নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
কলকাতার জোড়সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্রী, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় বোন স্বর্ণকুমারী দেবী। তিনি তাঁর অনুজ ভ্রাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে পাঁচ বছরের বড়ো ছিলেন। সংগীত, নাটক ও সাহিত্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পুরুষ সদস্যদের সৃষ্টিশীলতা স্বর্ণকুমারী দেবীকেও স্পর্শ করেছিল। স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য মহিলা সাহিত্যিক, কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক। স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম বাংলা গীতিনাট্য ‘বসন্ত উৎসব’। ১৮৭৬ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস দীপনির্বাণ প্রকাশিত হয়। ইতিপূর্বে ১৮৫২ সালে হানা ক্যাথরিন মুলেনস তাঁর ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত প্রকাশ করে বাংলা ভাষার প্রথম ঔপন্যাসিকের মর্যাদা লাভ করলেও স্বর্ণকুমারী দেবীই ছিলেন প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক। ১৯৩২ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন স্বর্ণকামারী দেবী। আজ তার ৮২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম বাঙ্গালী মহিলা ঔপন্যাসিক, কবি, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক স্বর্ণকুমারী দেবীর ৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
১৮৫৫ সালের ২৮ অগস্ট কোলকাতার জোড়সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন স্বর্ণকুমারী দেবী। তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মায়ের নাম সারদা দেবী। তৎকালীন ঠাকুর পরিবারের রীতি অনুসারে তিনি শৈশবে ঘরেই লেখাপড়া শেখেন। স্বর্ণকুমারী দেবীর স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, তাঁদের শিক্ষয়িত্রী শ্লেটে কিছু লিখে দিতেন, সেই লেখাটিই তাঁরা টুকে লিখতেন। তার পিতা এ কথা জানতে পেরেই এই শিক্ষাদান পদ্ধতিটি তুলে দেন। এর পরিবর্তে তিনি অযোধ্যানাথ পাকড়াশি নামে এক দক্ষ শিক্ষককে নিয়োগ করে মেয়েদের লেখাপড়া শেখার ব্যবস্থা করেন। পরে স্বর্ণকুমারী নিজ চেষ্টায় স্বশিক্ষিত হয়ে উঠেন। বিবাহের পর স্বর্ণময়ীকে লেখাপড়ায় বিশেষভাবে তাঁর স্বামী সাহায্য করায়, তিনি নানা ধরনের বিষয় পড়ার সুযোগ লাভ করেন। উল্লেখ্য ১৮৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর জানকীনাথ ঘোষালের সঙ্গে স্বর্ণকুমারী দেবীর বিয়ে হয়। জানকীনাথ ছিলেন নদিয়া জেলার এক জমিদার পরিবারের শিক্ষিত সন্তান এবং একজন দিব্যজ্ঞানবাদী (থিওজফিস্ট) এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা আদি যুগের সক্রিয় সদস্য। কিন্তু ঠাকুর পরিবার ছিল পিরালী থাকভুক্ত ব্রাহ্মণ। পিরালী ব্রাহ্মণ বংশের কন্যাকে বিবাহ করার জন্য জানকীনাথ পরিবারচ্যূত হয়েছিলেন। কিন্তু দৃঢ়চেতা জানকীনাথ ব্যবসা করে সাফল্য অর্জন করেন এবং নিজস্ব এক জমিদারি গড়ে তুলে "রাজা" উপাধি অর্জন করেন। ১৮৬৮ সালের ৫ ডিসেম্বর তাঁর প্রথম কন্যা হিরন্ময়ী দেবীর জন্মগ্রহণের পর, স্বর্ণকুমারীর শ্বশুর তাঁকে এবং তাঁর কন্যাকে আশীর্বাদ করেন এবং এর দ্বারা জানকীনাথের সাথে তাঁর পিতার সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়।
১৮৭৬ সালে প্রকাশিত হয় স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস দীপনির্বাণ। দীপনির্বাণ ছিল জাতীয়তাবাদী ভাবে অনুপ্রাণিত এক উপন্যাস। এরপর স্বর্ণকুমারী দেবী একাধিক উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান-পরিভাষা রচনার বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনাবলিঃ
উপন্যাসঃ ১। দীপনির্বাণ (১৮৭৬), ২। মিবার-রাজ (১৮৭৭), ৩। ছিন্নমুকুল (১৮৭৯), ৪। মালতী (১৮৭৯), ৫। হুগলীর ইমামবাড়ী (১৮৮৭), ৬। বিদ্রোহ (১৮৯০), ৭। স্নেহলতা (১৮৯২), ৮। কাহাকে (১৮৯৮), ৯। ফুলের মালা (১৮৯৫), ১০। সাব্বিরের দিন রাত (১৯১২), ১১। বিচিত্রা (১৯২০), ১২। স্বপ্নবাণী (১৯২১), ১৩। মিলনরাতি (১৯২৫),
নাটকঃ ১। বিবাহ-উৎসব (১৮৯২), ২। রাজকন্যা, ৩। দিব্যকমল।
কাব্যগ্রন্থঃ ১। গাথা, ২। বসন্ত-উৎসব (১৮৭৯) ৩। গীতিগুচ্ছ।
বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধঃ পৃথিবী (১৮৮২)
এ ছাড়াও তিনি অসংখ্য গানও রচনা করেছিলেন। সেই যুগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণকুমারী দেবী বা কামিনী রায়ের মতো মহিলা সাহিত্যিকদের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তাঁরা ছিলেন শিক্ষিত বাঙালি নারীসমাজের প্রথম যুগের প্রতিনিধি। সেই হিসাবে তাঁদের দায়িত্বগুলি সাহিত্যরচনার মাধ্যমে পালন করে গিয়েছিলেন তাঁরা। ১৮৭৯ সালে স্বর্ণকুমারী দেবী প্রথম বাংলা গীতিনাট্য (অপেরা) বসন্ত উৎসব রচনা করেন। পরবর্তীকালে তাঁর অনুজ রবীন্দ্রনাথ এই ধারাটিকে গ্রহণ করে সার্থকতর গীতিনাট্য রচনায় সফল হয়েছিলেন।
১৮৭৭ সালে ঠাকুর পারিবার থেকে মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘ভারতী’ প্রকাশিত হতে থাকে। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ৭ বছর এই পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। ১৮৮৪ সালের ২০-২১ এপ্রিল জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন। এ কারণে ভারতী পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর আগেই ভারতীর বৈশাখ ১২৯১ সংখ্যার প্রায় অর্ধেকটা ছাপা হয়ে গিয়েছিল। ফলে বাকি অংশসহ পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল স্বর্ণকুমারী দেবীর সম্পাদনায়। এরপর থেকে তার সম্পাদনায় পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। ১৮৮৬ সালে স্বর্ণকুমারী দেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে তিনি ভারতী সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন। তবে ১৯০৯ সাল থেকে স্বর্ণকুমারী দেবীর সম্পাদনায় পুনরায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯১৪ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর স্বামী জানকীনাথ ঘোষাল মৃত্যুবরণ করলে ১৯১৫ সালে তিনি ভারতী সম্পাদকের পদ ত্যাগ করেন। সহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৯২৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণকুমারী দেবীকে "জগত্তারিণী স্বর্ণপদক" দিয়ে সম্মানিত করে।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই মৃত্যবরণ করেন বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম বাঙ্গালী মহিলা ঔপন্যাসিক, কবি, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক স্বর্ণকুমারী দেবী। আজ তার ৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাঙ্গালী মহিলা ঔপন্যাসিক, কবি, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক স্বর্ণকুমারী দেবীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
০৩ রা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
স্বপ্নের শঙ্খচিল ঔপন্যাসিক
স্বর্ণকুমারী দেবীর মৃত্যুবার্ষিকীতে
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
২| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বি আসসালামু আলাইকুম।
গতকাল থেকে ব্লগে ঢুকতে পারছি না। কি সমস্যা হয়েছে বুঝতে পাড়ছি না। এখন ভি পি এন দিয়ে ঢুকলাম।
০৩ রা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমারতো সমস্যা হয়নি।
গতকালও পোস্ট দিয়েছি
আজও। তবে পোস্টগুলি
খুব ধীরে নীচের দিকে
ধাবিত হয়েছ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:২৬
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম বাঙ্গালী মহিলা ঔপন্যাসিক, কবি, সংগীতকার ও সমাজ সংস্কারক
স্বর্ণকুমারী দেবীর ৮৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে
.......................................................................................................................
আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি