নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিগ্বিজয়ী সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ১৯৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৫ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:৪৯


আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব’ এই বিখ্যাত উক্তিটি যিনি করে ছিলেন তাঁর নাম নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ১৭৯৯ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ১৭৯৯ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন এবং পুনরায় ১৮১৫ সালের ২০ মার্চ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন। তিনি ইতালির রাজাও ছিলেন। এছাড়া তিনি সুইস কনফেডারেশনের মধ্যস্থাকারী এবং কনফেডারেশন অফ রাইনের রক্ষকও ছিলেন। বিশ্বের বিখ্যাত সমরনায়কদের মধ্যে তিনি অন্যতম।অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের পরেই যার নাম। মহাবীর অ্যালেক্সান্ডার দা গ্রেট এর অভিযান তাকে বরাবর আকর্ষণ করত। স্বপ্ন দেখতেন দিগ্বিজয়ী হবেন অ্যালেক্সান্ডার-এর মতোই। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের সময়কার একজন জেনারেল। শূন্য থেকে শুরু হয়ে সম্রাট হওয়া, রহস্যময় ঘটনার সম্মুখীন হওয়া এবং সম্রাট-জীবন থেকে এক নির্জন দ্বীপে নির্বাসিত হয়ে মারা যাওয়া- এ সবই নেপোলিয়নের জীবনেরই ঘটনা। তার নেতৃত্বে ফরাসি সেনাবাহিনী এক দশকের বেশি সময় ধরে সকল ইউরোপীয় শক্তির সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় এবং তিনি ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চল তার আয়ত্তে নিয়ে আসেন। তিনি সারা বিশ্বে সর্বকালের অন্যতম সেরা সেনাপতি হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। নেপোলিয়নের ব্যাক্তিত্ব ছিল প্রবল। তার সময়ে সমগ্র ইউরোপে তার ইমেজ ছিল দেবতাতুল্য। তাকে হত্যা করার সাহস কেউ করত না। কথিত আছে তাকে যখন বন্দি করা হয় তখনো ইংরেজ সৈন্যরা তার সামনে ভয়ে ভয়ে কথা বলত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) ও ইসলামী আদর্শের ভূয়সী প্রশংসা করে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, ‘মুহাম্মদের (সঃ) ধর্মই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয়’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, সে সময় খুব দূরে নয়, যখন সব দেশের বিজ্ঞ ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের একতাবদ্ধ করতে এবং কুরআনের যে নীতিগুলো একমাত্র সত্য ও যে নীতিগুলো মানুষকে স্বস্তির পথে পরিচালিত করতে পারে সেসব নীতির ওপর ভিত্তি করে সাম্যভিত্তিক এক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।’ জানা যায় নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ইসলাম ধর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৭৯৮ সালে কায়রোর জামে আজহার মসজিদে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহন উপলক্ষে তিনি যে বানী প্রচার করেন তার দলিল কায়রোর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে এখোনো রক্ষিত আছে । তৎকালীন বিশেষ ব্যাক্তিদের ডায়েরীতে তার ইসলাম ধর্ম গ্রহনের সত্যতা পাওয়া যায়।নেপোলিয়ন কোড প্রতিষ্ঠাও তার অন্যতম সেরা কীর্তি। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের এবং বন্ধুদের তার অর্জিত বিভিন্ন রাষ্ট্রের শাসক এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করেন। যদিও তাদের শাসন নেপোলিয়নে পতন ঠেকাতে পারেনি, নেপোলিয়নের এক ভাতিজা, তৃতীয় নেপোলিয়ন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ফ্রান্স শাসন করেন। আজ নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ১৯৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮২১ সালের আজকের দিনে তিনি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট হেলেনা দ্বীপে মৃত্যুবরণ করেন। দিগ্বিজয়ী সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৭৬৯ সালের ১৫ আগস্ট ফ্রান্সের করসিকা দ্বীপে ফ্লোরেন্সের সমৃদ্ধ ট্র্যাডিশনওয়ালা এক ইতালিয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার নামের ফরাসি উচ্চারণ নাপোলেওঁ বোনাপার্ত। তার বাবা কার্লো আর মা মারিয়া। নেপোলিয়ন ছিলেন বাবা-মার চতুর্থ সন্তান এবং পুত্রদের মধ্যে তৃতীয়। তার জন্ম ফ্রান্সে হলেও ফ্রেঞ্চ তার মাতৃভাষা ছিল না কখনোই, জীবনেও ঠিক বানানে ফ্রেঞ্চ লিখতে পারেন নি। কথা বলতেন ফ্রেঞ্চ ভাষায়, কিন্তু তাতে থাকত করসিকার টান। ছোট থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন তিনি। তুখোড় ছিলেন অংকে। আর অগাধ জ্ঞান ছিল ভূগোল আর ইতিহাস বিষয়ে। পড়াশোনা করেছেন আর্টিলারি নিয়ে। ১৭৮৫ তে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলেন নেপোলিয়ন, আর্মিতে হলেন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট। ফ্রেঞ্চ রেভুলশন যখন চলছিল সে সময় তিনি ছিলেন প্যারিসে। ১৭৯২-তে হয়ে গেলেন আর্মির ক্যাপ্টেন। পরের ছয় বছরে আর্মির হয়ে অনেক অভিযানেই অংশ নেন তিনি। দখল করেন ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চল।তার যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজির কারণে তিনি বিখ্যাত হন। তবে এর মাঝে তিনি একবার গৃহবন্দিও হয়েছিলেন। আবার স্পাই-এর কাজও করেছিলেন! ১৭৯৮-তে ফ্রেঞ্চ আর্মির লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশদের পরাজিত করা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসা ধ্বংস করা, পারলে টিপু সুলতানকে হাত করে ব্রিটিশদের হারানো যেতে পারে। তবে এর মাঝে তার মিশর ভ্রমণের ইচ্ছা জাগল এই গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের আগে। বিশেষ করে পিরামিড দর্শন। তিনি তার বাহিনীর সাথে অনেকজন অভিজ্ঞ, বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, পরিব্রাজক নিয়ে আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে কায়রোর দিকে যান। মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে তার আর্মিকে আক্রমণ করে মুরাদ আর ইব্রাহিম এর নেতৃত্বে মিসরের মামলুক বাহিনী। এ যুদ্ধের নাম ছিল ব্যাটল অফ পিরামিড। এতে নিপোলিয়নের বাহিনী জয় পায়। তারা পিরামিডের কাছে পৌঁছে যান। রহস্যময় স্ফিংক্স দর্শনের পরে নেপোলিয়ন তাদের বললেন, আমাকে একা থাকতে দাও। আমি একাই থাকব ভিতরে। তোমরা যাও। বাইরে থাকো।”
ফারাও খুফু এই পিরামিড বানিয়েছিলেন সেই কত হাজার বছর আগে, নিজের কবর হিসেবে। কিন্তু কী কারণে তার কবর এখানে দেয়া হল না সেটা জানা নেই। নেপোলিয়ন জানেন, কিংস চেম্বারের পাশেই আছে কুইন্স চেম্বার। তবে সেটা বেশি আকর্ষণীয় না। পিরামিডের ভেতরে কিংস চেম্বারে পৌঁছে তিনি বসে পড়লেন। বাইরে বসে গল্প করছিল যে কজন সৈন্য রয়ে গিয়েছিল পিরামিডের বাইরে। সাথে নেপোলিয়নের কাছের কয়েকজন। হাসি তামাশা চলছিল। সাত ঘণ্টা পর হঠাৎ একজন সৈনিক পিরামিডের দিকে আঙ্গুল তুলে চিৎকার করে উঠল, “দেখ!” মশালের আলোতে একটা কালো আকৃতিকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল। একটু কিছু দূর দৌড়ালো, এরপর আবার বসে পড়ল, আবার উঠে দৌড়, এরপর আবার পড়ে গেল মাটিতে। আর আগাতে পারল না। মশাল নিয়ে কিছুদুর আগাতেই, সে চিনে ফেলল, নেপোলিয়ন ছাড়া কেউ না তিনি। যে কজন সেখানে ছিল, সবাই ছুটে গেল। পানি খাওয়াল তাকে। থরথর করে কাঁপছেন নেপোলিয়ন। কথা বলছেন জড়িয়ে জড়িয়ে, “আমি হারবো… আমি হারবো… সময় কম।” সে রাতে আর কিছু করা হলো না। নেপোলিয়নকে সেবা শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুলতেই কয়েকদিন চলে গেল। মাঝে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “আপনি কী দেখেছিলেন ভেতরে?” তিনি উত্তর দেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। আর কোনোদিন জিজ্ঞেস করবে না এটা নিয়ে।” একদম একই রকম ঘটনার সম্মুখীন অ্যালেক্সান্ডার দ্য গ্রেটও হয়েছিলেন! ১০ দিন পর নেপোলিয়ন জীবনের প্রথম কোনো যুদ্ধে হেরে গেলেন। নীল নদের যুদ্ধে ব্রিটিশ নেভির অ্যাডমিরাল নিলসনের নেতৃত্বে করা আক্রমণে নেপোলিয়নের ব্রিটিশ রাজ্য বিজয়ের স্বপ্ন চির ধূলিস্মাৎ হয়ে গেল।

ফ্রান্সে ফিরেই তিনি ক্যু (coup) করলেন আর নিজে সর্বাধিনায়ক হয়ে গেলেন। কয়েক বছর পর ১৮০৪ সালে তিনি নিজেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৮০৪ সাল থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের সমাট ছিলেন। আশপাশের কিছু দেশ আক্রমণ করে ভাল একটা অবস্থান পেয়ে গেল ফ্রান্স ইউরোপে। তাঁর অধীনে ফ্রান্স ছিল খুবই শক্তিশালী। নেপোলিয়ন সিদ্ধান্ত নিলেন রাশিয়া আক্রমণ করবেন, তাঁর পুরনো সেই কারিশমা ফিরিয়ে আনবেন। ১৮১২-তে তিনি রাশিয়া আক্রমণ করলেন এবং খুব বাজেভাবে পরাজিত হলেন। পরের বছর খোদ তার নিজের দেশ ফ্রান্সই আক্রান্ত হল! তার আর্মি এত বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে ফ্রান্স রক্ষার মতো শক্তি ছিল না। অস্ট্রিয়া, প্রুসিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, পর্তুগাল, সুইডেন, স্পেন, জার্মান রাজ্যগুলো সব একসাথে ফ্রান্স আক্রমণ করে। তার সময় শেষ হয়ে আসে, ফ্রান্স পরাজিত হয়। নেপোলিয়নের ভাগ্য হয় নির্বাসন। ইতালির কাছে এলবা দ্বীপে তিনি নির্বাসিত হলেন। ১০ মাস পর অনেক চেষ্টা করে তিনি পালিয়ে গিয়ে আবার ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে ইতিহাসের কুখ্যাত কিংবা বিখ্যাত ওয়াটারলু যুদ্ধে হেরে যান। ১৮১৫ সালের ১৮ জুন রবিবার ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হয়েছিল বেলজিয়ামের ওয়াটারলুর কাছে। নেপোলিয়ন এই যুদ্ধে দুইটি সম্মিলিত শক্তি, ওয়েলিংটনের ডিউকের অধীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং গাবার্ড ভন বুচারের অধীনে প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীর নিকট পরাজিত হন। এই দু’ বাহিনী নেপোলিয়নের শত্রু ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সাতটি বাহিনীর সম্মিলনে গড়ে ওঠা মিত্র বাহিনীর কেবল দুটো ফোর্স ছিল। এ যুদ্ধে হারার সাত দিনের মাথায় ক্ষমতা ছেড়ে দেন নেপোলিয়ন।

ব্যাক্তিগত জীবনে নেপোলিয়নের বয়স যখন ২৬ তখন তিনি ৬ বছরের বড় বিধবা জোসেফাইনের প্রেমে পড়েন। ১৭৯৬ এ বিয়ে করেন। তবে জোসেফাইন কে বিয়ে করার পর নেপোলিয়ন প্রেম করতেন আরেক জুনিয়র অফিসারের স্ত্রীর সঙ্গে। ওই মেয়ের নাম ছিল পলিন। তাকে ডাকা হত ফ্রান্সের ক্লিওপেট্রা বা নেপোলিয়নের ক্লিওপেট্রা। জোসেফাইন ও এই সময় প্রেম করছিলেন আরেক যুবকের সাথে। নেপোলিয়ন যেমন আগ্রাসী যুদ্ধবাজ ছিলেন তেমন ছিলেন আগ্রাসী প্রেমিক। তার অসংখ্য (!) মহিলার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের কাচ্চা বাচ্চা ও ছিল। সেইসব কাচ্চা বাচ্চাদের অনেকে বোনাপার্ট উপাধি নামের শেষে লাগালেও তাদের মা কে তা জানা যেত না। নেপোলিয়ন অবশ্য তার এই স্বভাবের জন্য আক্ষেপ ও করতেন। সেন্ট হেলেনায় নির্বাসিত থাকা কালে তিনি বলতেন, জোসেফাইন কে আমি ভালবাসতাম, কিন্তু তাকে কখনো শ্রদ্ধা করি নি। নেপোলিয়নের অনেক উক্তিই তাকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। আবার অনেক উক্তিই তার ব্যক্তিত্ব-প্রজ্ঞা আর মানসিকতাকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। তবু দিগ্বিজয়ী বীরের কথাগুলোকে ইতিহাস আলাদাভাবে স্মরণ করে সব সময়। মেয়েদের নিয়ে নেপোলিয়ন একটা কথা বলেছিলেন- Women are nothing but machines for producing children. অর্থাৎ নারীরা কেবলই সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র! আশ্চর্য! অথচ, ইতিহাস, ধর্ম, রাজনীতি এবং অন্যান্য বিষয়ে নেপোলিয়নের ধারণা যুগের তুলনায় কত অগ্রসর। অথচ নারী ভাবনায় তিনি এমন কেন? আসলেই কী নারীদের প্রতি বিরাগভাজন ছিলেন তিনি? না, নেপোলিয়নের বর্ণাঢ্য জীবন কিন্তু সে কথা বলে না। তিনি হয়তো সন্তানের জীবনে মায়েদের ভূমিকার কথা স্বীকার করতে গিয়ে অথবা কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন। এটা মেনে নিতেই হবে।

(প্যারিসে নেপোলিয়নের সমাধি)
১৮১৫ সালের ওয়াটারলু যুদ্ধে তিনি পরাজিত হলে তাঁকে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। জীবনের শেষ ছয়টি বছর তিনি এই নির্বাসনে কাটান একদম মৃত্যু পর্যন্ত। ১৮২১ সালে ওখানেই মৃত্যু হয় নেপোলিয়নের। তিনি কীভাবে মারা গেল সে সম্পর্কে দুটি ভিন্ন মতামত রয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে তাকে কাউন্ট মন্টোলন দ্বারা বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল, যিনি তাঁর কাছে আর্সেনিক যুক্ত করেছিলেন। তার চুলের মধ্যে আর্সেনিকের চিহ্ন পাওয়া গেছে যা ইঁদুরের বিষ উত্পাদনে ব্যবহৃত হয়েছিল, কিন্তু সেই সময় সেন্ট হেলেনা দ্বীপটি ইঁদুরের আক্রমণে ভুগছিল এবং এটি সহজেই তাকে বিষ প্রয়োগ করতে পারে। অন্য মতামত অন্তত সাতজন ডাক্তার স্বাক্ষরিত ময়না তদন্তকে বোঝায়, যা বলে যে নেপোলিয়ন পেটের ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের গল্পও এই তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ করে: নেপোলিয়নের দাদা, বাবা, তাঁর ভাই লুসিয়েন এবং তাঁর তিন বোন পেটের ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। কে জানে কীভাবে মারা গিয়েছিলেন! শুধু বলার মতো একটা ঘটনা আছে তার শেষ জীবনের। মৃত্যুশয্যায় যখন ছিলেন, তখন ফ্রান্স থেকে তার একজন কাছের বন্ধু তাকে দেখতে এসেছিলেন শেষবারের মতো তিনি এসে একটা প্রশ্ন করেছিলেন তাকে, “সেই এত বছর আগে, কিংস চেম্বারে কী দেখেছিলে তুমি?” নেপোলিয়ন অবশেষে উত্তর দেয়ার জন্য মুখ খুললেন। কিন্তু বলতে গিয়েও আর বললেন না- “থাক, কী লাভ। বললেও তুমি জীবনেও আমাকে বিশ্বাস করবে না।” আজ নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ১৯৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিগ্বিজয়ী নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:৫৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ইসলামের ব্যাপারে উনি কিছু ভালো মন্তব্য করেছিলেন। তবে হয়ত রাজনৈতিক কারণে করেছিলেন। আল্লাহ ভালো জানেন।

০৫ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর।
ঠিকই বলেছেন, আল্লাহই ভালো জানেন
কি জন্য তিনি ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে এমন
সুন্দর মন্তব্য করেছিলেন।

২| ০৫ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: নেপোলিয়ান নাকি সারা রাত জেগে চিন্তা করতেন। মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমাতেন।

০৫ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:২২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ খানসাব আমি এই বিষেয়ে
খুব একটা ভালো জানিনা। এটা এতকমাত্র
তার স্ত্রীর জানার কথা। তি্নি কি কোথাও
এ্ই তথ্য প্রকাশ করেছেন?

৩| ০৫ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


"আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও .... আমি তোমাদিগকে **** মৃত সৈন্য দেবো *** "

মগজহীন নেপোলিয়ন সাড়ে ৬ লাখ সৈন্য নিয়ে রাশিয়া ঢুকেছিলো, ৮০ হাজার জীবিত ছিল যুদ্ধ শেষে; এবং রাশিয়া ফেলে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছে।

০৫ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কি আর করা ! সবই নিয়তি !!
তবে তিনি মগজহীন ছিলেন তা
মানতে পারছিনা।

৪| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখক বলেছেন, "কি আর করা ! সবই নিয়তি !! তবে তিনি মগজহীন ছিলেন তা মানতে পারছিনা। "

-আপনি মানতে পারছেন না; কারণ, আপনি নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযানকে সঠিক মতো এনালাইসিস করতে পারছেন না; ফান্স কোনভাবে রাশিয়া নেয়ার অবস্হানে ছিলো না কোন সময়ে; ফ্রান্স থেকে অত দুরে, দুর্গম একটা দেশ নিয়ে নেপোলিয়ন কি করতেন, কিভাবে শাসন করতেন?

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:৩৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: গাজীসাব যুদ্ধে কিন্তু নেপোলিয়নের জয় হয়েছিলো।
আমি এনালাইসিস করে যা পেয়েছি তা হলো এই যুদ্ধে রুশ জার
প্রথম আলেক জান্ডার এক নতুন রনকৌশল অবলম্বন করেন।
রুশবাহিনী যুদ্ধ না-করে পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করে গ্রাম ও
শহরের শস্যভাণ্ডারগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেয়, পানীয় জলে বিষ
প্রয়োগ করে এবং ক্রমশ পিছু হটতে হটতে ফরাসি বাহিনীকে রাশিয়ার
ভিতর ঢুকতে বাধ্য করে। মস্কোর কাছে বোরোডিনো নামক স্থানে দু-পক্ষের
যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ফরাসি বাহিনী জয়লাভ করে। জার শান্তির প্রস্তাব পাঠাবেন-
এই আশায় নেপোলিয়ন সেখানে পাঁচ সপ্তাহকাল অতিবাহিত করেন।
ইতিমধ্যে রাশিয়ায় প্রচণ্ড শীত পড়ে, তুষারপাত শুরু হয়। ফলে খাদ্যের
ঘাটতি দেখা দেয়। এরসঙ্গে যুক্ত হয় শীত বস্ত্র এবং বাসস্থানের অভাব
এবং টাইফাস নামক জ্বরের প্রকোপ। পরিস্থিতি বুঝে তিনি সেনাবাহিনীকে
দেশে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই শীত, জ্বরের প্রকোপ ও
অনাহারে অনেক সেনা মারা যায়। বিপর্যস্ত সৈন্য, অপমানের বোঝা ও
পরাজয়ের গ্লানি মাথায় নিয়ে নেপোলিয়ন দেশে ফিরে আসেন।

৫| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:২৬

অনল চৌধুরী বলেছেন: এরকম একটা জঘন্য লোভী খূনীকে দিগ্বিজয়ী সম্রাট বললে তো ইংরেজদের সারা পৃথিবী দকল করাকেও প্রশংসা করতে হয় !!!!
ইংরেজরা না পারলে এর লোকজন বাংলা আর ভারত দখল করতো।

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:৩৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অনলদা একাল আর সেকাল কিন্তু বিস্তর ফারাক।
আগে চলতো জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে।
আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট সেই কারনেই ইতিহাসের
পাতায় নিজেকে ঠাই করে নিয়েছেন। এদের কাজই
ছিলো রাজ্যের পর রাজ্য জয়।

৬| ০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১০:৫১

এইচ তালুকদার বলেছেন: রেস্ট ইন পিস লিটল কর্পোরাল।
একজন অসাধারন সমরনায়ক হলেও উনি একজন ইগইস্ট ম্যানিয়াক ছিলেন,উনার রাশিয়া অভিযান কালে রাশিয়া কিন্তু উনার জন্য সামরিক হুমকি ছিলো না বরং রাশিয়া তাকে সাহায্যই করছিলো।তারপরও রাশিয়ায় আভিযান করেছিলেন ইগ স্যাটিসফাই করার জন্য।তবে উনি টিপু সুলতান কে অনেক স্নেহ করতেন এমনকি টিপু কে সাহায্য করার জন্য ভারত পর্‍্যন্ত আসতে চেয়েছিলেন।

০৫ ই মে, ২০২০ রাত ১১:৩২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এটা তার কেমন স্নেহ আমি বুঝতে আপারগ।
নেপোলিয়ন ব্রিটিশদের আক্রমণের জন্য উন্মুক্ত পথ তৈরী করার লক্ষ্যে
দক্ষিণ ভারতের শাসক টিপু সুলতানের সাথে একটিজোট গঠন করেন যা
ফ্রাঙ্কো-ফার্সি জোট নামে পরিচিত। এছাড়াও তিনি ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের
সময় ফ্রেঞ্চ প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী সরবরাহ করেছিলেন।

৭| ০৬ ই মে, ২০২০ রাত ২:২৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এই সমস্ত যুদ্ধবাজ লোকদের মানুষ যত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে ততই মঙ্গল।এরা জনগনে দুই পয়সার উপকারও করে নাই।উপরন্তু অপকার করেছে।
এমন একটা দুষ্ট লোকের কাছথেকে আপনি গেছেন নবীর সার্টিফিকেট আনতে?হায় সেলুকাস!ধন্যবাদ

০৬ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:২০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
নুরুলইসলা০৬০৪ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
পৃথিবীতে বিখ্যাত, কুখ্যাত সবাই ইতিহাস বন্দি
হয়ে আছেন। কেউ যদি ইতিহাসের কাছ থেকে
শিক্ষা না নেয় তাতে ইতিহাসের কিই বা এমন
আসে যায়!! ইতিহাস তাকে তার বক্ষ্যে ধারন
করে রাখবেই। সে কারনেই বোনাপার্ট আছে
থাকবে যতদিন মানব সভ্যতা থাকবে।
নবী (সঃ) সার্টিফিকেট আনতে নয় একজন
বিধর্মী্ আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) এর উপর যে
ধারণ পোষণ করতেন আমাদের তথাকথিত
মুসলিম নামধারীরা কি সে ধারণা পোষণ করি?
যদিও শুনেছি তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন।



আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.