নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বহুগুণে গুণান্বিত মানুষ কামাল লোহানী। একাধারে তিনি বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শব্দসৈনিক, সাংবাদিক ও লেখক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও সুপিরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। ভাষা আন্দোলনে জড়িত হবার মধ্য দিয়ে তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। পরে কয়েক দফা জেল খেটেছেন এবং একই সাথে কারাগারে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমেদের মতো নেতাদেরও সাথেও। এক পর্যায়ে জড়িত হন বামপন্থী ধারার রাজনীতিতে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন নীতি ও আদর্শে অবিচল থেকে সবসময় দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করেছেন তিনি। জীবনের শুরু থেকেই কামাল লোহানী ছিলেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশ সক্রিয় । ষাটের দশকের শুরুতে পাকিস্তান সরকারের রবীন্দ্রনাথ বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলো। ১৯৬২ সালে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। এরপর পাঁচ বছরের মাথায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ক্রান্তি, যাতে সক্রিয় ছিলেন আলতাফ মাহমুদ সহ আরও অনেকে প্রথিতযশা শিল্পী। আবার ষাটের দশকের শেষ দিকে যোগ দেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপে এবং সক্রিয় হন আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে। ওই সময় পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে শিল্পীদের সংগঠিত করার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে যোগ দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালকের দায়িত্ব পান। ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের জন্যও কামাল লোহানী তার ভূমিকা রেখেছিলেন। ২০১৪ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সেবায় নিজের পুরো শরীর দান করেছেন কামাল লোহানী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার পাশাপাশি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনগুলোতে অবদান রাখা কামাল লোহানীর ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৪ সালের আজকের দিনে তিনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
কামাল লোহানী ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন তৎকালীন পাবনা জেলার (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলা) সনতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী ও মাতা রোকেয়া খান লোহানী। তারা আসল নাম আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা ফতেহ লোহানী এবং সাংবাদিক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ফজলে লোহানী তার চাচাত ভাই। কামাল লোহানী প্রথমে কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে পড়াশুনা শুরু করেন। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে পাবনায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে কর্মজীবনে দৈনিক মিল্লাত দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু কামাল লোহানীর। এরপর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। সাংবাদিক ইউনিয়নে দুদফা যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে দুবার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাংস্কৃতিক জীবনে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীতে অন্যান্য সংস্কৃতিসেবীর সঙ্গে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন কামাল লোহানী। ১৯৬২ সালে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন। ১৯৬৭ সালে ক্রান্তি সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠন। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা তিনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ বিভাগের দায়িত্ব পালন। পঁচাত্তরে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর আবারো সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে জড়িত হন কামাল লোহানী। পরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কামাল লোহানীর মতো ব্যক্তিরা ছিলেন বলেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতি বেগবান হয়েছিলো।
কামাল লোহানী বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেঃ
১। আমরা হারবো না, ২। সত্যি কথা বলতে কী, ৩। যেন ভুলে না যাই, ৪। মুক্তিসংগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার, ৫। রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন বাংলা বেতার. ৬। মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার, ৭। এ দেশ আমার গর্ব, ৮। আমাদের সংস্কৃতি ও সংগ্রাম, ৯। লড়াইয়ের গান, ১০।স্কৃতিক ঐতিহ্য ও নৃত্যশিল্পের বিস্তার, ১১। দ্রোহে প্রেমে কবিতার মত, ১২। শব্দের বিদ্রোহ। ব্যক্তিগত জীবনে কামাল লোহানী ১৯৬০ সালে তার চাচাতো বোন দীপ্তি লোহানীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির দুই কন্যা বন্যা লোহানী ও ঊর্মি লোহানী এবং এক পুত্র সাগর লোহানী। তার স্ত্রী দীপ্তি লোহানী ২০০৭ সালের ২৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রীর মৃত্যুর ১৩ বছর পরে ২০২০ সালের ২০ জুন ৮৭ বছর বয়সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেণ কামাল লোহানী। বাঙ্গালীর দীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পথ ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের চার দশকে -রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম যে অসামান্য ভূমিকা রেখে গেছেন তা সবসময়ই নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে। আজ বরেণ্য সাংবাদিক কামাল লোহানীর ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:২৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বেদনার মাঝেই আনন্দ খুঁজতে হয়
তা না হলে জীবন দুঃখের সাগরে হাবু
ডুবু খাবে্ যেখানে তল পাওয়া যাবেনা ভাই।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যভ।
২| ২৬ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:২৬
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ খানসাব
আপনার মন্তব্যের জন্য।
৩| ২৬ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৩০
ইসিয়াক বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। শ্রদ্ধা রইলো।
আপনার জন্য শুভকামনা নুরু ভাই।
২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:২৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ কবি.
বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক
কামাল লোহানীর জন্মবার্ষিকীেতে শুভেচ্ছা
জানানোর জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:০৪
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহানীর জন্মবার্ষিকীতে আমার ফুলেল শুভেচ্ছা
...................................................................................................................................
সম্প্রতি তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন সে বেদনাই তো ভুলতে পারছি না ।