নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফয়জুুর রহমান আহমেদ একজন পুলিশ কর্মকর্তা।যিনি বাংলাদেশের ত্রিরত্ন হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মাদ জাফর ইকবাল এবং আহসান হাবীব এর পিতা। শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ ১৯৭১ সালে তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও ছিলেন। ফয়জুর রহমান আহমেদ পিরোজপুরে কর্মরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে একাত্ম হন। তিনি নিজের ও তাঁর পরিবারের জীবন বিপন্ন জেনেও মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেন। ওই সময় তিনি পিরোজপুরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাক-হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে খবর সংগ্রহ করে পিরোজপুরের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব পরিচালনায় সক্রিয় উদ্যোগ নেন। যুদ্ধ শুরু হলে অস্ত্রাগারে সংরক্ষিত অস্ত্র সরবরাহ করে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন এবং ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন। একাত্তরের ৪ মে পাক-বাহিনী পিরোজপুর শহর দখল করে নেয়। সে সময় ফয়জুর রহমান আহমেদ পিরোজপুরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থানরত তাঁর পরিবারবর্গের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরদিন অর্থাৎ ৫ মে পিরোজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার চিঠি পেয়ে তিনি কর্মস্থলে এসে পৌঁছলে পাক-বাহিনী তাঁকে বন্দি করে এবং বলেশ্বর নদীর তীরে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর তাঁর মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেয়। গ্রামের মানুষ তাঁর লাশ দেখে চিনতে পারে। স্থানীয় জনগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর মৃতদেহ নদী থেকে তুলে নদীতীরে সমাহিত করে। স্বাধীনতার পর তাঁর মৃতদেহ পূর্ণ মর্যাদায় ওই কবর থেকে পিরোজপুর কবরস্থানে স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) ২০১৭ প্রদান করা হয়। আজ তার ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফায়জুর রহমান আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ফয়জুর রহমান আহমেদ ১৯২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে কিশোরগঞ্জ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৪১ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ১৯৪৩ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি ১৯৪৬ সালে পুলিশ বিভাগে সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেন। চাকরিজীবনে বিভিন্ন পদে তিনি সিলেট, পঞ্চগড়, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও কুমিল্লায় এবং সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার হিসেবে পিরোজপুরে দায়িত্ব পালন করেন। হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল কিংবা আহসান হাবীব—তাঁর কোনো পুত্রই তখনো বিখ্যাত হয়ে ওঠেননি। শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদ একজন সৎ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি হিসাবে পিরোজপুর এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। সাহিত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণে শহিদ ফয়জুর রহমান কলকাতার সওগাত, ঢাকার ডিটেকটিভ, সিলেটের আল ইসলাহ, চট্টগ্রামের অস্তিকা ইত্যাদি পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখতেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিখ্যাত লেখকদের বই সংগ্রহ করে বিশাল এক পারিবারিক গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছিলেন তিনি। পুলিশ জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৬৫ সালে লেখা ‘দীপ নেভা যার ঘরে’ নামে তাঁর একটি গল্প-সংকলন প্রকাশিত হয়।
(পিরোজপুর কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত ফয়জুর রহমান আহমেদ)
পিরোজপুর মহকুমা ট্রেজারীর অর্থ ও অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে যাওয়ার সাথে পিরোজপুররে তৎকালীন এসডিপিও ফয়জুর রহমানের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়ে ছিল পাক বাহিনী। ৭১'র ২ মে ট্রেজারীর টাকা মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ে গেলে ৪ মে পিরোজপুর শহর পাক বাহিনী দখলে নেয়। এর আগেই হুমায়ূন মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে প্রথমে নাজিরপুর থানায় ও পরে নাজিরপুরের বাবলা গ্রামে জনৈক মোবারক খানের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। এই বাড়ীতে মে'র ৩ তারিখে ফয়জুর রহমান তাঁর পরিবারবর্গের সঙ্গে দেখা করতে যান। ৫ মে পিরোজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার চিঠি পেয়ে তিনি কর্মস্থলে এসে পৌঁছলে পাক-বাহিনী তাঁকে বন্দি করে এবং বলেশ্বর নদীর তীরে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর তাঁর মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেয়। তাঁর মৃতদেহ পানিতে ভাসছিল তিন দিন। স্থানীয় জনগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর মৃতদেহ নদী থেকে তুলে নদীতীরে সমাহিত করে। স্বাধীনতার পর তাঁর মৃতদেহ পূর্ণ মর্যাদায় ওই কবর থেকে পিরোজপুর কবরস্থানে স্থানান্তর করা হয়। শহীদ ফয়জুর রহমান বিয়ে করেন মোহনগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শেখবাড়ীতে। তার স্ত্রী রত্নগর্ভা প্রয়াত আয়শা ফয়েজ, যিনি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রথম মামলা করেছিলেন। যদিও তখন তাঁর মামলা কেউই নিতে চায়নি। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর মায়ের সেই মামলা করার প্রচেষ্টা দেখে ‘জলিল সাহেবের পিটিশন’ নামক একটি অসাধারণ গল্প লিখেছেন। জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৭ সালের১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসরকারি সম্মাননা পদক স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) দেয়া হয় শহীদ ফয়জুর রহমানকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফয়জুর রহমানের মেয়ে সুফিয়া হায়দার শেফুর হাতে পদক তুলে দেন। এছাড়া নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কলসাটি গ্রাম। সেই গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে বঙ্গবাজার। সেই বঙ্গবাজার থেকে ১ কিলোমিটার দক্ষিনে তার পৈতৃক নিবাস কুতুবপুর গ্রামে যে সড়কটি গেছে সেই সড়কটির নামকরন করা হয় শহীদ ফয়জুর রহমান সড়ক। ২০০০ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তার স্মরনে দুই টাকা মূল্যের একটি ডাক টিকেট প্রকাশ করে। আজ ফয়জুর রহমান আহমেদের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফায়জুর রহমান আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৫৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে খা্নসাব
আমিও পড়েছি, বড়ই করু্ণ
স্মৃতি !! আল্লাহ তাকে বেহেশত
নসীব করুন। আমিন
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ তার বাবার কথা অনেক লিখেছেন। সে সব পড়ে মুগ্ধ হয়েছি।