নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষের অতীত ঘটনা ও কার্যাবলীর অধ্যয়নই ইতিহাসঃ ইতিহাসের কিছু কুখ্যাত স্বৈরশাসক

১০ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:২৯


কোন রাষ্ট্রে যখন এক ব্যক্তির ক্ষমতার মাধ্যমে সকল কাজ সম্পন্ন হয় তাই স্বৈরশাসন। আর যিনি তা সম্পনন্ন করেন তিনি স্বৈরশাসক। স্বৈরশাসক দেশের জনগণ, সংবিধান, আইনের রীতিনীতি অগ্রহ্য করে অগণতান্ত্রিক বা জোর করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন,এবং তার একক নির্দেশনায় দেশকে এবং দেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তার অধীনস্থ্ করে রাখে। এই স্বৈরশাসকদের কিছু সামরিক শক্তি দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকেন, কেউ আবার টিকে থাকেন তথাকথিত গণতন্ত্রের আবরণে। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশ গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের নামে একপ্রকার স্বৈরতন্ত্রিক মনোভাব পোষণ করে শাসনকার্য পরিচালনা করছে। যেটাকে Democracy (গণতন্ত্র) ও Communism (সমাজতন্ত্র) এর খোলস ব্যাবহার করে এক প্রকার Absolutism তথা পরোক্ষ স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু আছে । যেখানে রাষ্ট্রের বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিকদের মতামতের গ্রহণযোগ্যতা খুবই নগন্য। স্বৈরাচারী শাসকরা ধরার বুকে অসাম্য ও অন্যায়ের দাবানলে দ্বগ্ধ করে বণী আদমকে পদপিষ্ট করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে চরম নিষ্ঠুরতম পথ বাছাই করে নেয়। ফেরাউন ছিলেন প্রাচীন দুনিয়ার নিষ্ঠুরতম স্বৈরশাসক। তিনি নিজেকে পুরো দুনিয়ার মালিক বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন-আনা রাব্বুকুমুল আলা। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে নমরুদসহ অনেকে। ক্ষমতার উত্তাপ সবাই সহ্য করতে পারে না। তাই ক্ষমতার উত্তাপে সবাইকে জ্বালিয়ে ছারখার করে ফেলতে চায়। তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে খুব কম মানুষ। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় নতুন করে অ্যাডলফ হিটলার স্বৈরতন্ত্রের সূচনা করেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নানা দেশ নানা ভাবে স্বৈরতন্ত্রের শিকলে আবদ্ধ করে দুনিয়াকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে নব্য স্বৈরশাসকরা। কেউ ঘোষিত স্বৈরশাসক আবার কেউ বা গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে স্বৈরশাসক। স্বৈরশাসকদের শাসনে মানবতার অপমৃত্যু ঘটে। মুক্তিকামী মানুষ ফুঁসে উঠে। শুরু হয় শাসক ও শোষিতের লড়াই। কোথাও সমাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসক কোথাও বা তথাকথিত নির্বাচিত স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। যার শেষ পরিণতি হয় ভয়াবহ। ইতিহাস শুধু বিখ্যাত মানুষদেরই মনে রাখে না, সেই সাথে কুখ্যাত মানুষদেরও মনে রাখে। আজ আমি সামুর পাঠকদের জন্য ইতিহাসের কয়েকজন স্বৈরশাসকের কথা তুলে ধরছি। হিটলার
নিষ্ঠুরতার তালিকায় নিঃসন্দেহে সবার আগে থাকবে জার্মানির আডল্ফ হিটলারের নাম৷ অ্যাডলফ হিটলার ছিলেন জার্মানির সর্বকালের সেরা স্বৈরশাসক। ফ্যাসিবাদের জনক হিটলারের রাজ্য জয় ও বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারণে লাখ লাখ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। ৬০ লাখ ইহুদিকে পরিকল্পনা মাফিক হত্যা করা হয়। ইহুদি নিধনের এই ঘটনা ইতিহাসে হলোকস্ট নামে সবাই জানে। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে হিটলার বার্লিনেই ছিলেন। রেড আর্মি যখন বার্লিন প্রায় দখল করে নিচ্ছিল সেরকম একটা সময়ে তিনি ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তিনি ফিউরার বাংকারে সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন। তার ক্ষমতা আর দাম্ভিকতা তাকে শেষ রক্ষা করতে পারেনি।
মেঙ্গিস্তু হাইলে মারিয়াম
ইথিওপিয়ার এই সমাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ নির্যাতন চালান৷ ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮— এই বছরেই পাঁচ লাখ মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর গণহত্যার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷ তবে মারিয়াম পালিয়ে যান জিম্বাবোয়েতে৷

তৈমুর লং
তৈমুর ছিলেন ১৪শ শতকের একজন তুর্কী-মোঙ্গল সেনাধ্যক্ষ। তিনি পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজ দখলে এনে তিমুরীয় সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার কারণেই তিমুরীয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তার সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল আধুনিক তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, ইরান থেকে মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অংশ যার মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এমনকি চীনের কাশগর পর্যন্ত। তৈমুরের সৈন্যবাহিনী ছিল বিশ্বের ত্রাস। রাজ্য জয়ের যুদ্ধে সব জায়গাতেই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতেন তৈমুর ও অনেক জনপদ বিরান করে ফেলা হতো। সাবজাওয়ার রাজ্যে, যা বর্তমানে আফগানিস্তান, সেখানে তৈমুরের নির্দেশে টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছিল জীবিত একজন পুরুষের ওপর আরেকজনকে রেখে সিমেন্ট, বালি এবং পানি ‍মিশ্রিত করে। ইরানের ইসপাহানে বিদ্রোহের শাস্তি দিতে জনসাধারণকে গণহত্যার আদেশ দিয়েছিলেন এবং ৭০ হাজার মাথার সমন্বয়ে মিনার তৈরি করেছিলেন।

চেঙ্গিস খান
বিশ্বের ইতিহাসে মোঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিস খান একজন ভয়ংকর যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন চেঙ্গিস খান। এক সাধারণ গোত্রপতি থেকে নিজ নেতৃত্বগুণে বিশাল সেনাবাহিনী তৈরি করেছিলেন। ইতিহাসে তিনি অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ও সেনাপতি। তাকে মঙ্গোল জাতির পিতা বলা হয়ে থাকে। তবে বিশ্বের কিছু অঞ্চলে চেঙ্গিস খান অতি নির্মম ও রক্তপিপাসু বিজেতা হিসেবে চিহ্নিত। বীভৎস ধ্বংসলীলা ও নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়ে তার প্রতিটি আক্রমণ ও বিজয় পরিচালিত হয়েছিল। একের পর এক রাজ্য দখল করতে তার নির্দেশে সেনারা যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, এতে ঝরে যায় কয়েক কোটি প্রাণ। কোনো দেশ দখল করার পর তিনি পরাজিত সম্রাটের কাউকেই বাঁচিয়ে রাখতেন না। এমনকি শিশুদেরও না।

জোসেফ স্টালিন
নির্মমতার দিক থেকে যে সব শাসক ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন তাদের মধ্যো জোসেফ স্টালিন অন্যতম। রুশ ভাষায় ‘স্টালিন’ মানে হচ্ছে ‘লৌহ মানব’। স্টালিন একজন রুশ সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ পশ্চিমারা যাকে প্রচন্ড একগুয়ে, দাম্ভিক, চতুর স্বৈরশাসক উপাধি দিয়েছে সেই তিনি এক নাগারে ৩১ বছর (১৯৪১ সালের ৬ মে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত) শাসন করেছেন পুরো সোভিয়েত সাম্রাজ্য। যে সব শাসক ঐতিহাসিকভাবে খ্যাতি পেয়েছেন তাদের মধ্যেই স্টালিন রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহারে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। তার আদেশ পালনে লাখ লাখ কৃষককে অভুক্ত রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে কমিউনিস্ট পার্টির শত্রু সন্দেহে অন্তত ২০ লাখ মানুষকে হত্যা করেন।
মাও সে তুং
মাও-কে বলা যেতে পারে আধুনিক চীনের রূপকার৷ তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বহু মানুষকে হত্যার অভিযোগ৷ ১৯৫৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অনুসরণে অর্থনৈতিক মডেল দিয়ে উন্নয়নের কথা বলেন৷ হত্যা করা হয় সাড়ে চার কোটি মানুষকে৷ ১০ বছর পর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে আরো প্রায় তিন কোটি মানুষকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে মাও-এর বিরুদ্ধে৷। ১৯৪৯ সালে সমাজতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চীন শাসন করেন। ১৯৭৬ সালের৯ সেপ্টেম্বর (বয়স ৮২ বছর বয়সে চীনের বেইজিংয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বেনিতো মুসোলিনি
বেনিতো মুসোলিনি ছিলেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ কালে ইতালির সর্বাধিনায়ক। ইতালির এই একনায়ক ১৯২২ সাল থেকে ১৯৪৩ সালে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত সমগ্র রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর ছিলেন। ১৯২২ সালে তিনি রোম অভিযান করে দখলের মাধ্যমে ইতালির ৪০তম প্রধানমন্ত্রী হন। ইটালির রাজা ভিক্টর তৃতীয় ইমানুয়েল বিনা প্রতিবাদে তার হাতে ক্ষমতা তুলে দেন। মুসোলিনি ৭০০০-এর বেশি ইহুদিকে ইতালি থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। এদের মধ্যে প্রায় ৬০০০ ইহুদিকে পরে হত্যা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে জার্মান একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের একান্ত বন্ধুতে পরিনত হন মুসোলিনি। ১৯৪৩ সালে সিসিলিতে ক্ষমতাচ্যুত হলে তাকে বন্দী করা হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে হিটলারের নির্দেশে জার্মান সেনাদের একটি চৌকশ দল মুক্ত করে মুসোলিনিকে। ১৯৪৫ সালের ২৭ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডে পালানোর সময় ইতালির একটি ছোট্ট গ্রামে কমিউনিস্ট প্রতিরোধ বাহিনীর বাহিনীর হাতে ধরা পরে এবং পরে তাকে হত্যা করা হয়।

ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো
১৯৩৬ থেকে ১৯৭৫ সময়কাল পর্যন্ত স্পেনের স্বৈরশাসক ছিলেন। এছাড়াও, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৫ মেয়াদকালে স্পেনীয় রাজতন্ত্রের প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় জেনারেল ফ্রাঙ্কো ফ্যাসিবাদী ইতালি ও নাজি জার্মানির মদদপুষ্ট জাতীয়তাবাদী বাহিনীর প্রধান হিসেবে স্পেনের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেন। ফলে জাতীয়তাবাদীরা ১৯৩৯ সালে বিজয়ী হয় ও ফ্রাঙ্কো এল কদিলো বা স্পেনের নেতা নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু দেশ শাসন করে ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী স্বৈরশাসকের মর্যাদা পান। তবে ইতিহাসে তিনি সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত মতবাদের জন্য চিহ্নিত হয়ে আছেন।স্পেনের গৃহযুদ্ধে জয়ী হয়ে ১৯৩৯ সালে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো৷ গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অন্তত দেড় লাখ বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ যুদ্ধের পরও কমপক্ষে ২০ হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অক্ষশক্তির অন্যসব শাসকের পতন ঘটলেও ফ্রাঙ্কো ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৭৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত৷ ১৯৭৫ সালের ২০ নভেম্বর স্পেনের মাদ্রিদে মৃত্যুবরণ করেন।

নেপোলিয়ান
ফ্রান্সের নেপোলিয়ান, তার বিশাল সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিলো মাদ্রিদ থেকে মস্কো পর্যন্ত, সম্রাট হন তিনি ফ্রান্স এবং অর্ধ পৃথিবীর। পৃথিবীর মানুষ তাকে মনে রাখবে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে। কিন্তু কিছু মানুষ তাকে বেশিদিন রাজত্ব করতে দেয়নি এবং তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। একটু ইতিহাসের পাতা থেকে ঘুরে আসলে দেখা যাবে, ফরাসী জাতি সারা বিশ্বে একটি সম্মানিত জাতি, ইউরোপের কেন্দ্রবিন্দু। আর ফ্রান্সের এই সফলতার একমাত্র নায়ক নেপোলিয়ান। নিজের দেশে সম্রাট ছিলেন মর্যাদাবান। কিন্তু বাইরের দেশে তার রূপ ছিলো ভিন্ন। সম্রাটের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অন্য দেশের জন্য হুমকি বলে মনে করা হত। তাই তারা তাকে ভাল দৃষ্টিতে দেখতে পারেনি। তাই সম্রাটের বিরোধী দলগুলো জোট বাঁধে নেপোলিয়ানের বিরুদ্ধে। নিজ দেশের জনমতকে উপেক্ষা করে তার সম্রাজ্য সাম্প্রসারণের প্রধান শত্রু ব্রিটেন, ক্রোয়েশিয়া ও রাশিয়াকে ধ্বংস করে দেশ দখলের নিমিত্তে নেপোলিয়ান ৫ লাখ সৈন্য নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন। কিছু দেশ তার আয়ত্বে চলে আসে। রাশিয়া, ব্রিটেন ও ক্রোয়েশিয়া নেপোলিয়নের বেপরোয়া সম্রাজ্য সম্প্রসারণ ঠেকাতে চুক্তিবদ্ধ হয়। শক্র বাহিনীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আক্রমণে নেপোলিয়ান পরাজিত হয়ে পড়েন এবং এক সময় তিনি রাজত্ব হারান। ক্ষমতাধর নেপোলিয়নের একনায়কতন্ত্রের মসনদ তাকে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে অপদস্থ ও অপমানিত করে স্বৈরশাসকদের তালিকায় যুক্ত করেছে। ক্ষমতান্ধতা তার অভূতপূর্ব জনকল্যাণকর কাজসমূহকে ম্লান করে দেয়।

পল পট
খেমাররুজদের সংগঠক এবং নেতা ছিলেন পল পট। তার নেতৃত্বে খেমাররুজরা ১৯৭৫-৭৯ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ার শাসন ক্ষমতায় ছিল। তাদের শাসনামলের মাত্র চার বছরে তারা কম্বোডিয়ায় যে পরিমাণ গণহত্যা চালায়, তা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য এবং নৃশংসতম গণহত্যার একটি বলে পরিচিত। সেই কারণে খেমাররুজদের কুখ্যাত নেতা পল পটকে ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর, নৃশংস হত্যাকারী এক স্বৈরশাসক বললে খুব একটা বাড়িয়ে বলা হয় না। খেমার রুজ আন্দোলনের নেতা ছিলেন পল পট৷ ক্ষমতায় আরোহণের পরবর্তী ১০ বছরে ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় তাকে৷ বেশিরভাগের মৃত্যু হয় শ্রম ক্যাম্পে অনাহারে অথবা কারাগারে নির্যাতনের ফলে৷ ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ার বনে পল পট গেরিলাদের উপস্থিতি ছিল৷নব্বইযের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কম্বোডিয়ার নবগঠিত সরকার খেমাররুজদের নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ধীরে ধীরে খেমাররুজদের সংখ্যা আরও কমতে থাকে এবং পল পটের কাছের বন্ধুদের অনেকেই মারা যায় অথবা আত্মসমর্পণ করে। ১৯৯৬ সালে পল পট খেমাররুজদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং নিজের সৈন্যদের দ্বারাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কম্বোডিয়ার আদালত তার অনুপস্থিতিতেই তার মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়। খেমাররুজরাও তার লোকদেখানো বিচার করে এবং তাকে যাবজ্জীবন গৃহবন্দীত্বের সাজা প্রদান করে।১৯৯৮ সালে খেমাররুজরা পল পটকে কম্বোডিয়ান সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে সম্মত হয়। সম্ভবত এ কারণেই ৭২ বছর বয়সী খেমাররুজদের পরাজিত, বন্দী নেতা পল পট আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। মৃত্যুর পর কম্বোডিয়ার সরকার তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করতে চাইলে খেমাররুজরা তাতে বাধা দেয়। তারা পল পটের মৃতদেহ পুড়িয়ে সে ছাই ছড়িয়ে দেয় উত্তর কম্বোডিয়ার বনাঞ্চলে, যেখানে প্রায় ২০ বছর ধরে পল পট তার বাহিনীকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শেষ হয় কুখ্যাত এক স্বৈরশাসকের জীবনের আখ্যান।

বাশার আল আসাদ
সিরিয়ার বাশার আল আসাদ গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হয়ে বিরোধী সকল মতকে উপেক্ষা করে স্বীয় মতকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে আসাদ বিরোধীরা প্রতিবাদ করে। শুরু হয় তার দমন-পীড়ন। এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য বিরোধীদের উস্কাতে থাকে এবং আসাদ সরকারকে পরাস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে সিরিয়াতে আসাদ সরকার ও বিরোধী জোট এক ভয়াবহ সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যদি আসাদ ও তার বিরোধী জোট সমস্যা সমাধানে না পৌঁছে তাহলে দেশটিতে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটবে এবং সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব যে ভাবে মাথা ঘামাচ্ছে তাতে এর অবস্থা ইরাকের চাইতেও ভয়াবহ হবে। প্রতিনিয়ত সরকার ও বিরোধীদের সংঘর্ষে বেসামরিক বহু হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এর সমাধানে আসাদের লক্ষ্যণীয় ভূমিকা না থাকায় দেশাভ্যন্তরে আসাদের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠছে আবার অন্যদিকে বহির্বিশ্বও মাতব্বরি করছে। এতে স্পষ্ট যে আসাদের স্বৈরনীতিই তাকে অপদস্ত করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ক্ষমতাচ্চ্যুত করবে।

ইয়াহিয়া খান
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পান ইয়াহিয়া খান৷ সে বছরই স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের কাছ থেকে পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করেন তিনি৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার আদেশেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা ও দুই লাখ নারীকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি বাহিনী৷ পরবর্তীতে বাংলাদেশ গণহত্যা নামে পরিচিত এই নৃশংস ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় তাকে। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ইয়াহিয়া খান জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইয়াহিয়া খান ১০ই আগস্ট, ১৯৮০ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে মৃত্যুবরণ করেন।

ফ্রাঁসোয়া দুভেলিয়ে
১৯৫৭ সালে হাইতির ক্ষমতায় বসেন দুভেলিয়ে৷ হাজার হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যার নির্দেশ দেন তিনি৷ কালো জাদু দিয়ে মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখেন, এমন দাবিও করতেন তিনি৷ হাইতিয়ানদের কাছে ‘পাপা ডক’ নামে খ্যাত ছিলেন এই স্বৈরশাসক। ১৯৭১ সালে মৃত্যুর পর তার ১৯ বছর বয়সি ছেলে জ্যঁ ক্লদ দুভেলিয়ে স্বৈরশাসক হন৷

অগাস্তো পিনোশে
চিলির সামরিক বাহিনীর প্রধান অগাস্তো পিনোশে দেশটির সমাজতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করেন ১৯৭৩ সালে৷ ক্ষমতায় আসার পর দেশ থেকে বামপন্থা নির্মূলের লক্ষ্যে হাজার হাজার বিরোধী কর্মীকে হত্যা নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে পিনোশের বিরুদ্ধে৷চিলির সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল অগাস্তো। পিনোশের শাসনামলে যেসব মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছিল বলে তালিকাভুক্ত হয়েছে, তাদের চেয়ে অনেক বেশি লোক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে গঠিত একটি কমিশন এ তথ্য পাওয়ার কথা দাবি করেছে। কমিশনের পরিচালক মারিয়া লুইসা সেপুলভেদা বলেন, তাঁরা আরও নয় হাজার ৮০০ ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছেন, যাঁদের রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে আটক করে নির্যাতন করা হয়েছিল। এ নিয়ে নির্যাতনের শিকার মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০ হাজার ৮০ জনে।

রবার্ট মুগাবে
জিম্বাবুয়ের রবার্ট মুগাবে, ১৯৮০ সালে দেশটি ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মুগাবে শাসন ভার নিয়েছেন। ৩৩ বছর ধরে তার শাসনই চলে আসছে। নতুন সংবিধানের অধীনে প্রথম নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মুগাবে ৬১ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করে। যদিও বিরোধীরা এ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে দাবি করেছেন। দেশটিতে আবার সরকারবিরোধী আন্দোলন ও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৯৬ সালের দিকে জিম্বাবুয়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে মুগাবের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, শ্বেতাঙ্গদের জমি কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই বাজেয়াপ্ত করা, জিম্বাবুয়েকে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করা ইত্যাদি কারণ তাকে স্বাধীন জিম্বাবুয়ের নায়ক থেকে ধীরে ধীরে খলনায়কে পরিণত করে।একদা শক্ত হাতে দেশ চালানো এ নেতা ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মুগাবের শুরুটা ছিল জনপ্রিয় নেতা হিসেবে, কিন্তু ক্ষমতার অন্ধ প্রকোষ্ঠে কোথায় যেন সেই জনপ্রিয়তা হারিয়ে তিনি পরিণত হয়েছিলেন একনায়কে। যে জনগণের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন যৌবনে, তারাই তার বার্ধক্যে স্বৈরাচারীর তকমা এঁটে বিদায় জানায়।

হোসনী মোবারক
মিসরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলীর পর হোসনী মোবারক সে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক। আরব বিশ্বে লম্বা সময় দেশ শাসন করছেন অনেকে। হোসনী মোবারক তাদের অন্যতম। ১৯৮১ সালের ৬ অক্টোবর সেনাবাহিনী এক সদস্য কর্তৃক তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সা’দাত নিহত হওয়ার পর হোসনী মোবারক ক্ষমতায় আসেন। জাতীয় নির্বাচনে পার্লামেন্ট অনুমোদিত মাত্র একজন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন সেই প্রার্থী ছিলেন হোসনী মোবারক। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার দায়ে বিশ্বজুড়ে তিনি নিন্দিত। মিসরে গণজাগরণের মাধ্যমে তাকে লাঞ্ছিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়। আর বর্তমান মিসরের রাজনৈতিক উত্তপ্ততার জন্য তাকেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দায়ী করছেন।

সাদ্দাম হোসেন
ইরাকের স্বৈরাচারী একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের পতন হয় ২০০৩ সালে। সে সময় ইরাকে বহু অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও রক্তক্ষয় দেখা গেছে। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর তার হত্যাকা- নিয়ে মূল্যায়নের শেষ নেই। বলা হয়ে থাকে একনায়তান্ত্রিক শাসন ও অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে গুরুত্ব না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠে পশ্চিমা বিশ্ব। আর তাই তাকে জনমত নিয়ে জনসম্মুখে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। বিদেশী প্রভুদের যতই হস্তক্ষেপ থাকুক না কেন জনগণ যদি তার সাথে থাকত তাহলে হয়তবা এই পরিণতি হত না। সাদ্দামের জনবিচ্ছিন্ন বেপরোয়া শাসননীতিতে মার্কিনীরা যেমন তাকে ক্ষমতাচ্যুৎ করতে সচেষ্ট হয় একি ভাবে ইরাকী জনগণও তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। তার স্বৈরনীতির শেষ ফল হিসেবে ২০০৬ সালে মার্কিন সেনারা তাকে টেনেহিঁচড়ে গর্ত থেকে বের করে এবং ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলায়। এ ধরনের শাসকরা তাদের স্বৈরনীতির কারণেই লাঞ্ছিত হয় বা মৃত্যুমুখে পতিত হয় শুধু তাই নয় বরং একটি জাতিকেও মেরুদ-হীন করে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ঠেলে দেয়।

ইদি আমিন
উগান্ডার স্বৈরাচারী কসাই ইদি আমি।আফ্রিকার দেশ উগান্ডার ক্ষমতায় সাত বছর ছিলেন ইদি আমিন৷ ‘দ্য বুচার অব উগান্ডা’ নামে সমধিক পরিচিত ইদি আমিন দাদা আফ্রিকার ইতিহাসে অন্যতম বর্বর ও স্বৈরাচারী একনায়ক। ১৯৭০ এর দশকে উগান্ডায় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহণ করেন এবং আট বছরের শাসনামলে ১ লক্ষের অধিক মানুষকে হত্যা, গুম, নির্যাতন, নির্বাসন কিংবা ফাঁসি দেন এই উগান্ডান কসাই। লিবিয়ায় দশ বছর কাটানোর পর ১৯৮৯ সালে সৌদি আরবে চলে যান ইদি আমিন। এতে আরো একবার প্রমাণ হয়ে যায় যে, স্বৈরাচারী শাসক যত শক্তিশালীই হোক, তার পতন অনিবার্য, তার শেষটা হয় করুণভাবে। বরং নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য তারা চিরকাল মানুষের ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকেন। তবে এই সংখ্যাটি অনেক হিসেবে ৫ লক্ষও ছাড়িয়েছে!উৎখাত হওয়ার পর সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিলাসী জীবনযাপন করেছেন এই একনায়ক৷সেখানেই নির্বাসন জীবনে ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন ‘বুচার অব উগান্ডা’ নামে কুখ্যাত এই একনায়ক।

কিম ইল সুং
কিম ইল সুং উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার অধিকার প্রয়োগ অনেক সময়-ই স্বৈরাচার হিসেবে বর্ণিত হয়, তিনি সর্বব্যাপী নিজেকে আর্চনীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার দায়িত্ব পালনের সময়, ৬ জন দক্ষিণ কোরীয় রাষ্ট্রপতি, ৭ জন সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক, ১০ জন মার্কিন রাষ্ট্রপতি, ১০ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ২১ জন জাপানী প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রক্ষমতায় পালাবদল করে দায়িত্ব পালন করেছে। উত্তর কোরিয়ার এই নেতাই দেশটিতে কিম বংশের শাসন চালু করেন৷ ১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়া দখল করে দক্ষিণ কোরিয়ায় অভিযান চালালে শুরু হয় কোরিয়ান যুদ্ধ৷ এই যুদ্ধে মার্কিন সেনা এবং জাতিসংঘের সেনারাও জড়িয়ে পড়ে৷ এ যুদ্ধে উভয় পক্ষে মারা যান ১০ লাখেরও বেশি মানুষ৷১৯৯৪ সালের ৮ জুলাই কোরিয়ার পিয়ং ইয়াংয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি
৪২ বছর ধরে লিবিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি৷ হাজার হাজার মানুষকে, বিশেষ করে গণতন্ত্রকামীদের নির্বিচারে হত্যা ও নারীদের ধর্ষন, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তার শাসনামলে৷লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি জনপ্রিয় ‘ব্রাদারলি লিডার হলেও তিনি মূলত একনায়ক, স্বৈরশাসক হিসেবেই পরিচিত। দীর্ঘ ৪২ বছর তিনি এক হাতে শাসন করেছেন উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া। দেশ-বিদেশে সুনামের পাশাপাশি তাকে নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। গাদ্দাফি ফিলিস্তিনের ‘প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’র একজন ভক্ত হলেও পশ্চিমাবিরোধী নীতির কারণে গাদ্দাফিকে পশ্চিমারা সব সময়ই নেতিবাচক চোখে দেখেছে। কূটনৈতিক অঙ্গনেও তার প্রতি দৃষ্টি তেমনই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান নিজেই গাদ্দাফিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের পাগলা কুকুর’ বলে অভিহিত করেন। তারা একাধিকবার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেষ্টা চালায়। সর্বশেষ বিদ্রোহীরা তার বাব আল আজিজিয়া প্রাসাদ দখল করে নেয়। সেখান থেকে তার আগেই পালিয়ে যান মুয়াম্মার গাদ্দাফি ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্য দিয়েই মূলত গাদ্দাফির পতন ঘটে। তারপরও তার অনুগতরা লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। সর্বশেষ তারা তার জন্মশহর সির্তে অভিযান চালায়। সেই অভিযানেই গুলিবিদ্ধ হন গাদ্দাফি। দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকার সুবাদে তার মাঝে স্বৈরতান্ত্রিকতা জেঁকে বসে। এমন সুযোগেই জেনারেল গাদ্দাফির পতনের জন্য তার কাছের লোকরাই শত্রুদের সাথে হাত মিলায়। ২০১১ সালে এক অভ্যুত্থানে তাকে উৎখাত ও হত্যা করা হয়৷ তারপর থেকে গৃহযুদ্ধ চলছে দেশটিতে৷
জিয়াউর রহমান
পৃথিবীর ইতিহাসে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে দীর্ঘদিন যাবত দেশ পরিচালনা করেন। যাদের মধ্যে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামও রয়েছে। জার্মানির বিখ্যাত গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে তার নাম প্রকাশ করেছে। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত সায়েম এঁর উত্তরসূরি হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি সেনাবাহিনীতে তার বিরোধিতাকারীদের নিপীড়ন করতেন। অনেক উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বিপদের সমূহ সম্ভবনা জেনেও জিয়া চট্টগ্রামের স্থানীয় সেনাকর্মকর্তাদের মধ্যে ঘঠিত কলহ থামানোর জন্য ১৯৮১ সালের ২৯শে মে চট্টগ্রামে আসেন এবং সেখানে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে থাকেন। তারপর ৩০শে মে গভীর রাতে সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হন।
হু,মো এরশাদ
এরশাদ সুনিশ্চিতভাবে স্বৈরশাসক ছিলেন। একনাগাড়ে সবচেয়ে বেশিদিন দেশ পরিচালনা করে অবশেষে আন্দোলনের মুখেই পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। সাবেক সেনা শাসক হিসাবে সামরিক শাসন জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কারণেই এইচ এম এরশাদের পতন হয়েছিল। যার বিচার বাংলাদেশের আদালতে হয়নি। বরং তিনি সংসদ সদস্য হিসাবে এদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে দুই যুগ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদ গ্রেফতার হলে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না-আসা পর্যন্ত কারারূদ্ধ থাকেন। বিএনপি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। । ছয় বছর অবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। শারীরিক অসুস্থতার দরুন ২০১৯ সালের ২৬ জুন তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ৪ জুলাই তাকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। তিনি ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:৫৮

আল-ইকরাম বলেছেন: মোবারকবাদ আপনাকে। ঐতিহাসিক এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে অনেক জানার আছে। পুরোটা পড়া হয় নি। সময় করে পড়ার ইচ্ছা আছে। শুভেচ্ছা অগনিত।

১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ ইকরাম ভাই
সময় করে পড়ে নি্বেন আশাকরি
লাভ বই ক্ষতি হবেনা।

২| ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫২

মেটালক্সাইড বলেছেন: বীরাঙ্গনাদের পোস্টটি থেকে এই পোস্ট বেশি আকর্ষণীয় ।
হিটলার টপ অফ লিস্টে থাকার যোগ্য । তবে
সম্মানহানি হয়েছে তৈমুর লং আর চেঙ্গিস খানের।
তাদের সময়ে পিস্তল ছিল না বলে নুরু ভাইয়ের এই স্বজনপ্রীতি =p~
সাবধান, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির নজরে যদি পড়ে তাহলে
মানহানি তুক্কু দেশদ্রোহী

১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মেটালক্সাইড দাদা
আমিতো কোন বীরাঙ্গনাদের নিয়ে পোস্ট দেই নি!!!!
তবে আমি ইতিহাসের সেরা সুন্দরী শাসকদের সাতকাহনতুলে ধরেছিলাম। এইভাবে বদনাম থুক্কু অপবাদ দেবার কোন মানে হয়!! আমি জীবিত কাউকে নিয়ে লিখিনাই। মৃত
মানুষকে ডরাবার কিছু নাই। স্বজনপ্রীতি একটা রোগ, আমার কি করার আছে !! তবে চিকিৎসা চলছে !!!

৩| ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: জিয়া উর রহমানের নাম টা দিলেন!!!!

১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমি কোথায় দিলাম !
জার্মানির বিখ্যাত গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে
তার নাম প্রকাশ করেছে। আমাকে দোষ দিচ্চেন কেন?
আপনি তাদের বিরু্দ্ধে মা্নহানির মামলা করতে পারেন।
লাগলে কিছু খরচাপাতি আমিও দিবো !!! =p~

৪| ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদের নামটা দেয়ায় আপনার রাজনৈতিক ভাবনার সুমান করতে হয়।

১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৪৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সম্ভত সুনাম বলতে চেয়েছেন!!
যা হোক আমাকে সুনাম বা দূর্ণাম করার কিছু নাই।
কারন এগুলো আমার স্বপ্নে পাওয়া তথ্য নয়।
ইতিহাসের আলোকে আমার এ লেখা।
দোষ গুন ইতিহাসের , আমিতো নিমিত্ত মাত্র।

৫| ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


ইসলামিক সাম্রাজ্য যারা পরিচালনা করেছেন, তাদের উপাধি ছিলো "খলীফা", ইহা কারো নাম নহে; প্রাচীন মিশর রাজ্যের শাসকদের উপাধি ছিল "ফেরাউন", উহা কারো নাম নয়।

১০ ই মে, ২০২০ রাত ৯:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জানি আমি।
তাতে এই পোস্টের সর্ম্পকি !!!

৬| ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩০

চাঁদগাজী বলেছেন:


রাজতন্ত্রের সময়, যারা রাজা ছিলেন, তাদেরকে "স্বৈরাচার" বলা, বা না বলার তেমন কোন যুক্তি নেই; হয়তো, ভালো রাজা বা খারাপ রাজা বলা যেতে পারে। "স্বৈরাচার" শব্দটা ব্যবহৃত হচ্ছে রিপাবলিকের বেলায়।

১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: 'জ্বি জনাব,
তবে মীর জাফর ও রাজাকার এখন
গালীতে পরিনত হয়েছে!!
আমি প্রথমেই "স্বৈরাচার" এর
ব্যাখ্যা প্রদান করেছি।

৭| ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:


টাইপো:

জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদের নামটা দেয়ায় আপনার রাজনৈতিক ভাবনার *সুনাম করতে হয়।

১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কোন ব্যাপার না, বুঝতে পেরেছি!
চশমার পাওয়ার এখন কতো?

৮| ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:০৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



ইসলামিক সাম্রাজ্য যারা পরিচালনা করেছেন, তাদের উপাধি ছিলো "খলীফা", ইহা কারো নাম নহে; প্রাচীন মিশর রাজ্যের শাসকদের উপাধি ছিল "ফেরাউন", উহা কারো নাম নয়।

১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:২৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
গাজীসাব এখানে আপনি খলিফা বা ফেরাউনকে
পাইলেন কই। এখানে যে সকল স্বৈর শাসকদের
নাম করা হয়েছে তাদের কেউ কি খলীফা বা ফেরাউন
ছিলেন ?

৯| ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: সাদ্দাম এবং জিয়াকে এখানে রাখা ঠিক হয় নি।
তারা দেশের জন্য জান জীবন দিবেন আবার তাদের কুখ্যাত স্বৈরচারও বলবেন???

১০ ই মে, ২০২০ রাত ৮:৫৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কিছু ব্যত্ক্রিম ছাড়া স্বৈরাচারী
শাসক স্বাভাবিক মৃত্যু লাভ করেনা।
তা ছাড়া আমি কে তাদেরকে স্বৈরচার বলার!
ইতিহাস বলে !! ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা।
তবে দুঃখ আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.