নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথিতযশা স্থপতিদের মধ্যে অন্যতম মাজহারুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশের স্থাপত্য পেশা চর্চার পথিকৃৎ। শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই তার মতো স্থপতি খুব কমই আছেন। জগৎজোড়া তার নামডাক। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই স্থপতি বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রথম সভাপতি ছিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণসহ নানা সময়ে বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছেন তিনি। বৃটিশ ও পাকিস্তান শাসনে নিষ্পেষিত বাংলার মানসজগতকে তিনি মুক্ত করতে চেয়েছিলেন তার স্থাপত্য কর্মের মধ্য দিয়ে। তিনি ছিলেন মনে-প্রাণে অসাম্প্রদায়িক-প্রগতিশীল এবং খাঁটি দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে তার পেশাগত আয় ছিল ঈর্ষণীয়। আয়ের একটা বড় অংশ তিনি কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন, খেলঘর, উদীচী, ছায়ানটসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাকর্মীদের পেছনে ব্যয় করতেন অকাতরে এবং তার ধানমন্ডি ও পরিবাগের বাসা কাম অফিস ছিল প্রগতিশীলদের আশ্রয়স্থল। দেশের প্রখ্যাত এই স্থপতি ২০১২ সালের আজকের দিনে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তার মৃত্যু বরণ করেন। আজ তার ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের আধুনিক স্থাপত্যকলার পথিকৃৎ, মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মাজহারুল ইসলামের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মাজহারুল ইসলাম ১৯২৩ খ্রীস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মাজহারুল ইসলামের পিতা ওমদাতুল ইসলাম ছিলেন কৃষ্ণনগর কলেজের অংকের শিক্ষক। সেখানেই মাজহারুল ইসলামের শিক্ষা জীবন শুরু। কৃষ্ণনগর কলেজ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর পিতার বদলির সুবাদে রাজশাহীতে যান মাজহারুল ইসলাম। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজ থেকে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঐ কলেজ থেকেই পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক পাস করেন। এরপর শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রকৌশল বিদ্যা পড়া শেষ করেন ১৯৪৬ সালে। দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৫০ সালে মাজহারুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্র যান এবং অরিগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যের পাঠ নিয়ে আড়াই বছর পর দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে একনাগারে ছয় মাসের পরিশ্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও লাইব্রেরী ভবনের ডিজাইন করেন। এরপর ১৯৫৬ তে বৃত্তি নিয়ে তিনি ট্রপিক্যাল আর্কিটেকচার পড়তে লন্ডনের এএ স্কুল অব আর্কিটেকচার-এ যান। ১৯৬০ এ যান ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পল রুডল্ফ-এর অধীনে মাস্টার্স করতে। ১৯৬১ এর শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের কনস্ট্রাকশন, বিল্ডিং অ্যান্ড ইরিগেশনে। মতের মিল না হওয়ায় ১৯৬৪ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে ‘বাস্তুকলাবিদ’ নামে একটি স্থাপত্য উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এ স্থাপত্য অনুষদ চালু করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এখানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় ন্যাপের কাজকর্মে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে পড়েন এবং রাতদিন অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন। ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ দলীয় অনেক কাজে তার ওপর নির্ভর করতেন। যেহেতু তার ছাত্র জীবন কলকাতায় কেটেছে সেহেতু কলকাতায় তার অনেক পুরানো বন্ধুর সাথে যোগাযোগ হয় এবং তাদেরকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমবেত করে ভারতীয় জনগণ ও সরকারের মনোভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে সচেষ্ট হন। তার এই সকল বন্ধু যার যার কর্মক্ষেত্রে সবাই প্রতিষ্ঠিত ছিল। এ ছাড়া মুজিবনগর সরকার, বিশেষ করে তাজউদ্দিন আহমেদ তাকে অত্যন্ত উচ্চ মূল্যায়ন করতেন। সঙ্গত কারণে ন্যাপের পক্ষ থেকে ভারত সরকার ও মুজিবনগর সরকারের সাথে যোগাযোগের কাজটাও তিনি করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে এসে তিনি তার পেশাগত দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে আমাদের সাথে দেশ গড়ার আন্দোলনে অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ন্যাপের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দলের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিলো । বঙ্গবন্ধু তাকে উচ্চ মূল্যায়ন করতেন, তিনিও বঙ্গবন্ধুকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। এছাড়াও দুই পরিবারের মধ্যেও একটি অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তার ছোট ছেলে তান্না ও শেখ কামাল খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল ও তান্নার প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠেছিল আবাহনী ক্লাব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পর মাজহারুল ইসলাম আবার অনেকের সাথে কলকাতায় আশ্রয় নেন এবং প্রতিবিপ্লবকে পরাস্ত করার জন্য আবার মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মত উদ্দীপনা নিয়ে রাজনৈতিক কাজকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়েন। গোছানো মানুষ মাজহারুল ইসলাম দেশের গ্রামগুলোকে গুচ্ছগ্রাম করে সারাদেশটিকে গোছাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতি তার প্রত্যাশিত পথে না চলায় তিনি ভীষণ কষ্ট পেতেন
বাংলাদেশের অনেকগুলো বিখ্যাত ভবনের স্থপতি এই মাজহারুল ইসলাম। তারমধ্যে অন্যতম কয়েকটির নামঃ
০১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ (কলেজ অফ আর্টস এন্ড ক্র্যাফটস নামে প্রতিষ্ঠিত)
০২। পাবলিক লাইব্রেরি ভবন (১৯৫৩-৫৪)
০৩। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৭-৭০)
০৪। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৮-৭১)
০৫। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, মতিঝিল, ঢাকা (১৯৬৫-৭১)
০৬। জীবন বীমা ভবন, মতিঝিল, ঢাকা (১৯৬৫-৭১)
০৭। জাতীয় গ্রন্থাগার ও জাতীয় আর্কাইভ ভবন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা (১৯৮০-৮৪)
০৮। বিশ্ব ব্যাংক অফিস ভবন, ঢাকা (১৯৮৭)
০৯। নতুন রাঙ্গামাটি শহর পরিকল্পনা, রাঙ্গামাটি (১৯৬৩-৬৪)
১০। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্প, আজিমপুর, ঢাকা (১৯৬২)
১১। বিসিএসআইআর লাইব্রেরি ভবন, ঢাকা (১৯৬৩-৬৫)
এছাড়াও বিদেশি স্থপতি স্ট্যানলি টাইগারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিলেট ও বরিশালের জন্য পাঁচটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নকশাও করেন তিনি।
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন যথাঃ ১৯৯৯ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট এর জাতীয় সম্মেলনে সম্মানিত ফেলোশিপ অর্জন, ১৯৮০ সালে আগা খান পুরস্কারের সম্মানিত বিচারকের দায়িত্ব পালন, ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট-এর প্রথম স্বর্ণ পদক অর্জন এবং ভারতের জে কে সিমেন্ট আয়োজিত স্থাপত্যশিল্পে শ্রেষ্ঠ অবদানের জন্য ‘গ্র্যান্ডমাস্টার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
দেশের প্রখ্যাত এই স্থপতি ২০১২ সালের ১৪ জুলাই শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পের মহৎ প্রবর্তক আজীবন তিনি যেমন আমাদের পথ দেখিয়েছেন, তেমনি তার মৃত্যুর পরও তার কাজ আমাদের পথ দেখাবে। বাংলাদেশের আধুনিক স্থাপত্যকলার পথিকৃৎ, মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মাজহারুল ইসলামের আজ ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। দেশের স্থাপনা শিল্পের অন্যতম পুরোধা স্থপতি মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলামের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
১৫ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:১৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ কাছের-মানুষ
আধুনিক স্থাপত্যকলার পথিকৃৎ
মাজহারুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য।
২| ১৫ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
১৫ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:৪৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ জানাই খানসাব
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১:৩৫
কাছের-মানুষ বলেছেন: মাজহারুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল।