নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
উপমহাদেশের নন্দিত কথাসাহিত্যিক সাদত হাসান মান্টো। যাকে বলা হয় ছোটগল্পের ঈশ্বর। ১৯৪৭ সালে উপনিবেশ শাসনের অবসানের মাধ্যমে জন্ম হয় দুটি রাষ্ট্রের, যার একটি পাকিস্তান অন্যটি হলো ভারত। মান্টো দুটি দেশেরই সাহিত্য জগতের ক্ষণজন্মা নক্ষত্র। জীবনের প্রথমভাগ কাটিয়েছেন ব্রিটিশ ভারতে। শেষ সময়টুকু পাকিস্তানে। রাষ্ট্র, ধর্মবাদী থেকে প্রগতিশীল সবাই একযোগে সাদত হাসান মান্টোকে খারিজ করে দিলেও তিনি গল্পকার হিসেবে নিজের অবস্থান জানতেন। মৃত্যুর এক বছর আগে লেখা নিজের এপিটাফে তিনি বলে গেছেন, ‘এখানে সমাধিতলে শুয়ে আছে মান্টো এবং তাঁর বুকে সমাহিত হয়ে আছে গল্প বলার সব কৌশল আর রহস্য।’ সাদত হাসান মান্টোমান্টো সম্পর্কে অনেক কিছু বলা ও লেখা হয়েছে। এসব তার বিরুদ্ধেই বেশি, যত না তার পক্ষে। কেউ কেউ তাকে দুশমন বলে। কেউ বলে টাকমাথা দেবদূত। এইসব পরস্পরবিরোধী রিপোর্টের ভিত্তিতে যে কোনও বুদ্ধিমান লোকই কোনও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে না। কখনো ফতোয়া এসেছে, অশ্লীলতার জন্য মামলা হয়েছে ছয়বার, বন্ধুরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু মান্টোর চারপাশে বয়ে চলা জীবনের প্রতি আকর্ষণ আর তাঁর কলম কেউ থামাতে পারেনি। মাত্র ৪৩ বছরের জীবনে তিনি নানা রকম পেশায় জড়িত হন। অনুবাদক, বেতার নাট্যকার, চলচ্চিত্রের কাহিনিকার ও সাংবাদিক হিসেবে তাঁর জীবন ছিল কর্মবহুল। তার ছোট গল্পের সংকলন Kingdom's end and other stories, একটি উপন্যাস ,তিনটি প্রবন্ধ সংগ্রহ ও ব্যক্তিগত স্কেচের দুটি সংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে। বোম্বাই চলচ্চিত্র জগত অর্থাৎ বলিউডে মান্টোর অজস্র কাজ রয়েছে। বহু সিনেমার স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে প্রথম শ্রেনীর চিত্রাভিনেতা ও পরিচালকদের কাছে মান্টোর কদর ছিল। আট দিন, চল চলরে নওজোয়ান, মির্জা গালিব ইত্যাদি সিনেমার স্ক্রিপ্ট রাইটিং তার কৃতিত্ব। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে ওঠে তাঁর সাহিত্য। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগ তাঁর ব্যক্তিগত ও সাহিত্যিক জীবনে গভীর ছাপ ফেলে। তিনি পাকিস্তানে চলে যান। সেখানেও মানসিক ও আর্থিকভাবে থিতু হতে পারেননি। উপমহাদেশের আরো অনেক সাহিত্যিকের মতো মান্টোও তার জীবদ্দশায় অবহেলিত ছিলেন। নিজের কাজের কৃতিত্বও পাননি জীবদ্দশায়। অসাধারণ গল্প তিনি লিখতেন ঠিকই, তবে তার খুব বদনামও ছিলো। ধরাবাঁধা কোনো সংগঠনে তিনি কখনো অন্তর্ভুক্ত হননি। সারাজীবনই ছিলেন অস্থিরমতি, চঞ্চল। ছিলো অতিমাত্রায় অ্যালকোহল পানের অভ্যাস। এমন কি লেখায় অশ্লীলতার অভিযোগে তাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। নিদারুণ অর্থকষ্টে ভুগেছেন মান্টো। দেশভাগের কারণে যে মানুষগুলোর জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছিল, সাদাত হাসান মান্টো তার মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তানে যে ক'বছর তিনি বেঁচে ছিলেন, সেই বছরগুলোতে লেখক হিসেবে তাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। জীবিকা উপার্জনের জন্য পাকিস্তানেও যোগ দিয়েছিলেন ফিল্ম কোম্পানিতে। তবে পরপর দু-দুটো চলচ্চিত্র ফ্লপ হওয়ায় পাকিস্তানী ফিল্মেও খুব বেশি ভালো অবস্থান জোগাড় করে উঠতে পারেননি তিনি। মজার ব্যাপার হলো, একে অবশ্য দুঃখজনকও বলতে পারেন, পাকিস্তানে থাকাকালে লেখক হিসেবে তাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া না হলেও তিনি সেসময় যেসব গল্প লিখেছিলেন, সেগুলোকেই তার সেরা সাহিত্যকর্ম হিসেবে ধরা হয়। ভারত ভাগের নির্মম শিকার ক্ষণজন্মা এই কথাসাহিত্যিকের আজ ১০৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯১২ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। নন্দিত লেখক সাদত হাসান মান্টোর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
সাদত হাসান মান্টো ১৯১২ সালের ১১ মে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের লুধিয়ানা জেলার সোমরালা গ্রামের এক ব্যারিস্টার সুন্নী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জাতিগতভাবে মান্টো ছিলেন কাশ্মিরী। মান্টো ছিল বাবামায়ের কনিষ্ঠতম সন্তান। মান্টোর পিতা খ্বাজা গুলাম হাসান একজন আদালতের বিচারক এবং অন্যন্ত রুক্ষ মানুষ, অপরদিকে মা সর্দার হাসান ছিলেন কোমলপ্রাণা। এই দুই বিপরীত স্বভাবের অশান্ত তোলপাড়ের মধ্যে মান্টো ছোটবেলা থেকে বোহেমিয়ান হয়ে ওঠেন। সে ছিল বুদ্ধিমান, কিন্তু ভয়ঙ্কর দুরন্ত। লেখাপড়ার হাতে খড়ি অমৃতসরের মুসলিম হাই স্কুলে। কিন্তু স্কুলের গন্ডিতে তার মন প্রাণ হাঁপিয়ে উঠতো। পড়ালেখায় অমনোযোগীতার কারণে স্বভাবতই দু’বার এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হন। তিনবারের বার পাশ করেছে তাও থার্ড ডিভিশনে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সে ফেল করেছিল উর্দু ভাষা ও সাহিত্যে। সেই মান্টোই আজ উর্দু সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক। মান্টো নিজে বলতেন 'তাকে উর্দু সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক বলা হলেও ক্লাসের পরীক্ষায় তিনি উর্দুতে কখনো পাশ করতে পারেননি। স্কুলের পাঠ্য বহির্ভূত গল্প-উপন্যাসের বই পড়ার প্রবল আগ্রহ তাঁকে তরুণ বয়সেই অমৃতসর রেল স্টেশনের হুইলার বুকস্টল থেকে বই চুরিতে প্রলুব্ধ করেছিলো। এছাড়াও বহুবার সে তার বউয়ের অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে বেশ কয়েকশো টাকা চুরি করেছে। এমন হতো কোনদিন সে গটগট করে এসে তার বউয়ের হাতে ৮০০ টাকা দিল। তারপর আড়চোখে নজর করতে লাগল বউ টাকাগুলো রাখল কোথায়। আর পরের দিনই একটা নোট হাপিস। আর অবধারিতভাবেই এর জন্য বকুনি খেতে হত চারকবাকরদের। সে যা হোক ১৯৩১ সালে কলেজে পাঠকালীন অবিভক্ত ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের অশান্ত পরিবেশে মান্টোর লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটে। ১৯৩২ সালে পিতার মৃত্যুর পর মান্টো আরো অসহায় হয়ে পড়েন। পরিবারের অর্থ কষ্ট লাঘবের জন্যে তখন থেকেই তিনি আয়-উপার্জনের পথ খুঁজতে থাকেন। সে সময় তার্কিক লেখক আবদুল বারি আলিগের সঙ্গে মান্টোর সাক্ষাৎ ঘটে। এই সাক্ষাৎ সাদত হাসান মান্টোর জীবনে একটি মাইলফলক।
(তিন কন্যার সাথে মান্টো)
মাত্র ৪৩ বছরের জীবনে প্রবল উদ্যমে লিখে গেছেন ২২টি ছোটগল্পের সংকলন, ১টা উপন্যাস, রেডিও নাটকের ৭টা সংগ্রহ, ৩টা প্রবন্ধ সংকলন আর ২টা চেনা মানুষদের স্মৃতিকথা! তাঁর লেখা সিনেমার চিত্রনাট্যগুলো এক করে ছাপানো হয়েছে বলে জানা যায় না। এগুলোর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ লিখেছেন দুই দানবের জন্য মদ আর সংসার। তবে এসবের মধ্যে তিনি ভারত ভাগের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও শুনিয়ে যাচ্ছেন রক্ত হিম করা গল্প। গল্পগুলো শোনাচ্ছেন সেই দেশগুলোতে, যেখানে ইতিহাস হিসাব করে অবহেলা করা হয়, যে দেশগুলোতে বর্তমানের শাসন অনুযায়ী অতীতও পাল্টে যায়। এই ইতিহাস প্রকল্পের সামনে মান্টো একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। বেঁচে থাকতে তিনি যেমন অনেকের কাছে অস্বস্তিকর ছিলেন, মরে গিয়ে ঝাঁজ আরও বেড়েছে। সাময়িক কর্তার খায়েশ অনুযায়ী বদলে যাওয়া ইতিহাসের আসল পাঠ নিতে গেলে মান্টোর তুলনা নেই; বিশেষ করে, যে ইতিহাস এমন অস্বস্তিকর, অনিশ্চিত আর বিপজ্জনক বর্তমান তৈরি করেছে। মান্টো নিজে সে কথা জানতেন। সে জন্য তখন যা ঘটেছে, মান্টো তাতে কোনো পক্ষাবলম্বন না করে কেবল লিখে রেখে গেছেন। তাতে কোনো তত্ত্ব বিশ্লেষণ নেই, কোনো বেদনাবোধও নেই যেন। মান্টো যেন ১৯৪৭ সালের দাঙ্গার চলমান ছবি তুলে রাখছেন কাগজে আর কলমে! এমন নিস্পৃহ কিন্তু নির্মম কাজ কেন করলেন মান্টো? মানুষের মন আর কদর্যতার বহু মাত্রা তুলে আনতে মান্টোর কোনো জুড়ি নেই। তিনি দেখেছেন যে বর্তমান যখন অতীত হয়, তখন সবকিছু কেমন প্রয়োজনমতো বদলে দেওয়া হয়। তাই কি তিনি কেবল যা ঘটেছে, তার অবিকল ফটোগ্রাফমাত্র রেখে গেছেন, তাতে কোনো পক্ষের, ঘৃণার বা সহমর্মিতার কোনো রং না লাগিয়ে? অতীত যখন পাল্টে যাওয়ার নিরন্তর হুমকির মুখে থাকে, তখন মান্টোর এই ছবি মারাত্মক হয়ে হাজির হতে পারে কারও কারও জন্য। মান্টো বিরুদ্ধে ছয়বার অশ্লীলতার অভিযোগে মামলা হয়। ভারতে ও পাকিস্তান দুই দেশেই তার গল্পকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় অশ্লীলতার অভিযোগে। তার বিটার ফ্রুট গল্পের জন্যে অশ্লীলতার অভিযোগে তাকে লাহোর আদালতে অভিযুক্ত হয়ে আসতে হয় ১৯৫০ সালের ২৯ আগস্ট। সাদাত হাসান মান্টো আর্থিক দুরবস্থার কারণে ভাল আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেননি। স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে তরুন আইনজীবী শেখ খুরশিদ আহমেদ (পরে পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী হন) ও আরো তিনজন তরুন উকিল মান্টোর পক্ষে সওয়াল করেন। তার গল্পে বোহেমিয়ান জীবন, সমাজের অন্ধকার জীবনের জটিলতা, মাতাল, পাগল, ভবঘুরে, পতিতারা ঘুরে ফিরে এসেছে। দোষী সাব্যস্ত হয়ে তাকে জরিমানাও দিতে হয়েছে। তার অধিকাংশ কাজ পৃথিবীর বহুভাষায় অনূদিত হয়েছে।
(স্ত্রী সোফিয়া (বামে) এবং বোন জাকিয়া হামিদের সাথে মান্টো)
ব্যক্তিগত জীবনে মান্টো কাশ্মীরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সোফিয়া নামের তরুণীকে বিয়ে করেন। তার তিন মেয়ে এবং এক ছেলে হয়েছিল। যদিও পুত্রসন্তানটি মাত্র এক বছর বেঁচেছিল। এরপর আসে তার জীবনের মানসিকভাবে ভয়াবহ এক অধ্যায়। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের ভোরে তিনি হঠাৎ খেয়াল করেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কী দ্রুতবেগে তার তৎকালীন বসতস্থল বোম্বেতে (বর্তমানে মুম্বাই) ছড়িয়ে পড়ছে। ঠিক ঐ সময়টাতেই তিনি একজন মুসলিম হবার অপরাধে বোম্বে টকিজ ফিল্ম থেকে তার স্ক্রিন রাইটারের চাকরি হারান। পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাকে বাধ্য হয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়। শরণার্থী হিসেবে তিনি পরিবারসহতিনি বোম্বে (মুম্বাই) ছেড়ে পাকিস্তানের লাহোর পাড়ি দিতে বাধ্য হন। তার ভালোবাসার বোম্বের সিনেমাজগৎ, তাঁর বন্ধু আর চেনা মুখগুলো সহসা অচেনা হয়ে যাওয়ার শহর ছেড়ে তিনি যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছেন। লাহোরের সিনেমাজগৎ তখন সবে বুঝতে শুরু করেছে যে তার সামনে বিশাল সম্ভাবনা। কিন্তু তা বাস্তব হয়ে উঠতে অনেক দেরি। মান্টো তত দিনে প্রগতিশীল ঘরানা থেকে ধর্মবাদী রাষ্ট্র; সবার সমান চক্ষুশূল। সংসার চালানোর টাকা জোগাড় করা কঠিন হচ্ছে দিন দিন। মদের প্রতি আকর্ষণ ছিল আগেও। এই পরবাসে এসে বন্ধু আর সহায়হীন হয়ে তা হয়ে গেল নেশা। বুদ্ধিমান লেখকেরা তখন সরকারের কাছ থেকে বাড়ি, ব্যবসা ইত্যাদি বরাদ্দ নিয়ে নিচ্ছেন। এতটা বাস্তববুদ্ধি মান্টোর কোনোকালেই ছিল না। একমাত্র অবলম্বন পত্রিকায় লিখে রোজগার। মদ আর বাজার খরচের টাকার জন্য দুশ্চিন্তিত লেখক সদ্য দেখা দাঙ্গার গল্প লিখে দেন কাঁপা কাঁপা হাতে। সেই গল্প কখনো কেবল এক লাইন, বেশি হলে পৃষ্ঠা দেড়েক। এভাবে লেখা ৩২টা গল্প নিয়ে ১৯৪৮ সালে বের হয় সিয়াহ হাশিয়ে, মানে কালো সীমানা। এই বই মান্টো আর প্রগতিশীল লেখক সংঘের মধ্যে বিচ্ছেদেরও কারণ হলো। মান্টো বন্ধুহীন হয়ে পড়লেন। বন্ধু বলতে রইল তারা, যারা তাঁকে সস্তা মদ জোগাড় করে দেয়, যারা তাঁর মৃত্যু এগিয়ে নিয়ে এসেছিল। মান্টো গালিবের একটি কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে একটি প্রবন্ধের শিরোনাম দিয়েছিলেন, 'কুছ নহী হ্যায় তো অদাওত হী সহী' (কিছু না থাকলে শত্রুতাই থাক)। এসময় তার জীবনযাত্রা ও ছিল চুড়ান্ত বাউণ্ডুলে এবং বেপরোয়া।ক্রমাগত নিম্ন মানের সুরা পানে মান্টো “লিভার সিরোসিস”-এ আক্রান্ত হন। শরীরের প্রতি অযত্ন, অপ্রতুল চিকিৎসা, আর্থিক অনটন ইত্যাদিতে জর্জরিত মান্টোর বেঁচে থাকার প্রবল আগ্রহ ব্যাধির কাছে আত্মসমর্পণ করে। ‘মান্টো শুধু আমাদের দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের নয়, সারা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় লেখকদের একজন।’ তাঁর বিখ্যাত গল্পের মধ্যে রয়েছে ‘বু’, ‘টোবাটেক সিং’, ‘তামাসা’, ‘ঠান্ডা গোস্ত’, ‘কালি সালোয়ার’, ‘খালি বোতল’, ‘ধুঁয়া’ ইত্যাদি। তাঁর রচনায় দেশভাগ, সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গা, মানব চরিত্রের বীভৎসতার ছবি বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। তাঁর স্বপ্ন ছিল প্রগতিশীল চিন্তায় উজ্জীবিত নতুন এক সমাজ। যে-সমাজকে সাম্প্রদায়িক বিষ ছুঁতে পারবে না, যে-সমাজে মানুষ হবে মুখ্য। প্রগতিশীল এই চিন্তাভাবনা তাঁর সাহিত্যে প্রবলভাবে চলে আসে। শুধু কথাসাহিত্য নয়, পাশাপাশি মান্টো চলচ্চিত্রেও নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। দেখতে পাই, বোম্বাই চলচ্চিত্রজগতেও তাঁর অজস্র কাজ রয়েছে। আট দিন, চল চলরে নওজোয়ান, মির্জা গালিব ইত্যাদি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট রাইটিং তাঁর কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। ১৯৫৫ সালের ১৮ জানুয়ারি তার অকাল প্রয়াণ ঘটে তার দ্বিতীয় আবাস ভূমি লাহোরে। সাহিত্যের কোন নির্দিষ্ট সীমানা নেই, সাহিত্য আকাশের অসীম সীমানায় বেঁচে থাকুন শিল্পের সাম্য মৈত্রী আর বিশ্বজনীন ভালবাসায় সাহিত্যজগতের এক নক্ষত্র হয়ে। ক্ষণজন্মা এই কথাসাহিত্যিকের আজ ১০৮তম জন্মবার্ষিকী। নন্দিত লেখক সাদত হাসান মান্টোর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
বিঃদ্রঃ গত ১১ মে ছিলো মান্টোর ১০৮তম জন্মবার্ষিকী। কিন্তু সামুর কারিগরি ত্রুটির কারনে পোস্টটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি বিধায় আজ প্রকাশিত হলো।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সময় আছে পড়ে দেখুন
লাভ বই ক্ষতি হবেনা।
২| ১৩ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:৫১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: নন্দিত লেখক সাদত হাসান মান্টোর জন্মবার্ষিকীতে
.....................................................................
থাকল আমার ফুলেল শুভেচ্ছা।
১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:০০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ স্বপ্নের শঙ্খচিল
সাদত হাসান মান্টোর জন্মবার্ষিকীতে
শুভেচ্ছা জনানোর জন্য।
৩| ১৩ ই মে, ২০২০ সকাল ৭:১৯
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: প্রগতিশীল লেখক হওয়ায় তার অনেক গল্প পড়েছি সেও অনেক আগে।আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:০৫
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
নুরুলইসলা০৬০৪ আপনাকে ধন্যবাদ
ভারত ভাগের নির্মম শিকার
সাদত হাসান মান্টোর
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
জানানোর জন্য।
৪| ১৩ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:০৬
জাফরুল মবীন বলেছেন: পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:০৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ মবীন ভাই
লেখাটি পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মে, ২০২০ রাত ৩:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: ছোট গল্পের ঈশ্বর!!!!
অথচ আমি তার কোনো গল্প পড়ি নাই।