে আবির্ভূত হন। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ক্যান্টনমেন্ট।
এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান বীরউত্তম তাহেরের কাছে এই বলে
সাহায্য প্রার্থনা করেন যেনো তাঁকে বাঁচানো হয়। নানা ঘটনা প্রবাহে
বীর উত্তম তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
তাহেরের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী সিপাহীরাই জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন।
জিয়া মুক্ত হওয়ার পর তাহেরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করেন। কিন্তু দ্রুতই
চোখ উল্টে ফেলেন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতা কুক্ষিগত করেই সিপাহী জনতার
অভ্যুত্থানের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেন। এরপর জাসদ নেতৃবৃন্দসহ সিপাহী
জনতার অভ্যুত্থানের সাথে জড়িতদের দমনে সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রয়োগ করে।
৬| ২১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী কর্ণেল আবু তাহের বীর উত্তমের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
.....................................................................................................................................
তবে উনার জীবন কাহিনী ও কার্যক্রম নিয়ে আমার মনে সন্দেহ জাগে,
উনি প্রকৃত দেশপ্রেমিক কিনা ইতিহাস তা বিচার করবে ।
২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:২২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দ্বিধান্বিত হবার কিছু নাই
স্বপ্নের শঙ্খচিল ভাই।
ইতিহাস স্বাক্ষ্য দিবে
কোনটা মিথ্যা আর
কোনটা সঠিক।
Socrates as saying at his sentencing.
"I to die, and you to live. Which is better God only knows."
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৫৬
ডার্ক ম্যান বলেছেন: তাহের তার কুকর্মের ফল ভোগ করেছে