নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাগর সেনের ৮৮তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:০০


সাগর সেন প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। স্বকীয় উপস্থাপনা শৈলীতে বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত অন্য এক মাত্রায় নিজস্বতা পেয়েছে। সহজিয়া রীতিতে আর আবেগাপ্লুত গায়কিতে তাঁর নিবেদিত সঙ্গীতের মূর্ছনা শ্রোতাদের বিভোর করে। ১৯৬৮ সালে রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য 'মায়ার খেলা' য় তাঁর গাওয়া ' আমি জেনে শুনে বিষ করেছি গান' তাঁকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের খ্যাতনামা শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠা দেয়।তিনি ষাট দশকের শুরুর দিকে রবীন্দ্রসংগীত জগতে পদার্পণ করেন, যখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস ও চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের মতো মহারথীরা জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র সঙ্গে তার প্রথম রেকর্ড সম্পন্ন হয় ১৯৫৮ সালে। তারপরই তিনি কলকাতার আকাশবাণীতে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসেবে পরিবেশনা শুরু করেন। বেশ কয়েকটি বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতের কণ্ঠশিল্পী ছিলেন তিনি। সাগর সেনের তিন পুত্র প্রিয়াম সেন, প্রিতম সেন ও প্রমিত সেন। এদের মধ্যে প্রমিত সেন প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। আজ রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাগর সেনের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩২ সালের আজকের দিনে তিনি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বড় হয়েছেন কলকাতায়। রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাগর সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

সাগর সেন ১৯৩২ সালের ১৫ মে, ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের সময় পরিবার পাড়ি জমায় কলকাতায়। সেখানে বরানগরে থাকতে শুরু করে তাঁর পরিবার। তার পিতার নাম বিজন বিহারী সেন। স্কুলের পাঠ কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে। এরপর কলেজের পাঠ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। সাগর সেনের প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গীত শিক্ষার হাতেখড়ি হয় সেখানেই। সেসময় পঙ্কজ কুমার মল্লিক, দেবব্রত বিশ্বাসদের খুব ভালো সময় চলছে। পাশাপাশি তরুণ গায়কদের মধ্যে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়রা উঠে আসছেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে সরাসরি শেখা কণিকা বন্দ্যেপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্ররাও দারুণ গাইছেন। তাঁদের গান শুনতে শুনতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। অবশেষে ১৯৫৮ সালে প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত করেন অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে। তাঁর পরিচিতি বাড়তে থাকে।তাঁর জীবিকা বলতে মুখ্যতঃ ছিল গান। এছাড়া কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গীত শিক্ষক রূপে আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন। ষাটের দশক থেকে তিনি সন্তোষ গুপ্তের নির্দেশনায় রবি ঠাকুরের বিভিন্ন গীতিনাট্যে অংশ নিতে থাকেন। ১৯৬৬ সালে গীতিনাট্য ‘শাপমোচন’, ১৯৬৭ সালে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’-য় অংশ নেন। তবে তাঁর চূড়ান্ত খ্যাতি আসে ১৯৬৮ সালে। অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে প্রচারিত হয় তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান’ গানটি প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা পায় এবং সাগর সেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে হেমন্ত, চিন্ময়দের সমকক্ষ হয়ে ওঠেন। ১৯৭৪ সালে আধুনিক বাংলা গানেও অভিষেক ঘটে তাঁর। প্লেব্যাক করেন ‘যে যেখানে দাঁড়িয়ে’ ছবিতে। ১৯৭৯ সালে ‘পরিচয়’ ছবিতে গাইলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে’। গানটির জন্য বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে সেরা গায়কের পুরষ্কার পান। ১৯৮০ সালে সঙ্গীত পরিচালনা করেন ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রের। এছাড়া সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত পরিচালনায় রেকর্ড করেন কিছু আধুনিক বাংলা গান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ ‘এ জীবন এমনি করে আর তো সয়না’, ‘কী হলো চাঁদ কেনো মেঘে ঢেকে গেলো’, সবিতা চৌধুরীর সাথে ডুয়েট ‘তৃষিত নয়নে এসো’।

সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন সাগর সেন। ‘রবি রাশমি’ নামে সঙ্গীত বিদ্যালয় গড়ে তোলেন তিনি। অংশ নেন বিখ্যাত কিছু কনসার্টে। এর মধ্যে ছিল- শ্রাবণ সন্ধ্যা, শাপমোচন, ঋতুরঙ্গ, গানের ঝরণাতলায়, বিশ্বজন মোহিছে, স্বদেশে নেয়ে বিদেশে খেয়ে (পাশ্চাত্যসুরের রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে আয়োজন) ইত্যাদি৷ পারফর্ম করেন রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, কলা মন্দির এর মত জায়গায়। ১৯৭৪ সালে গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইণ্ডিয়ার ব্যানারে আসে তাঁর প্রথম লং প্লে রেকর্ড ‘পূজা ও প্রেম’ রেকর্ডের দুই পিঠে ছিল সাতটি ওকরে মোট চোদ্দটি গান। একপিঠে পূজা পর্বের, আরেকপিঠে প্রেম পর্বের গান। রেকর্ডের ‘আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান’, ‘কতবারো ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া’, ‘অলি বারবার ফিরে যায়’, ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম’ গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সাগর সেন পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে লং প্লে রেকর্ড বের করতে থাকেন। তাঁর হাত ধরে রবীন্দ্রসঙ্গীত ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। বাণিজ্যিক সফলতার দিক থেকেও তিনি পরিণত হন শীর্ষ রবীন্দ্র গায়কে। সাগর সেনের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয় আরেকটি পালক। ১৯৭৫ এর আগস্টে কোলকাতা দূরদর্শনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশনার সম্মান পান তিনি। সাথে ছিলেন আরেক বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা সেন। সাগর সেন পরিবেশন করেছিলেন ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ’। ক্যারিয়ারে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা নিয়ে এগিয়ে চলছেন সাগর সেন।

১৯৮১ সালে তার ক্যান্সার ধরা পরে। চিকিৎসা শুরু হলো। কিন্তু বিশেষ কিছু সুবিধা হলো না। এরকম সময়েও তিনি গান গাওয়া ও শেখানো অব্যাহত রাখেন। ১৯৮২ সালের শেষদিকে তাঁর শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৮৩ সালের ৪ জানুয়ারি মাত্র ৫০ বছর বয়সে পরলোকে পাড়ি জমান এই স্বর্ণকণ্ঠ গায়ক। সাগর সেন মৃত্যুর সময় রেখে যান তাঁর স্ত্রী ও তিন পুত্র- প্রিয়ম, প্রীতম ও প্রমিতকে। এর মধ্যে প্রমিত সেন পরবর্তীতে একজন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সাগর সেনের গায়কীর শক্তিমান দিক তাঁর কণ্ঠে অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কাজের দক্ষতা। পাশাপাশি তাঁর ভোকাল টিম্বার এবং কণ্ঠের আবেগ তাঁর গীত রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়। তিনি আজ নেই। তবে তাঁর গান আছে, গানের মাধ্যমে তিনিও বেঁচে আছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে শ্রোতাদের হৃদয়ে৷ আজ রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাগর সেনের জন্মবার্ষিকী। রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাগর সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০২০ রাত ৯:০৫

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাগর সেনের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা;

তবে শুনেছি শান্তিনিকেতন উনাকে যথাযোগ্য সন্মান দেন নি, তবে তিনি একক চেষ্টায় মানুষের অন্তরে দাগ কেটেছেন; আমি উনার গান প্রথম শুনি ৯৩ সালে।

২| ১৫ ই মে, ২০২০ রাত ১০:০৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: অনেক রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীর ভীড়ে তিনি প্রায় হারিয়ে গেছেন।তাকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ

৩| ১৫ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.