নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর ৯৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৪ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:১৪


হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড একজন বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক। সাহিত্যে ‘লস্ট ওয়ার্ল্ড’ ধারাকে সমৃদ্ধ করা ব্রিটিশ সাহিত্যিকদের মধ্যে স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড অন্যতম পথিকৃৎ। অদ্ভুত সব স্থানে বিচিত্র চরিত্রের সমারোহে রোমাঞ্চকর উপন্যাস রচনায় পাঠককে মুগ্ধ করার পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজত্ব জুড়ে কৃষিকাজে সংস্কারমূলক অবদান রাখেন তিনি। ভিক্টোরিয়ান সাহিত্যযুগের শেষাংশে তার রচিত গল্প ও উপন্যাস আকাশচুম্বী খ্যাতি লাভ করে, অনুপ্রেরণা যোগায় বহু পাঠক ও সাহিত্যিককে। তিনি ইতিহাস আশ্রিত দুঃসাহসিক কাহিনী নিয়ে উপন্যাস রচনায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এমনসব অঞ্চলের কাহিনী লিখেছেন যেগুলো ইংরেজদের কাছে ছিল অনেকটাই অপরিচিত এবং অদ্ভুত। ভাইয়ের সঙ্গে বাজি ধরেছিলেন হেনরি, বলেছিলেন ট্রেজার আইল্যান্ড এর চেয়ে রোমাঞ্চকর বই লেখার ক্ষমতা তার আছে। “এতই যদি পারো, তা লিখে দেখাও না কেন?” কিছুক্ষণ শান্ত চোখে চেয়ে থাকলেন, তারপর বললেন, “বটে! তবে তাই হোক!” কিং সলোমনস মাইনস বা সলোমানে গুপ্তধন লিখে সত্যিই প্রমাণও করে দিয়েছিলেন তা। বইটি প্রকাশ পাবার পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। লস্ট ওয়ার্ল্ড ধারার সর্বপ্রথম উপন্যাস ছিল এটি। সলোমনের গুপ্তধন তার সেরা কীর্তি হিসেবে পরিগণিত। এটি সাহিত্য জগতে একটি ক্লাসিক হিসেবে সমাদৃত হয়। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই এর মধ্যে আছে মন্টেজুমাস ডটার, মর্নিং স্টার, পার্ল মেইডেন, দ্য ব্রেদরেন, অ্যালান এন্ড দ্য হোলি ফ্লাওয়ার ইত্যাদি। ঔপন্যাসিক স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর ৯৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯২৫ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ইংরেজ ঔপন্যাসিক স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড ১৮৫৬ সালের ২২ জুন ইংল্যন্ডের নরফোকে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যারিস্টার বাবা স্যার উইলিয়াম হ্যাগার্ড আর লেখক মা এলা ডাভটনসহ বারজনের বিশাল পরিবারের অষ্টম সন্তান ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি খুব একটা অনুরক্ত ছিলেন না তার বাবা, ফলে অন্যান্য বড় ভাইরা যেখানে ইংল্যান্ডের সব নামীদামী স্কুলে নিজেদের পড়াশোনার পাট চুকালেন, সেখানে হেনরির শিক্ষাদাতা হলেন এক বৃদ্ধ পাদ্রী, নাম রেভারেন্ড গ্রাহাম। এর ছাপ পড়েছিল হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের লেখাতেও, নিজেকে অ্যালান কোয়াটারমেইন হিসেবে কল্পনা করা লেখক নিজের বাবা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এক যাজককে! আর্মি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ফেল করার পর হেনরির বাবা ছেলেকে পাঠিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। মাত্র ১৯ বছর বয়সে হেনরিকে পাড়ি দিতে হয় ইউরোপের এমাথা থেকে আফ্রিকার ওমাথা। নাটালের গভর্নরের কাছে কিছুদিন থাকার পর হেনরির পরবর্তী ঠিকানা হয় ট্রান্সভাল, স্যার থিওফাইলাস শেপস্টোনের স্টাফ হিসেবে। ওখানে থাকার সময়েই ভালোবেসে ফেলেন এক মেয়েকে, নাম মেরি এলিজাবেথ “লিলি” জ্যাকসন! অবশেষে ১৮৭৮ সালের দিকে যখন আয় করা শুরু করেন, বাবাকে চিঠি লিখে জানান ইংল্যান্ডে ফিরে মেরিকে নিয়ে সংসার পাতবেন। কিন্তু বাবা তাকে ইংল্যান্ডে ফিরতে নিষেধ করেন, আগে একটা ভালো ক্যারিয়ার, পরে সংসার। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু মাঝখানে বাগড়া বাঁধালেন মেরির বাবা। মেরিকে বিয়ে দিয়ে দিলেন এক উচ্চশিক্ষিত ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে। দুঃখ ভুলতে কঙ্গোতে গিয়ে সিংহ শিকার করলেন, ঘুরে বেড়ালেন আফ্রিকার নির্জন প্রান্তরে, জুলুসহ অন্যান্য উপজাতিদের সাথে ভাব জমালেন। অবশেষে ১৮৮০ সালে কিছুদিনের জন্য ইংল্যান্ডে ফিরে এসে গাঁটছড়া বাধলেন নিজের এক বন্ধুর বোনের সাথে, স্ত্রী মারিয়ানা লুইজার স্থান হলো উপন্যাসের “স্টেলা ফ্রেজেলিয়া” হিসেবে। তারপর স্ত্রীকে আফ্রিকার বন-বাদাড়ের স্বাদ উপহার দিয়ে ১৮৮৩ সালে থিতু হলেন ইংল্যান্ডের ডিচিংহ্যামে। ডিচিংহ্যামের শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে একের পর এক লিখে গেলেন, “কিং সলোমন’স মাইন (১৮৮৫)”, “মাইওয়ার প্রতিশোধ (১৮৮৬)”, “শী (১৮৮৬)”, “ক্লিওপেট্রা (১৮৮৭)”, “অ্যালান কোয়াটারমেইন (১৮৮৭)”, “অ্যালান’স ওয়াইফ (১৮৮৯)”- এর মতো জগদ্বিখ্যাত উপন্যাসগুলো। এর মধ্যে “শী” এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছিল এটি নিয়ে বানানো হয়েছিল একেবারে প্রথম যুগের নির্বাক চলচ্চিত্রসহ ৮টি সিনেমা, সাথে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইগুলোর ১২ নম্বর জায়গাটিও দখলে রেখেছে এই বই!

১৮৯১ সালে মেক্সিকো পাড়ি জমিয়েছিলেন হ্যাগার্ড, “মন্টেজুমার মেয়ে” উপন্যাসের জন্য গবেষণা করতে। সেই সময়ই খবর পান তার ছেলে জ্যাক বসন্ত রোগে মারা গিয়েছে। তা শুনেই বেশ কয়েক মাস অসুস্থতায় ভুগে ফিরে আসেন পিতৃভূমিতে। ছেলের মৃত্যুর ছাপ পড়েছিল তার লেখাতেও। “মন্টেজুমার মেয়ে”-উপন্যাসেই নায়ক টমাস উইংফিল্ড-এর ছেলেকে মেরে ফেলেন, এমনকি অ্যালান কোয়াটারমেইনের পরবর্তী উপন্যাসগুলোতেও উল্লেখ করেন ছেলের মৃত্যুর কথা। “দ্য ব্রেদরেন” উপন্যাসের ক্রুসেডের ঘটনা, “মন্টেজুমার মেয়ে” উপন্যাসের অ্যাজটেক যুদ্ধ বা “ভার্জিন অফ দ্য সান”-এর হেস্টিংসের যুদ্ধ; সবগুলো উপন্যাসেই রোমাঞ্চকর অভিযানের পাশাপাশি ফুটিয়ে তুলেছেন মানবমনের গতিপ্রকৃতি। বিশ্বাসঘাতকতা, আত্মত্যাগ, সংঘাতের মাঝখান থেকে জন্ম দিয়েছেন নিটোল প্রেমের, যার প্রেরণা পেয়েছিলেন লন্ডনের রাজপথে, ডিচিংহ্যামের বাগানে আর আফ্রিকার বুনো প্রান্তরে। ১৯১২ সালে “অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার” নাইটহুড পাওয়ার পর হাত দেন “মেরি” উপন্যাসে, কারণ ততদিনে বাস্তবের মেরি মারা গিয়েছে। মেরির উচ্চশিক্ষিত স্বামী ফ্রাংক আর্চার তার সমম্ত সম্পত্তি কেড়ে নেয় এবং বেহিসেবে খরচের দ্বারা ঋণে জর্জরিত হয়ে স্ত্রী লিলিকে ছেড়েই আফ্রিকা পালিয়ে যায়। লিলি তার স্বামীর খোঁজে আফ্রিকা যান সেখানে তিনি সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হন। অতপর ১৯০৫ সালে তিনি আবার ইংল্যান্ডে ফিরে আসলে সিফিলিস আক্রান্ত স্বামীর মৃত্যুর খবরের পাশাপাশি স্বামীর মরণব্যাধিও সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। ততদিনে হ্যাগার্ড নামী দামী লেখকের পরিচয় পেয়ে গিয়েছেন। অনেক বছর পর, লেখক হিসেবে সুপরিচিত প্রাক্তন প্রেমিককে চিঠি লিখে নিজের ও সন্তানের দুরবস্থার কথা জানায় স্বামী পরিত্যক্তা লিলি। ছোটবেলার প্রেমিকাকে সাহায্য করেছেন দু’হাত ভরেই। হ্যাগার্ড তার সকল দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেন এবং তার ছেলে পড়াশুনার ব্যবস্থা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিলির দেখাশোনা করে যান লেখক। ১৯০৯ সালের ২২শে এপ্রিল লিলি সিফিলিস রোগে মারা যাওয়ার পর ফ্রাংক আর্চার পরিচিতি পেলেন “মেরি” উপন্যাসের দুশ্চরিত্র ভিলেন হিসেবে। ১৯২৫ সালে ১৪ মে ইংল্যান্ডের ডিচিংহ্যামেমারা যান স্যার হ্যাগার্ড। ডিচিংহ্যামের গির্জায় পুঁতে রাখা হয় তার পোড়ানো মৃতদেহের ছাইয়ের অবশিষ্টাংশ। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর ৯৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড এর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বী কি মুভি দেখেন?
যদি দেখেন তো আপনার পছন্দের কিছু মুভির নাম জানাবেন।

১৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:১৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনি কি শ্বশুর বাড়ি যান?
আদর যত্ন কেমন পান?
এই ছবিগুলো দেখুন
১। আনফ্রিডম-
২। দ্য পিংক মিরর
৩। গান্ডু-
৪। ডেজড ইন দুন-
৫। পাঁচ-

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.