নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
বিশিষ্ট দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার সরদার ফজলুল করিম। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক। একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সরদার ফজলুল করিম রাষ্ট্রের জাতীয় অধ্যাপকের পদে নিজেকে অধিষ্ঠিত করার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও মেধা আর সেইসঙ্গে নিত্য বিনয়াচরণ দিয়ে নিজেকে যে সন্মানিত স্থানে স্থাপিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন তা বর্তমান অর্থ ও ক্ষমতা নির্ভর সমাজব্যবস্থায় বিরল দৃষ্টান্ত। সরদার ফজলুল করিম ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে অনিশ্চিত জীবন বেছে নিয়েছিলেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কমিউনিস্ট রাজনীতির কারণে তিনি দীর্ঘ সময় কাপাসিয়া, মনোহরদী, চরসিন্ধুর প্রভৃতি গ্রামে আত্মগোপনে ছিলেন। কৃষকের লুঙ্গি গামছা পরে তাঁদের সঙ্গেই থাকতেন। বৈষয়িক কোনো বৈভব তাঁকে কখনো আকর্ষণ করতে পারেনি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল আমৃত্যু। রিকশাচালক, মাছবিক্রেতাসহ সব শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতেন। তিনি নিজেকে কখনো নেতা মনে করতেন না। ছাত্রদের সঙ্গে সব বিষয়ে নিঃসংকোচে আলাপ করতেন। বলতেন, তাদের কাছ থেকেই তিনি শিখছেন। তিনি শুধু শিক্ষক ছিলেন না, নিজেকে আজীবন নিয়োজিত করেছিলেন জ্ঞানসাধনায়।অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম কর্তৃক অনুবাদকৃত প্লেটোর সংলাপ, প্লেটোর রিপাবলিক, এরিস্টটলের পলিটিক্স, অ্যাঙ্গেলসের অ্যান্টি ডুরিং বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও শিক্ষার জগতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিমের লোভ-লালসাহীন মেধা ও পরিশ্রম ভিত্তিক জীবনদর্শন ও তাঁর মহত্ কর্মের দৃষ্টান্ত এ দেশে যাঁরা মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জীবন গঠনে ব্রতী তাঁদের জন্য অনুসরণযোগ্য।সরদার ফজলুল করিম শুধুই যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দর্শনচর্চা করে গেছেন তা কিন্তু নয়। নিজের দেশ, দেশের মানুষজন, দেশের সমাজ-রাজনৈতিক বাস্তবতা – এসব কখনই বিস্মৃত হননি তিনি। চিন্তায় গভীর, কিন্তু তা প্রকাশে সহজ ও সরল, ব্যক্তি আচরণে বিনয়ী কিন্তু নীতি ও ব্যক্তিত্বের সংঘাতে দৃঢ়, আকাঙ্ক্ষা ও লোভ ত্যাগে অগ্রগামী এবং সর্বজনীন কল্যাণ চিন্তায় নিমগ্ন এই চিন্তাবিদের আজ ৯৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৫ সালের আজকের দিনে তিনি বরিশালের উজিরপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। বরেণ্য দার্শনিক অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিমের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
সরদার ফজলুল করিম ১৯২৫ সালের ১ মে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তারা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। পিএইচডি করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের বৃত্তি পেয়েছিলেন। বামপন্থি রাজনীতিতে যুক্ত সরদার ফজলুল করিম। পার্টির অন্য সদস্যরা বলেছিল, সরদার পিএইচডি করতে লন্ডনে যাবে আর আমরা আঙ্গুল চুষব, তা হবে না। এ কথায় ব্যথিত সরদার বৃত্তির কাগজ ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। কর্মজীব্নে ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলের কয়েদিদের থাকা-খাওয়ার পরিবেশ উন্নত করার দাবিতে অনশন করেন ৫৮ দিন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন এবং ওই বছর যুক্তফ্রন্টের হয়ে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এমএলএ নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি আবারও গ্রেফতার হন, মুক্তি পান ১৯৬২ সালের ডিসেম্বর মাসে। ১৯৬৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, সেপ্টেম্বর মাসে, তাঁকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী গ্রেফতার করে। অন্য কারাবন্দিদের সঙ্গে তিনিও ১৭ ডিসেম্বর মুক্তি পান। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে সরদার ফজলুল করিম আবারও শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। এবার অবশ্য দর্শন বিভাগে নয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে শিক্ষাদান শুরু করেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখি করেছেন জাতীয় অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম। তিনি চিরায়ত গ্রিক দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো অনুবাদ করেই দেশের বিদ্যোৎসাহী সমাজে এবং সাধারণ পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। অনুবাদকর্ম ছাড়া তাঁর মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যাও কম নয়। এখানে একটি বিষয় লক্ষ করবার মতো, তা হচ্ছে সরদার ফজলুল করিমের বেশিরভাগ গ্রন্থই একাধিক সংস্করণের সুযোগ পেয়েছে। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : নানা কথা (১৯৭২), দর্শন-কোষ (১৯৭৩), প্লেটোর সংলাপ (অনুবাদ : ১৯৭৩), প্লেটোর রিপাবলিক (অনুবাদ : ১৯৭৪), অ্যারিস্টটল-এর পলিটিক্স (অনুবাদ : ১৯৮৩), নানা কথার পরের কথা (১৯৮৪), এঙ্গেলস-এর এ্যান্টি-ডুরিং (অনুবাদ : ১৯৮৫), আবক্ষ (১৩৯৫), রুমির আম্মা ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৮৯), নূহের কিশতি এবং অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৯৩), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ (১৯৯৩), চল্লিশের দশকের ঢাকা (১৯৯৪), রুশোর সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট (অনুবাদ : ২০০০), সেই সে কাল : কিছু স্মৃতি কিছু কথা (২০০১), আরেক যুগে আর এক যুগোস্লোভিয়ায় (২০০৫) আমি রুশো বলছি (অনুবাদ : ২০০৬), আমি মানুষ (২০০৯), শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ (২০১১) প্রভৃতি। সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ছাড়াও তিনি সিধু ভাই স্মৃতিপদক, জনকণ্ঠ গুণীজন সম্মাননা, সা’দত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার, বরিশাল বিভাগ সমিতি, ঢাকা কর্তৃক শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য "শেরে বাংলা পদক" ২০০০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ কর্তৃক গুণীজন সম্মাননা ২০০১, দেওয়ান গোলাম মোর্তাজা স্মৃতিপদক' ২০০৫ প্রভৃতি সম্মাননা পেয়েছেন।
রাজনৈতিক দর্শন চর্চার পুরোধা সরদার ফজলুল করিম নিপীড়ন ও বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে পাকিস্তানি শাসনামলে জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করে সংগ্রাম করে গেছেন এবং স্বাধীনতার পর তাঁর মহত্ চিন্তা ও লেখনি দ্বারা সে প্রচেষ্টা আজীবন অব্যাহত রেখেছিলেন। দর্শন ও জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি সরদার ফজলুল করিম সমাজ পরিবর্তনের বিপ্লবী সংগ্রামে ছিলেন এক অনন্য সাহসী মানুষ। ২০১৪ সালের ১৫ জুন তারিখে রাত পৌনে একটা নাগাদ ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। জ্ঞান ও তাপস সরদার ফজলুল করিমের দর্শন ও রাজনৈতিক চিন্তা এবং তার সমগ্র বিপ্লবী জীবন বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আজ দার্শনিক সরদার ফজলুল করিমের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী।বরেণ্য দার্শনিক অধ্যাপক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা সরদার ফজলুল করিমের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
০১ লা মে, ২০২০ রাত ১১:০৭
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমি বিংশ শতাব্দীর আধুনিক মানুষ
আমি ভূতে বিশ্বাস করিনা তবে ভূতের
গল্প সুনতে পছন্দ করি। আপনি ভূতের
যে গল্প লিখেন তা পড়ে ভয় না হাসি পায়।
আপনি এই ৪০টি ভূতের গল্প ডাউনলোড করে পড়ে দেখতে পারেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা মে, ২০২০ রাত ৯:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
বেশ কিছুদিন ধরে আমার ভূতের গল্প পড়তে ইচ্ছা করছে। আপনি কি একটা ভূতের গল্প লিখবেন প্লীজ। নিশ্চয়ই ভূত নিয়ে আপনার দুই একটা অভিজ্ঞতা আছে। প্লীজ একটা লিখুন। খুব খুশি হবো।