নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
দ্রোহের কবি, সাত সমুদ্রের কবি, মুক্তিযোদ্ধা কবি কলামিস্ট ও লেখক সমুদ্র গুপ্ত। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে সমুদ্র গুপ্ত ছদ্মনামে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম লিখেছেন। তিনি যা বিশ্বাস করতেন, সেটাই বলতেন, তা-ই করতেন এবং লিখতেনও অকপটে। অন্যায়-অসুন্দর-বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি চিরটাকাল লড়েছেন, ক্ষুরধার কলম চালিয়েছেন। তিনি যা বিশ্বাস করতেন, সেটাই বলতেন, তা-ই করতেন এবং লিখতেনও অকপটে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছেন শুধু কলম হাতে নয়; অস্ত্র হাতেও যুদ্ধ করার অসামান্য সাহসী যোদ্ধা তিনি। দেশ স্বাধীন হলেও-স্বাধীনতার সুফল-স্বাদ সর্বস্তরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে স্পর্শ করতে পারেনি। জনগণের মুক্তির জন্য কমিউনিস্ট সমুদ্র গুপ্ত বেছে নিয়েছিলেন গোপন রাজনীতির ভিন্ন পথ ও পন্থা। দেশের সমস্ত প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে প্রতিবাদীর প্রথম কাতারে তিনি থেকেছেন সাহসী যোদ্ধারূপে। কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি ছিলেন প্রেসের কর্মচারী, করাতকলের ম্যানেজার, জুটমিলের বদলি শ্রমিক, উন্নয়ন সংগঠনের নির্বাহী, ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবসা, প্রুফ রিডার, সাংবাদিকতা, পেশাদার লেখক এবং সর্বোপরি কবি! আপাদমস্তক কবি ছিলেন সমুদ্র গুপ্ত। মেহনতি মানুষের মুখপাত্র ছিলেন, ছিলেন শিল্পকে হাতিয়ার করা শ্রেণিযোদ্ধা। আপনজনের কাছে, মাঝে তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন, মানবিক মানুষ ছিলেন। সদাহাস্য, সদাপরিহাসপ্রিয়, সদাবিদ্রোহী অনাবিল মানুষ ছিলেন। তাঁর বন্ধুভাগ্যও ছিলো ঈর্ষণীয়। আবার তাঁর জীবনাচরণে একজন সমুদ্র গুপ্তের নামের আড়ালের আবদুল মান্নান বাদশা কখনো প্রকাশিত হয়নি। আচারসর্বস্ব ধর্মকর্মে তাঁর বিশ্বাস ছিল না। তাঁর বিশ্বাস ছিল সততায়, উদারতায়, মানবিকতায়। 'তদবিরে তকদির' নীতিতে অবিশ্বাসী কবি সমুদ্র গুপ্ত। সমুদ্রের মতো বিশাল ছিল তাঁর হৃদয়।মেয়েদের নাম রেখেছেন নীল সমুদ্র ও স্বপ্ন সমুদ্র। সর্বার্থেই গুপ্ত ছিল তাঁর বৈষয়িক চাওয়া-পাওয়া ও লোভ-লালসার আকাকঙ্ক্ষ। আর্থিক দারিদ্র্যে কেটেছে তাঁর সংসার। কিন্তু মানসিক দৈন্য তাঁর ছিল না। হৃদয় দিয়ে কবিতা লিখেছেন। আজ কবির দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৮ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের বেঙ্গালুরে মৃত্যুবরণ করেন। স্বপ্নবাদী কবি সমুদ্র গুপ্তের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কবি সমুদ্র গুপ্ত ১৯৪৬ সালের ২৩ জুন সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার প্রত্যন্ত গ্রাম হাসিলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহসিন আলী ও মাতা রেহানা আলী। এই দম্পতির সাত ছেলে ও একমাত্র মেয়ের মধ্যে পঞ্চম কবি সমুদ্র। তার ডাক নাম বাদশা। প্রাতিষ্ঠানিক নাম আব্দুল মান্নান। পিতার কর্মসূত্রে দেশের ষোলটি জেলার স্কুলে পর্যায়ক্রমে তাকে পড়তে হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক নাম এড়িয়ে সমুদ্র গুপ্ত ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে সমুদ্র গুপ্ত ছদ্মনামে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম লিখেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক নামকে ছাপিয়ে ছদ্মনামেই তিনি খ্যাতিমান হয়ে যান। কালের গর্ভে হারিয়ে যায় প্রাতিষ্ঠানিক নামটি। অনেক দারিদ্র্যের মধ্যে কবি সমুদ্র গুপ্তের জীবন কেটেছে। আর এই জীবনকালে তিনি বিভিন্ন পেশার মধ্য দিয়ে কবি জীবন পার করেছেন। যেমন- তিনি তার বর্ণাঢ্য কবি জীবনে বিভিন্ন পর্যায়ে বেঁচে থাকার তাগিদে কর্মময় জীবন কখনো প্রেসের কর্মচারী, করাতকলের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন আবার কখনো ওষুধ ও চিকিৎসার ব্যবসা করেছেন। তিনি এসবের পাশাপাশি আবার কখনো কখনো উন্নয়ন সংগঠনের নির্বাহী, জুটমিলের বদলি শ্রমিক, প্রম্নফ রিডার হিসেবেও কাজ করেছেন। এ ছাড়া সাংবাদিকতা, একজন কবি এবং একজন পেশাদার লেখক হিসেবেও জীবনের চাকা ঘুরিয়েছেন। ফলে কবি সমুদ্র গুপ্তকে জীবন চলার পথে পেশাগত বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছে। আর তাই একান্তে আশাবাদী বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও এই কবি নিরন্তর কাব্যচর্চায় একাগ্রচিত্তে নিজেকে অনেকটা মনোনিবেশ করে উঠতে পারেননি। তার পরেও তিনি সাহিত্যচর্চা থেকে এতটুকু পিছপা হননি। বলা যেতে পারে, জীবনের শেষকাল পর্যন্তও তিনি কাব্যচর্চায় নিজেকে নিরেট দক্ষ শ্রমিকের মতো নিয়োজিত রেখেছিলেন। আর্থিক দারিদ্র্যের কাছে তিনি কখনো মাথা নত করেননি। জীবন চলার পথে কঠিন বাস্তবতাকে হাসি মনে মেনে নিয়ে মাথা উঁচু করে কবিতাকে সৃষ্টি করেছেন। মোটকথা, কবি সমুদ্র গুপ্ত তিনি তার হৃদয় দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে বিশ্বাসের অবস্থান থেকে কবিতা নির্মাণ করেছেন। কবিতাকে করে তুলেছেন তার জীবনের একমাত্র সাধনার বস্তু। এখানেই কবি একজন এবং অনন্য হয়ে পাঠককুলে মহাকায়া হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। কবি সমুদ্র গুপ্ত ১৯৬৮ সাল থেকেই সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘দৈনিক আওয়াজ’, ‘দৈনিক সংবাদে’র খেলাঘর পাতা, ‘দৈনিক আজাদে’র মাহফিল, অর্ধসাপ্তাহিক ‘পাকিস্তান’, ‘সাপ্তাহিক নতুন দিন’, ‘ডেইলি মেইল’, ‘সাপ্তাহিক গণশক্তি’, ‘ডেইলি পিপল্স’, ‘মাসিক কপোত’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধা কবি সমুদ্র গুপ্ত ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’, ‘সাপ্তাহিক জনমত’, ‘চরমপত্র’, ‘দৈনিক বাংলার মুখ’, ‘দৈনিক বঙ্গবার্তা’, ‘দৈনিক গণবাংলা’, ‘দৈনিক দেশ’, ‘ডেইলি নিউজ’, ‘সাপ্তাহিক রিপোর্টা’র, ‘পাক্ষিক স্টেডিয়াম’ পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭২ সাল থেকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সাংবাদিকতা পেশা ত্যাগ করে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেছেন। কোথাও একনাগাড়ে চাকরি করা তার পক্ষে সঙ্গত কারণেই সম্ভব হয়নি। নীতির প্রশ্নে অবিচল থাকার পরিণতিতেই তাকে একের পর এক চাকরি বদল করতে হয়েছে। এজন্য নানা দুর্ভোগের শিকারও হয়েছেন। কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হননি।
কবি সমুদ্র গুপ্তের সারা জীবনে সর্বমোট ১৩টি কাব্যগ্রন্থ, ১টি গদ্য, একাধিক সম্পাদিত ও অনুবাদগ্রন্থ ছাড়াও অনেক সৃজনশীল লেখা প্রাকাশ হয়েছে। এমনকি তার কবিতা বাংলা ভাষা ছাড়াও ইংরেজি, ফারসি, হিন্দি, হিংহলি, উর্দু, জাপানি, চীনা, অসমীয়া ও নেপালি ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে। কবি সমুদ্র গুপ্তের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থঃ রোদ ঝলসানো মুখ, স্বপ্নমঙ্গল কাব্য, এখনো উত্থান আছে, চোখে চোখ রাখে, একাকী রৌদ্রের দিকে, শেকড়ের শোকে, ঘাসপাতার ছুরি, সাত সমুদ্র নদীও বাড়িতে ফেরে, ছড়িয়ে ছিনিয়ে সেই পথ, চলো এবার গাছে উঠি, হাতে হাতে তুলে নিলে এই বাংলার মাটি রক্তে ভিজে যায়, তাহলে উঠে দাঁড়াব না কেন, খালি হয়ে গেছে মাথা শুধু ওড়ে। প্রবন্ধগ্রন্থ : ডিসেম্বরের রচনা। সম্পাদনা গ্রন্থ: বাংলাদেশে বঙ্কিম অন্যান্য। কবি সমুদ্র গুপ্ত নিজেকে সম্পূর্ণ একজন সত্যিকার কবিরূপে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার সৃষ্টিশীল শিল্প-সাহিত্যকর্মে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। কবিতার জন্য হুমায়ুন কবির পুরস্কার, যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার (ভারত)। ভারতের ত্রিপুরা সরদার প্রদত্ত ভাষা দিবসসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বাংলা ভাষা বাংলা কাব্য এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাবান বোদ্ধা কবি সমুদ্র গুপ্ত ২০০৮ সালের ১০ মে তারিখে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় এবং এখানেই তার চিকিৎসা চলতে থাকে। কিন্তু সেখানে কবির রোগের চিকিৎসার কোনো উন্নতি না হওয়ায় আবার তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানেও তার শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যথাযথ চিকিৎসা দিয়েও তেমন কোনো অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তখন ঢাকা 'জাতীয় কবিতা পরিষদ'-এর ব্যবস্থাপনায় কবি সমুদ্র গুপ্তকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ভারতের ব্যাঙ্গালোর নারায়ণী হৃদয়লয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একমাস দশদিন চিকিৎসা চলাকালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লড়তে শেষ পর্যন্ত ১৯ জুলাই ২০০৮ শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় বাংলা কবি সমুদ্র গুপ্ত মৃত্যু বরণ করেন। আজ কবির দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৮ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের বেঙ্গালুরে মৃত্যুবরণ করেন। স্বপ্নবাদী কবি সমুদ্র গুপ্তের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
১৯ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের
সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান।
২| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:৪৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি মুক্তি যোদ্ধা কবির প্রতি।
১৯ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আনোয়ার ভাই
মুক্তিযোদ্ধা কবি সমুদ্র গুপ্তের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
৩| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৯
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা চট করে পড়ে নিলাম।
শুভেচ্ছা নিন।
১৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:২৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ বরকতউল্রাহ ভাই
লেখাটি চটকরে পড়ে সুন্দর মন্তব্য
করার জন্য।
৪| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
১৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:২৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ খানসাব
কোথায় ছিলেন এত সময়?
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:৪৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
বড় কথা যে, মুক্তিযো্দ্ধা ছিলেন।