নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
ওয়াল্টার "ওয়াল্ট" হুইটম্যান। একাধারে তিনি একজন কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক। হুইটম্যান সর্বাধিক প্রভাবশালী মার্কিন কবিদের অন্যতম। তাকে গণতন্ত্রের কবি এবং আমেরিকার জাতীয় কবি বলা হয়। খুব তরুণ বয়স থেকেই তিনি ছিলেন উদ্যমী ও প্রথাবিরোধী, যা তার কবিতায় পুরোপুরি প্রকাশ পেয়েছে। তিনি এমনই একজন রোমান্টিক কবি যিনি নিজের ‘আমিত্ব’ বা ‘অহম’-কে সর্বোচ্চ আবেগ দিয়ে প্রকাশ করেছেন। তার ব্যক্তিক উচ্ছ্বাস ও নিয়ম ভাঙার সচেতন প্রয়াস তাকে অগ্রগণ্য আমেরিকান রোমান্টিক কবি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তিনি তার লেখায় নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়েছেন তার লেখনীর মাধ্যমে। এজন্য তাকে শাসক শ্রেণির রোষানলে পড়তে হয়। মুদ্রণ ব্যবসা ও সাংবাদিকতার কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। সর্বজনীন আবহ তৈরি করা ছিল হুইটম্যানের কবিতার মূল সুর। গণতান্ত্রিক জীবনধারায় গভীরতম বিশ্বাস নিয়ে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সবাইকে দেখেছেন মানবিকতার দৃষ্টিতে। কবির ‘সং অব মাইসেলফ্’ কবিতাটি গোটা বিশ্বের মানুষের উদ্দেশে একটি দীর্ঘ ভাষণ। এটি এখন পর্যন্ত সর্বাধিক পঠিত কবিতাগুলোর একটি। এছাড়াও তাকে মুক্তছন্দের জনকও বলা হয়। মানবতাবাদী হিসেবে প্রসিদ্ধ হুইটম্যান তার রচনায় তুরীয়বাদ ও বাস্তবতাবাদের সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। তিনি নিজের কবিতা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, সরকারি করণিক বৃত্তি এবং আমেরিকান গৃহযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক শুশ্রুষাকারীর কাজও করেন। কর্মজীবনের প্রথম ভাগে তিনি ফ্র্যাঙ্কলিন ইভান্স নামে একটি টেম্পারেন্স উপন্যাস রচনা করেন। ১৮৫৫ সালে তিনি নিজের অর্থে তার প্রধান গ্রন্থ লিভস অফ গ্রাস প্রকাশ করেন। এই কাব্যের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের পাঠযোগ্য এক আমেরিকান মহাকাব্য রচনা। ১৮৯২ সালে মৃত্যুর পূর্বাবধি তিনি নানাভাবে এই কাব্যটিকে পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত করেছিলেন। তার রচনা সেযুগে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করে। বিশেষত তার কাব্যসংকলন লিভস অফ গ্রাস মাত্রাতিরিক্ত অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়। হুইটম্যানের কবিতার সঙ্গে সঙ্গে তার যৌনপ্রবৃত্তির বিষয়টিও বহু আলোচিত। জীবনীকারদের মধ্যে তার যৌনতাবোধ নিয়ে তর্ক থাকলেও, তিনি সাধারণত সমকামী বা উভকামী হিসেবে বর্ণিত হন। যদিও কোনো পুরুষের সঙ্গে হুইটম্যানের যৌন অভিজ্ঞতা ছিল কিনা, সে নিয়েও তার জীবনীকারদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। সারাজীবনই হুইটম্যান ছিলেন রাজনীতি সচেতন। তিনি উইলমট প্রোভিসোর সমর্থক ছিলেন এবং সাধারণভাবে দাসত্বপ্রথার বিস্তারের বিরোধিতা করেন। তার কবিতায় জাতিগোষ্ঠীগুলি সম্পর্কে সমতাবাদী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। এক সময়ে তিনি দাসত্বপ্রথা বিলোপের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে দাসত্ববিলোপবাদী আন্দোলনকে তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর মনে করতে শুরু করেন। চিরকুমার এই কবির আজ ২০১তম জন্মবার্ষিকী। ১৮১৯ সালের আজকের দিনে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লংআইল্যান্ডের ওয়েস্টস হিলসে জন্মগ্রহণ করেন। মানবতাবাদী মার্কিন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক ওয়াল্ট হুইটম্যানের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভ্চ্ছো।
ওয়াল্ট হুইটম্যান ১৮১৯ সালের ৩১ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যের লং আইল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮১৯ সালের ৩১ মে, লং আইল্যান্ডের টাউন অফ হান্টিংটনের অন্তঃপাতী ওয়েস্ট হিলসে ওয়াল্ট হুইটম্যান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ও মাতার নাম ছিল ওয়াল্টার ও লুসিয়া ভন ভেলসর হুইটম্যান। তারা কোয়াকার চিন্তাধারার অনুগামী ছিলেন।ওয়াল্টের বাবা ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। হুইটম্যান ছিলেন তার পিতামাতার নয় সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। নামকরণের অব্যবহিত পরেই, পিতার নামের সঙ্গে তার নামের পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য তার ডাকনাম "ওয়াল্ট" রাখা হয়। ওয়াল্টার হুইটম্যান সিনিয়র তার সাত পুত্রের মধ্যে তিন জনের নামকরণ করেন মার্কিন নেতা অ্যান্ড্রু জ্যাকসন, জর্জ ওয়াশিংটন ও টমাস জেফারসনের নামানুসারে। তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল জেস এবং এক পুত্র নামকরণের পূর্বেই মাত্র ছয় মাস বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। তার ষষ্ঠ তথা কনিষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল এডওয়ার্ড। ১৮২৩ সালে চার বছর বয়সে হুইটম্যান পরিবারের সঙ্গে লং আইল্যান্ড ছেড়ে ব্রুকলিনে চলে আসেন। এখানে আর্থিক কারণে তাদের বারংবার বাসস্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছিল। হুইটম্যান তার স্মৃতিচারণাতেও খারাপ আর্থিক অবস্থার দরুন এক অশান্ত ও বিষন্ন ছেলেবেলার ছবি এঁকেছেন। এগারো বছর বয়সে হুইটম্যান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি পরিবারের সাহায্যার্থে কাজকর্মের চেষ্টা করতে থাকেন। প্রথমে তিনি দুইজন আইনজীবীর অফিস বয় হিসেবে কাজ করেন। এরপর প্যাট্রিয়ট নামে স্যামুয়েল ই. ক্লিমেন্টস সম্পাদিত লং আইল্যান্ডের সাপ্তাহিক সংবাদপত্রে শিক্ষানবিশি ও ‘পেইন্টার’স ডেভিল’-এর কাজ করেন। এখানেই হুইটম্যান প্রিন্টিং প্রেসের কাজ ও টাইপসেটিং শিক্ষা করেন। কোনো কোনো সংখ্যার পৃষ্ঠা ভরানোর জন্য এই সময় তিনি কিছু "sentimental bits"-ও রচনা করে থাকবেন। ক্লিমেন্টস ও তার দুই বন্ধু এই সময় এলিয়াস হিকসের কবর খুঁড়ে তার মাথাটির প্লাস্টার মল্ড তৈরি করতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এর কিছুকাল পরেই ক্লিমেন্টস প্যাট্রিয়ট পত্রিকার কাজ ছেড়ে দেন, সম্ভবত এই বিতর্কের জেরেই। ১৮৩৫ সালের মে মাসে ষোলো বছর করেন। অবশ্য জীবনের পরবর্তী পর্বে পৌঁছে তিনি ঠিক কোথায় এই কাজ করতেন, তা স্মরণ করতে পারেননি। তিনি অন্য কাজের সন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সেই অঞ্চলের মুদ্রণ ও প্রকাশন অঞ্চলটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তার অন্য কাজ পাওয়া কঠিন বয়সে তিনি লং-আইল্যান্ড স্টার ও ব্রুকলিন পরিত্যাগ করেন। চলে আসেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। এখানে তিনি কম্পোসিটরের কাজ শুরু হয়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ১৮৩৭-এর আতঙ্কের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরবস্থা। ১৮৩৬ সালের মে মাসে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে যোগ দেন। এঁরা সেই সময় লং আইল্যান্ডের হ্যাম্পস্টেডে বসবাস করছিলেন। ১৮৩৮ সালের বসন্ত পর্যন্ত হুইটম্যান এখানে ওখানে স্কুল শিক্ষকতার কাজও করেন। তবে শিক্ষকতার কাজে তিনি বিশেষ তৃপ্তি পাননি। কয়েকবার শিক্ষকতার প্রচেষ্টার পর, হুইটম্যান ফিরে যান নিউ ইয়র্কের হান্টিংটনে। এখানে তিনি নিজের সংবাদপত্র লং আইল্যান্ডার প্রকাশ করেন।
কর্মজীবনের প্রথম ভাগে হুইটম্যান ১৮৪২ সালে ফ্র্যাঙ্কলিন ইভান্স নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। ১৮৫৫-তে নিজের অর্থে লেখক ও প্রকাশকের নামবিহীন লিভস অব গ্রাস নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই কাব্যের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের পাঠযোগ্য এক আমেরিকান মহাকাব্য রচনা। হুইটম্যান সারা জীবন এই গ্রন্থের সংশোধন ও সংযোজন করেছেন। তার এই কাব্যগ্রন্থের ১০টি সংস্করণ বের হয়েছে। তার এই বইটি আমেরিকার কাব্য ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও পঠিত কাব্যগ্রন্থ। ব্যক্তিগত জীবনে ওয়াল্ট হুইটম্যান ব্যক্তিজীবনে চিরকুমার একজন চেতনামরমি সাধক ছিলেন। রাজনীতি-সচেতন হুইটম্যান উইলমট প্রোভিসোর সমর্থক ছিলেন এবং একসময় দাসপ্রথা বিলোপের ডাক দিয়েছিলেন হুইটম্যান। তার কবিতায় জাতিগোষ্ঠীগুলো সম্পর্কে সমতাবাদী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। তিনি বিশ্বাস করতেন একজন মরমিবাদী আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সংযোগ বা সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম। এ চিন্তায় হুইটম্যান একজন সত্যিকার মরমিবাদী। ১৮৯২ সালের ২৬ মার্চ নিউজার্সির ক্যামডেনে তার মৃত্যু হয়। মানবতাবাদী এই কবির আজ ২০১তম জন্মবার্ষিকী। মার্কিন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক ওয়াল্ট হুইটম্যানের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভ্চ্ছো।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
২| ৩১ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:০৯
আল-ইকরাম বলেছেন: ধন্যবাদ নুরুভাই। কৃতজ্ঞতা আপনাকে বিখ্যাত সব গুণীজনদের জীবনী নিয়ে নিয়মিত আলোকপাত করার জন্য। পাঠক সমাজ এতে উপকৃত হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুভেচ্ছা অগনিত।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে মে, ২০২০ দুপুর ১:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।