নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
প্রখ্যাত বাঙালি নাট্যকার ও নাট্য অভিনেতা অমৃতলাল বসু। কলিকাতায় সাধারণ রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সংযুক্ত নাট্যকার হিসাবে গিরিশচন্দ্র ঘোষের পরই উল্লেখযোগ্য অমৃতলাল বসু। নাটক রচনা এবং নাট্যাভিনয়ে সাফল্যের জন্য তিনি জনসাধারণের কাছে রসরাজ নামে খ্যাত ছিলেন। রসরাজ মানে রসের রাজা। ব্যঙ্গ হাস্যাত্মক নাটক রচনা ও অভিনয়ের জন্য তিনি সুধী সমাজে রসরাজ উপাধিতে ভূষিত হন। তার প্রহসন ও নাটকে এত বেশি হাস্যরস থাকতো যে, তার নাটক দেখার জন্য লোকজন উপচে পড়তো। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত নাটক্যকার অমৃতলাল বসু নাটক ও গান রচনা এবং অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ধারায় অনবদ্য এক রসঘন-আনন্দ ভুবন উপহার দিয়েছেন। গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফীর উৎসাহে তিনি ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল অপেরা কোম্পানি, বেঙ্গল, স্টার, মিনার্ভা ইত্যাদি রঙ্গমঞ্চে সুনামের সাথে অভিনয় করেন। রসরাজ অমৃতলাল বসু উনিশ শতকের পেশাদারী রঙ্গালয়ে এবং নাট্যসাহিত্যে তাঁর মৌলিক নাটক নিয়েই যা খ্যাতি পেয়েছিলেন তারপর নাট্যরূপের দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু মীরকাসিম চরিত্রটির ইংরাজ বিরোধীতা তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে মুগ্ধ করত। তাঁর এই নাট্যরূপায়ণ সরকারকে ক্ষুব্ধ করে এবং নাটকটির অভিনয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। সু অভিনয়ের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক 'জগত্তারিণী পদক' লাভ করেন। ১৯২৯ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা প্রহসনের দিকপাল অমৃতলাল বসুর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
পুলিশ অফিসার অমৃতলাল বসু ১৮৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। আংশিক মাস্টার, ডাক্তার ও সর্বোপরি নট আর নাট্যকার অমৃতলাল বসু একেবারে খাস কলকাতার বাসিন্দা, কম্বুলিয়াটোলার লোক। হুতোম থেকে পরশুরাম, বহু রসিকের স্মৃতিকথাতেই উঠে এসেছে সে কালের কলকাতা৷ তবু রসবিবেচনায় একদম পৃথক অমৃতলাল বসু৷ তার পরিবার এই শহরেই প্রপিতামহের কাল থেকে বাস করছেন৷ ১৮৬৯ সালে কলকাতার জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন থেকে এন্ট্রাস পাস করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। দুই বছর ডাক্তারি পড়ার পর কাশি গিয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অধ্যয়ন শুরু করেন। এরপর কলকাতা এসে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শুরু করেন। কিছুদিন পর চিকিৎসা ছেড়ে দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতা ভালো না লাগায় তা ছেড়ে দিয়ে পোর্টব্লেয়ারে সরকারি চিকিৎসক রূপে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। এটিও কিছুদিন পর ছেড়ে দিয়ে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। কিন্তু থিয়েটারের প্রতি প্রবল আকর্ষণের কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নাটক রচনা ও অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন। এভাবে আস্তে আস্তে নাটক রচনা ও থিয়েটারে অভিনয় তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান ও নেশা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে অখ্যাত পুলিশ অফিসার অমৃতলাল বসু সেরা অভিনেতা, কুশলী মঞ্চাধ্যক্ষ, রসময় নাট্যকার ও আকর্ষণীয় সংগীত রচয়িতা হিসেবে দেশজোড়া ঈর্ষণীয় খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হন। পুলিশের চাকরি ছেড়ে না দিলে বাংলা সাহিত্য হারাতো রসরাজকে আর অমৃতলাল হারাতেন যশরাজ। অমৃতলাল বসু নাটক লিখতেন এবং ফরমায়েসি গানেরও জোগান দিতেন৷ বটতলা থেকে ছাপা বইয়ের পাঁড় ভক্ত ছিলেন অমৃতলাল, তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরির জন্য তিনি পথপুস্তিকার খোঁজ করতেন, বেশি দামে পুস্তিকাগুলি কিনতেও রাজি ছিলেন তিনি৷ অমৃতলাল বসুর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা চল্লিশ এবং তার মধ্যে নাটক চৌত্রিশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটকঃ ১। তরুবালা, ২। বিমাতা বা বিজয়বসন্ত, ৩। হরিশচন্দ্র, ৪। আদর্শ বন্ধু ইত্যাদি। প্রহসন রচনায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। তার কয়েকটি প্রহসনের নামঃ ১। তাজ্জব ব্যাপার, ২। কালাপানি, ৩। বাবু, ৪। একাকার, ৫। চোরের উপর বাটপারি, ৬। তিলতর্পণ, ৭। ডিসমিশ, ৮। চাটুজ্যে ও বাঁড়ুজ্যে , ৯। সম্মতি সঙ্কট, ১০। বৌমা, ১১। গ্রাম্য বিভ্রাট, ১২। বাহবা বাতিক, ১৩। খাস দখল, ১৪। কৃপনের ধন উল্লেখযোগ্য। নাটক ছাড়াও তিনি আত্মজীবনী, কবিতা, উপন্যাস ও গল্প লেখিয়ে হিসেবেও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। পুরাতন প্রসঙ্গ, পুরাতন পঞ্জিকা ও ভুবনমোহন নিয়োগী অমৃতলাল বসুর লেখা আত্মস্মৃতিমূলক রচনা।
বাংলা নাট্য সাহিত্যে অমৃতলাল বসু নানা কারণে একজন অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। শান্তি পত্রিকার ভাষায়, “ নাট্যসাহিত্যে অমৃতলালই যুগান্তর আনিয়াছেন। তাঁহারই লেখনী মুখে বাংলার রঙ্গালয়গুলি হাসির জীবন্তপ্রবাহে ভাসিয়া গিয়াছে। অভিনেতা হিসাবে বাংলায় তাহার সমকক্ষ কেহ আছেন কিনা সন্দেহ। চলচ্চিত্রে ‘কৃষ্ণকান্তের উইলে’ কৃষ্ণকান্তের ভূমিকায় তাঁহার অভিনয় বাঙ্গালীর স্মৃতিপটে চিরদিন জাগিয়া থাকিবে।” নাটক ও প্রহসন রচনায় তার মত বিচক্ষণ সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি জন্মায়নি। তবে ব্যঙ্গাত্মক ও হাসির নাটক রচনায় তিনি ছিলেন যেমন অসাধারণ তেমনি অতুলনীয়। তার প্রহসনগুলো হাস্যরসের উৎক্ষিপ্ত তরঙ্গপ্রবাহের অপ্রতিরোধ্য এবং আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার রসানুভূতির অধিগম্য। তবে স্ত্রী-শিক্ষা ও স্ত্রী স্বাধীনতা, সমাজ-সংস্কার, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গী ছিল কিছুটভ প্রতিক্রিয়াশীল এবং পশ্চাদগামী। প্রগতিশীলতার মন্দের দিকটা তিনি দেখেছেন কিন্তু ভালো দিকটা দেখতে পাননি। এটি অনেক সমালোচক তার সঙ্কীর্ণতার পরিচায়ক মনে করেন। তবে অনেক সমালোচকের মতে তিনি ছিলেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তাই দেশীয় উপায়ে প্রগতির পথে যেতে চেয়েছেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২ জুলাইএ মহান নাট্যকার ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কলকাতায় তার নিজ বাসভবন শ্যামবাজার ভবনে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু সংবাদ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ হতভাগ্য দেশে মরণোম্মুখ জাতিকে অনাবিল হাস্যরসে অভিসঞ্চিত করেছেন- রসরাজ অমৃতলাল। বাংলা সাহিত্যে তার দানের পরিমাপ করার সময় এখনও আসেনি। মৃত্যুর দুদিন আগে অসুস্থ শরীরেরও তিনি চলচ্চিত্রে ‘বিবাহ বিভ্রাট’ নাটকে অভিনয় করেছেন; দুঃখের বিষয় তিনি তা শেষ করতে পারেননি। অভিনেতারূপে অমৃতলাল বাঙ্গালীকে অফুরন্ত আনন্দ রসের সন্ধান দিলেও আমরা তাঁহাকে উপযুক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি দেই নই। আজ তার ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা প্রহসনের দিকপাল অমৃতলাল বসুর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
০৩ রা জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ দাদা
রসরাজ অমৃতলাল বসুর মৃত্যু দিনে
শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
২| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৫৬
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: বাংলা প্রহসনের দিকপাল অমৃতলাল বসুর মৃত্যুবার্ষিকীতে
..............................................................................
আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
০৩ রা জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বাংলা প্রহসনের দিকপাল অমৃতলাল বসুর মৃত্যুবার্ষিকীতে
শ্রদ্ধাঞ্জলি নি্বেদনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ স্বপ্নের শঙ্খচিল।
৩| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১:১১
চাঁদগাজী বলেছেন:
বিচিত্র মানুষ ছিলেন, মনে হয়।
০৩ রা জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:০৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমারও তাই ধারণা
৪| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
০৩ রা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ খানসাব!!
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১২:০০
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: রসরাজ অমৃতলাল বসুর মৃত্যু দিনে জানাই ফুলেল শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ নুরু ভাই আপনাকে।
শুভেচ্ছা জানবেন।