নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথা-সাহিত্যিক, কবি ও নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৮:০৬


কবি, কথা-সাহিত্যিক ও নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। শচীন্দ্রনাথ ক্রমশ লিখতে থাকেন গল্প, গান, কবিতা, উপন্যাস, নাটক। ১৯৩৭ সালে লেখা তাঁর প্রথম গল্প ‘বুভুক্ষা’ পড়ে মুগ্ধ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পকেট থেকে নিজের কলমটি বার করে তুলে দিয়েছিলেন বছর সতেরোর কিশোরের হাতে— ‘তোমার জীবনে সুখ আসবে, দুঃখ আসবে, কিন্তু এই কলমটি তুমি ছেড়ো না। মনে রেখো, এই কলমের জন্যই তুমি জন্মেছ।’ শচীন্দ্রনাথের মনে রেখেছিলেন কথাগুলো। ‘বুভুক্ষা’ লেখা হয়েছিল ‘মানসী’ পত্রিকা আয়োজিত গল্প প্রতিযোগিতা। বিচারক ছিলেন শরৎচন্দ্র। ১৯৪১ সালে লেখেন তাঁর প্রথম নাটক ‘উত্তরাধিকার’। সে বছরই বালিগঞ্জ শিল্পী সঙ্ঘের উদ্যোগে তা মঞ্চস্থ হয়। নাটক দেখে মুগ্ধ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রিনরুমে এসে আলাপ করে যান নাট্যকার-অভিনেতা শচীন্দ্রের সঙ্গে। আর প্রমথেশ বড়ুয়া তাঁকে ডেকে নেন ‘ডাক্তার’ ছবিতে, সহকারী পরিচালক হিসেবে। ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন শচীন্দ্রনাথ। পঙ্কজকুমার মল্লিক, তুলসী লাহিড়ী বা অহীন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও হয়। অবিভক্ত বাংলার নড়াইলের চিত্রা নদী তাঁর কবিতাকে প্রভাবিত করেছে। হাতে লেখা পত্রিকা ‘সাথী’তে লিখেছেন, ‘পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে সৈন্য সমাবেশের বিন্যাস’ বিষয়ে প্রবন্ধ। এ লেখা তৈরিতে তাঁর জ্যাঠামশায়, প্রাবন্ধিক-ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব ছিল। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে'বন্দরে বন্দরে’ উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম পুরস্কারে সম্মানিত করে ।আজ কথা-সাহিত্যিক, কবি ও নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করন। কথা-সাহিত্যিক শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

শচীন্দ্রনাথ ১৯২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কালীঘাটের ১০/১০ নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটে, মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। এখানেই বছর সাতেক কাটানোর পর তাঁর শান্তিনিকেতন যাত্রা। দুষ্টু ছেলে, লেখাপড়ায় মন নেই। দাদামশায় ভাবলেন, শান্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে ভর্তি করা গেলে যদি মানুষ করা যায়। কিন্তু সেখানে পাঠিয়েও শান্তি নেই দাদুর। মন কেমন করে, নাতির মুখখানা মনে পড়ে বার বার। বছর ঘুরতেই শচীন্দ্রনাথকে ফিরতে হল শান্তিনিকেতন থেকে। কিন্তু সেই সাময়িক বাস গভীর প্রভাব ফেলল শচীন্দ্রের মনে। রবীন্দ্রনাথকে দেখা প্রসঙ্গে শচীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘একদিন হল কী, গানের দল ঘুরতে ঘুরতে উত্তরায়ণে প্রবেশ করল। আমরা গাইতে-গাইতে দাঁড়ালাম একটা বাড়ির দোতলার সামনে, গানের দল হঠাৎ নীরব হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখি জানালায় দাঁড়িয়ে আছেন সেদিন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তাঁর স্বচ্ছ ললাটে গোল হয়ে পড়েছে সূর্যের আলো, আর আমার মনে হল, তাঁর ললাট-ধৃত সেই আলো থেকে রশ্মি ঠিকরে যেন এসে পড়ছে আমাদের বুকের মাঝখানে। শান্তিনিকেতন ছেড়ে ১৯৩৪ সালে পিতৃভূমি নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হলেন। সেখান থেকে ১৯৩৮-এ ম্যাট্রিকুলেশনে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে এলেন কলকাতায়। ভর্তি হলেন আশুতোষ কলেজে।পড়া শেষ হল না। আর্থিক অনটনের কারণে ইন্ডিয়ান কপার কর্পোরেশনে ইনস্পেক্টরের চাকরি নিয়ে যেতে হল ঘাটশিলা। ঘাটশিলা তাঁর কলকাতার সাহিত্য-সঙ্গ কেড়ে নিল বটে, কিন্তু দিল এমন এক জনের স্পর্শ, যিনি হয়ে উঠেছিলেন তাঁর পথনির্দেশক। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তরুণ লেখককে পড়ে ফেলতে সময় নেননি বিভূতিভূষণ। সারা জীবন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে আপন ভাগ্নি উমা দেবীর সঙ্গে বিয়েও দিয়েছিলেন শচীন্দ্রনাথের। ঘাটশিলার পরিবেশ শচীন্দ্রনাথের কলমে এনেছে বহু গল্প কবিতা গান, আর ‘এজন্মের ইতিহাস’ বা ‘সমুদ্রের গান’-এর মতো উপন্যাস। তবে এখানেও থিতু হতে পারলেন না বেশি দিন। ১৯৪৫-এ ‘এম এল ব্যানার্জি অ্যান্ড সন্স’ নামে এক জাহাজ কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে ওয়ালটেয়র চলে গেলেন। এই যাত্রাও বাংলা সাহিত্যে তৈরি করল নতুন পথ।

অন্তহীন সমুদ্রতরঙ্গ শব্দ-ধ্বনি-প্রাণ নিয়ে ঢুকে পড়ল বাংলা সাহিত্যে। তৈরি হল ‘সাগর-বলাকা’, ‘প্রবাল বলয়’, ‘মাটি’, ‘মৎস্যকন্যা’, ‘বৃত্ত’, ‘প্রেম’, ‘বিষুব রেখা’-র মতো স্মরণীয় গল্প-যাত্রা। সাগরের হাওয়া এসে লাগল বাংলা গল্পে। এর আগে যে তাতে সমুদ্রের গন্ধ ছিল না তা নয়, কিন্তু তা এমন রক্ত-মাংস-স্পর্শের সাগর ছিল না। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়— ‘ড্রয়িংরুমের সীমাবদ্ধতা ও পল্লি বাংলার রোম্যান্টিক পরিবেশ থেকে উদ্ধার করে বাংলা গল্পকে তিনি বিষুব-রৈখিক অঞ্চলে, ট্রপিক অরণ্য কান্তারে, আমিষগন্ধে ভরা সাত সাগরের তীরে তীরে, কখনও বন্দরে, কখনও মধ্য-সমুদ্রে, কখনও দ্বীপে দ্বীপান্তরে সরিয়ে নিয়ে গেছেন।’ বছরের পর বছর সমুদ্রে ভেসে চলা নাবিকের জীবন, যৌনতা, প্রেম, ত্যাগ, প্রাণময়তা, নিষ্ঠুরতা নিয়ে তাঁর আগে কেউ কলম ধরেছেন কি? ১৯৪৪-৪৫ নাগাদ লেখা হয় প্রথম উপন্যাস ‘এজন্মের ইতিহাস’। সরোজকুমার রায়চৌধুরী সম্পাদিত ‘বর্তমান’ পত্রিকায় ১৯৪৯ সালে তা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ১৪ মার্চ ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘জেগুয়ার’ নামের গল্পটি শচীন্দ্রনাথের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিল। এর আগে ‘ইঁদুর’ গল্পটিও প্রকাশিত হয় ‘দেশ’-এ। ১৯৫৩ সালে কলকাতায় ফিরে তিনি যোগ দেন রাজ্য সরকারের চাকরিতে, ১৯৬৬-তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ দফতরে। ১৯৮০ সালে ডেপুটি ডিরেক্টর পদে উন্নীত হয়ে অবসর। চেতলার মহেশ দত্ত লেনের বাড়ি ‘তীরভূমি’তে কেটেছে শেষ জীবন। তাঁর ‘জনপদবধূ’ দীর্ঘ কাল মঞ্চস্থ হয়েছে বিশ্বরূপা, স্টার বা রঙমহলে। ‘এই তীর্থ’ উপন্যাস থেকে হয়েছে ‘জীবন সংগীত’ চলচ্চিত্র। ‘বন্দরে বন্দরে’ উপন্যাসের জন্য ১৯৮৮-তে পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার। ছোটদের জন্য লিখেছেন ‘মার্কো’, ‘মেমোরিয়ালের পরী’, ‘বিভূতিভূষণের মৃত্যু’, ‘চন্দ্রলোক থেকে আসছি’ -র মতো গল্প, ‘ক্রৌঞ্চদ্বীপের ফকির’ উপন্যাস। বাঙালি পাঠক এক বার শচীন্দ্রনাথকে ফিরে পড়লে বাংলা সাহিত্যের অমূল্য রত্নরাজির সন্ধান পাবেন।

শচীন্দ্রনাথ নিজের শেষ লেখাটি শুরু করেছিলেন মৃত্যুর আগের দিন। ‘শেষ অধ্যায়’ নামের সেই অসম্পূর্ণ আত্মজৈবনিক উপন্যাসের শুরুতে লিখেছিলেন, ‘ভেবে দেখলাম আমার জীবনে প্রথম অধ্যায় বলে চিহ্নিত করবার মতো তেমন কিছু নেই। যা আছে তা শেষ অধ্যায়ে পুঞ্জীভূত।’...গোটা পনেরো বাক্য, লিখতে লিখতেই ১৯৯৯ সালের ২৫ মে সন্ধের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালের পথে গাড়িতেই কোমায়, পর দিন ২৬ মে মারা যান কথাসাহিত্যিক-নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ কথা-সাহিত্যিক, কবি ও নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী। কথা-সাহিত্যিক শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৮:১৮

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: কথা-সাহিত্যিক শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে
..............................................................................
আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৮:৪৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাদ স্বপ্নের শঙ্খচিল
কথা-সাহিত্যিক শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য।

২| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৮:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ে একুশতম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাই।
এই লেখকের কোনো বই আমি পড়ি নি।

২৬ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ধন্যবাদ আপনাকে
তবে তার কোন বই না পড়া ঠিক হয়নি।
পড়ে নিব্নে। আপনার খালাতো ভাইতো
আপনাকে পড়তে শিখিয়েছেন। রাস্তায়
না ঘুরে বই পড়ুন

৩| ২৬ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: রাস্তায়ও ঘুরবো। বইও পড়বো। আমার একটা লাইব্রেরী দেবার ইচ্ছা আছে। শহরের সমস্ত মানুষেরা আমার লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে পড়বে।

২৭ শে মে, ২০২০ রাত ১২:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না।
তবে বই দিয়ে দেউলিয়া হবার
সম্ভব্না আছে। বই কি ধারে দিবেন
নাকি পয়সার বিনিময়ে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.