নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের পাতায় ওমর আল মুখতার এ লায়ন অব দ্য ডেজার্ট

২২ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০২


মরু সিংহ ওমর আল মুখতার ছিলেন ইসলামী স্কলার ও বিপ্লবী। লিবিয়ার শিশুরা বড় হয় তাদের যে জাতীয় নায়কের গল্প শোনে, তিনি ওমর আল মুখতার বিন ওমর বিন ফরহাত, যিনি দুনিয়ায় ওমর মুখতার নামেই বিখ্যাত। ওমর মুখতার ইতিহাসে আসাদ আল-সাহারা, ‘লায়ন অব দ্য ডেজার্ট’ বা ‘মরুর সিংহ’ নামে পরিচিত। তার এ উপাধি পাওয়ার পেছনে একটি গল্প আছে। তরুণ বয়সে তিনি কাফেলায় সুদানে যাচ্ছিলেন মরুভূমির মধ্য দিয়ে। পথে এক সিংহের আক্রমণের ভয় সবাইকে সন্ত্রস্ত করে তোলে। ওমর সিংহের মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঘোড়ার পিঠে চেপে শটগান হাতে তিনি সিংহের সামনে যান এবং সিংহটিকে হত্যা করেন। এ ঘটনা থেকে তিনি আসাদ আল-সাহারা নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। পূর্ব লিবিয়ায় যিনি ইতালিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন ওমর মুখতার। সাধারণ্যে ‘মরুভূমির সিংহ’ নামে খ্যাত ওমর প্রথম জীবনে ইসলামকে একনিষ্ঠভাবে ধ্যয়ন করেন এবং তারুণ্যেই বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। তার মা আয়শা বিনতে মোহায়ের মুখতার ও তার ভাইদের ধর্মীয় এবং উন্নত মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছিলেন। একটু বড় হওয়ার পর মুখতার আহমাদ শরীফ আল সেনুসিকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন। এই আহমাদ শরীফ ছিলেন সেনুসি নামের সুফি সম্প্রদায়ের শিক্ষক। পরবর্তী জীবনে তিনি আল কোরআনের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত করেছিলেন নিজেকে। তিনি শিক্ষার্থীদের কোরআন শিক্ষা দিতেন। নিজের জন্মভূমির ভূগোল ও পরিবেশ সম্পর্কে তার অগাধ জ্ঞান ছিল। এ জ্ঞান পরবর্তী সময়ে মরুভূমিতে ইতালীয় ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তার কাজে লেগেছিল। ১৯১১ সালে ৫৩ বছর বয়সে স্বদেশে ইতালিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রস্তুত করলেন নিজেকে প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে। শিক্ষকজীবনের নিশ্চিতি ঘুরে গেল প্রতিরোধ যোদ্ধার অনিশ্চিতিতে। ওমর তার অল্প কয়েকজন অনুসারী নিয়ে অসম যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। তারা কৌশলী তত্পরতায় টহলচৌকি তছনছ করে দেন। সেনাদের অতর্কিত হামলায় ফেলেন আর প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ছিন্ন করে দেন। তার অর্ধেক বয়সী ইতালিয়ান রয়াল আর্মি হতবাক হয়ে যায়। ২০ বছর সশস্ত্র যুদ্ধের পর ৭৩ বছর বয়সে এক যুদ্ধে আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। তাকে লুব্ধ করার প্রভূত আয়োজন বিদ্যমান ছিল, কিন্তু তিনি সব ক্ষেত্রেই বলেছিলেন, ‘আমরা কখনই আত্মসমর্পণ করব না। হয় জিতব নয় মরব।’‘ওমর মুখতার, আপনার শাস্তি প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে মৃত্যু’—জল্লাদগোষ্ঠীর এ কথার উত্তরে তিনি জানান, ‘আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে এসেছি, তার কাছেই ফিরে যাব।’ এই ছিল ওমর মুখতারের উচ্চারিত শব্দ, যখন তিনি জানলেন মৃত্যু নিশ্চিত। ইতিহাসে ওমর জায়গা করে নিয়েছেন ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তার লড়াই দিয়ে। নিজ দেশের মানুষকে বিদেশী আক্রমণের মুখে তিনি রক্ষা করেছেন। ১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ইতালি দখলদাররা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২০ হাজার মানুষের সামনে তার সে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা হয়। তিনি শত্রুপক্ষের হাতে শাহাদত বরণ করেছেন, কিন্তু লিবিয়া তথা পুরো বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে অসম্ভব বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বেঁচে আছেন। ওমর মুখতার আজো বেঁচে আছেন বিশ্ববাসীর হৃদয়ে। প্রতিরোধ সংগ্রামের মহাপ্রতীক ওমর মুখতার মৃত্যুর ৮৯ বছর পরও মানুষের স্মরণে রয়ে গেছেন ‘মরু সিংহ’ নামে।

ওমর মুখতারের জীবনের প্রাথমিক কালের তথ্য খুব কমই পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত তিনি জন্মেছিলেন ১৮৫৮ সালে, যদিও ১৮৫৬ থেকে ১৮৬২ সালের মধ্যে তার কয়েকটি জন্মদিনের উল্লেখ পাওয়া যায়। লিবিয়ার পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত জাওইয়াত জানজুর নামের এক গ্রামে তার জন্ম। তিনি জন্মেছিলেন এক ঘাইথ পরিবারে, যা ফরহাত গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই ফরহাত গোষ্ঠী আবার লিবিয়ার বারক্বার মানফাহাহ বাদু সম্প্রদায়ের একটি শাখা। তার বাবা ছিলেন সাহসী যোদ্ধা, তাই ধারণা করা যায়, তিনি মাঝে মাঝেই বাড়িতে অনুপস্থিত থাকতেন। একবার হজ পালনে সৌদি আরবের মক্কার দিকে দীর্ঘ যাত্রাপথে তার পিতা মারা যান। পিতার ইচ্ছানুযায়ী পারিবারিক বন্ধু ও বিশিষ্ট আলেম শেখ হুসেইন গারিয়ানির কাছে পড়াশুনা করেন ওমর আল মুখতার। গারিয়ানির শিষ্যত্বে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো কুরআন হেফজ করেন তরুণ ওমর। তারপর লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় আল জাগবুব এলাকায় ভ্রমণ করেন তিনি, যা ছিল ইসলামি সংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ শেখ মোহাম্মদ ইবন আলি সেনুসির এলাকা। তার কাছে আট বছর ধর্মতত্ত্ব, ইসলামিক বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় অধ্যয়ন করেন ওমর মুখতার। এ সময় তিনি শেখ মাহদি সেনুসির কাছেও কিছু দিন অবস্থান করেন। ১৮৯৭ সালে শেখ মাহদি তাকে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর জাওইয়াত আল কুসুরের গভর্নর নিয়োগ করেন। সেখানে তার প্রজ্ঞা, ন্যায়পরায়ণতা এবং বিবাদ মীমাংসায় সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এ সময়ই তিনি সিদি ওমর বা স্যার ওমর নামে পরিচিতি লাভ করেন, মূলত শেখ ও পণ্ডিতদেরই এ উপাধি দেয়া হতো। এরপর মুখতার সুদান গিয়ে কয়েক বছর শেখ মাহদি সেনুসির ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে মুখতার আবারো জাওইয়াত আল কুসুরের গভর্নর নির্বাচিত হন। সে সময় ওসমানীয় সামাজ্য লিবিয়া শাসন করত। তবে একপর্যায়ে তিনি ধর্মীয় পণ্ডিত বা গভর্নর থেকে পাল্টে পরিণত হন উপনিবেশবিরোধী এক প্রতিরোধ সৈনিকে।

একের পর এক লড়াই করে যান ব্রিটিশ, ফ্রান্স ও সবশেষে ইতালিয়ান ঔপনিবেশিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে তিনি প্রথম লড়াইয়ে নামেন যখন তারা লিবিয়া ও মিসর সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে। ১৯০০ সালে ফ্রান্সের বাহিনী দক্ষিণ সুদান ও শাদে হামলা চালাতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন মুখতার। ১৯১১ সালে ইতালি ওসমানীয় বাহিনীতে যোগ দেয়ার আগে মুখতার জাওইয়াত থেকে এক হাজার যোদ্ধা নিয়ে ওসমানীয় সেনাদলের জন্য পাঠান। তখন তাকে ‘শেখ অব দ্য মুজাহিদীন’ উপাধি দেয়া হয়।১৯১২ সালে রোম লিবিয়াকে ইতালির উপনিবেশ বলে ঘোষণা দেয়। পরবর্তী ২০ বছর আল মুখতার ইতালির ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। ওমর আল মুখতারের গেরিলা হামলার মুখে ইতালি অনেক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ১৯১৩ সালে লিবিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর দার্নাতে দুই দিনব্যাপী যুদ্ধে ৭০ জন ইতালীয় সেনা নিহত ও শতাধিক সেনা আহত হয়েছিল। ১৯১১ সালের অক্টোবরে ইতালির যুদ্ধজাহাজ লিবিয়ার ত্রিপোলির উপকূলে হাজির হয়। ইতালীয় নৌবহরের নেতা ফারাফেল্লি লিবিয়ার জনগণকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান, নয়তো নিমেষে নগরকে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দেন। লিবিয়ার মানুষ পালাতে শুরু করে, সে অবস্থায়ই ইতালীয় বাহিনী ত্রিপোলি আক্রমণ করে এবং তিনদিন ত্রিপোলি শহরে বোমাবর্ষণ করে। এরপর ত্রিপোলির জনগণকে ‘ইতালির সঙ্গে বন্ধনযুক্ত’ বলে ঘোষণা করে। লিবিয়ায় শুরু হয় ইতালীয় ঔপনিবেশিক শাসন। ত্রিপোলি পরিণত হয় ইতালিয়ান ত্রিপোলিটানিয়া এবং লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের বারক্বা হয়েছিল ইতালিয়ান সিরানাইকা। ইতালির আক্রমণ ও শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে সেনুসি প্রতিরোধ। এ সেনুসিরা ছিল লিবিয়ার একটি শক্তিশালী সুফি সম্প্রদায়। এ সময় শুধু উপকূলীয় অঞ্চলই ইতালীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। লিবিয়ার অভ্যন্তরে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে ইতালির প্রশাসন কৌশলের আশ্রয় নেয়, তারা স্থানীয়দের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯২২ সালে ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় এসে চুক্তিগুলো বাতিল করে দেয়। মুসোলিনির সেনারা রিকনকুয়েস্তা অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে—প্রাচীন রোমান উপনিবেশ ত্রিপোলিটানিয়া ও সিরানাইকাকে পুনরায় জয় করা। ১৯৩০ সালে ইতালি বাহিনীর সাথে এক প্রচণ্ড যুদ্ধের সময় মুখতারের ঘোড়া ও তার ট্রেডমার্ক তারের ফ্রেমের চশমা শত্রুদের চোখে ধরা পড়ে যায়। সে-সময় ইতালির সেনা কমান্ডার মার্শাল রডোলফো গ্রাজিয়ানি তার সেই বিখ্যাত উক্তিটি করেন, ‘আমরা আজ তার চশমাটি নিয়েছি, কাল তার মাথা নেবো।’

১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ইতালিয়ান বাহিনীর সাথে লড়াইয়ের সময় এক ব্যক্তি তাকে সিদি ওমর বলে সম্বোধন করে ওঠলে শত্রুরা তাকে চিনে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তিন দিন পর ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রাজিয়ানি বেনগাজিতে পৌঁছেন এবং ওমর মুখতারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০ হাজার মানুষের সামনে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। বিচার চলাকালে ইতালির কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, তিনি যদি তার মুজাহিদদের অস্ত্র পরিত্যাগের আহ্বান জানান, তাহলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। সে সময় মুখতার তার বিখ্যাত উক্তিটি করেন, ‘আমার শাহাদাত আঙুল যেটি প্রতিদিন সাক্ষ্য দেয়- আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ সা: তার রাসূল, সেই হাত দিয়ে কোনো মিথ্যে কথা বা শব্দ লেখা সম্ভব নয়। আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা জয়ী হবো, নচেত আমরা শহীদ হবো।’১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে বেনগাজি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে এক ফাঁসির মঞ্চে হাতবাঁধা অবস্থায় তাকে আনা হয়। তিনি তখন নির্বিকার ও অচঞ্চল চিত্তে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করছিলেন। ২০ হাজার মানুষ প্রিয় নেতার শেষ বিদায়ে শরিক হতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওমর মুখতারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করলেও, ইতালীয় ঔপনিবেশিক শক্তি হত্যা করতে পারেনি তার স্বাধীনতাবোধ ও আত্মমর্যাদাকে। ইতালীয় ঔপনিবেশিক কারা-কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত বিস্মিত হয়েছিল বন্দী ওমর মুখতারের বিশাল ব্যক্তিত্বে। ১৯৮০ সালে ওমর মুক্তারকে নিয়ে লাইন অব ডিজার্ট নামে একটি ছবি নির্মাণ করেন অ্যান্থোনি কুইন। রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার কারণে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইতালিতে ছবিটি নিষিদ্ধ ছিল। মুখতার ঐতিহাসিকভাবেই এমনকি তার সমকালীনদের মধ্যেও কম চেনা ছিলেন। তার বিদ্রোহ ত্রিশের দশকের বড় সব ঘটনার তলায় প্রায় বিস্মৃত, যেমন ইতালির ইথিওপিয়ায় আগ্রাসন ও অস্ট্রিয়া আর চেকোস্লোভাকিয়ায় জার্মান দখলদারি।

১৯৬৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি। তিনি তার অনুসারীদের বলেছিলেন, তার কৈশোরের নায়ক ছিলেন ওমর মুখতার এবং তার (গাদ্দাফির) পিতা ওমরের অধীনে ইতালীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। গাদ্দাফি বিভিন্ন সময় লিবীয় জনগণকে ওমর আল-মুখতারের ‘অনুসারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে এই গাদ্দাফিও তার একনায়কতান্ত্রিক শাসনকে অব্যাহত রাখতে লিবিয়ার মানুষের মনকে শৃঙ্খলিত রাখতে চেয়েছেন। গাদ্দাফি সচেতনভাবে লিবিয়ার পুরনো সংস্কৃতিকে মুছে দিয়ে সেখানে নিজেকে লিবিয়ার ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। এটা করতে গিয়ে তিনি বেনগাজিতে ওমর মুখতারের সমাধি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। বেনগাজিতে ওমরের সমাধিস্থলটি ওমর মুখতার স্কয়ার নামে পরিচিত ছিল। ২০০০ সাল পর্যন্ত সেখানে সমাধিটি টিকে ছিল। ১৯৫১ সালের ২৪ ডিসেম্বর লিবিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এর আট বছর পর তার পরিবারের অনুমোদন সাপেক্ষে ওমর মুখতারের সমাধি নির্মাণ করা হয়। সে সময়ের লিবিয়ার শাসক রাজা ইদরিস ছিলেন ওমর মুখতারের সহযোদ্ধা, বন্ধুসম। তিনি তার বন্ধুর স্মৃতিকে সম্মান দেখাতে চেয়েছিলেন। ফাঁসির পর ওমরের মরদেহ সিদি আবেইদে সমাহিত করা হয়েছিল। ১৯৬০ সালের আগস্টে সেখান থেকে তার মরদেহ বেনগাজিতে ওমর মুখতার স্কয়ারে নিয়ে আসা হয় এবং এটি হয়ে ওঠে লিবিয়ার জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দেশী-বিদেশী মানুষ এখানে এসে ওমরকে শ্রদ্ধা জানাতেন। ওমরের ছেলে ও একমাত্র বংশধর হাজি মোহাম্মদ ওমর মুখতার মনে করতেন, গাদ্দাফি তার নিজের ভাবমূর্তিকে শক্তিশালী করা ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ওমর মুখতারকে ব্যবহার করেছেন। ওমর মুখতারের প্রতিকৃতি লিবিয়ার ১০ দিনারের নোটে ব্যবহার করা হলেও গাদ্দাফি বেশি ব্যবহূত ও দিনারের নোটে নিজের ছবি ছেপেছেন। ওমরের জীবনীনির্ভর লায়ন অব দ্য ডেজার্ট ছবি নির্মাণে গাদ্দাফি ৩ কোটি ডলারের বরাদ্দ দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ছবিতে যেন সেনুসি সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ না থাকে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অথচ ওমর মুখতার লড়েছিলেনে এই মানুষদের জন্য। সেনুসিদের গাদ্দাফি ঘৃণা করতেন এবং তার নিদর্শনও তিনি রেখেছেন। রাজা ইদরিসের পূর্বসূরিদের কবর খুঁড়ে তাদের কঙ্ককাল মরুভূমিতে ফেলে দেয়া হয়েছিল। এদিক থেকে ওমর মুখতারের প্রতি গাদ্দাফির আচরণ অপেক্ষাকৃত নরম ছিল। ৪০ বছর বেনগাজির স্কয়ারে সমাধিস্থ থাকার পর গাদ্দাফির নির্দেশে ওমর মুখতারের দেহাবশেষ তুলে বেনগাজি থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের সোলুক গ্রামে নতুন করে কবর দেয়া হয়। ২০০০ সালে ফুটবল খেলাসংক্রান্ত এক বিতর্কিত ঘটনায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছিল, বিক্ষোভকারী তরুণরা নিজেদের ‘আমরা ওমর মুখতারের নাতি’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। তারা গাদ্দাফিকে ভয় পায় না এমন স্লোগানও দিয়েছিল। গাদ্দাফির প্রতিক্রিয়া ছিল হিংসাত্মক, তিনি ওমর মুখতারের সমাধি গুঁড়িয়ে দেন এবং তার দেহাবশেষ সরিয়ে ফেলেন। এ ঘটনা প্রসঙ্গে ওমরের পুত্র হাজি মোহাম্মদ ওমর মুখতার ২০১১ সালে বলেছিলেন, ১৯৬০ সালে ওমরের দেহাবশেষ বেনগাজিতে আনা ও সমাধি নির্মাণের ব্যাপারে রাজা ইদরিস পরিবারের অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু ‘গাদ্দাফি ২০০০ সালে যখন আমার পিতার দেহাবশেষ সরিয়ে নেন, তখন আমাদের কাছে কোনো অনুমতি নেননি। তার দেহাবশেষ সোলুকে নিয়ে যাওয়া এবং তার সমাধি ধ্বংস করে দেয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো সম্মতি কখনই ছিল না।’২০১৮ সালের জুলাইয়ে ৯৭ বছর বয়সে ওমর মুখতারের পুত্র হাজি মোহাম্মদ ওমর মুখতার প্রয়াত হন। ২০১১ সালে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে লিবিয়ার তরুণদের বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন হাজি ওমর। সশরীরে তিনি বিদ্রোহী তরুণদের সমর্থন দিয়েছেন। তরুণরা যে নিজেদের ওমর মুখতারের নাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে, তা নিয়ে হাজি ওমর খুশি ও গর্বিত হয়েছিলেন। হাজি ওমরের মনে তার পিতার হন্তারক ইতালীয় জাতির প্রতি কোনো ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ছিল না। তার পিতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন যে ইতালীয় সেনা কর্মকর্তা জেনারেল রোডোলফো গ্রাজিয়ানি, তাকে একজন খারাপ মানুষ বলেছেন, কিন্তু সাধারণ ইতালীয়দের প্রতি তার কোনো ঘৃণা ছিল না।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৫

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন:
বাহ দারুন পোস্ট নুরু ভাই!
দ্য লায়ন অফ ডেজার্টের এই চেহারা?
। আপনার সৌজন্যে ওনার ছবি দেখার সুযোগ হলো। ধন্যবাদ আপনাকে। ‌
পোস্টে লাইক।

নিরন্তর শুভেচ্ছা জানবেন।

২২ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ধন্যবাদ দাদা
এটা তার পৌঢ়ত্বের চেহারা
যৌবনে অবশ্যই সিংহের মতো
ছিলো। আপনার জন্যও শুভেচ্ছা

২| ২২ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: ওমর আল মুখতার এর সন্ধা্ন আপনি কোথায় পেলেন?

২২ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:০২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ইতিহাসের পাতায় !

৩| ২২ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৫১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। একটা অজানা বিষয় জানা হলো।

২২ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাে ধন্যবাদ ভূইয়া ভাই
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

৪| ২২ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫০

কৃষিজীবী বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট এর জন্য প্রিয় নুরু ভাইকে ফুলেল শুভেচ্ছা +।ওমর আল-মুখতার সম্পর্কে সেনুসিদের নেতা মোহাম্মদ আল-মাহদি আস্‌-সেনুসি বলেছিলেন, বিশ্বে নির্যাতিত মুসলমানদের বিজয়ের জন্য ওমরের মতো শুধু দশ জন নেতা দরকার।

২৩ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাদ কৃষিজীবী
সুন্দর কাটুক আপনার আগামী
জীবন। নিরাপদে থাকুন, সুস্থ্য
রাখুন সৃষ্টিকর্ত সেই প্রার্থনা
তার কাছে।

৫| ২৪ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩

হাসান রাজু বলেছেন: সিনেমাটি দেখেছি। সিনেমাটিতে একটা অংশে মাইলের পর মাইল জুড়ে বন্দীদের ক্যাম্প দেখানো হয়েছে। ফুটেজটা অরিজিনাল ছিল। যা দেখলে ভয়াবহতা বুঝা যাবে।

সেই ফুটেজ


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.