নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
আজ ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস। ফারাক্কা বাঁধের ফলে নদীর নাব্যতা কেড়ে নেয়ার আশঙ্কায় ও পানি নায্য হিস্যার দাবীতে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সারাদেশের লাখ লাখ মানুষ রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান থেকে মরণ বাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশ নেন ও লংমার্চ শেষে কানসাট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সেদিন থেকেই ১৬ মে ফারাক্কা দিবস নামে পরিচিতি লাভ করে। দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জনদুর্ভোগের জন্য তারা ওইদিন লংমার্চ করে ভারত সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন মহান নেতা মওলানা ভাসানী। তাই এ দিনটি আজও শোষণ, বৈষম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং দাবি আদায়ের পক্ষে বঞ্চিতদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে পানিশুন্য করতে ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে মাত্র ১৮ কি.মি. দূরে ভারতের মনোহরপুরে দেয়া হয় ফারাক্কা বাঁধ। ১৯৬১ সালের ৩০ জানুয়ারি ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ১৯৭০ সালে শেষ হয় বাঁধটির নির্মাণকাজ। তখন পরীক্ষামূলকভাবে ভারত কিছু কিছু পানি ছাড়ে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে ফারাক্কার বাঁধ চালু হয়। ভারত ফারাক্কা বাধ নির্মান করে ১৯৭৬ থেকে একতরফাভাবে পানি নিজ দেশের অভ্যন্তরে ফিডার ক্যানেল দিয়ে প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে। ফলে ১৯৭৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানির নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিতই হচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে, শীতকালের শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদী থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত পানি পেত বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙ্গার পানি ইস্যু নিয়ে ৩০ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অতি দুর্বল একটি চুক্তি করেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই সে চুক্তি ভারত অকার্যকর করে দেয়। ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশ মাত্র ছয় হাজার ৪৫৭ কিউসেক পানি পায়, যা ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার পর সর্বনি¤œ প্রবাহ ছিল। অথচ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের পানি পাওয়ার কথা ৩৪ হাজার ৫০০ কিউসেক। ১৯৭৭ সালের পানি চুক্তিতে গ্যারান্টিক্লজ ছিল, কিন্তু এ চুক্তিতে তা না থাকায় ভারত বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা দিতে বাধ্য ছিল না। ফলে বাংলাদেশ পানি কম পেলেও তার প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া চুক্তিটিতে আন্তর্জাতিক সালিসিতে যাওয়ার কনো সুযোগ নেই। অথচ নেপালের সাথে মহাকালী নদী চুক্তিতে ভারত আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন মেনে নিয়েছে। কাজেই গঙ্গা নদীর পানি নিয়ে ভারতর সাথে যে পানি চুক্তি করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ এবং তা বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। এ চুক্তির সফলতা শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। এর কারণ গ্যারান্টিক্লজ বা অঙ্গীকার অনুচ্ছেদ না থাকা। বাস্তবে চুক্তির ফলাফল প্রায় শূন্য।পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, , ২০০১ সাল ২০১৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী পানি মিলছে মাত্র ৩ বছর ।
ফারাক্কা বাধের বিরুপ প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা,মহানন্দাসহ দেশের বড় বড় সব নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলে হয়ে পড়েছে পানিশূন্য বালির চরাঞ্চল। ফারাক্কা ব্যারেজের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মাসহ অন্য তিন নদী মহানন্দা, পাগলা ও পূনর্ভবা শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি না থাকায় পরিবেশের উপর পড়ছে বিরুপ প্রভাব। পানি বিশ্লেষকগণ বলেছেন, উজানে একাধিক বাঁধ দিয়ে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় ফারাক্কা পয়েন্টেই পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০সালের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হতে যেতে পারে। আজ থেকে চৌচল্লিশ বছর আগে আজকের এই ১৬ই মে তারিখেই ভারতে নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে লং মার্চে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজনীতিবিদ মৌলানা ভাসানি। তখন থেকেই বাংলাদেশে এই দিনটি 'ফারাক্কা লং মার্চ দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে, যদিও বিগত পাঁচ দশকে ফারাক্কা নিয়ে ভারতের অনড় অবস্থানে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। বস্তুত সাতের দশকের মাঝামাঝি ভারত যখন গঙ্গার বুকে ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করেছিল, তার পর থেকে বিতর্ক কখনওই এই প্রকল্পটির পিছু ছাড়েনি। সম্প্রতি ভারতেও ফারাক্কার বিরুদ্ধে জনমত জোরালো হচ্ছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তো ফারাক্কা ব্যারাজ ভেঙে ফেলারও প্রস্তাব করেছেন। মেধা পাটকরের মতো অ্যাক্টিভিস্ট ও অনেক বিশেষজ্ঞও বিবিসিকে বলছেন, ভারতেও ফারাক্কা এখন সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি ঘটাচ্ছে - কাজেই এটি অবিলম্বে 'ডিকমিশন' করা দরকার। আর সে জন্য মওলানা ভাসানীর মতো একজন সিংহপুরুষের বড়ই দরকার। অশীতিপর এ মানুষটি ভগ্নশরীর নিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে জাতিকে এককাতারে সমবেত করতে ডাক দিয়েছিলেন। তার সে ডাকে লাখ লাখ মানুষ সাড়া দিয়ে আগ্রাসী শক্তির ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
১৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ১:৫৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ ভ্রমরের ডানা।
আমরা অনেক কিছু চাই, অনেক কিছু
প্রত্যাশা করি। কিন্তু কিছু বিবেকহীন মানুষের
কারনে আমাদের প্রাপ্তি থাকে শূণ্যের কোঠায়।
তখন বিধাতার কাছে ফরিয়াদ করা ছাড়া কোন
বিকল্প থাকেনা।
২| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: নদী হলো দেশের সম্পদ। অথচ আমাদের দেশের নদী গুলোর করুন অবস্থা।
ফারাক্কা বাদ আমাদের জন্য অভিশাপ।
১৬ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:০০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বোঝার জন্য ধন্যবাদ।
তবে ফারাক্কা এখন শুধু আমাদের
অভিশাপ নয়. এটা ভারতের জন্যও
অভিশাপ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১২:১৭
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: আন্তর্জাতিক নদীর উপরে বাধ দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন সমর্থন করে না। একচেটিয়া পানি প্রত্যাহার করে উজানের নদী গুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। দেশের নদীগুলো প্রাণ ফিরে পাক এই কামনা সর্বদাই করি!