নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিংশ শতাব্দীর সাম্যবাদী ধারার লেখক বিপ্লবী রেবতী মোহন বর্মণের ৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৬ ই মে, ২০২০ রাত ৯:৪৫


বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নির্মাতা ছিলেন আজন্ম বিপ্লবী রেবতী মোহন বর্মণ। যাকে প্রায় অধিকাংশ মানুষ রেবতী বর্মণ নামেই জানে। তবে তার নিজ গ্রামের মানুষদের কাছে রেবতীবাবু বলে পরিচিত ছিলেন। আর আমাদের কাছে সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ বইয়ের লেখক হিসেবে পরিচিত। 'সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ' গ্রন্থের রচয়িতা ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আমৃত্যু সংগ্রামী মার্কসীয় তাত্ত্বিক। তিনি পূর্ববাংলার অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও তার বিপ্লবী কর্মকাণ্ড ছিল কলকাতা, বাকুড়া ও বীরভুম জেলায়। সম্পন্ন ও ব্রিটিশ শাসকদরদী পরিবারের সন্তান হলেও রেবতী বর্মন সাম্যবাদী ও ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্রাবস্থায়। তিনি মার্কসীয় তত্ত্বে আকৃষ্ট হয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। যৌবনের উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে ব্রিটিশ সরকারের জেলের অন্ধকার প্রকোষ্টে। ১৯২৩-১৯২৪ সালে রেবতীমোহন বর্মণ বেঙ্গল-ভলান্টিয়ারের কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রুপের নেতৃত্ব দেন এবং শ্রীসংঘে যুক্ত থেকে কাজ করেন কলকাতা, বাঁকুড়া এবং বীরভূমে। ১৯২৭-১৯২৮ সালে ছাত্র-যুব আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া স্বর্ণপদক বিক্রি করে দিয়ে সেই টাকায় নিজের সম্পাদনায় বেণু নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। বেণুর প্রথম সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথের একটি গান প্রকাশিত হয়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস বিপ্রদাস-ও প্রকাশিত হয় বেণু পত্রিকায়। আজ সংগ্রামী রেবতী মোহন বর্মণের ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫২ সালের এ দিনে তিনি কলকাতার আগরতলায় মৃত্যুবরণ করেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বিপ্লবী রেবতী মোহন বর্মণের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

রেবতী বর্মণ ১৯০৩ সালে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার শিমূলকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার জন্ম সাল অনেকে ১৯০৪ বা ১৯০৫ বলেও উল্লেখ করেছেন। রেবতী মোহন ছিলেন পাঁচ ভাইয়ের মাঝে চতুর্থ। তার পিতা হরনাথ বর্মণ ছিলেন একজন নামকরা আইনজীবী। ইংরেজদের প্রতি আনুগত্যের জন্য তিনি রায় উপাধিতে পান। ঢাকার পগোজ স্কুল এবং কুমিল্লার গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯২২ সালে কিশোরগঞ্জের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ঐ বছর প্রমোদরঞ্জন চক্রবর্তী এবং গৌরচন্দ্র মণ্ডলও তার সংগে একই নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন। ১৯২৮ সালে কৃতিত্বের সাথে এমএ পাশ করেন। তার আগে বিএ পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য পেয়েছিলেন জগত্তারিণী পদক এবং পদক বিক্রির অর্থ দিয়ে সহপাঠীদের নিয়ে প্রকাশ করেছিলেন কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘বেণু’ স্কুলজীবনের শেষ পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ক্রমে ক্রমে বিপ্লবী স্বদেশি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩০ সালের আগস্ট মাসে কলকাতায় পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের ওপর বিপ্লবীদের আক্রমণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রেবতীমোহনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বিনা বিচারে আটককালে তাঁকে বিভিন্ন জেলখানায় স্থানান্তর করা হয়। জেলে বসে তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদী দর্শন ও আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হন। দেউলী জেলে অবস্থানকালে অন্যান্য বিপ্লবীদের নিয়ে রেবতীমোহন বর্মণ প্রকাশ করেন The Communist ও সংহতি। জেলখানায় তিনি পাঠচক্রের মাধ্যমে বন্দিদের মার্কসবাদ-লেনিনবাদের উপর দীক্ষা দিতেন। ১৯৩০-৩৮ সালে বিনা বিচারে জেলে অন্তরীন থাকেন। দেউলী জেলে বন্দী থাকাকালীন সময় তার শরীরে কুষ্ঠরোগের জীবাণু ঢুকিয়ে দেয়া হয়। দীর্ঘ আট বছর কারা-শাস্তির পর রাজপুতনার দেউলী জেল থেকে তিনি ১৯৩৮ সালের ২১ জুলাই মুক্তি পান। এরপর তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে সম্পৃক্ত হন এবং সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্টির দায়িত্ব নিয়ে শ্রমিক ও কৃষকদের সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৩৯ সালে তিনি ন্যাশনাল বুক এজেন্সী প্রতিষ্ঠা করেন। জেলে থাকাকালীন সময়ে তিনি সমাজ বিবর্তণমূলক অসংখ্য গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি রচনা করেন যা পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়। মার্কসবাদের প্রচার উদ্দেশে লেখালেখি এবং প্রকাশনার উদ্দেশ্যে ১৯৩৯ সালে তিনি কমরেড মুজাফফর আহমদ এবং অন্যান্যদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন সোসালিস্ট প্রকাশনী সংস্থা ‘ন্যাশনাল বুক এজেন্সি’। একই সময়ে বন্ধুদের সহায়তায় তিনি ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘গণ-সাহিত্যচক্র’। ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ তরুণ রুশ। এছাড়াও তাঁর রচিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি (১৯৩৮), মার্কস প্রবেশিকা (১৯৩৮), কৃষক ও জমিদার (১৯৩৮), সাম্রাজ্যবাদের সঙ্কট (১৯৩৮), হেগেল ও মার্কস (১৯৩৮), ভারতের কৃষকের সংগ্রাম ও আন্দোলন (১৯৩৮), লেনিন ও বলশেভিক পার্টি (১৯৩৯), অর্থনীতির গোড়ার কথা (১৯৪৫), সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ (১৯৫২) প্রভৃতি গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। রেবতী মোহন বর্মণ উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বেলঘরিয়ায় থাকাকালীন শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। এসময়ই তার শরীরে কুষ্ঠ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পুলিশ তার উপর হুলিয়া জারি করে ও তিনি বাংলাদেশের ভৈরব উপজেলায় চলে যান। দেশভাগের পরে ১৯৫১ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তাকে বাধ্য হয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে আগরতলা চলে আসতে হয়। ১৯৫২ সালের ৬ মে তারিখে আগরতলার কাছে মৃত্যুবরণ করেন রেবতী বর্মণ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তার গ্রামের বাড়ির রাস্তায় তার নামানুসারে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করছে। আজ সংগ্রামী রেবতী মোহন বর্মণের ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বিপ্লবী রেবতী মোহন বর্মণের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: রেবতী মোহন উনাকে আমি আজই প্রথম চিনলাম। জানলাম।

০৬ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৫২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমার জন্মের আগে তার মৃত্যু হয়েছে
আপনিতো বাচ্চা মানুষ না চিনবারই কথা।ভ
তবে আজ চিনেছেন তাই ভাগ্য।

২| ০৭ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৩২

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ বহুকাল আগে পড়েছি।সময় থাকলে পড়লে উপকারই হবে।তবে বইটা পাওয়া যায় কিনা জানি না।এই লিখাটার জন্য বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ।

০৭ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

নরুলইসলাম ভাই বহুকাল মানে কত কাল?
বছরে ছয় কাল, আবার আছে ক্রিয়ার কাল!!
ব্রিটিশকাল, পাকিস্তান কাল আবার বাংলাদেশ কাল !
যা হোক সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ পিডিএফএখান থেকে ডাউনলোড করে পড়তে পারেন।

৩| ০৭ ই মে, ২০২০ ভোর ৫:০৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বইটা আমার কাছে আছে।প্রায় ৫০/৬০ বছর আগে হবে।যখন ছাত্র ছিলাম।বছরে যদি ছয় কাল হয় তবে অনেক কাল।ধন্যবাদ

০৭ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:০৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে নুরুলইসলা০৬০৪
বইটি সংগ্রহে রাখার জন্য।
কছরে ছয় কাল আমার মতে
কিন্তু যখন ৭৫/৮০ বছরের মানুষকে
বলা হয় ত্রিকাল দর্শী তখন কোন
সূত্রে তা বলা হয়? সে হিসেবে
আপনি মাত্র দ্বিকাল দর্শী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.